আর একটি বিষয়ে আমি আপনাদের দৃষ্টি বিশেষভাবে আকৃষ্ট করার প্রয়োজন অনুভব করছি। তা এই যে, এখনও আমাদের মধ্যে আনুগত্য ও নিয়ম-শৃঙ্খলার যথেষ্ট অভাব দেখা যাচ্ছে। একথা যদিও সত্য যে, আমাদের বর্তমান সামাজিক পরিবেশের প্রতি লক্ষ্য করলে নিজেদেরকে অনেক সুসংবদ্ধ বলে মনে হয়। কিন্তু ইসলামের সুমহান আদর্শ ও আমাদের কঠিন দায়িত্বও কর্তব্যের প্রতি লক্ষ্য করলে আমাদের বর্তমান শৃঙ্খলা ও সংগঠনকে নিতান্তই নগণ্য বলে মনে হবে।
আপনারা মুষ্টিমেয় কয়েকজন লোক যৎ সামান্য উপায়-উপাদান নিয়ে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেছেন। অথচ ফাসেকী ও জাহেলিয়াতের কয়েক হাজার গুন অধিক শক্তি এবং কয়েক লক্ষ গুণ বেশী উপায়-উপাদানের মুকাবিলায় শুধু বাহ্যিক জীবন ব্যবস্থারই নয়, বরং এর অন্তর্নিহিত ভাবধারও আমূল পরিবর্তন সাধন করাই হচ্ছে আপনাদের লক্ষ্য। কিন্তু আপনারাই হিসেব করে দেখতে পারেন, সংখ্যা-শক্তি কিংবা উপায়-উপাদানের দিক দিয়ে প্রতিপক্ষের সাথে আপনাদের কোনো তুলনাই হয় না। এমতাবস্থায় আপনাদের কাছে নৈতিক ও সাংগঠনিক শক্তি ছাড়া আর কোন জিনিসটি আছে যার সাহায্যে প্রতিযোগিতায় সাফল্য লাভের আশা পোষণ করতে পারেন? আপনাদের সততা ও বিশ্বস্ততা সম্পর্কে সমাজ মনে যদি আস্থা জন্মে এবং আপনাদের সংগঠন যদি এতখানি শক্তিশালী হয় যে, জামায়াতের দায়িত্বশীল ব্যক্তিগণ আবশ্যক বোধে একটি মাত্র ইশরায়ই প্রয়োজনীয় শক্তি সমাবেশ করতে সক্ষম হবেন ; কেবল তখনই আপনাদের মহান উদ্দেশ্য সফল হতে পারে।
ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গীতে দীন ইসলাম বাস্তব রূপায়ণের উদ্দেশ্য গঠিত কোনো জামায়াত তার নির্বাচিত আমীরের নেক কাজে আনুগত্য করা মূলত আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (স) এরই আনুগত্যের শামিল। যে বেক্তি আল্লাহ তাআলার কাজ মনে করে এ আন্দোলনে শরীক হয়েছে এবং আল্লাহ তাআলার রেযামন্দির উদ্দেশ্যেই নিজেদের মধ্য থেকে কাউকে আমীর নির্বাচিত করেছে, সে উক্ত আমীরের জায়েয ও সংগত আদেশ-নিষেধ পালন করে মূলত তার নয় বরং আল্লাহ এবং রাসূলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে থাকে। মোটকথা আল্লাহ এবং তাঁর মনোনীত দীনের (জীবন ব্যবস্থার) সাথে তার যত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকবে, সে ততবেশী আনুগত্য পরায়ণ বলে প্রমাণিত হবে। পক্ষান্তরে এই সম্পর্কে যে ব্যক্তি যতখানি পশ্চাদপদ ও দুর্বল থাকবে, আনুগত্য ও নিয়ম-শৃঙ্খলা রক্ষার ব্যাপারে সে ততখানি দুর্বল সাব্যস্ত হবে। আপনার উপর যার যতটুকু প্রভুত্ব নেই, আপনি যাকে শুধু আল্লাহ তাআলার কাজের জন্যই আমীর হিসেবে বরণ করেছেন, একজন লোকের ন্যায় নিজের অভীরুচী, পছন্দ এবং স্বার্থের বিরুদ্ধে তার নির্দেশ আপনি একান্ত নিষ্ঠার সাথে পালন করে চলবেন এতদপেক্ষা বড় কুরবানী আর কি হতে পারে? যেহেতু এ কুরবানী মূলত আল্লাহ তাআলার জন্যই করা হচ্ছে, সে জন্য আল্লাহ তাআলার নিকট হতেও এর বিনিময় বিরাট পুরষ্কার পাওয়া যাবে। পক্ষান্তরে কোনো ব্যক্তি যদি এ আন্দোলনের শরীক হওয়ার পরও কোনো অবস্থাতেই ছোট কাজে রাযী না হয়, আনুগত্য করাটাকে মর্যাদাহীনকর মনে করে অথবা কোনো নির্দেশের ফলে মনে মনে ক্ষুন্ন হয় এবং এতে বিরক্তি ও অস্বস্তিরোধ করে কিংবা নিজের ইচ্ছা ও স্বার্থের খেলাপ কোনো আদেশ পালনে ইতস্তত করে তবে বুঝতে হবে, সে এখনো তার ইচ্ছা-প্রবৃত্তিকে আল্লাহ তাআলার সামনে সম্পূর্ণরূপে নত করেনি এবং এখনো তার আমিত্ববোধ নিজের দাবী-দাওয়া পরিত্যাগ করেনি।
অধ্যায় ১৩ : আনুগত্য ও নিয়ম-শৃঙ্খলা সংরক্ষণ
☼→
হেদায়াত
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
রিসেন্ট ব্লগ পোষ্টস
বিষয়শ্রেণী
রাইটার
প্রিয়-ক্লিক
কিছু বই
- অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা
- অর্থনীতিতে রাসূল (সা) এর দশ দফা
- আদর্শ মানব মুহাম্মদ (সা)
- আসহাবে রাসূলের জীবনকথা
- ইসলাম ও জিহাদ
- ইসলাম পরিচিতি
- ইসলামী আন্দোলন : সাফল্যের শর্তাবলী
- ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক
- ইসলামী আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি
- ইসলামী দাওয়াত ও কর্মনীতি
- ইসলামী নেতৃত্বের গুণাবলী
- ইসলামী বিপ্লবের পথ
- ইসলামী রেনেসাঁ আন্দোলন
- ইসলামী সমাজে মজুরের অধিকার
- একটি আদর্শবাদী দলের পতনের কারণঃ তার থেকে বাঁচার উপায়
- চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান
- দায়ী’ ইলাল্লাহ - দা’ওয়াত ইলাল্লাহ
- নামাজ কেন আজ ব্যর্থ হচ্ছে
- নামায-রোজার হাকীকত
- মোরা বড় হতে চাই
- যাকাতের হাকীকত
- রাসূলুল্লাহর বিপ্লবী জীবন
- শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী ও তাঁর চিন্তাধারা
- সত্যের সাক্ষ্য
- হেদায়াত
0 comments: