নিজেদের মধ্যকার দোষ-ত্রুটি ও দুর্বলতা দূর করার আর একটি উত্তম ব্যবস্থা হচ্ছে সমালোচনা। কিন্তু সমালোচনার সঠিক সীমা ও পদ্ধতি সম্পর্কে সতর্কতা অবলম্বন না করলে এতে ভয়ানক ক্ষতির আশাংকা রয়েছে। এজন্যই আমি বিস্তারিতভাবে এর সীমা ও পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করতে চাই।
একঃ সকল স্থানে ও সকল সময়ে আলোচনা করা চলবে না বরং বিশেষ বৈঠক আমীরে জামায়াতের প্রস্তাব কিংবা অনুমতিক্রমেই তা করা যেতে পারে।
দুইঃ সমালোচনাকারী সর্বপ্রথম। আল্লাহতাআলাকে হাযির-নযির জেনে নিজের মনের অবস্থা সম্পর্কে বিচার-বিবেচনা করে দেখবেন যে, তিনি সততা ও শুভাকাঙ্ক্ষার বশবর্তী হয়েই সমালোচনা করেছেন, না কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ এর মূলে সক্রিয় রয়েছে। প্রথমোক্ত অবস্থায় নিসন্দেহে সমালোচনা করা যেতে পারে, অন্যথায় কোনো প্রকার উচ্চবাক্য না করে নিজের অন্তর হতে এ কালিমা দূর করার জন্য তার সচেষ্ট হওয়া উচিত।
তিনঃ সমালোচনার ভঙ্গী ও ভাষা এমন হওয়া উচিত, যা শুনে প্রত্যেকেই বুঝতে পারবে যে, আপনি সত্যই সংশোধনের বাসনা পোষণ করেছেন।
চারঃ সমালোচনা উদ্দেশ্য কথা বলার পূর্বে আপনার অভিযোগের সমর্থনে কোনো বাস্তব প্রমাণ আছে কিনা, তা অবশ্যই ভেবে দেখবেন। অহেতুক কারো বিরুদ্ধে কথা বলা অত্যন্ত কঠিন গুনাহ,এর ফলে সামাজিক জীবনে বিশৃংখলা দেখা দেয়।
পাঁচঃ যে ব্যক্তির সমালোচনা করা হবে, তার অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে সমালোচকের বক্তব্য শ্রবণ করা এবং সততার সাথে তা ভেবে দেখা কর্তব্য। অভিযোগের যে অংশ সত্য, তা অকপটে স্বীকার করা এবং যে অংশ সত্য নয় তা যুক্তি-প্রমাণ দ্বারা খন্ডন করা উচিত। সমালোচনা শুনে রাগান্বিত হওয়া অহংকার ও আত্মরিকতার লক্ষণ।
ছয়ঃ সমালোচনা এবং এর জবাবের ধারা সীমাহীনভাবে চলা উচিত নয়, কেননা এতে একটি স্থায়ী বিরোধ ও কথা কাটাকাটির সূত্রপাত হতে পারে। আলোচনা শুধু উভয় পক্ষের বক্তব্য সুস্পষ্ট না হওয়া পর্যন্তই চলতে পারে। এরপরও যদি বিষয়টির মীমাংসা না হয়, তবে আলোচনা সেখানেই স্থগিত রাখুন, যেন উভয় পক্ষ ধীরস্থীরভাবে এবং শান্ত মনে নিজেদের বক্তব্য সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করতে পারে।
অতপর সে বিষয়ে যদি একান্তেই কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়, তবে পরবর্তী বৈঠকে পুনারায় তা উত্থাপন করা যেতে পারে, কিন্তু এতদসত্ত্বেও আপনাদের জামায়াতে বিরোধী বিষয় সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ব্যবস্থা থাকা এবং উক্ত সিদ্ধান্তের ফলে বিরোধের সমাপ্তি ঘটা আবশ্যক।
উল্লেখিত সীমার প্রতি লক্ষ্য রেখে যে সমালোচনা করা হবে তা শুধু কল্যাণকরই নয় জামায়াতের নিয়ম-শৃংখলা বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বটে। এ ধরনের ব্যবস্থা ছাড়া কোনো সংগঠই সঠিকভাবে বেশী দূর অগ্রসর হতে পারে না। সুতরাং কাউকেও এ সমালোচনার উদ্র্ধে নয়। আমি এটাকে জামায়াতের অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য একান্ত অপরিহার্য মনে করি।আমার দৃঢ় বিশ্বাস এই যে, যে দিন আমাদের জামায়াতে এ সমালোচনার দ্বার রুদ্ধ হয়ে যাবে, ঠিক সেদিন হতেই আমাদের অধপতন শুরু হবে। এজন্যই আমি প্রথম হতেই প্রত্যকটি সাধারণ সম্মেলনের পরে জামায়াতের কার্যাবলী ও ব্যবস্থাপনার সমালোচনা-পর্যালোচনার জন্য রুকনদের একটি বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠান করে আসছি। এধরনের বৈঠকে সর্বপ্রথমে আমি নিজেকে সমালোচনার জন্য পেশ করি, যেন আমার বিরুদ্ধে কিংবা আমার কোনো কাজে কারো আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে তারা সকলের সামনে বিনা দ্বিধায় প্রকাশ করতে পারে। এটা হলে হয় আমার ভুল-ত্রুটির সংশোধন হবে নতুবা আমার জবাব শুনে অভিযোগকারী এবং তার ন্যায় অন্যান্য লোকেদেরও ভুল ধারনা দূর হবে। গত রাতে ঠিক এ ধরনেরই একটি বৈঠকে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে প্রকাশ্য ও অবাধ সমালোচনার দৃশ্য আপনারা সকলেই প্রত্যক্ষ্য করেছেন। আমি জেনে বিস্মিত হলাম যে, জামায়াতের যেসব কর্মী এই প্রথমবার এ ধরনের দৃশ্য দেখার সুযোগ পেয়েছেন, তারা নাকি খুবই মর্মাহত হয়েছেন। তারা কিরূপ দৃষ্টিভঙ্গিতে এর বিচার বিশ্লেষণ করলে তাদের নিকট জামায়াতের গুরুত্ব পূর্বাপেক্ষা বৃদ্ধি পেত। এ ভূখন্ডে জামায়াতে ইসলামী ছাড়া এমন কোন সংগঠন রয়েছে, যেখানে তিন-চার শত প্রতিনিধি একত্রে একস্থানে বসে কয়েক ঘন্টা যাবত এরূপ অবাধ ও প্রকাশ্য সমালোচনা করার পরও একখানা চেয়ারও ভাঙ্গে না, একটি মাথাও ফাটে না বরং বৈঠক সমাপ্ত কালে কারও মনে কতটুকু কালিমা রেখা পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকে না।
একঃ সকল স্থানে ও সকল সময়ে আলোচনা করা চলবে না বরং বিশেষ বৈঠক আমীরে জামায়াতের প্রস্তাব কিংবা অনুমতিক্রমেই তা করা যেতে পারে।
দুইঃ সমালোচনাকারী সর্বপ্রথম। আল্লাহতাআলাকে হাযির-নযির জেনে নিজের মনের অবস্থা সম্পর্কে বিচার-বিবেচনা করে দেখবেন যে, তিনি সততা ও শুভাকাঙ্ক্ষার বশবর্তী হয়েই সমালোচনা করেছেন, না কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ এর মূলে সক্রিয় রয়েছে। প্রথমোক্ত অবস্থায় নিসন্দেহে সমালোচনা করা যেতে পারে, অন্যথায় কোনো প্রকার উচ্চবাক্য না করে নিজের অন্তর হতে এ কালিমা দূর করার জন্য তার সচেষ্ট হওয়া উচিত।
তিনঃ সমালোচনার ভঙ্গী ও ভাষা এমন হওয়া উচিত, যা শুনে প্রত্যেকেই বুঝতে পারবে যে, আপনি সত্যই সংশোধনের বাসনা পোষণ করেছেন।
চারঃ সমালোচনা উদ্দেশ্য কথা বলার পূর্বে আপনার অভিযোগের সমর্থনে কোনো বাস্তব প্রমাণ আছে কিনা, তা অবশ্যই ভেবে দেখবেন। অহেতুক কারো বিরুদ্ধে কথা বলা অত্যন্ত কঠিন গুনাহ,এর ফলে সামাজিক জীবনে বিশৃংখলা দেখা দেয়।
পাঁচঃ যে ব্যক্তির সমালোচনা করা হবে, তার অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে সমালোচকের বক্তব্য শ্রবণ করা এবং সততার সাথে তা ভেবে দেখা কর্তব্য। অভিযোগের যে অংশ সত্য, তা অকপটে স্বীকার করা এবং যে অংশ সত্য নয় তা যুক্তি-প্রমাণ দ্বারা খন্ডন করা উচিত। সমালোচনা শুনে রাগান্বিত হওয়া অহংকার ও আত্মরিকতার লক্ষণ।
ছয়ঃ সমালোচনা এবং এর জবাবের ধারা সীমাহীনভাবে চলা উচিত নয়, কেননা এতে একটি স্থায়ী বিরোধ ও কথা কাটাকাটির সূত্রপাত হতে পারে। আলোচনা শুধু উভয় পক্ষের বক্তব্য সুস্পষ্ট না হওয়া পর্যন্তই চলতে পারে। এরপরও যদি বিষয়টির মীমাংসা না হয়, তবে আলোচনা সেখানেই স্থগিত রাখুন, যেন উভয় পক্ষ ধীরস্থীরভাবে এবং শান্ত মনে নিজেদের বক্তব্য সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করতে পারে।
অতপর সে বিষয়ে যদি একান্তেই কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়, তবে পরবর্তী বৈঠকে পুনারায় তা উত্থাপন করা যেতে পারে, কিন্তু এতদসত্ত্বেও আপনাদের জামায়াতে বিরোধী বিষয় সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ব্যবস্থা থাকা এবং উক্ত সিদ্ধান্তের ফলে বিরোধের সমাপ্তি ঘটা আবশ্যক।
উল্লেখিত সীমার প্রতি লক্ষ্য রেখে যে সমালোচনা করা হবে তা শুধু কল্যাণকরই নয় জামায়াতের নিয়ম-শৃংখলা বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বটে। এ ধরনের ব্যবস্থা ছাড়া কোনো সংগঠই সঠিকভাবে বেশী দূর অগ্রসর হতে পারে না। সুতরাং কাউকেও এ সমালোচনার উদ্র্ধে নয়। আমি এটাকে জামায়াতের অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য একান্ত অপরিহার্য মনে করি।আমার দৃঢ় বিশ্বাস এই যে, যে দিন আমাদের জামায়াতে এ সমালোচনার দ্বার রুদ্ধ হয়ে যাবে, ঠিক সেদিন হতেই আমাদের অধপতন শুরু হবে। এজন্যই আমি প্রথম হতেই প্রত্যকটি সাধারণ সম্মেলনের পরে জামায়াতের কার্যাবলী ও ব্যবস্থাপনার সমালোচনা-পর্যালোচনার জন্য রুকনদের একটি বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠান করে আসছি। এধরনের বৈঠকে সর্বপ্রথমে আমি নিজেকে সমালোচনার জন্য পেশ করি, যেন আমার বিরুদ্ধে কিংবা আমার কোনো কাজে কারো আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে তারা সকলের সামনে বিনা দ্বিধায় প্রকাশ করতে পারে। এটা হলে হয় আমার ভুল-ত্রুটির সংশোধন হবে নতুবা আমার জবাব শুনে অভিযোগকারী এবং তার ন্যায় অন্যান্য লোকেদেরও ভুল ধারনা দূর হবে। গত রাতে ঠিক এ ধরনেরই একটি বৈঠকে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে প্রকাশ্য ও অবাধ সমালোচনার দৃশ্য আপনারা সকলেই প্রত্যক্ষ্য করেছেন। আমি জেনে বিস্মিত হলাম যে, জামায়াতের যেসব কর্মী এই প্রথমবার এ ধরনের দৃশ্য দেখার সুযোগ পেয়েছেন, তারা নাকি খুবই মর্মাহত হয়েছেন। তারা কিরূপ দৃষ্টিভঙ্গিতে এর বিচার বিশ্লেষণ করলে তাদের নিকট জামায়াতের গুরুত্ব পূর্বাপেক্ষা বৃদ্ধি পেত। এ ভূখন্ডে জামায়াতে ইসলামী ছাড়া এমন কোন সংগঠন রয়েছে, যেখানে তিন-চার শত প্রতিনিধি একত্রে একস্থানে বসে কয়েক ঘন্টা যাবত এরূপ অবাধ ও প্রকাশ্য সমালোচনা করার পরও একখানা চেয়ারও ভাঙ্গে না, একটি মাথাও ফাটে না বরং বৈঠক সমাপ্ত কালে কারও মনে কতটুকু কালিমা রেখা পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকে না।
0 comments: