এই সব কারণেই বাংলাদেশে এমন এক মজুর আন্দোলন গড়িয়া তোলা আবশ্যক যাহা একদিকে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা হিসাবে দেশে পূর্ণাঙ্গ ইসলামী সমাজ গঠনের প্রচেষ্টা চালাইয়া যাইবে। অপর দিকে এবং সঙ্গে সঙ্গে মজুর শ্রমিকদের উপস্থিত সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান করিবে- তাহাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও স্বার্থ আদায়ের জন্য ঐকান্তিক নিষ্ঠা ও বিম্বস্ততা সহকারে আন্দোলন চালাইবে। এইরূপ এক পূর্ণাঙ্গ মজুর আন্দোলন গড়িয়া তোলার জন্য নিম্নোক্ত পাঁচটি ভিত্তি একান্তই জরুরী।
১. সমাজ ও রাষ্ট্র সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা ও পরিকল্পনা।
২. সমাজ-সংস্কার শ্রমজীবীদের সম্মানজনক স্থান নির্ধারণের ব্যাপারে পূর্ণ দৃষ্টি ও সচেতনতা।
৩. শ্রম ও পুঁজির পারস্পরিক সম্পর্ক, অধিকার ও কর্তব্য।
৪. শিল্পগত সম্পর্ক ও সম্বন্ধের রীতিনীতি।
৫. শ্রমের কারণ ও উদ্বোধক।
পূর্ববর্তী প্রবন্ধ হইতে একথা সুস্পষ্ট হইয়া উঠিয়াছে, যে উপরোক্ত পাঁচটি বিষয়ে ইসলাম এক অত্যন্ত ব্যাপক এবং কল্যাণকর মতবাদ ও দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপিত করিয়াছে। ইসলামের একটি নিজস্ব সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা রহিয়াছে। রাষ্ট্র সম্পর্কে উহার এক বিশেষ দৃষ্টিকোণ ও পরিকল্পনা রহিয়াছে।
ইসলামী আদর্শে গঠিত সমাজের শ্রমিকদের মর্যাদা ও অধিকার কোন দিক দিয়াই হীন নহে, হেয় ও ঘৃণার্হ নহে। বরং হালাল রিযিক লাভের জন্য যে কোন প্রকারের শ্রম-দৈনিক কিংবা মানসিক-সবই ইবাদত এবং আল্লাহ ও রাসূলের সন্তুষ্টি লাভের অন্যতম উপায়।
এই কারণে ইসলামী সমাজে শিল্পগত সম্পর্কে ঠিক মানবীয় ধারায় স্থাপিত হইতে বাধ্য। শ্রমজীবিরাও মানুষ, অতএব ‘হক্কুল ইবাদ’ এর ইসলামী ধারণার ভিত্তিতেই মালিকদের হক এর মুকাবিলায় শ্রমজীবীদের ‘হক’ ও নির্ধারিত হইবে-ইহাতে সংঘর্ষের অবকাশ নেই বললেও চলে।
বর্তমান শ্রমিক অশান্তির কারণ অনেক ক্ষেত্রে নিতান্ত মনস্তাত্বিক। এই মনস্তাত্বিক কারণ যতদিন বর্তমান থাকিবে শ্রমিক অশান্তি প্রশমনের সকল চেষ্টাই ব্যর্থ হইতে বাধ্য। আধুনিক শিল্প-নীতিতে পুঁজির মুকাবিলায় শ্রমের মূল্য কম, মর্যাদা আরো হীন। ইহার দরুন শ্রমিক অশান্তি যে অনেকাংশে বৃদ্ধি পাইয়াছে, তাহা অস্বীকার করিবার উপায় নাই। কমিউনিজম শ্রেণীহীন সমাজ গঠন করিয়া এই সমস্যার সমাধান করিতে চেষ্টা করিয়াছে, কিন্তু উহা কিতাবের পৃষ্ঠা হইতে নামিয়া বাস্তবক্ষেত্রে যখনই কার্যকর হইতে শুরু করিয়াছে, তখনই দুনিয়ার মানুষ দেখিতে পাইয়াছে যে, ‘মজদুর রাজ’ এর নামে সেখানে এক বিশেষ কর্তা-শ্রেণীর নিরংকুশ ও সর্বাত্মক ডিকটেটরী শাসন কায়েম হইয়া শ্রমিকদের আষ্টেপৃষ্ঠে শক্ত করিয়া বাঁধিয়া ফেলিয়াছে। অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে সেখানে শ্রমিক অসন্তোষ তুষের আগুনের মতো জ্বলিয়া সমাজ সংস্থাকে তিলে তিলে দগ্ধ করিয়াছে।
অধ্যায় ০৮ : নবতর শ্রমিক আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা ও ভিত্তি
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
রিসেন্ট ব্লগ পোষ্টস
বিষয়শ্রেণী
রাইটার
প্রিয়-ক্লিক
কিছু বই
- অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা
- অর্থনীতিতে রাসূল (সা) এর দশ দফা
- আদর্শ মানব মুহাম্মদ (সা)
- আসহাবে রাসূলের জীবনকথা
- ইসলাম ও জিহাদ
- ইসলাম পরিচিতি
- ইসলামী আন্দোলন : সাফল্যের শর্তাবলী
- ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক
- ইসলামী আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি
- ইসলামী দাওয়াত ও কর্মনীতি
- ইসলামী নেতৃত্বের গুণাবলী
- ইসলামী বিপ্লবের পথ
- ইসলামী রেনেসাঁ আন্দোলন
- ইসলামী সমাজে মজুরের অধিকার
- একটি আদর্শবাদী দলের পতনের কারণঃ তার থেকে বাঁচার উপায়
- চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান
- দায়ী’ ইলাল্লাহ - দা’ওয়াত ইলাল্লাহ
- নামাজ কেন আজ ব্যর্থ হচ্ছে
- নামায-রোজার হাকীকত
- মোরা বড় হতে চাই
- যাকাতের হাকীকত
- রাসূলুল্লাহর বিপ্লবী জীবন
- শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী ও তাঁর চিন্তাধারা
- সত্যের সাক্ষ্য
- হেদায়াত
0 comments: