অধ্যায় ০১ : আল্লাহর পরই মাতা-পিতার হক

আল্লাহ তাআলা বলেন; আপনার প্রতিপালক ফায়সালা করে দিয়েছেন যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদাত করবে না এবং মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে। ১

আল্লাহ তাআলা বলেন: আমি বনী ইসরাঈলের নিকট থেকে অঙ্গীকার নিয়েছি যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারো উপাসানা করবে না এবং মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে।২

তোমার আল্লাহর ইবাদাত-বন্দেগী করো, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না। আর মাতা-পিতার সাথে সৎ ও সদয় ব্যবহার করো।৩

তিনি আরো বলেন : তোমরা আল্লাহর সাথে অপর কাউকে শরীক করো না, মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করো।৪

তিনি অন্য এক আয়াতে বলেন: তোমরা মাতা-পিতা যদি আমার সাথে এমন সব বিষয়ক শরীক করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই, তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহঅবস্থান করবে।৫

উপরোক্ত আয়াতসমূহে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগী করার ও তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করার নির্দেশের পাশাপাশি মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অতএব, আল্লাহর হকের বড় হক হচ্ছে, মাতা-পিতার হক।


মাতা-পিতার অধিকার ও তাঁদের প্রতি সদ্ব্যবহারের বিবরণ

সদ্ববহার বলে হয়, মাতা-পিতার প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া, তাদের সাথে সুন্দর ও কোমল আচরণ করা, তাঁদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া, তাদের সাথে সুন্দর ও কোমল আচরণ করা, তাঁদের প্রতি দয়া পরবশ হওয়া ও যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা, তাদের প্রতি যত্নবান হওয়া এবং তাঁদের অবস্থার প্রতি লক্ষ্য রেখে তাঁদের সেবাযত্ন করা ও তাদের যাবতীয় প্রয়োজন পূরণ করা।১

ইমাম আবুল লাইস সমরকন্দী (রা) সন্তানের ওপর মাতা-পিতার অধিকার এবং মাতা-পিতার সাথে সন্তানের সদ্ব্যবহার সম্পর্কে লিখেছেন, তাঁদের যখন পানাহারের প্রয়োজন হয় তখন তাঁদেরকে পানাহার করানো। তাঁদের পোশাকের প্রয়োজন হলে পোশাক-পরিচ্ছদ দেয়া। তাঁদেরকে যখন যে সেবাযত্নের প্রয়োজন হয় তখন সেই সেবা প্রদান করা। তাঁরা ডাকলে সানন্দে তাঁদের ডাকে সাড়া দেয়া, তাঁরা কোন কাজের আদেশ করলে তা পালন করা, তাঁদের আগে না হাটা, তাঁদের সামনে ও উপরে না বসা। তাঁদের পিছনে ও নীচে বসা এবং সব সময় তাঁদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা। তাঁদের নাফরমানী ও অবাধ্যতা থেকে দূরে থাকা।২
_______________________________
১। সালেহ ইবন আবদুর রহমান ইবন হুমাইদ, আবদুর রহমান ইবনু মুহাম্মাদ ইবনে মাল্লূহ (এর তত্ত্ববধানে রচিত), মাসূআহ নাদুরাতুন নাঈম, দারুল ওয়াসীলা, ৩য় সং, ১৪২৫ হিজরী, ২০০৪ ইং, ৩ খ, পৃ. ৭৬৭; ইমাম বুখারী, আদারুল মুফরাদ, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওয়াকফ ও ইসলামী বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১৪০১, পৃ. ১০,১১।
২। নাদরাতুন নাঈম, ৩ খ, পৃ. ৭৭৯।


মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করা নবীগণের বৈশিষ্ট্য

আল্লাহ তাআলা বলেন : হে ইয়াহইয়া! দৃঢ়তার সাথে এই গ্রন্থে ধারণ করো। আমি তাকে শৈশবেই বিচার বুদ্ধি ও প্রজ্ঞা দান করেছিলাম এবং নিজের পক্ষে থেকে দয়াদ্রতা ও পবিত্রতা দান করছি। সে ছিল পরহেযগার। মাতা-পিতার অনুগত এবং সে উন্নত নাফরমান ছিলো না।৬

১। সূরা বানী ইসারাঈল : ২৩
2| সূরা আল-বাকারা : ৮৩
৩। সূরা আন-নিসা : ৩৬
৪। সূরা আল-আনআম : ১৫১
৫। সূরা লুকমান : ১৫৩
৬। সূরা মারইয়াম : ১২-১৪

(ঈসা (আ) বলেন) তিনি (আল্লাহ) আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, যতদিন জীবিত থাকি ততদিন নামায কায়েম ও যাকাত আদায় করতে এবং জননীর অনুগত থাকতে।১



ক্ষেত্রে বিশেষে মাতা-পিতার সেবা করা জিহাদের চাইতে উত্তম

মুআবিয়া ইবন জাহিমা আস সুলামী (রা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সালাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং পরকালীন নাজাত লাভের উদ্দেশ্যে আপনার সাথে জিহাদে যেতে চাই। তিনি বললেন : আফসোস তোমার জন্য! তোমার মা কি বেঁচে আছেন? আমি বললাম, হ্যাঁ, বেঁচে আছেন। তিনি বললেন যাও, তার খেদমতে আত্মনিয়োগ

করো। এরপর আমি অন্যদিক থেকে এসে আরয করলাম, হে আল্লাহ রাসূল! আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালীন মুক্তির আশায় আপনার সাথে জিহাদে যেতে চাই। তিনি বললেন: আফসোস তোমার জন্য! তোমার মা কি বেঁচে নেই? আমি বললাম, হ্যাঁ, বেঁচে আছেন। তিনি বললেন ; যাও তাঁর সেবা করো। অতপর আমি তাঁর সামনের দিক দিয়ে এস বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালীন সফলতা লাভের আশায় আপনার সাথে জিহাদে শামিল হতে চাই। তিনি বললেন; হ্যাঁ, বেঁচে আছেন। তিনি বললেন; যাও তাঁর সেবা করো। অতপর আমি তাঁর সামনের দিক দিয়ে এসে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালীন সাফলতা লাভের আশায় আপনার সাথে জিহাদে শামিল হতে চাই। তিনি বললেন; আফোসোস তোমার জন্য! তোমার মা কি বেঁচে নেই? আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার মা বেঁচে আছেন। তিনি আমাকে বললেন: আফসোস তোমার জন্য তুমি তোমার মায়ের চরণ আঁকড়ে ধরো। সেখানেই রয়েছে জান্নাত।১

আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি ইয়ামেন থেকে হিজরাত করে রাসূলুল্লাহ (সা) এর দরবারে এসেছে। রাসূল (সা) তাঁকে বললেন: তুমি শিরক পরিত্যাগ করে এসেছো। তবে তোমার জিহাদ বাকী রয়ে গেছে। ইয়ামেনে ইক তোমার মাতা-পিতা নেই? লোকটি বলল, হ্যাঁ আছেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন: তাঁরা কি তোমাকে জিহাদে আসার অনুমতি দিয়েছে? জবাবে লোকটি বলল, না অনুমতি দেয়নি। রাসূলুল্লাহ রাসুল্লাহ (সা) তাকে বললেন : তোমার মাতা-পিতার কাছে যাও, তাঁরা অনুমতি দিলে জিহাদের জন্য এসো। অন্যথায় তাঁদের সেবা-যত্ন করো।২
আনাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূল (সা) এর দরবারে এসে আরয করল, (ইয়া রাসূলুল্লাহ)! আমার জিহাদে যাওয়ার খুব ইচ্ছা, অথচ আমার সেই সামর্থ্য নেই। রাসূল (সা) বললেন, তোমার মাতা-পিতা কেউ বেঁচে আছেন কি? লোকটি বলল, আমার মা বেঁচে আছেন? তিনি বললেন : যাও তোমার মায়ের সেবায় নিয়জিত থেকে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ লাভ করো। এটা যদি তুমি করতে

পারো, তাহলে তুমি হজ্জ ও উমরা এবং আল্লাহর পথে জিহাদকারী হিসাবে পরিগণিত হবে।১
আব্দুল্লাহ ইবন উমার (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বললেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা) এর দরবারে এসে আরয করলো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালীন নাজাত লাভের উদ্দেশ্যে আপনার সাথে জিহাদ করার জন্য এসেছি। আমাকে আসতে দেখে আমার মাতা-পিতা দুজনই কাঁদছিলেন। একথা শুনে তিনি লোকটিকে বললেন; তুমি তাঁদের কাছে ফিরে যাও এবং তাঁদের মুখে হাসি ফোটাও, যেমনিভাবে তুমি তাঁদেরকে কাঁদিয়েছিলেন।২

আল্লাহ ইবন আমর (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বলল, আমি বলল, আমি আল্লাহর নিকট থেকে প্রতিদান পাওয়ার আশায় আপনার নিকট হিজরত ও জিহাদের বাইয়াত করছি। তিনি লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন: তোমার মাতা-পিতার মধ্যে কেউ কি জীবিত আছেন? লোকটি উত্তরে বলল, তাঁরা উভয়ে জীবিত আছেন। তিনি লোকটিকে বললেন; তুমি কি বাস্তবিকই আল্লাহর নিকট থেকে হিজরত ও জিহাদের প্রতিদান পেতে চাও? লোকটি জবাবে বললো, হ্যাঁ, পেতে চাই। রাসূল (সা) এরশাদ করলেন: তুমি তোমার মাতা-পিতার কাছে ফিরে যাও, তাঁদের সাথে সদ্ব্যবহার করতে থাকো।৩

মুয়াবিয়া ইবন জাইমা (রা) থেকে বর্ণিত, একদিন আমার পিতা জাহিমা (রা) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি জিহাদে অংশ গ্রহণ করার ইচ্ছা করেছি। এ ব্যাপারে আমি আপনার সাথে পরামর্শ করতে এসেছি। তিনি জিজ্ঞেস করলেন: তোমার মা জীবিত আছেন কি? সে বললো, হ্যাঁ, আছেন। তিনি বললেন: যাও, মায়ের খেদমতে আত্মনিয়োগ করো। কেননা জান্নাত তাঁর পায়ের কাছে।৪

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম