ইসলামী রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা
মদীনা থেকে বনু নযীর গোত্রের লোকদেরকে বহিস্কৃত করার পর তারা খায়বরে এসে বসতি স্থাপন করলো। খায়বর মদীনা মুনাওয়ারা থেকে প্রায় দু’শ মাইল উত্ত-পশ্চিমে অবস্থিত। এখানে ইহুদীরা কয়েকটি বড়ো সুদৃঢ় কিল্লা নির্মাণ করেছিলো।
খায়বর তখন ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধতার সবচাইতে বড়ো কেন্দ্র এবং ইসলামের পক্ষে একটি স্থায়ী বিপদে পরিণতি হয়েছিলো। খন্দক যুদ্ধের সময় মদীনার ওপর যে প্রচণ্ড হামলা চালান হয়েছিলো, তার মূল কারণ ছিলো এই খায়বরের ইহুদীরাই। সেই চক্রান্ত ব্যর্থক হবার পর ভিন্নতর পন্থায় ইসলামী আন্দোলনের মূলোৎপাটনের জন্যে তারা ক্রমাগত ষড়যন্ত্র পাকাতে লাগালো। এই উদ্দেশ্যে তারা আরবের বিভিন্ন গোত্র বিশেষত কুরাইশদের সঙ্গে আঁতাত স্থাপন তো করলোই, সেই সঙ্গে মদীনার মুনাফিকদেরও উস্কাতে শুর করলো। তাদেরকে এই মর্মে বুঝানো হলো যে, তারা যদি মুসলমানদের ভেতরে থেকে এদের শিকড় কাটতে থাকে, তাহলে বাইরের বিরুদ্ধবাদীদের পক্ষে ইসলামকে চিরতরে মিটিয়ে দেয়া সহজতর হবে। ইহুদীদের এই সব চক্রান্তের খবর হযরত (স)-এর কাছেও যথারীতি পৌঁছতে লাগলো। তিনি ইহুদীদেরকে এ জঘন্য তৎপরতা থেকে বিরত হলো না। এমন কি তারা বিভিন্ন গোত্রের কাছ এই মর্মে প্রস্তাব পাঠালো যে, ‘আমাদের সঙ্গে মিলে যদি তোমরা মদীনার ওপর হামলা করো, তাহলে তোমাদেরকে স্থায়ীভাবে আপন খেজুর বাগানের অর্ধেক ফসল দিতে থাকবো।’ মোটকথা, ইহুদীদের চক্রান্তের ফলে বহু গোত্রের মন-মানস পরিবর্তিত হলো এবং তারা একযোগে মদীনার ওপর হামলা করার ব্যাপরে ঐক্যমত্যে পৌঁছলো।
আক্রমণাত্নক যুদ্ধ
এ যাবত মুসলমানরা যুদ্ধ করে আসছে শুধু আত্নরক্ষার খাতিরে। দুশমনরা তাদেরকে খতম করার জন্যে হামলা চালিয়েছে আর তাঁরা আত্নরক্ষার জন্যে অস্ত্র হাতে নিয়েছেন। অতঃপর আল্লাহ তা’আলার সাহায্য তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এবংদুশমনরা অপমানিত ও লাঞ্ছিত হয়ে পলায়ন করেছে। কিন্তু এই স্তরে এসে অবস্থার গতি অন্যদিকে মোড় নিলো। কুফরী শক্তির সুসংহত রূপ নেবার আগেই আক্রমণাত্নক হামলা চালিয়ে তাকে খতম করে দেবার প্রয়োজন দেখা দিলো। কারণ ইসলামী আদর্শের প্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তার জন্যে যেমন প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধেত্ম প্রয়োজন রয়োছে, তেমনি প্রয়োজন মতো আক্রমণাত্নক হামলা করারও দরকার আছে। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন-পদ্ধতি ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা। এই জীবন পদ্ধতি ও রাষ্ট্র-ব্যবস্থা কায়েম ও তাকে নিরাপদ করতে হলে কেবল অন-ইসলামী জিন্দেগী ও জীবন বিধানের অনুপর্তীদের হামলা থেকে আত্নরক্ষা করাই যথেষ্ট নয়; বরং এই জীবন বিধানকে প্রতিষ্ঠিত করার পথে কখনো কখনো অন্যান্য বাতিল জীবন পদ্ধতিকে উৎখাত করার জন্যে আক্রমণাত্নক আঘাত হানারও প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
খন্দক যুদ্ধের পর ইসলামী আন্দোলন এই স্তরেই প্রবেশ করলো। এবার শুধু প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধই নয়; বরং এখন আক্রমণাত্নক মনোভাব নিয়ে বিপদাশংকা চিরতরে মুছে ফেলারই প্রয়োজন দেখা দিলো। তাই খন্দক যুদ্ধের সমআপ্তির পর হযরত আমরা শুধু তার মুকাবিলা করবো, এখন আর এটা চলবে না; বরং এখন আমরা নিজেরাই গিয়ে দুশমনদের ওপর হামলা করবো।
খায়বর আক্রমণ
এবার খায়বরের ইহূদীদের ক্রমবর্ধমান ফিতনাকে কার্যকর ভাবে প্রতিরোধ করার সময় এসে পড়লো! হযরত [স] খায়বরের ওপর হামলা চালানোর প্রস্তুতি শুরু করে দিলেন এবং ইহুদীদের তরফ থেকে সম্ভাব্য হামলা প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যে মদীনা থেকে যাত্রা করলেন। এটা সপ্তম হিজরীর মুহাররম মাসের ঘটনা। এই হামলার জন্যে তিনি ষোলশ’ সৈন্য সঙ্গে নিলেন। এর ভেতরে মাত্র দু’শ ছিলো অশ্ব ও উষ্ট্রারোহী, বাকী সব পদাতিক।
খায়বরে ছয়টি দুর্গ এবং তাতে বিশ হাজার ইহুদী সৈন্য মোহায়েন ছিলো। সেখানে পৌঁছে হযরত (স) নিশ্চিতরূপ জানতে পারলেন যে, ইহুদীরা সত্য সত্যই যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত; তারা কোনো অবস্থায়ই কোনো সন্ধি-চুক্তি সম্পাদন করতে রাযী নয়। তিনি সাহাবীদের সামনে জিহাদ সম্পর্কে একটি উদ্দীপনাময় ভাষণ প্রদান করলেন এবং আল্লাহর দ্বীনের খাতিরে তাদেরকে জীবন পণ করার উপদেশ দিলেন। পর দিন তিনি ইহুদীদের দুর্গগুলো অবরোধ করলেন। অবরোধকালে কয়েকটি খণ্ডযুদ্ধ সংঘটিত হলো। প্রায় বিশ দিন অবরোধের পর আল্লাহ তা’আলা মুসলমানদেরকে বিজয় দান করলেন। এই যুদ্ধে ৯৩ জন ইহুদী নিহত এবং ১৫ জন মুসলমান শহীদ হলেন। হযরত আলী (রা)-এর হাতে মারহাব নামক ইহুদিদের এক বিরাট পাহলোয়ান নিহত হলো। ইহুদীরা তার বীর্যবত্তার জন্যে গর্ব করতো। তার মৃত্যু তাই এ যুদ্ধের এক বিরাট উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিলো।
বিজয়ের পর ইহুদীগণ আবেদন জানালো, তাদের কাছে যে সব জমি-জমা রয়েছে, তা তাদেরকেই ছেড়ে দেয়া হলে মুসলানদেরকে তারা অর্ধেক ফসল দিতে থাকবে। তাদের এই আবেদন হযরত (স) মঞ্জুর করলেন। পরবর্তী বছরগুলোতে এই ফসল আদায়ের ব্যাপরে মুসলিম কর্মচারীগণ ইহুদীদের সঙ্গে অত্যন্ত ইনসাফপূর্ণ ব্যবহার প্রদর্শন করেন। তাঁরা ফসলকে দু’ভাগে বিভক্ত করতেন এবং কৃষকদের যে ভাগ ইচ্ছা পছন্দ করে নেবার অধিকার দিতেন। এভাবে ফসল আদায়ের সঙ্গে সঙ্গে ইহুদীদের অন্তরও তাঁরা জয় করে নিলেন।
মুসলিম সমাজের প্রশিক্ষণ
ওহুদ যুদ্ধের পর ইসলামী আন্দোলনের জন্যে বাইরের বিপদাশংকা কি পরিমাণে বেড়ে গিয়েছিলো, খন্দক যুদ্ধ এবং তার পরবর্তী ঘটনাবলী থেকে তা সহজেই আন্দাজ করা চলে। এটি ছিলো অত্যন্ত সংঘাতের সময়; কিন্তু তা সত্ত্বেও ইসলামী আন্দোলনের আহবায়ক একজন জেনারেল হিসেবে যেমন দৃঢ়তার সাথে এসব ঘটনাবলী মুকাবিলা করছিলেন, তেমনি একজন সুদক্ষ নৈতিক শিক্ষক হিসেবেও তিনি আন্দোলনের অগ্রসেনাদের জন্যে যথোচিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছিলেন। তিনি এই নয়া ইসলামী সমাজের জন্যে প্রায়োজনীয় আইন-কানুন ও নিয়ম-বিধি শিক্ষা দেয়া হতো, তা এ সময়ে অবতীর্ণ দুটি গুরুত্বপূর্ণ সূরা অর্থাৎ নিসা ও সূরা মায়েদা অধ্যয়ন করলেই স্পষ্টত অনুমান করা যায়।
সূরা নিসা চতুর্থ ও পঞ্চম হিজরীর বিভিন্ন সময়ে অবতীর্ণ সময়ে অবতীর্ণ হয়। এ সময় নবী করীম (স) এই নতুন ইসলামী সমাজকে পুরনো জাহিলী রীতিনীতি ও বিধি-ব্যবস্থা থেকে মুক্ত করে কিভাবে নৈতিকতা, কৃষ্টি-সভ্যতা, সামাজিক ও অর্থনীতির নবতর ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়েছিলেন, এ থেকে তা সহজেই আন্দাজ করা চলে। এ সময় আল্লাহ তা’আলা মুসলমানদের ব্যক্তিগত জীবনের সঙ্গে সঙ্গে তাদের সামাজিক জীবনেও ইসলামী ধারায় শুধরে নেবার প্রক্রিয়া সম্পর্কে সুস্পষ্ট ভাষায় পথ নির্দেশ দিলেন। তাদেরকে পারিবারিক ব্যবস্থাপনার নীতি বাতলানো হলো; বিবাহ ও তালাক সম্পর্কে সুস্পষ্ট নিযম-নীতি জানিয়ে দেয়া হলো; নারী-পুরুষের অধিকার-সীমা নির্দিষ্ট করে সমাজের নান ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করা হলো, ইয়াতিম, মিসকীন ও দরিদ্র লোকদের অধিকারের নিরাপত্তা বিধানের জন্যে তাগিদ করা হলো; সম্পদের উত্তরাধিকর সংক্রান- নীতিভঙ্গি নির্ধারণ করা হলো; পারিবারিক বিরোধ নিষ্পত্তির পদ্ধতি বাতলে দেয়া হলো, শরাব পানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলো এবং পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার নিয়ম-কানুন বলে দেয়া হলো। এভাবে খোদা ও তাঁর বান্দাদের সাথে একজন সৎ লোকের সম্পর্ক সম্বন্ধে মুসলমানদেরকে অবহিত করা হলো। সেই সঙ্গে আহলি কিতাবদের ভ্রান্ত আচরণ ও অসঙ্গত জীবন যাপন পদ্ধতির সমালোচনা করে তাদের দোষ-ত্রুটিগুলো সুস্পষ্ট রূপে তুলে ধরা হলো এবং মুসলমানদেরকে এ ধরণের ভ্রান্তি থেকে বেঁচে থাকার জন্যে সতর্ক করে দেয়া হলো।
বস্তুত ইসলামী আন্দোলনের এ দিকটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ এবং এর সংশোধন ছাড়া বাতিলের মুকাবিলায় তার সাফল্য অর্জন কখনোই সম্ভব নয়। অন্য কথায়, ইসলামী আন্দোলনের অগ্রসেনাদের শুধু ব্যক্তিগত নৈতিকতার দিক থেকেই বাতিলপন্থীদের চেয়ে উন্নত হওয়া যথেষ্ট নয়; বরং অন-ইসলামী সমাজের তুলনায় সর্বদিক থেকে শ্রেষ্ঠ একটি আদর্শ সমাজের দৃষ্টান্ত স্থাপন করাও তাদের কর্তব্য। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্যে কোনো বিশেষ ধরণের উদ্যোগ-আয়োজনের প্রয়োজন নেই; বরং আন্দোলনের অগ্রসেনাদের মধ্যে খোদানির্ভরতা ও খোদাপ্রেমের গুণাবলী সৃষ্টি হতে থাকলে স্বভাবতই এরূপ ফলাফল প্রকাশ পেতে থাকে। এ কারণেই একজন নবীর সংস্কারক ও বিপ্লবাত্নক আন্দোলন অন্যান্য সমস্ত আন্দোলনের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে থাকে। নবী সাধারণ লোকদের মধ্যে আদর্শ প্রচার করার জন্যে যতোটা অস্থির হয়ে থাকেন, তাঁর অনুবর্তীদের শিক্ষা-দীক্ষা ও সংশোধনের প্রতি তার চেয়ে অনেক বেশি মনোযোগী হয়ে থাকেন। ইসলামী আন্দোলনের এই বৈশিষ্ট্য-বিশেষত্ব সূরা নিসা বক্তব্যেও প্রতিভাত হয়েছে। এই সূরায় নৈতিকতা, কৃষ্টি-সভ্যতা, সামাজিকতা ইত্যাদি বিষয়ে আইন-কানুন বর্ণনার পাশাপাশি দাওয়াত ও তাবলীগের প্রতিও লক্ষ্য রাখা হয়েছে এবং মুশরিক ও আহলি কিতাবদেরকে যথারীতি সত্য দ্বীনের দিকে আহবান জানানো হয়েছে।
সূরা মায়েদা হুদাইবিয়া সন্ধির পর প্রায় সপ্তম হিজরীতে অবতীর্ণ হয়। হুদাইবিয়ার সন্ধি-চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে মুসলমানরা ঐ বছর ‘উমরা’ করতে পারে নি। তখন স্থির করা হয়েছিলো যে, হযরত (স) পরবর্তী বছর কা’বা জিয়ারত করতে আসবেন । তাই ঐ সময়ের পূর্বে কা’বা জিয়ারত সম্পর্কে বহু নিয়ম-কানুন বাতলে দেবার প্রয়োজন হলো। এ ছাড়া কাফিরদের বাড়াবাড়ি সত্ত্বেও মুসলমানরা স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে কখনো যাতে সীমালংঘন না করে, সে সম্পর্কে তাদেরকে সতর্ক করে দেয়া হলো।
এ সূরাটি (সুলা মায়েদা) যখন অবতীর্ণ হয়, তখন পর্যন্ত মুসলমানদের অবস্থা অনেক বদলে গিয়েছিলো। ওহুদ যুদ্ধের পরবর্তীকালে মুসলমানরা যে রূপ চারদিক দিয়ে বিপদ পরিবেষ্টিত হয়ে পড়েছিলো, এ সময়টা ঠিক সে রকম ছিলো না। এ সময় ইসলাম নিজেই একটি প্রচণ্ড শক্তির রূপ পরিগ্রহ করেছিলো এবং ইসলামী রাষ্ট্রও যথেষ্ট সমপ্রসারিত হয়েছিলো। মদীনার চারদিকে দে-দুশ’ মাইলের মধ্যকার সমস্ত বিরোধী গোত্রের শক্তি এ সময় ভেঙে পড়েছিলো এবং খোদ মদীনা থেকে বিপজ্জনক ইহুদীগণ সমূলে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিলো। কোথাও কিছু অবশিষ্ট থাকলে তারাও মদীনা সরকারের অধীনতা স্বীকার করে নিয়েছিলো। মোটকথা, এ সময় এ সত্য স্পষ্টত প্রতিভাত হয়ে উঠলো যে, ইসলাম শুধু কতিপয় আকীদা-বিশ্বাসেরই সমষ্টি নয়, যাকে প্রচলিত ভাষায় ‘ধর্ম’ বলা যায় এবং যার সম্পর্ক কেবল মানুষের মন-মগজের সঙ্গে বরং ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন-পদ্ধতি, যার সম্পর্ক মানুষের মন-মগজ ছাড়াও তার পূর্ণ জীবনের সঙ্গে; সমাজ, রাষ্ট্র, যুদ্ধ, সন্ধি সব কিছুই তার অন্তর্ভুক্ত। পরন্ত এ সময় মুসলমানরা বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছিলো। তারা যে জীবন পদ্ধতিকে (দ্বীন) বুঝে-শুনে গ্রহণ করেছিলো , তার ভিত্তিতে তারা নিজেরা নির্বোধ জীবন যাপন করতে পারছিলো। বাইরের অন্য কোনো জীবন পদ্ধতি বা আইন-কানুন তাদের গতিরোধ করতে পাছিলো না; বরং তারা এই দ্বীনের দিকে অন্যান্য লোকদেরকেও আহবান জানাতে সমর্থ হচ্ছিলো।
এ সময় মুসলমানদের নিজস্ব একটি কৃষ্টি-সভ্যতা গড়ে উঠেছিলো এবং অন্যান্য কৃষ্টি-সভ্যতা থেকে তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হতে লাগলো। মুসলমানদের নৈতিক চরিত্র, তাদের জীবন যাপন পদ্ধতি, তাদের আচার-ব্যবহার-এক কথায় তাদের জীবনের সমগ্র কাঠামোই ইসলামী নীতির ছাঁচে ঢালাই হতে লাগলো। অন্যান্য জাতির মুকাবিলায় তারা সুস্পষ্ট বৈশিষ্ট্য ও স্বাতন্ত্র্যের অধিকারী হয়ে উঠলো। তাদের নিজস্ব দেওয়ানী ও ফৌজদারী আইন প্রচলিত হলো; নিজস্ব আদালত ও কোর্ট-কাচারী বসলো; লেনদেন ও বেচা-কেনার নিজস্ব পদ্ধতি চালু হলো; উত্তরাধিকার সম্পর্কে একটি স্থায়ী বিধান জারি হলো। এ ছাড়া বিবাহ ,তালাক, পর্দা এবং এ ধরনের অন্যান্য বিষয়েও তাদের নিজস্ব আইন-কানুন চালু হলো। এমন কি তাদের উঠা-বসা, খানা-পিনা ও মেলামেশার নিয়ম-কানুন সম্পর্কেও সুস্পষ্ট পথ-নির্দেশ দেয়া হলো।
সূরা মায়েদার হজ্জ সংক্রান- নিয়মাবলী, খাদ্য-দ্রব্যে হারাম-হালালের বাচ-বিচার, অযু-গোসল ও তায়াম্মুমের নিয়মাবলী, শরাব ও জুয়ার প্রতি নিষেধাজ্ঞা, সাক্ষ্য আইন সম্পর্কিত নির্দেশাবলী, বিচার ও ইনসাফের ওপর কয়েম থাকার তাগিদ ইত্যাদি সহ ইসলামী সমাজ গঠনের জন্যে অপরিহার্য বিষয়াদি বিবৃত হলো। তাই এর প্রতিটি বিষয়ের প্রতিই অতীব গুরুত্ব আরোপ করা হলো।
উমরা উদযাপন
হুদাইবিয়া সন্ধির একটি শর্ত ছিলো এই যে, মুসলমানরা পর বছর এসে উমরা উদযাপন করবে। তাই পর বছর অর্থৎ সপ্তম হিজরী সালে হযরত (স) মুসলমানদের এক বিরাট কাফেলা নিয়ে কা’বা জিয়ারতের মনস্ত করলেন। এ উপলক্ষে সাহাবীদের মধ্যে এক আশ্চর্য রকমের আনন্দ ও উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হলো। এ দৃশ্য কাফির কুরাইশদের অন্তরে হিংসা-বিদ্বেষের চাপা আগুন আবার জ্বালিয়ে দিলো। এমন কি তাদের ইচ্ছা মাফিক সম্পাদিত সন্ধি-চুক্তিকে এখন নিজেদের কাছেই অর্থহীন বলে মনে হতে লাগলো।
অধ্যায় ১২ : ইসলামী রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
রিসেন্ট ব্লগ পোষ্টস
বিষয়শ্রেণী
রাইটার
প্রিয়-ক্লিক
কিছু বই
- অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা
- অর্থনীতিতে রাসূল (সা) এর দশ দফা
- আদর্শ মানব মুহাম্মদ (সা)
- আসহাবে রাসূলের জীবনকথা
- ইসলাম ও জিহাদ
- ইসলাম পরিচিতি
- ইসলামী আন্দোলন : সাফল্যের শর্তাবলী
- ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক
- ইসলামী আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি
- ইসলামী দাওয়াত ও কর্মনীতি
- ইসলামী নেতৃত্বের গুণাবলী
- ইসলামী বিপ্লবের পথ
- ইসলামী রেনেসাঁ আন্দোলন
- ইসলামী সমাজে মজুরের অধিকার
- একটি আদর্শবাদী দলের পতনের কারণঃ তার থেকে বাঁচার উপায়
- চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান
- দায়ী’ ইলাল্লাহ - দা’ওয়াত ইলাল্লাহ
- নামাজ কেন আজ ব্যর্থ হচ্ছে
- নামায-রোজার হাকীকত
- মোরা বড় হতে চাই
- যাকাতের হাকীকত
- রাসূলুল্লাহর বিপ্লবী জীবন
- শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী ও তাঁর চিন্তাধারা
- সত্যের সাক্ষ্য
- হেদায়াত
0 comments: