অধ্যায় ১৯ : বিদায় হজ্জ্ব ও ভাষণ

আল্লাহর রাসূলের হাজ্ব
হিজরী দশম সন। রাসূলুল্লাহ (সা) হাজ্জ পালনের জন্যে তারা মক্কায় আসেন। এই হাজ্জে লক্ষ্যাধিক মুসলিম সমবেদ হন।
অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালন করে তিনি আরাফাত প্রান্তরে পৌঁছেন। আরাফাতের বুকে দাঁড়িয়ে আছে জাবালুর রাহমাত বা রাহমাতের পাহাড়। এই পাহাড়ের গায়ে দাঁড়িয়ে আল্লাহর রাসূল (সা) উপস্থিত মুসলিমদের উদ্দেশ্যে এক ভাষণ দেন।
ভাষণের একাংশে তিনি বলেন, শোন, সব জাহিলী বিধান আমার দুই পাশের নীচে। অনারবদের উপর আরবদের ও আরবদের উপর অনারবদের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই। তোমরা সবাই আদমের সন্তান। আর আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে মাটি থেকে।
মুসলিমরা পরষ্পর ভাই-ভাই।
তোমাদের অধীন ব্যক্তিগণ!
তোমাদের অধীন ব্যক্তিগণ!
তোমরা যা খাবে তাদেরকে তাই খাওয়াবে।
নিজেরা যা পরবে তাদেরকে তাই পরতে দেবে।
জাহিলী যুগের সব রক্তের বদলা বাতিল করে দেয়া হয়েছে। সর্বপ্রথম আমি নিজ খান্দানের রাবিয়া ইবনুল হারিসের পুত্রের রক্তের বদলা বাতিল করে দিলাম। জাহিলী যুগের সমস্ত সুদ বাতিল করে দেয়া হয়েছে। সর্বপ্রথম আমি নিজ খান্দানের আলআব্বাস ইবনু আবদিল মুত্তালিবের সুদ বাতিল করে দিলাম।
নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। নারীদের উপর তোমাদের ও তোমাদের উপর নারীদের অধিকার রয়েছে।
আজকের এই দিন, এই মাস ও এই শহর যেমন সম্মানার্হ, তোমাদের রক্ত, সম্পদ ও ইজ্জত তেমনি সম্মানার্হ। আমি তোমাদের মাঝে একটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, তা দৃঢ়ভাবে ধরে থাকলে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। আর তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব।
আল্লাহর সর্বশেষ বাণী
ভাষণ শেষে আল্লাহর রাসূল (সা) বলেন,
আল্লাহ তোমাদেরকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন, তোমরা কি বলবে?
মুসলিমরা বললেন, আমরা বলবো আপনি আমাদের কাছে আল্লাহর পয়গাম পৌঁছে দিয়েছেন।
রাসূল (সা) বললেন,
আল্লাহ আপনি সাক্ষী থাকুন।
আল্লাহ আপনি সাক্ষী থাকুন।
এই সময়ে নাযিল হয় আল কুরআনের সর্বশেষ আয়াত
আজকে আমি তোমাদের দীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম। আমার নিয়ামত পূর্ণ করে দিলাম। আর দীণ হিসেবে কেবল ইসলামকেই তোমাদের জন্য অনুমোদন করলাম। সূরা আল মায়িদা :৩
সর্বশেষ আল্লাহর রাসূল (সা) বলেন,
তোমরা যারা উপস্থিত অনুস্থিতদের কাছে এই সব পৌঁছিয়ে দেবে।
রাসূলের (সা) শেষ ভাষণ
হিজরী একাদশ সন।
সফর মাসের মাঝামাঝি।
আল্লাহর রাসূল (সা) অসুস্থ হয়ে পড়েন।
ক্রমশ: তাঁর অসুস্থতা বাড়তে থাকে। তিনি এত দুর্বল হয়ে পড়েন যে ছালাতের ইমামতি করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হচ্ছিলো না। তাই আবু বকর (রা) ইমামতি করতে থাকেন।
মাঝখানে একদিন তিনি খানিকটা সুস্থ হয়ে মসজিদে আসেন।
উপস্থিত মুসলিমদের উদ্দেশ্যে একটি ভাষণ দেন।
এটাই তাঁর জীবনের সর্বশেষ ভাষণ।
ভাষণে তিনি বলেন,
আল্লাহ তাঁর এক বান্দাকে দুনিয়ার নিয়ামত কবুল করার অথবা আল্লাহর কাছে যা কিছু আছে তা কবুল করার ইখতিয়ার দিয়েছেন। বান্দা আল্লাহর নিকটের জিনিসই কবুল করে নিয়েছে।
আমি সবচাইতে বশী ঋণী আবু বকরের সম্পদ ও তার সাহচর্যের কাছে।
দুনিয়ায় কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে আবু বকরকেই গ্রহণ করতাম।
কিন্তু বন্ধুত্বের চেয়ে ইসলামের ভ্রাতৃত্বই উত্তম।
শোন, অতীতের কাউমগুলো তাদের নবী ও পূন্যবান ব্যক্তিদের কবর গুলোকে ইবাদাতগাহ বানিয়ে নিয়েছে।
তোমরা এরূপ করো না। আমি তোমাদের স্পষ্টভাবে নিষেধ করছি।
হালাল ও হারাম আমার প্রতি আরোপ করা যাবে না।
আল্লাহ যা হালাল করেছেন আমি তা-ই হালাল করেছি।
আর যা হালাল করেছেন আমি তা-ই হারাম করেছি।
একদিন তাঁর রোগ যন্ত্রণা খুব বেড়ে গেলো
তিনি কখনো চাদর টেনে মুখের উপর দেন। কখনো তা সরিয়ে নেন।
এ অবস্থায় তিনি বলে উঠেন।
ইয়াহুদী ও নাসারাদের প্রতি আল্লাহর অভিশাপ।
তারা তাদের নবীদের কবরকে ইবাদাতগাহ বানিয়ে নিয়েছে।
ইন্তিকাল
হিজরী একাদশ সন।
রবিউল আওয়াল মাস। সোমবার।
দিন গড়াতে থাকে।
আল্লাহর রাসূল (সা) বারবার বেহুঁশ হতে থাকেন।
হুঁশ ফিরে এলেই তিনি এক একবার এক একটি বাক্য উচ্চারণ করতেন।
বাক্য গুলো হচ্ছে-
আল্লাহ যাদেরকে নিয়ামত দিয়েছেন তাঁদের সাথে।
হে আল্লাহ, হমান বন্ধুর সান্নিধ্যে।
তিনিই মহান বন্ধু
তাঁর অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে।
এক সময় তাঁর দুচোখ বন্ধ হয়ে গেলো।
শীতল হয়ে গেল দেহ।
ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

1 comments:

নামহীন বলেছেন...

nice page. thanks all writter. may allah all bless us.

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম