আমার দেখা ৫ ই মে ২০১৩

আজ ৫ মে ২০১৫। ঠিক দুই বছর পূর্বের এই দিনটি আমার মৃত্যু থেকে ফিরে আসার দিন। হয়ত সব কিছু লিখার সময় এখন ও আসেনি, কারণ সেই খুনিরা এখন ও অবৈধ ভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে আছে। বেহায়ার মত লক্ষ কোটি মানুষের অভিশাপ নিয়ে । হয়ত আমরা অক্ষম বলে।



যা হোক , ফজরের নামাজ পড়ে উত্তরা হাউজ বিল্ডিং মোড়ে আসলাম যা আমার বাসার পাশেই। রাস্তায় ইতিমধ্যে অনেক পাঞ্জাবী পড়া লোক। কোন মাদ্রাসার ছাত্র/শিক্ষক হবে হয়ত। ওরা এক লাইন হয়ে রাস্তায় বেরিকেট দিল। আমি সাধারণ পোষাকে থাকায় আমার আবেগকে আহত করল তারা। তাদের মধ্যে প্রচুর অহমিকা দেখলাম। আমার সহযোগিতা তারা নিল না । এমন কি আমাকে দাঁড়াতে ও দিল না রাস্তায় তাদের সাথে কারণ আমার পরনে যে শার্ট প্যান্ট আর তাদের আবেগ অনুভুতি ও ছিল অতিমাত্রায়। ইতি মধ্যে প্রচুর সংখ্যক র‍্যাব পুলিশ এসে হাযির তাদের গীরে । অদূরেই আব্দুল্লাহপুর পলওয়েলের দিকে থাকালাম, দেখি ব্যাপক পাঞ্জাবী আর টুপি পরা মানুষ।




আমাদের বাসার ড্রাইভার কাম কেয়ার টেকার, যিনি আবার আমাদেরই দ্বীনি ভাই । সে সাইকেল নিয়ে আসলে তার কাছ থেকে সাইকেল নিয়ে টঙ্গী ব্রীজের দিকে রওয়ানা দিলাম দেখার উদ্দ্যেশে, কিন্তু উপস্থিত লোকদের মধ্যে কিছু গোঁয়ার প্রকৃতির লোক আমার সাইকেলে লাটি দিয়ে আঘাত করে বসে এবং আমাকে সাইকেল থেকে নেমে যেতে বাধ্য করে। তবু কিছুদূর পায়ে হেটে কিছু অংশ সাইকেলে চড়ে টঙ্গী বাজার পর্যন্ত যাই। ইতি মধ্যে নেমে আসে মশুল ধাঁরে বৃষ্টি । অনেকে বৃষ্টিতে ভীজে নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবর স্লুগানে মুখরিত করে দিক বেদিক । আমি অনেকাংশে ভীজে যাই বৃষ্টিতে তবু আনন্দ সীমাহীন কারণ নাস্তকদের আজ গণজাগরণ কি জিনিষ বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

নাস্তা ও পাঞ্জাবী পড়ার উদ্দ্যেশ্যে বাসায় আসি কারণ একেতো কাপড় ভিজা অন্যদিকে পরনে পাঞ্জাবী না থাকায় অন্যরা আমাকে সহজে নিচ্ছে না । পরে মোটর সাইকেল নিয়ে ভিতরের রাস্তা হয়ে পল ওয়েল এর মোড়ে আসি । সেখানে রাত জাগা অনেক মুসাফির।যারা ছিল ক্লান্ত শ্রান্ত শুয়ে অথবা আধা আধা ঘুমে কাহিল অবস্তায়। আমরা সাংগঠনিক ভাবে ও ব্যক্তি পর্যায়ে কালেকশান করে তাদের কলা রুটি বিস্কুট পানি যা পাওয়া গেছে সামনে তা এই বিতরণ করি দ্বীনি অনুভূতিতে ।



ইতি মধ্যে রাস্তায় শুরু হল বিক্ষিপ্ত আলোচনা, বক্তব্য, ওয়াজ ও উদ্দীপনা মূলক কথা।

যার কাছে হ্যান্ড মাইক ছিল তার কাছেই ভীড়। এক জায়গায় একটি মাইক ছিল আমরা কয়জন পরিকল্পিত ভাবে বক্তব্য দেওয়ার জন্য মনোনীত করলাম কিছু ভাইকে। সু শৃঙ্খল ভাবে বসিয়ে দিলাম লোকজনকে । নিজে ও বসে পড়লাম রাস্তায়। বক্তাদের উৎসাহ দিলাম। পার্শ্বে আরেক জায়গায় জটলা আমার মনে হল তারা হিজবুতি । নিজেদের আলাদা করে বক্তব্য চালিয়ে যাচ্ছে । একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনারা কারা? এড়িয়ে গেল। আমি ও আর খুচালাম না বিচ্ছিন্ন হওয়ার জন্য ।

ইতি মধ্যে যোহরের সময় হয়ে গেল। বাসায় গিয়ে খাবার খেয়ে নিলাম । শুনলাম রওয়ানা দেওয়া হবে মতিজিলের দিকে । আমি ও বের হয়ে পড়লাম মোটর সাইকেল নিয়ে। পিছনে নিলাম আরো দুইজন দ্বীনি ভাইকে। কিন্তু এত লোক রাস্তায় চলা দায়। মাঝে মাঝে স্লোগান দিলাম নারায়ে তাকবীর সমস্বরে সবাই বলল আল্লাহু আকবর। অনেকের হাতে কালেমা খচিত পতাকা লাটির মাথায় কিংবা নিজের মাথায়।



অনেক কষ্টে শিষ্টে আগাতে থাকলাম বিশাল বহরের মধ্যে যেন মক্কা বিজয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। স্লোগানে যেন গলা ফেটে রক্ত বেরুবে। তবু থামবেনা স্লোগান, থামবে না এই মিছিল।। নাস্তিকের আস্তানা, জ্বালিয়ে দাও গুঁড়িয়ে দাও.....

খিলক্ষেত পার হয়ে জিয়া কলোনির পাশে এসে থামলাম । অনেকের হাটতে হাটতে পায়ে পুস্কা পড়ে যাওয়ায় পিছিয়ে পড়েছে। সবাই কে একত্রিত করার উদ্দ্যেশেই থামলাম। আবার যাত্রা শুরু হল এক আল্লাহ্‌ এক আল্লাহ্‌ , লা ইলাহা ইল্লাহ সহ নানা স্লোগান দিতে দিতে। কেও অতি আবেগে বা স্বাভাবিক মনে করে হাসিনা বা সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিলেই মুরব্বীরা থামিয়ে দিতেন। শুধু নাস্তিকদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে বলতেন। আবার কওমিরা পূর্ব থেকেই আওয়ামীদের ভোট দিত এই কারণে ও হতে পারে।

আমি একটু এগিয়ে গেলাম দেখি মহাখালী ফ্লাই ওভারের নীচে নাস্তিকেরা ব্যানার লাগিয়ে কিছু প্ল্যাস্টিকের চেয়ার সাজিয়ে বসে আছে। মনে মনে হাসলাম। শাহরিয়ার কুলাঙ্গার কে দেখি নাই । পরে শুনেছি সে নাকি বিশাল জন শ্রুতে সেলুনে লুকিয়ে আত্ন রক্ষা করেছে। এগিয়ে গেলাম একা একাই কিন্তু না সামনে ও জনতার শ্রুত । দেখলাম এরশাদের পার্টি ও পানি মুড়ি দিচ্ছে মিছিল কারীদের। আসলে সে দিনের যাত্রা ছিল পোরায় আবেগ তাড়িত। কি হবে কি করবে কতক্ষণ চলবে? কি করতে হবে কোন নির্দেশনা ছিল না। তবু থেমে নেই বাঙ্গালী মুসলমানেরা। আজকে তারা পাইল বুঝিয়েই ছাড়বে গন জাগরণ কারে কয়? তার মধ্যে শত প্রতিভার ও বিকাস দেখলাম স্লোগানের নানা ডাইমেনশনে।

 



এগিয়ে গেলাম সাথে ছিল কলেমার পতাকা। নাইটেঙ্গেল মোড় হয়ে বায়তুল মোকারমের দিকে যাব। মুহুর্মুহু গুলির শব্দ । পথচারীরা নিষেধ করল ওইদিকে যেতে । ঘুরিয়ে নিলাম মোটর সাইকেল । বি এন পি অফিসের সামনে অপেক্ষা করলাম । উদ্দেশ্য জন শ্রুত বায়তুল মোকারমের দিকে মুব করানো । না পারলাম না । তৃষ্ণার্ত ছিলাম পানি খেলাম। আমি ও অগ্রসর হলাম মিছিলের সাথে। পৌছলাম শাপলা চত্ত্বরের সোজা পশ্চিম দিকের অর্থাৎ বায়তুল মোকারম এর কাছের মোড় । মসজিদের দিকে অগ্রসর হতে চাইলাম মোটর সাইকেল রেখে। সাউন্ড গ্রেনেডের কলিজা কাপানো শব্দ আর গুলাগুলি । রক্তাক্ত দেহ নিয়ে কারো ফিরে আসা। কারো সারা শরীর বুলেটে জাজরা। কেউ রিক্সা ব্যান এ করে কাউকে এম্ব্যুল্যান্সে করে পাঠানো হচ্ছে ইসলামী ব্যাঙ্ক হাসপাতালে কিংবা অন্য কোন হাসপাতালে। চারদিকে যুদ্ধের দামামা। শুনলাম আওয়ামী গুন্ডা বাহিনী কয়েক জনকে শহীদ করে ফেলেছেন। আকাশে উড়ছে র‍্যাবের হেলিকপ্টার। রাস্তায় বিক্রি করছে কালেমা খচিত ব্যান্ড । কিনে নিলাম একটা। ফিরে আসলাম বি এন পি অফিসের সামনে ।উদ্দ্যেশ্য মোটর সাইকেল রাখা । তখন সম্ভবত ৪।০০ টা বাজে । চারদিকে গুলির শব্দ । কেও নিরাপদ আশ্রয়ে মসজিদের ভিতর। আর কেও আত্বীয় স্বজনের বাসায়। বি এন পি অফিসের পিছনে পরিচিত এক ভাই থাকত । সে বাসায় ছিল না । কল ও ধরে না । তার পরিচয় দিয়ে দারোয়ান কে ম্যানেজ করে মোটর সাইকেল রাখলাম। বের হয়ে আসরের নামাজ পড়লাম। মসজিদে কাদুনে গ্যাসের দোয়া। বুলেটের ঝন ঝন শব্দ। নামাজ পড়েই বের হয়ে পড়লাম রাস্তায়। রাস্তায় ইটের টুকরা কাঁচের টুকরা। আল্লাহর দোহায় দিয়ে ও কোন হেফাজতিকে মসজিদ থেকে বাহির করতে পারিনি সে দিন। রাস্তায় কিছু ছোট ছোট ছেলে সম্ভবত শিবিরের হবে । তাদের যে সাহস দেখেছি সে দিন। বুক পেতে দেয় তবু পিছু হটে না । সে দিন জামাত শিবিরের ছেলেরা প্রতিরোধ গড়ে না তুললে হেফাজতের পক্ষে এক ঘণ্টাও টিকে থাকা সম্ভব হত না শাপলা চত্ত্বরে। তবু কতক্ষণ লড়াই করবে তারা । বি এন পি অফিসের পূর্ব পার্শের মসজিদ গলিতে আটকে পড়ি । কিছুক্ষণ পর গলিতে দাঁড়ানো ও মুশকিল। গলি মুখে দাড়িয়ে সরাসরি গুলি করছে পুলিশ। এক পর্যায়ে চারদিকের অবস্থা দেখা জরুরী মনে করলাম। উঠে গেলাম রাস্তার পার্শের এক বিল্ডিং এর চাদে । দেখি বায়তুল মোকারমের দিকে আকাশে কুন্ডলি পাকিয়ে উঠছে কালো দোয়া । আকাশের নিঃসীম সীমানায় পৌছে গেছে এই দোয়া। চার দিকে লড়াই শুরু হয়ে গেছে । মতিজিলের চারদিকের প্রবেশ পথে আওয়ামী হায়েনা আর পুলিশ লীগ মিলে চতুর্মুখী আক্রমণ শুরু করেছে শুনলাম ওভার টেলিফোনে।



ইতি মধ্যে কল আসল আমার এক কর্মী গুলি বিদ্ধ। মাগরিবের আযান চলছে। গুলাগুলি ও চলছে যেন যুদ্ধ ক্ষেত্র। আযান কি আর তারা মানে? এরা যে হায়েনার দল। রাস্তা ফাঁকা । গুলি চলছে গলি মুখ লক্ষ্য করে। মসজিদে যাওয়ার উপাই নেই তাই চাদেই মাগরিবের নামাজ সেরে নিলাম। কল দিলাম বাড়ীর ড্রাইবার কাম কেয়ারটেকার ভাইকে। সে সাইকেল চালিয়ে উত্তরা হতে আমার জন্য গেঞ্জি , ট্রাউজার আর খেজুর নিয়ে পল্টন আসল অনেক কষ্টে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে । আমি নামলাম বাড়ীর ছাঁদ থেকে। গলিতে বি এন পির কোন নেতা / কমিশনার কিছু কিচুড়ির বাক্স পাঠাইছে রিক্সা ব্যানে। আমিও নিলাম দুইটি । দুইজন মিলে খেলাম তৃপ্তিতে , হয়ত বা জীবনের শেষ খাবার। সে চলে গেল বাসায়, কারণ বাসা পুরুষ শূন্য। আমার ওয়ার্ডের একজন ভাইকে ডাকলাম । সে এল আমার কাছে। পাঞ্জাবী পাল্টালাম। নির্দেশনা আসল শাপলা চত্ত্বরে যেতে। গুলি বৃষ্টি উপেক্ষা করে ভিতরের গলি দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কল করে রওয়ানা দিলাম শাপলা চত্ত্বরে। প্রতিমধ্যে একটি মসজিদে এশার নামাজ পড়লাম। অতঃপর পৌছলাম কাঙ্ক্ষিত শাপলা চত্ত্বর।

ইতি পূর্বের কয়েকটি সমাবেশে অবস্থান করার কথা থাকলে ও শেষ পর্যন্ত অবস্থান না করায় জনশক্তি অবস্থান করতে হবে এমন মানসিকতা নিয়ে কেউ ময়দানে এসেছে কিনা সন্দেহ। তাই যে যার যার মত ছিল । ছিল বিক্ষিপ্ত পঙ্গপালের মত বিচ্ছিন্ন যাদের এই দুর্যোগে এক্ত্রিত করা ও ছিল দুরহ ব্যাপার। তাই কোন কমান্ড দাতা ও ছিল না,অনুসরণ কারী ও ছিল না। যা হোক পৌঁছেই জামাত শিবিরের কিছু পরিচিত ভাইকে পেয়ে গেলাম শাপলা ছত্তরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে , আলহামদুলিল্লাহ।

সারা দিনের ক্লান্তিতে শরীর আর চলছিল না। কিছু পেপার জুগাড় করে রাস্তায় শুয়ে পড়লাম। যদি ও চারদিকে জ্বলছে আগুন । থামছে না বুলেটের শব্দ দিরিম দিরিম। সে এক ভয়ানক অবস্থা ।

কিছুক্ষণ পর হই হই করে সবাই উঠে গেল। অগত্যা আমি উঠলাম, যদি ও ক্লান্তি, ঘুম আর অবসাদে আক্রান্ত।



উঠে দাঁড়ালাম শোয়া থেকে । অগ্রসর হলাম মঞ্চ থেকে উত্তর দিকের রাস্তায়। ফাঁকা ফাঁকা জায়গা । লাঠি হাতে হেফাজত কর্মীরা বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেও কেও রাস্তার ডিভাইডারের লোহা লঙ্কর উপড়াচ্ছে। কেও তুলছে ফুটপাতের ইট। কেউ কাটছে রাস্তার গাছের ডালপালা। সবার উদ্দেশ্য একটাই যেন রাত টা নিরাপদে পার করতে পারে। হেফাজতের মাইক হতে নরম স্বরে ওয়াজ চলছে। বেশীর ভাগ লোক ঘুমন্ত। কিছু লোক জিকিরে মশগুল কিছু লোক নামাজেরত। না কেউ আসেনি বুক ঝাঁঝরা করতে এখনো।

হাত লাগালাম রাস্তায় বেরিকেট দিতে । চিন্তায় আসল যদি খন্দক করা যাইত?? না এত রাতে তা আর সম্ভব না, বেরিকেটে সহযোগিতা করার জন্য হেফাজতি অনেক ভাইয়ের সযোগীতা চাইলাম । না তারা বীর বাহাদুর । লাটি নিয়েই তারা হাটবে । সরকারী কুত্তা দৌড়াবে লাটি দিয়েই কিন্তু কোন বেরিকেট তৈরি করবে না...... এইদিকে কিছু কিছু খবর আসছে ছাত্রলীগ যুবলীগের জানুয়ার রা কোন কোন গলিতে অবস্থান করে কিছু ভাইকে আহত করছে। চারিদিকে ব্যারিকেট। কিছু লোক আযতা বিল বোর্ড এর উপর বাড়ী দিয়ে সাউন্ড তৈরি করছে। কিছু লোক রাস্তার সিসি ক্যামেরা ভাঙ্গছে । কিছু লোক অদূরেই টিয়ার সেল থেকে বাঁচার জন্য বা আতঙ্কিত করার জন্য রাস্তার পোস্টার ব্যানার ছিড়ে আগুন জ্বালাচ্ছে।

যা হোক এত রাতে কোন জানোয়ার বাহিনী হামলা করবে বলে মনে হল না। তাই পূর্বের জায়গায় ফিরে এসে শুয়ে পড়লাম।

মাত্র দুইমিনিট হুড়মুড় করে সবাই উঠে গেল । আমি উঠি না। আমার শক্তি নাই উঠার । বিশ্বাস ও হচ্ছে না কেও হামলা করবে। কিন্তু না । পাঁচ মিনিট যায়নি। একদম গায়ের কাছে বুলেট , পুলিশ , বি ডি আর র‍্যাব , হায়েনার দল ।

কোন রকম উঠে পাঁচ ফিট দূরে সামান্য একটু আড়াল। কলাপ সিবল গেইট দেওয়ার জন্য ওয়াল থেকে মাত্র এক ফিট গভীরে ডুকানো । আমরা দশ বার জন লোক লোকানো। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি হায়েনাদের দুগজ দূরে দাঁড়িয়ে থেকে গুলি করতে।

কিন্তু না একদল যুবক দাঁড়িয়ে গেল প্রতিরোধে। একজন সাহসী যুবক দৌড়ে আসল তাদের দিকে। দাঁড়াল রাস্তার মাজখানে উঠানো ম্যান হোল থেকে সদ্য উটানো ময়লাকে আড়াল করে। হুঙ্কার দিল সিংহ শাবকের মত। " যদি পোলা মাইয়াদের এতিম করতে চাস তবে এদিকে আয়। যদি জাহান্নামে যাইতে চাস তবে এদিকে আয়। সে কি হুঙ্কার।হুঙ্কারে থমকে দাঁড়াল শয়তানের দুসর সরকারী কুকুর বাহিনী। পড়ে গেলাম দু দলের মাঝখানে। জানোয়ারদের হাতে টর্চ লাইট বারবার খুঁজে ফিরে বিদ্রোহী বিপ্লবী যুবককে । সিলেক্টিব গুলি করে তাকে লক্ষ্য করে । সে এদিক ওদিক পাস কাটিয়ে কি যেন ছুটে মারে । জানুয়ারের দল পিছু হটে সাইটে চলে যায়। আমি পকেট হতে পেস্ট বের করে নাকে মুখে লাগাই । অন্য ভাইদের ও লাগিয়ে দিই টিয়ার সেল এর দোয়া থেকে বাঁচার জন্য। দোয়া করি মহান রবের দরবারে অনুচ্চ স্বরে হে আল্লাহ্‌ জালিমদের ধ্বংস করে দাও , আমাদের হেফাজত করো । সবায় সমস্বরে বলে উঠল আমীন । দশ পনের কি আধা ঘণ্টা এভাবে আঠকে থাকি। আশপাশ দিয়ে যাচ্ছে বুলেট। একদম কাছে চলে আসল হায়েনারা মাত্র একগজ দূরে। আর না ।যা হয় হবে। রাস্তায় কাঁচ ভাঙ্গা। সেন্ডেল হাতে নিই । দৌড়ে পনের- বিশ ফিট সামনে যাই। পা কেটে যায় বা স্প্রিন্টাল ডুকে পায়ে। সামনে গলি পথ । কিছুটা এগিয়ে আবার ফিরে আসি । সামনে এক মহিলা তার বাড়ীর গেইট খুলে দেয় ভীতরে সারা শরীর থেতলানো একভাইকে মালিশ করছে স্বতীর্থ ভাইয়েরা। আমি নিচের ওয়াশ রুমে ডুকে হাত মুখ পরিষ্কার করলাম। দ্বায়িত্বশীল কে কল দিলাম। বিজি বিজি । এক সময় ফেলাম । চলে আসার নির্দেশ দিলেন। গলি পথ ভূতুড়ে অন্ধকার । সাথের জনকে বললাম পাঞ্জাবী ইন করতে । তা করল । সামনে গলিপথে আওয়ামী গুন্ডারা দাঁড়িয়ে । সারাদিন হেফাজতের ভাইদের মারতে মারতে তারা ও মনে হয় ক্লান্ত। দুজন দূরত্ব বজায় রেখে হাটলাম অন্ধকার গলি পথে । সঙ্গীকে পাঞ্জাবী ইন করায় টিটকারী মেরেই ছেড়ে দিল আওয়ামীরা। বেঁচে গেলাম আরেক দফা। ভিতরের গলি পথে কোন রকম পৌছালাম মোটর সাইকেল রাখার স্থানে। ঘুম থেকে ডেকে তুললাম দারোয়ানকে। সে সদয় হল । বের করে দিল মোটর সাইকেল । দুইজনে প্রাণ নিয়ে ছুটলাম রাজপথের দিকে। রাস্তায় সারি সারি হেফাজত কর্মী ছুটছে লাইন ধরে আপন ঠিকানায়। মাঝে মাঝে হায়েনার দল উতপেতে আছে। রাস্তার রং সাইড ধরে এগিয়ে চলল মোটর বাইক। যখন বাসায় পৌছি তখন মোয়াজ্জিন ডাক দিচ্ছে আসসালাতু খায়রুম মিনান নউম, আসসালাতু খায়রুম মিনান নউম । বাইক রেখে মসজিদে গিয়ে ফজরের সালাত আদায় করে আল্লাহর শুক্রিয়া আদায় করলাম। তারপর ঘুম দিলাম দুপুর পর্যন্ত। ততক্ষণে গুম হল খুন হল হাজারো ভাই। আমি শুধু হারালাম আমার প্রিয় পছন্দের মোবাইল খানা হাজারো প্রিয়জনের নাম্বার সহ।তাই তাদের অনেকের সাথে আজো যোগাযোগ করতে পারিনা। ধন্যবাদ সকল কে আল্লাহ্‌ হাফেজ।


0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম