হিযবুত তাহরীর এর “খিলাফাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠা” করার দাবীর উসূল ভিত্তিক জবাব


 http://imbd.blog.com/files/2012/06/front_cover11.jpeg
“যৌক্তিকতা ও প্রয়োজনীয়তার দিক থেকে এবং ইসলামি দলিলসমূহের সুস্পষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে খিলাফতের অন্তর্ভুক্ত হওয়া প্রতিটি মুসলিমের উপর ফরয। তেমনি খিলাফতবিহীন সমাজে খিলাফতকে প্রতিষ্ঠা করাও একজন মুসলিমের উপর সমানভাবে ফরয।’’- একমাত্র হিজবুত তাহরির নামক সংগঠনই এমনটি দাবি করে আসছে। বিভিন্ন ইসলামি গ্রন্থ থেকে ইজতিহাদের মাধ্যমে তারা খিলাফতের এই পদ্ধতিটি অনুধাবন করতে পেরেছে। তাদের কথা হল, একজন মুসলিমকে অবশ্যই খিলাফতের প্রয়োজনীয়তা মানতে হবে এবং একটি এককেন্দ্রিক ইসলামি রাষ্ট্র গঠনের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে, ঠিক একটি ফরয দায়িত্ব পালনের মতোই। এই লেখাটিতে হিজবুত তাহরির ও এর চিন্তার খন্ডনে কিছু প্রসঙ্গ তুলে ধরা হলঃ

প্রথমত, আমাদের প্রশ্ন হলঃ খিলাফত কি এবং কীভাবে ইসলামি রাষ্ট্র পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হবে? এর পক্ষে কুরআন ও হাদিসের দলিলই বা কি?

প্রথমেই লক্ষণীয় যে, পবিত্র কুরআন কিংবা হাদিসের কোথাও সরাসরি অথবা আকারে ইঙ্গিতে ‘খিলাফতের অধীন একটি এককেন্দ্রিক ইসলামি রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেয়া হয়নি বা প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি সম্পর্কেও কোন কথা উল্লেখ করা হয়নি।

তাহলে খিলাফতের ধারণা ও প্রতিষ্ঠার পেছনে প্রমাণ কি?

প্রকৃতপক্ষে, খিলাফত ও একক মুসলিম রাষ্ট্রের ধারণাটি এসেছে মহানবী (স:) ও তাঁর সাহাবিদের গড়ে তোলা প্রথম ইসলামি রাষ্ট্র মদিনা থেকে। মক্কায় কুরআন নাযিল হওয়া থেকে শুরু করে মদিনায় হিজরত পর্যন্ত সমস্ত ঘটনাকে “খিলাফত” প্রতিষ্ঠার জন্য প্রমাণ হিসেবে গ্রহন করা হয়।আমরা সবাই জানি যে, রাসুল(সঃ) ও তাঁর সাহাবাগণ মদিনাতে হিজরত করেন এবং মদিনার প্রতিকূল সমাজকে পরিবর্তন করে ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। তাই একথা কেউ বলতেই পারে যে বর্তমান ‘প্রতিকুল’ সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তনে খিলাফত বা একক ইসলামি রাষ্ট্র ছাড়া আর কোন গতি নেই। তবে যখন একটি পদ্ধতিকে ‘ফরয’ বলে দাবি করা হয়, তখন শুধু কি একটি মিল (প্রতিকূল সমাজ) থাকাই কি যথেষ্ট? একটি বর্বর সমাজ, যেখানে ইসলামের কোন ধারণা বা অস্তিত্বই ছিলনা, সেখানে ইসলাম প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি আর বর্তমান সমাজ, যেখানে জনগন মুসলিম তবে মুসলিমগণ প্রকৃত ইসলাম থেকে দূরে সরে গেছে, সেখানে ইসলামি পুনর্জাগরনের পদ্ধতি কি একই হতে পারে? অথবা, দুই সময়ের সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি সমাজের ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে একই পদ্ধতি (যার ব্যপারে কুরআন বা হাদিসের কোন সহিহ দলিল নেই) তা কি সকলের উপর ‘ফরজ’ হতে পারে?? সত্যিই কি এধরনের তুলনা করা চলে?

দুটি সমাজের দৃশ্যপট অনেক ভিন্ন হওয়ায় এবং অমিলের পরিমাণ মিলের থেকে অনেক বেশি হওয়ায় একথা কিছুতেই বলা যায় না যে, মহানবীর জীবনী তথা সিরাত থেকে খিলাফত পুনরায় প্রতিষ্ঠার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে, আর ফরয হওয়াতো অনেক পরের বিষয়। এমনকি মদিনায় প্রথম ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সাথে খিলাফত পুনরায় প্রতিষ্ঠার আদৌ কোন সম্পর্ক আছে কি না এটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

দ্বিতীয়ত, প্রশ্ন হলঃ খিলাফতের অধীন এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ‘নির্দিষ্ট পদ্ধতি’ টি ইতিহাসের সাথে কতটুকু সঙ্গতিপূর্ণ?

এখানে বলে নেয়া প্রয়োজন যে,হিযবুত তাহরির খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরন এর কথা বলে থাকে। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী এই ‘পদ্ধতিটি’ ইতিহাস তথা রাসুলের সিরাত থেকে পেশ করা হয়েছে। কিন্তু খিলাফত প্রতিষ্ঠার এই পদ্ধতিতে বেশ কিছু অসঙ্গতি দেখা যায়। যেমন, ইসলামের শুরুর দিকে রাসুল (সঃ) ও তাঁর সাহাবাগন প্রথমে মক্কায় ও পরে মদিনাতে দাওয়াত দেন। মদিনায় দাওয়াত প্রচারে তাঁরা সফল হলেও মক্কাতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছিলেন। একথা অবশ্যই সত্য যে, মহানবী (সঃ) এর মাধ্যমে দ্বীন ইসলাম পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। আর মদিনায় ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাও ছিল ইসলাম প্রতিষ্ঠারই একটি অংশ। তবে এটাও লক্ষণীয় যে একই পদ্ধতি মদিনাতে কার্যকর হলেও মক্কা কিন্তু শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিরোধিতা করে। আর পরবর্তিতে শক্তির জোরেই মক্কাতে প্রবেশ করা হয়। অতএব, ইতিহাস বলে যে একই পদ্ধতি অবলম্বন করলেই যে সব ক্ষেত্রে সাফল্য আসবে তা নয়। আর এখানেই অসঙ্গতির শুরু। রাসুলের জীবন থেকে আমরা ঠিক কোন কাজগুলিকে নির্দিষ্ট করে অনুসরণ করব ও কিভাবে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করব তা পরিষ্কার নয়। কারণ মক্কা ও মদিনার জীবনে রাসুলের কাজগুলিকে আলাদা করা অত্যন্ত কঠিন ও আপেক্ষিক। যদি আলাদাও করি তাহলে দেখব যে একই ধরনের কাজ করে দুই জায়গায় (মক্কা ও মদিনায়) দুরকম ফল এসেছে। তাই ‘শুধুমাত্র মদিনার’ পদ্ধতি অবলম্বন করা একটি অবাস্তব প্রস্তাব। আবার এটাও ঠিক যে মদিনার রূপান্তরের পেছনে মুসাব ইবন উমাইরের ভূমিকা অনেক বেশি। তিনি অনেক ক্ষেত্রেই মহানবীর পরামর্শের আগে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অনেক কাজ করেছিলেন। তাই আমরা ইতিহাস তথা রাসুলের সিরাত থেকে ‘একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি’র কোন কিছুই পাই না।

আরেকটা দিকে আমরা খেয়াল করলে দেখতে পাব যে, হিজবুত তাহরিরের দাবি অনুযায়ী নতুন এই ইসলামি রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠা করা হবে আরবে। আর যুক্তি হিসেবে বলা হচ্ছে যে কুরআন ও আরবের ভাষা অভিন্ন অর্থাৎ আরবি হওয়ায় নতুন রাষ্ট্রটি আরবেই গঠন করা উচিৎ। এখানে অবশ্যই একটি প্রশ্ন আসে, বিশেষ করে তাদের প্রতি যারা অনবরত ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলেই যাচ্ছেন।আর প্রশ্নটি হলঃ মক্কার তখনকার আরব জাতি আরবি ভাষায় ছিল সবচেয়ে পারদর্শি, তারা কুরআন এবং মুহাম্মদ(সঃ) এর অলৌকিক দিকগুলি বেশ ভালই বুঝতে পারত,তারপরও তারা ইসলামের বাণী প্রত্যাখ্যান করে। তাহলে শুধুমাত্র ভাষার অজুহাতে আরবকে বেছে নেয়া কতটুকু যুক্তিসঙ্গত?

তৃতীয়ত, ‘কিছু নির্দিষ্ট কাজ সকল যুগের সব সমাজের জন্য অবশ্য পালনীয়’- এই দাবিতে ‘খিলাফতের অধীন ইসলামি রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠা কে ফরয বলা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কারণ, নবীর সিরাত থেকে আমরা বারবার দেখতে পাচ্ছি যে ইসলামি রাষ্ট্র কেবল মদিনায় প্রতিষ্ঠিত হলেও মক্কাতে হয়নি। বরং এটা অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য যে মদিনায় খিলাফতের পদ্ধতিটি ছিল সমাজ পরিবর্তনের একটি পদক্ষেপ মাত্র। কোন কোন সমাজে এই একই উপায়ে পরিবর্তন আসতেও পারে, নাও আসতে পারে। তাই খিলাফত সকল মুসলিমের উপর ফরয হওয়া কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়।

অতএব, আমরা খিলাফত ফরয হওয়ার পক্ষে কোন শক্ত ও স্পষ্ট যুক্তি অথবা প্রমাণ দাঁড় করাতে পারছি না। আর এটাও দেখতে পাচ্ছি যে মৌলিকভাবেই রাসুলের সময় আর আমাদের সময় এক নয়, অতএব একই যুক্তিতে দুটি সময়কে বিবেচনা করা অবাস্তব। তারপর ও আমরা এটা অবশ্যই স্বীকার করি যে, খিলাফত প্রতিষ্ঠা কোন হারাম বা নীতিবিরুদ্ধ কাজ নয়। এটি অবশ্যই গ্রহণযোগ্য। তবে এটাকে ফরয বলাটাও সম্পূর্ণ অনুচিত।

আর এটাও তো ঠিক যে, রাসুল (সঃ) শুধুমাত্র খিলাফতই প্রতিষ্ঠা করেননি। বরং এমন অনেক কাজ করেছেন যা পারস্পরিক সমঝোতা ও বোঝাপড়ার মাধ্যমে সমাজে পরিবর্তন এনেছিল। তাহলে ঐ এক খিলাফতকেই কেন ফরয বলা হচ্ছে? সমাজ পরিবর্তনে একজন ব্যক্তি যে কোন হালাল পদক্ষেপই গ্রহন করতে পারেন। এখানে সমাজ পরিবর্তনই মুখ্য, খিলাফত নয়।

চতুর্থ বিষয় হলঃ সংগঠনের মূলনীতি অনুযায়ী ‘নুসরাহ চাওয়া’ বা ক্ষমতাশালীর কাছে সমাজব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য সাহায্য চাওয়াও খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য একটি আবশ্যিক দায়িত্ব।অর্থাৎ নুসরাহ চাওয়া কে ও ফরয হিসেবে ধরা হয়। প্রথমত নুসরাহ ফরয হবার পক্ষে কোন শক্ত ভিত্তি নেই। আর দ্বিতীয়ত নুসরাহ চাওয়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অবাস্তব। উদাহরণ স্বরূপ যেকোনো একনায়কতান্ত্রিক বা সামরিক সরকারই চাবে ক্ষমতা নিজেদের হাতে রাখতে। তাই নুসরাহ পাওয়া প্রায় অসম্ভব বা সম্পূর্ণ অসম্ভব। এমনকি মুসলিম বিশ্বেরই অনেক দেশের এই অবস্থা। আর সে কারণেই পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও হিযবুত তাহরির তেমন নুসরাহ যোগাড় করতে পারে নি।

এমনকি যদি কোন ক্ষমতাধর ব্যক্তি নুসরাহ দিতে রাজিও হয়ে যায় এবং ব্যক্তিগত ভাবে নিজের অবস্থান থেকে সরে দাঁড়ায়, তবে সহজেই বোঝা যায় যে সে আর সরকারের কোন অংশই থাকবে না। তাহলে তার নুসরাহ বা কোন ক্ষমতাও থাকবে না। তাহলে বোঝা গেল যে নুসরাহের প্রসঙ্গটি খিলাফত প্রতিষ্ঠার কোন গুরুত্বপূর্ণ অংশ নয় এবং এটা শুধুমাত্র একটি অনুকুল পরিবেশেই চাওয়া যাবে, জোর করা যাবে না। তবে দুঃখের বিষয় হল হিযবুত তাহরির নুসরাহ আর শক্তি ব্যবহারের মধ্যে বারবার ভুল করে ফেলছে।

তারপর,দলটি আরেকটি কথা বারবার বলে আসছে যে তারা (হিজবুত তাহরির) একটি সম্পূর্ণ অহিংস ও অনুগ্র দল এবং ঠিক মদিনার মতই শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাজ পরিবর্তনে বিশ্বাসী। যেকোনো ইতিহাস জানা লোকই বুঝতে পারবেন যে এই কথাটিও অসত্য। কারণ ইতিহাস বলে যে মহানবী মদিনায় প্রবেশের পর থেকেই মদিনার অধিবাসীরা যুদ্ধের জন্যে সদা প্রস্তুত ছিল। যে বা যারা নবীজির কর্তৃত্বের প্রতি অবিশ্বাস করবে তাদের সাথে লড়াই করতে মদিনা ছিল দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এমনকি মহানবী মদিনায় প্রবেশের পূর্বেই আকাবায় ১২ জন সাহাবাকে একটি শপথ করান (আকাবার দ্বিতীয় শপথ) যেখানে জিহাদের কথা সরাসরি উল্লেখ ছিল।অর্থাৎ মদিনাতে প্রবেশের পূর্বেই রাসুল (সঃ) রক্তপাতের সম্ভাবনা আঁচ করেছিলেন। যদিও ঘটনাচক্রে ও আল্লাহর রহমতে মদিনাতে সংঘর্ষ ছাড়াই ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়। অর্থাৎ আমরা দেখতে পাই যে রক্তপাত বিহীনভাবে মদিনার অনুকরণে নুসরাহ আদায়ের যে কথা দলটি বলে তা অবাস্তব। আর বর্তমান সমাজের যে কোন পরিবর্তনের জন্যে সংঘর্ষ আবশ্যিক, যদি না ক্ষমতাসীন দল স্বেচ্ছায় ক্ষমতা হস্তান্তর করে। আর সেই ক্ষমতা হস্তান্তর যদি জোর করে বা কারো চাপে করা হয় তবে তা হবে নিয়মবিরুদ্ধ।

সমাজে খিলাফত প্রতিষ্ঠার পক্ষে নির্ভুল দলিল হিসেবে একটিমাত্র হাদিস পাওয়া যায়, যা আবার সম্পূর্ণ প্রাসঙ্গিক নয়। আর সে হাদিসের বক্তব্য অনুযায়ী খিলাফত থেকে যে শাসক সরে দাঁড়াবে তাকে তরবারির জোরে হলেও শাসনব্যবস্থা থেকে নামাতে হবে। বর্তমান সময়ে এই হাদিসটি বিভিন্ন জিহাদ প্রধান দলগুলো ব্যবহার করে থাকে। হাদিসের সাথে মিলাতে গেলে দেখব যে এখনকার পৃথিবীতে বেশিরভাগ দেশই ধর্ম নিরপেক্ষ আর মোটামুটি সব দেশই বিপথগামী দেশ। এরকম পরিস্থিতিতে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে গেলে অনেক বেশি রক্তপাত, প্রাণহানি আর অরাজকতা হবেই। আর ইসলাম কিছুতেই এটা সমর্থন করে না। তাই আবারও বলতে হচ্ছে যে, হাদিসের প্রয়োগের সময় অনেক বেশি সাবধানী হতে হবে, কারণ নিঃসন্দেহে রক্তপাত ছাড়া খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠার আর কোন উপায়ই নেই।

এছাড়াও একটা ব্যপার এখানে স্পষ্ট করা উচিত। আমরা সবাই জানি যে সমাজে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা মুসলিমদের উপর ফরয। আর এখানেই হিযবুত তাহরিরের সকল যুক্তি। তারা বলে থাকে যে প্রতিটি ফরয বা ওয়াজিব কাজের জন্য একটি নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে যার বিশদ ব্যাখ্যা কুরআন বা হাদিসে পাওয়া যায়। নামাযের কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম আছে যেমন সুরা ফাতিহা পাঠ,রুকু করা, সিজদাহ করা ইত্যাদি। আবার সাওমের ক্ষেত্রেও দেখা যায় যে আমরা পানাহার ও বৈধ মিলন থেকে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিরত থাকি।তারা বলতে চায় যে, সমাজে ইসলাম প্রতিষ্ঠা যদি ফরয হয়েই থাকে তবে এরও নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে। আর খিলাফতই হল সেই নিয়ম বা উপায় যার মাধ্যমে সমাজে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে। নিচের কয়েকটি বিষয় এখানে লক্ষণীয়ঃ

১। যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুর মুকাবিলা করা ফরয। কিন্তু ঠিক কোন অস্ত্র দিয়ে করব তার কোন নিয়ম নেই। আমাদের কাছে যা কিছু থাকবে আমরা সেটাকেই কাজে লাগাতে পারি।

২। চুরি করার শাস্তি হিসেবে হাত কাটার বিধান আছে, তবে হাত কি দিয়ে কাটা হবে তা উল্লেখিত হয়নি। অর্থাৎ তরবারি বা, কুড়াল বা, যেকোনো ধারালো অস্ত্রই এখানে ব্যবহার করা যেতে পারে।

৩। ঠিক তেমনি ইসলাম প্রতিষ্ঠার কথাও বলা হয়েছে তবে সেটা ঠিক কোন উপায়ে করা উচিত তা বলা হয়নি। এটা ছেড়ে দেয়া হয়েছে মানুষের উপর।আরও ভাল করে বুঝানোর জন্য একটা উদাহরণ দেয়া যায়। আল্লাহর তরফ থেকে রাসুল কে বলা হয়েছিল যে মানুষকে নামাযের পথে ডাকতে, কিন্তু প্রথমেই ডাকার পদ্ধতি বলা হয়নি। তাই বলে রাসুল (সঃ) ও তাঁর সাহাবাগন বসে থাকেন নি, বা বলেননি যে, নিশ্চয়ই প্রতিটি ফরযেরই একটি পদ্ধতি আছে। বরং তাঁরা যে যেভাবে পেরেছেন মানুষকে ডেকেছেন। পরবর্তীতে আযানের নির্দেশ আসে।

তাই এটা কোন কথা না যে, প্রতিটি ফরয কাজেরই একটি নির্দিষ্ট নিয়ম থাকতে হবে। কিছু ক্ষেত্রে উল্লেখ থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই উল্লেখ থাকে না এবং তা সময়,অবস্থা ও পরিপার্শ্বের উপর নির্ভর করে। তখনই আমাদের মাথায় প্রশ্ন আসে, তাহলে খিলাফত পুনরুদ্ধারের আসল উপায় কি? অথবা সমাজে ইসলাম প্রতিষ্ঠারই বা নিয়ম কি? সত্যি বলতে এই দুটি প্রশ্নের কোন নির্দিষ্ট উত্তর নেই। প্রথমত কোন প্রমাণই নেই যে খিলাফতকে প্রতিষ্ঠিত হতেই হবে।আর নুসরাহ বা অন্য যে কোন উপায়ে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করাও অসম্ভব। তাই খিলাফত পুনরুদ্ধারের কোন উপায় নেই। আর দ্বিতীয়ত সমাজে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামের সাথে সংঘর্ষহীন যেকোনো ভাল কাজই আমরা করতে পারি। যেমন কেউ সমাজ সেবা করতে পারে বা মিশনারি জাতীয় কাজও করতে পারে। কিন্তু খিলাফতের নাম করে অযাচিত কোন কাজ করতে পারবে না। অর্থাৎ অবস্থা ও পরিপার্শ্ব বিচার করে আমাদের নির্ধারণ করতে হবে যে আমরা কোন ভাল কাজটিকে বেছে নিব। অবশ্যই মদিনার মতো করেই করতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা আমাদের নেই।

শেষে আবারও বলছি, মদিনার সমাজ আর আমাদের সমাজের অল্প কিছু মিল দেখিয়ে আর অনেক অমিলকে পাশ কাটিয়ে আমরা খিলাফতকে জোর করে চাপিয়ে দিতে পারি না। আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে ছোট্ট আরব গোষ্ঠী আর গোটা বিশ্ব কখনই এক নয়। এখনকার সময়ে আন্দোলন মানেই হানাহানি আর রক্তপাত। আর মানসিক পরিবর্তনের আগে সংঘর্ষহীন আন্দোলন কল্পনামাত্র। এমনকি রাসুলের সময়েও হুট করে কোন পরিবর্তন আসেনি। আন্দোলন করে সমাজে তখনো ইসলাম আসেনি এখনও আসবে না। ইসলামের সৌন্দর্যে বিভোর মানুষগুলোই তখন জানালা খুলে আলো প্রবেশ করতে দিয়েছিল, এখনও দিবে। সময় এখন পৃথিবীকে সেই সৌন্দর্য দেখাবার, আন্দোলনের নয়।

লেখকের ব্যাক্তিগত ব্লগ থেকে অনুবাদ করা হয়েছে।
লিখেছেনঃ ইয়ামিন জাকারিয়া
ইসলামিক মুভমেন্ট বাংলাদেশ ব্লগের জন্য অনুবাদ করেছেনঃ ফাতেমা তুজ জোহরা ধ্রুবা

মূল পোষ্ট : আইএমডিবি ব্লগ

26 comments:

কমেন্ট বলেছেন...

কিয়ামত পর্যন্ত প্রতিটি যুগ ও জনপদের সমস্যা সমাধানের সক্ষমতা রয়েছে কেবলমাত্র ইসলামী জীবনবিধানের। একারনে ইসলাম হলো সকল সময় ও পরিস্থিতির জন্য উপযুক্ত জীবনব্যবস্থা। সাম্প্রতিক মিশর নির্বাচনে ইখওয়ানুল মুসলেমিনের বিজয়ে ফেসবুকে হিজবুতি সমর্থকদের ব...িভ্রান্তিকর প্রপাগান্ডা দেখে মনে হলো এদের চিন্তাভাবনা কতটা অস্বচ্ছ এবং নির্বোধের মত! এরা প্রশ্ন তুলছে ইখওয়ান ইজরাইলে ক্যান 'জিহাদ' করবো না, ক্যান মদ নিষিদ্ধ করবো না, ক্যান শরীয়া আইন এখনি করবো না! এই তারাহুড়াপ্রবন ইসলামের অগভীর জ্ঞানসম্পন্ন সমর্থকরা জানে না, ইসলাম কখনোই হুট করে প্রতিষ্ঠা করেননি রাসুল সা: - আল্লাহও এক জনপদের সকলকে অটোমেটিক হেদায়াত দিয়ে দেননি! আর মিশরের বিপ্লবটা কোন ইসলামী বিপ্লব নয়, এটা স্রেফ একটা জাতীয়তাবাদী স্বৈরাচারবিরোধী বিপ্লব ছিলো যার মাধ্যমে সেখানের ইসলামী আন্দোলনকারী দলটি ক্ষমতায় এসেছে বহুবছরের জাহেলিয়াতের পর। হিজবুতি সমর্থকরা প্রশ্ন তোলে ইখওয়ান নাকি আমেরিকার সাথে চুক্তি করেছে! এটা যদি সত্যিও হয়, তারা কেন ভুলে যায় রাসুল সা: এর হুদায়বিয়ার সন্ধির কথা! একটা জাতীয়তাবাদী বিপ্লবে বিজয়ী একটা ইসলামী দলের জন্য ইসলামকে এগিয়ে নিয়ে যাবার সুযোগ তৈরী হয়েছে মাত্র, ধৈর্য্য ধরুন.. আর ভালো করে রাসুল সা: এর সীরাত বুঝে পড়ুন..

নামহীন বলেছেন...

apni asole khilafot buzennai

নামহীন বলেছেন...

khilafot r iqmot e deen ar modde difference ki

নামহীন বলেছেন...

jamat islam kiser jonno andolon kore?

নামহীন বলেছেন...

"‘খিলাফতের অধীন ইসলামি রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠা কে ফরয বলা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কারণ, নবীর সিরাত থেকে আমরা বারবার দেখতে পাচ্ছি যে ইসলামি রাষ্ট্র কেবল মদিনায় প্রতিষ্ঠিত হলেও মক্কাতে হয়নি।" আপনি স্বীকার করলেন মদীনায় খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো। মক্কায় ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়নি দেখে সেখান থেকে উসুল নেয়া যাবে না আপনাকে কে বলল? এটা উসুল আল ফিকহ এর কোথায় লেখা আছে? আরো অনেক অসঙ্গতি রয়েছে লেখাটিতে, উসুল আল ফিকহ এর পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে......

Ashik বলেছেন...

"কারণ, নবীর সিরাত থেকে আমরা বারবার দেখতে পাচ্ছি যে ইসলামি রাষ্ট্র কেবল মদিনায় প্রতিষ্ঠিত হলেও মক্কাতে হয়নি" আপনি স্বীকার করলেন যে মদীনায় খিলাফত প্রতিষ্ঠা হয়েছিলো মদীনায়। মক্কায় খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়নি দেখে সেখান থেকে উসুল নেয়া যাবে না আপনাকে কে বলল? এটা উসুল আল ফিকহ এর কোথায় আছে? আরো অসঙ্গতি আছে লেখাটিতে উসুল আল ফিকহ এর দৃষ্টিকোণ থেকে......

Ashik Ibn Kutub বলেছেন...

কারণ, নবীর সিরাত থেকে আমরা বারবার দেখতে পাচ্ছি যে ইসলামি রাষ্ট্র কেবল মদিনায় প্রতিষ্ঠিত হলেও মক্কাতে হয়নি" আপনিই বললেন মদীনায় প্রতিষ্ঠিত হইয়েছিল। মক্কায় খিলাফত প্রতিষ্ঠা হয় নি দেখে সেখানে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা যাবে না এটা আপনাকে কে বলল? উসুল আল ফিকহ এর কোথায় আছে এ নিয়ম?
"তারপর,দলটি আরেকটি কথা বারবার বলে আসছে যে তারা (হিজবুত তাহরির) একটি সম্পূর্ণ অহিংস ও অনুগ্র দল এবং ঠিক মদিনার মতই শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাজ পরিবর্তনে বিশ্বাসী। যেকোনো ইতিহাস জানা লোকই বুঝতে পারবেন যে এই কথাটিও অসত্য। কারণ ইতিহাস বলে যে মহানবী মদিনায় প্রবেশের পর থেকেই মদিনার অধিবাসীরা যুদ্ধের জন্যে সদা প্রস্তুত ছিল" মক্কায় কি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কোন রক্তপাত করেছিলেন? সুতরাং খিলাফত প্রতিষ্ঠার পথ শান্তিপূর্ণ না রক্তপাতের হবে বলে আপনি মনে করেন? উসুল আল ফিকহ এ বিষয়ে কি বলে?
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর উপর অহী আসা বন্ধ হয়ে যাবার পর এমন একটি ফরযের উদাহরণ দেখান যার সুনির্দিষ্ট নিয়ম নাই।.
"শেষে আবারও বলছি, মদিনার সমাজ আর আমাদের সমাজের অল্প কিছু মিল দেখিয়ে আর অনেক অমিলকে পাশ কাটিয়ে আমরা খিলাফতকে জোর করে চাপিয়ে দিতে পারি না""means of dawah" এবং "style of dawah" বলতে কি বুঝেন? এ দুটোর মধ্যে পার্থক্য না থাকলে তো আমরা গাড়ি চড়তে পারবো না। আমাদের এখনো ঊটের পিঠে চড়তে হত।.
উসুল আল ফিকহের কাজ কি সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন আসলে নিজের মস্তিষ্ক প্রসূত সমাধান বের করা নাকি শরীয়াহ থেকে সমাধান বের করা?

himel বলেছেন...

hizbuti ugrota r police er paye para diya maramari kore paper e news chapanor politics rejected hoye geche ikhwaner sukohusholi niyomtantrik andolon er bijoye. Ejnno hizbuti ra ekhn ikhwan er vul khojae lagse. Are gadhar dol, muslim brotherhood toder bap. 60 bochor dhoira nirjatn sojjo korce knodin dhoirjo haraya toder mto bombazi suru kore nai. Ei biplober somoyeo jail venge ei mursi ke ber krte chaicilo, mursi raji hoy nai. Je sayed kutub er kotha boltecho tar chinta chetona lalon o maintain korei ikhwan ei obosthane ashce. Tmgo moto 2 diner parar mastan type biplobider oder policy bujhte aro 200 bochor lagbo.

Habiba বলেছেন...

hizbut tahrir matha gorom brain defect manuser dol. Tara gach lagiye ta jotno kore born na kore formalin diye fol pakiye felbe. Jotodin porjonto manus biplober jonno prostut na hobe totodin Allah tader biplob deben na. Jati ke age nijer vaggo poribrtner siddhanto nite hobe eta quran bole diyece. Egypt er manus shoirachar mukto hote gonotantrik biplober jnno ready cilo, so Allah ta diyecen. Jedin tara Islami biplober jnno joggo hobe r prostut hobe shedin sheta hobe.

Mubaroker biruddhe eto khov thakar poreo ikhwan matro 4 percent vote besi peyece. Ikhwan er ei bijoy manus ke islam er aro kache tene churanto islami biplober dike agano poth khule diyeche matro. Mone rakhte hobe Allah mod o haram korecilen 3 bar ayat najil kore. Ar sb kaje hiqma totha budhdhimotta o koushol dekhate bola hoyece. Ekhn e jor kore mod nishiddho korle modkhor lokta mod collect krte aro 10 ta oporadh krbe.

Habibah Naowal oporadh krbe. Ebng she tar upokari ke ghrina kore ikhwan theke aro dure sore jabe. Shobgulo bepar e emn. Onek hisheb kore pa chalate hobe. Er age Aljeria te biplob tike nai. Filistin e hamas jitleo power dae nai. Kufar shaktir sharbik agrashon er mokabelae islami andolon ke onek matured o proggaban decesion nite hbe. Oggo somalochonae keu kan diben na. Mone rakhben, islam shudhu muslmaner noy, gota sristi jogoter.

Rasulsm jodi emon hoten Tayef bashi r islam e ashar sujog peten na. Ht der ugrobadi chakchikke vulben na keu. Valo vabe islamer itihash o nitimala janun ebng bujhun. Islam kauke baddho korenb, shadhin decesion nebar sujog dae, etai manus sristir uddesso, porikkha kora. Islami mvmnt er dayitto islam ke sobar samne uposthapon kora. Manus e mugdho hoye islam o er rules accept korle shariya ayin establis hobe.

নামহীন বলেছেন...

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এখনো কোনো কামল মুজাদ্দিদের আবির্ভাব ঘটেনি। হযরত উমন ইবনে আবদুল আযীয (রঃ) এ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু তিনি সফলকাম হতে পারেননি। তাঁর পর যত মুজাদ্দিদ জন্মগ্রহণ করেছেন, তাঁরা প্রত্যেকে কোন একটি বিশেষ বিভাগে অথবা একাধিক বিভাগে কাজ করেছেন,কামেল মুজাদ্দিদের স্থান এখনো শূন্য আছে। কিন্তু বিবেক -বুদ্ধি, মানব-প্রকৃতি ও বিশ্ব পরিস্থিতি এমনি একজন নেতার জন্ম দাবী করে। তিনি এ যুগে অথবা যুগের হাজারো আবর্তনের পর জন্মলাভ করতে পারেন। তাঁরই নাম ইমামুল মেহদী। নবী করিম (সঃ) হাদীসে তারই সম্পর্কে সুস্পষ্ট ভবিষ্যৎবাণী করেছেন।২
আমি বলতে পারি না সনদের দিক দিয়ে হাদীসটি কোন পর্যায়ের। কিন্তু অর্থের দিক দিয়ে হাদীসটি এ সম্পর্কে বর্ণিত অন্যান্য সকল হাদীসের সংগে সামঞ্জস্যশীল। এ হাদীসটিতে ইতিহাসের পাঁচটি পর্যায়ের দিকে ইশারা করা হয়েছে। তার মধ্য তিনটি পর্যায় অতিক্রম হয়ে গেছে এবং চতুর্থ পর্যায়টি বর্তমানে চলছে।শেষের যে পঞ্চম পর্যায়টি সম্পর্কে ভবিষ্যৎ বানী করা হয়েছে, সমস্ত আলামত এ কথা ঘোষণা করেছে যে, মানুসের ইতিহাস দ্রুত সেদিকে অগ্রসর হচ্ছে। মানুষের গড়া সমস্ত মতবাদের পরীক্ষা হয়ে গেছ এবং তা ভীষণভাবে ব্যর্থও হয়েছে।বর্তমানে ক্লান্ত -পরিশ্রান্ত মানুষের ইসলামের দিকে অগ্রসর হওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই।
আজকাল অনেকেই অজ্ঞতাবশতঃ এ নামটি শুনেই নাসিকা কুঞ্চন করে থাকেন। তাদের অভিযোগ ভবিষ্যতে আগমনকারী ‘মর্দে কামেল’ এর প্রতীক্ষায় অজ্ঞ-অশিক্ষিত মুসলমানদের কর্মশক্তি জড়ত্ব প্রাপ্ত হয়েছে। তাই তাদের মতে যে সত্যের ভূল অর্থ গ্রহণ করে অশিক্ষিত লোকেরা নিষ্কর্মা হয়ে যায় তার আদপে সত্য হওয়াই উচিত নয়। উপরন্তু তারা এও বলেন যে, প্রত্যেকটি ধর্মবিশ্বাসী জাতির মধ্যে কোনো না কোনো অদৃশ্যলোক হতে আগমনকারী ব্যক্তি সম্পর্কিত বিশ্বাসের অস্তিত্ব আছে। কাজেই এটি নিছক একটি ভ্রান্ত ধারণা। কিন্তু আমি বুঝিনা শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফার (সঃ) ন্যায় অন্যান্য নবীগণও যদি নিজেদের জাতিদেরকে এ সু-সংবাদ দিয়ে গিয়ে থাকেন যে, মানব জাতির পার্থিব জীবন শেষ হবার আগে ইসলাম একবার সমগ্র পৃথিবীতে পরিব্যাপ্ত হবে এবং মানুষের রচিত সমস্ত ইজমের ব্যর্থতার পর অবশেষে বিপর্যস্ত ও দুর্দশাগ্রস্ত মানুষ খোদার রচিত এই ইজমের ছায়াতলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হবে এবং খোদার এ দার মানুষ এমন এক বিরাট ও মহান নেতার বদৌলতে লাভ করবে, যিনি নবীদের পদ্ধতিতে কাজ করে ইসলামকে তার নির্ভুল আকৃতিতে পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত করবেন,তাহলে তাতে ভ্রান্ত ধারণার অবকাশ কোথায়? সম্ভবতঃ নবীদের বাণী থেকে পৃথক হয়ে এ বিষয়টি দুনিয়ায় বিভিন্ন জাতির মধ্যে ছড়িযে পড়েছে। এবং অজ্ঞতার কারণে মানুষ তাকে তার আসল ধ্যান ধারণা থেকে বিচ্যুত করে ভ্রান্ত ধারণার আবরণে জড়িয়ে ফেলেছে।

(২) যদিও ভবিষ্যৎ বাণীগুলো মুসলিম,তিরমিযি, ইবনে মাজা, মুসতাদরাক প্রভৃতি কিতাবসমুহের বহুস্থানে উল্লেখিত হয়েছে, তবুও ইমাম শাতবী (র) ‘মাওয়াফিকাত’ কিতাবে এবং মাওলানা ইসমাঈল শহীদ (র) তাঁর ‘মানসবে ইমামত’ কিতাবে যে হাদীস বর্ণনা করেছেন এখানে তার উল্লেখ লাভজনক হবেঃ

“তোমাদের দ্বীনের আরম্ভ নবুয়াত ও রহমতের মাধ্যমের এবং তা তোমাদের মধ্যে থাকবে যতক্ষণ আল্লাহ চান। অতঃপর মহান আল্লাহ তা উঠিয়ে নেবেন। তারপর নবুয়াতের পদ্ধতিতে খিলাফত পরিচালিত হবে যতদিন আল্লাহ চান। অতঃপর আল্লাহ তাও উঠিয়ে নিবেন”।

তারপর শুরু হবে দৃষ্ট রাজতন্ত্রের জামানা এবং যতদিন আল্লাহ চাইবেন তা প্রতিষ্ঠিত থাকবে, তারপর আল্লাহ তাও উঠিয়ে নিবেন।
অতঃপর জুলুমতন্ত্র শুরু হবে এবং তাও আল্লাহ যতদিন চাইবেন ততদিন থাকবে অতঃপর আল্লাহ তাও উঠিয়ে নেবেন।
অতঃপর আবার নবুয়াতের পদ্ধতিতে খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হবে। নবীর সুন্নত অনুযায়ী তা মানুষের মধ্যে কাজ করে যাবে। এবং ইসলাম পৃথিবীতে তার কদম শক্তিশালী করবে। সে সরকারের ওপর আকাশবাসী ও দুনিয়াবাসী সবাই খুশী থাকবে। আকাশ মুক্ত হৃদয়ে তার বরকত বর্ষণ করবে এবং পৃথিবী তার পেটের সমস্ত গুপ্ত সম্পদ উদগীরণ করে দেবে।

নামহীন বলেছেন...

ইসলামের রাজনীতি

ইসলামের রাজনীতির বুনিয়াদ তিনটি মূলনীতির উপর স্থাপিত : তাওহীদ, নবুয়াত এবং খিলাফত। এ তিনটি মূলনীতিকে বিস্তৃতভাবে বুঝতে না পারলে ইসলামী রাজনীতির বিস্তারিত বিধান হৃদয়ংগম করা বড়ই কঠিন ব্যাপার। কাজেই সর্বপ্রথম আমি এ তিনটি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা করব।

তাওহীদ

তাওহীদের অর্থ এই যে, আল্লাহ তায়ালা এ দুনিয়া এবং দুনিয়ার মানুষ সহ সবকিছুরই সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা এবং একমাত্র মালিক। প্রভুত্ব, শাসন এবং আইন রচনার নিরংকুশ অধিকার একমাত্র তারই। কোন কিছু করার আদেশ দেয়া এবং কোন কাজের নিষেধ করার ক্ষমতা শুধু তারই কাছে বর্তমান। আল্লাহ তায়ালার সাথে মানুষ কাউকে শরীক করবে না। আমরা যে সত্তার দরুন বেচে আছি, আমাদের যে শারীরিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও বল-শক্তি দ্বারা আমরা কাজ করি, দুনিয়ার সকল জিনিসেরই উপর আমাদের এই যে অধিকার ও ব্যবহার ক্ষমতা প্রয়োগ করি - তার কোনটাই আমাদের উপার্জিত নয়। এর সৃষ্টি ও অবদানের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার সাথে অন্য কেউ শরীক নেই। আমাদের নিজেদের এ অস্তিত্বের উদ্দেশ্য এবং আমাদের ক্ষমতা ও ইচ্ছাশক্তির সীমা নির্ধারণ করা আমাদের করণীয় কাজ নয়, আর না এতে অন্য কারোও একবিন্দু অধিকার আছে। এ সবকিছু শুধু সেই আল্লাহর করণীয় যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন। তিনিই আমাদের এত শক্তি ও স্বাধীনতা দান করেছেন এবং দুনিয়ার অসংখ্য জিনিসকে আমাদের ভোগ-ব্যবহারের জন্য দিয়েছেন। তাদের এ ধারণা মানবীয় প্রভুত্বকে সম্পূর্ণরূপে বাতিল করে দেয়। একজন ব্যক্তি মানুষই হোক কিংবা একটি পরিবার বা একটি শ্রেণী হোক কিংবা মানুষের একটি বড় দল, একটি জাতি কিংবা সামগ্রিকভাবে সারা দুনিয়ার মানুষ হোক, সার্বভৌ্ম ক্ষমতার অধিকারী একমাত্র আল্লাহ তায়ালা, তার আদেশই হচ্ছে মানুষের জন্য একমাত্র আইন।

নবুয়াত

আল্লাহ তায়ালার এ আইন যে উপায়ে মানুষের নিকট এসে পৌছেছে, তার নাম নবুয়াত। এ নবুয়াতের ভিতর দিয়ে আমরা দু’টি জিনিস লাভ করে থাকি। এক : কিতাব - যাতে আল্লাহ তায়ালা তার নিজের আইন-কানুনের বিবরণ দিয়েছেন। দুই : সেই কিতাবের বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা - যা রাসূল (সা) আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে নিজের কথা ও কাজের ভিতর দিয়ে সুস্পষ্টরূপে পেশ করেছেন। যে মূলনীতির উপর মানুষের ধর্মীয় জীবনের ভিত্তি স্থাপিত হওয়া উচিত আল্লাহ তায়ালা সবই তার কিতাবে এক এক করে বর্ণনা করেছেন এবং রাসূল (সা) আল্লাহর কিতাবের সেই উদ্দেশ্য অনুসারে কার্যকরীভাবে জীবন যাপনের একটি পরিপূর্ণ ব্যবস্থা তৈরী করেছেন। আর তার আবশ্যকীয় ব্যাখ্যা বলে দিয়ে আমাদের জন্য একটি উজ্জল আদর্শ রূপে উপস্থিত করেছেন। ইসলামের পরিভাষায় এ দু’টি জিনিসের সমষ্টিগত নাম হচ্ছে শরীয়াত। ইসলামী রাষ্ট্র এ বুনিয়াদী নীতির উপরই প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে।

খিলাফত

এখন খিলাফতের কথা আলোচনা করা যাক। আরবী ভাষায় এ শব্দ প্রয়োগ করা হয় প্রতিনিধিত্বের অর্থ বুঝার জন্য। ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ এ দুনিয়ায় আল্লাহ তায়ালার দেয়া স্বাধীনতা অনুযায়ী কাজ করবে। আপনি যখন কারো উপর আপনার জায়গা-জমির ব্যবস্থাপনার ভার অর্পণ করেন, তখন চারটি কথা আপনার মনে অবশ্যই বর্তমান থাকে। প্রথম এই যে, জমির প্রকৃত মালি সে নয়, - আপনি নিজে। দ্বিতীয়, আপনার জমিতে সে কাজ করবে আপনারই দেয়া আদেশ-উপদেশ অনুসারে। তৃতীয়, আপনি তাকে কাজকর্ম করার যে সীমা নির্দিষ্ট করে দেবেন, সেই সীমার মধ্যে থেকেই তাকে কাজ করতে হবে - আপনার দেয়া স্বাধীনতাকে সেই সীমার মধ্যেই তার ব্যবহার করতে হবে। আর চতুর্থ এই যে, আপনার জমিতে তাকে - তার নিজের নয়-আপনার উদ্দশ্যকে পূর্ণ করতে হবে। এ চারটি শর্ত প্রতিনিধিত্বের ধারণার মধ্যে এমনভাবে মিলে-মিশে আছে যে, ‘প্রতিনিধি’ শব্দ উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গেই আপনা আপনিই মানুষের মনে এটা জেগে উঠে।

আপনার কোন প্রতিনিধি যদি এ চারটি শর্ত পূর্ণ না করে তবে আপনি অবশ্যই বলবেন যে, সে প্রতিনিধিত্বের সীমালংঘন করেছে এবং সে সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে, যা ‘প্রতিনিধির’ শব্দের অর্থেই নিহিত রয়েছে। ইসলাম মানুষকে দুনিয়ায় আল্লাহ তায়ালার ‘প্রতিনিধি’ বলে নির্দিষ্ট করেছে। এই খিলাফত বা প্রতিনিধিত্বের ধারণার মধ্যেই উক্ত চারটি শর্ত অনিবার্য রূপে বিদ্যমান। ইসলামী রাজনীতির এ মহান আদর্শ অনুসারে যে রাষ্ট্র কায়েম হবে, মূলত তা হবে আল্লাহ তায়ালার নিরংকুশ প্রভুত্বের অধীনে মানুষের খিলাফত। আল্লাহর এ রাজ্যে তারই দেয়া আদেশ-উপদেশ অনুসারে তার নির্ধারিত সীমার মধ্যে থেকে কাজ করে তার উদ্দেশ্যকে পূর্ণ করা হচ্ছে এ দুনিয়ায় মানুষের একমাত্র কাজ।

খিলাফতের এ ব্যাখ্যা প্রসংগে আর একটি কথা বুঝে নেয়া দরকার। তা এই যে, ইসলামের এ রাজনৈতিক মত কোন ব্যক্তি বিশেষকে কিংবা কোন পরিবার বা কোন শ্রেণী বিশেষকে ‘প্রতিনিধি’ বলে আখ্যা দেয়নি, বরং মানুষের সেই গোটা সমাজকেই এ খিলাফতের পদে অভিষিক্ত করেছে, যারা তাওহীদ ও রেসালাতের মূলনীতিগুলোকে স্বীকার করে খিলাফতের উল্লেখিত শর্তাবলী পূর্ণ করতে প্রস্তুত হবে, এমন সমাজই সমষ্টিগতভাবে খিলাফতের অধিকারী - এ খিলাফত এহেন সমাজের প্রত্যেকটি মানুষের প্রাপ্য।

নামহীন বলেছেন...

কুরআন খিলাফত ও খিলাফত লাভকে তিনটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার করে। প্রত্যেক জায়গায় পূর্বাপর আলোচ্য বিষয় থেকে কোথায় এ শব্দটি কি অর্থে বলা হয়েছে তা জানা যায়।

এর একটি অর্থ হচ্ছে, ''আল্লাহর দেয়া ক্ষমতার অধিকারী হওয়া।'' এ অর্থ অনুসারে সারা দুনিয়ার সমস্ত মানব সন্তান পৃথিবীতে খিলাফতের আসনে অধিষ্ঠিত।

দ্বিতীয় অর্থটি হচ্ছে, ''আল্লাহর সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব মেনে নিয়ে তাঁর শরীয়াতী বিধানের (নিছক প্রাকৃতিক বিধানের নয়) আওতায় খিলাফতের ক্ষমতা ব্যবহার করা।'' এ অর্থে কেবল মাত্র সৎ মুমিনই খলীফা গণ্য হয়। কারণ সে সঠিকভাবে খিলাফতের হক আদায় করে। বিপরীত পক্ষে কাফের ও ফাসেক খলীফা নয় বরং বিদ্রোহী । কারণ তারা আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতাকে নাফরমানীর পথে ব্যবহার করে ।

তৃতীয় অর্থ হচ্ছে, ''এক যুগের বিজয়ী ও ক্ষমতাশালী জাতির পরে অন্য জাতির তার স্থান দখল করা।'' খিলাফতের প্রথম দু'টি অর্থ গৃহীত হয়েছে ''প্রতিনিধিত্ব''। শব্দের অন্তর্নিহিত অর্থ থেকে। আর এ শেষ অর্থটি ''স্থলাভিষিক্ত''। শব্দ থেকে নেয়া হয়েছে। এ শব্দটির এ দু'টি অর্থ আরবী ভাষায় সর্বজন পরিচিত।

এখন যে ব্যক্তিই এখানে এ প্রেক্ষাপটে খিলাফতলাভের আয়াতটি পাঠ করবে সে এক মুহূর্তের জন্যও এ ব্যাপারে সন্দেহ পোষন করতে পারে না যে, এখানে খিলাফত শব্দটি এমন এক রাষ্ট্র ব্যবস্থার অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, যা আল্লাহর শরীয়াতী বিধান অনুযায়ী (নিছক প্রাকৃতিক বিধান অনুযায়ী নয়) তাঁর প্রতিনিধিত্বের যথাযথ হক আদায় করে। এ কারণেই কাফের তো দূরের কথা ইসলামের দাবীদার মুনাফিকদেরকেও এ প্রতিশ্রুতিতে শরীক করতে অস্বীকৃতি জানানো হচ্ছে। তাই বলা হচ্ছে,একমাত্র ঈমান ও সৎকর্মের গুণে গুণান্বিত লোকেরাই হয় এর অধিকারী। এ জন্য খিলাফত প্রতিষ্ঠার ফল হিসেবে বলা হচ্ছে, আল্লাহর পছন্দনীয় দীন অর্থাৎ ইসলাম মজবুত বুনিয়াদের ওপর প্রতিষ্ঠিত আল্লাহর বন্দেগীর ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকে। এ বন্দগীতে যেন শিরকের সামান্যতমও মিশেল না থাকে। এ প্রতিশ্রুতিকে এখান থেকে উঠিয়ে নিয়ে আন্তর্জাতিক ময়দানে পৌঁছিয়ে দেয়া এবং আমেরিকা থেকে নিয়ে রাশিয়া পর্যন্ত যারই শ্রেষ্ঠত্ব ও প্রতাপ-প্রতিপত্তির ডংকা দুনিয়ায় বাজতে থাকে তারই সমীপে এক নজরানা হিসেবে পেশ করা চূড়ান্ত মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয়। এ শক্তিগুলো যদি খিলাফতের উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত থেকে থাকে তাহলে ফেরাউন ও নমরূদ কি দোষ করেছিল, আল্লাহ কেন তাদেরকে অভিশাপলাভের যোগ্য গণ্য করেছেন৷ (আরো বেশী ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, আল আম্বিয়া, ৯৯ টিকা)।

এখানে আর একটি কথাও উল্লেখযোগ্য। পরবর্তীকালের মুসলমানদের জন্য এ প্রতিশ্রুতি পরোক্ষভাবে পৌঁছে যায়। প্রত্যক্ষভাবে এখানে এমন সব লোককে সম্বোধন করা হয়েছিল যারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে ছিলেন। প্রতিশ্রুতি যখন দেয়া হয়েছিল তখন সত্যিই মুসলমানরা ভয়-ভীতির মধ্যে অবস্থান করছিল এবং দীন ইসলাম তখনো হিজাযের সরেজমিনে মজবুতভাবে শিকড় গেড়ে বসেনি। এর কয়েক বছর পর এ ভয়ভীতির অবস্থা কেবল নিরাপত্তায় বদলে যায়নি বরং ইসলাম আরব থেকে হয়ে এশিয়া ও আফ্রিকার বৃহত্তর অংশে ছড়িয়ে পড়ে এবং তার শিকার কেবল তার জন্মভূমিতেই নয়, বহির্বিশ্বেও মজবুতভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। আল্লাহর তাঁর এ প্রতিশ্রুতি আবু বকর সিদ্দীক, উমর ফারুক ও উসমান গণী রাদিয়াল্লাহু আনহুমের জামানায় পুরা করে দেন, এটি একথার একটি ঐতিহাসিক প্রমাণ। এরপর এ তিন মহান ব্যক্তির খিলাফতকে কুরআন নিজেই সত্যায়িত করেছে এবং আল্লাহ নিজেই এদের সৎমুমিন হবার সাক্ষ দিচ্ছেন, এ ব্যাপারে কোন ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তির পক্ষে সন্দেহ পোষন করা কঠিন। এ ব্যাপারে যদি কারোর মনে সন্দেহ দেখা দেয় তাহলে তাঁর ''নাহ্‌জুল বালাগায়' সাইয়েদুনা হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর ভাষন পাঠ করা দরকার। হযরত উমরকে ইরানীদের বিরুদ্ধে সশরীরে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া থেকে বিরত রাখার জন্য তিনি এ ভাষণটি দিয়েছিলেন। এতে তিনি বলেনঃ এ কাজের বিস্তার বা দুর্বলতা সংখ্যায় বেশী হওয়া ও কম হওয়ার ওপর নির্ভরশীল নয়। এ হচ্ছে আল্লাহর দীন। তিনি একে বিস্তৃত ও সম্প্রসারিত করেছেন। আর আল্লাহর সেনাদলকে তিনি সাহায্য-সহায়তা দান করেছেন। শেষ পর্যন্ত উন্নতি লাভ করে তা এখানে পৌঁছে গেছে। আল্লাহ নিজেই আমাদের বলেছেনঃ

-----

নামহীন বলেছেন...

ইসলামের রাজনীতি

ইসলামের রাজনীতির বুনিয়াদ তিনটি মূলনীতির উপর স্থাপিত : তাওহীদ, নবুয়াত এবং খিলাফত। এ তিনটি মূলনীতিকে বিস্তৃতভাবে বুঝতে না পারলে ইসলামী রাজনীতির বিস্তারিত বিধান হৃদয়ংগম করা বড়ই কঠিন ব্যাপার। কাজেই সর্বপ্রথম আমি এ তিনটি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা করব।

তাওহীদ

তাওহীদের অর্থ এই যে, আল্লাহ তায়ালা এ দুনিয়া এবং দুনিয়ার মানুষ সহ সবকিছুরই সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা এবং একমাত্র মালিক। প্রভুত্ব, শাসন এবং আইন রচনার নিরংকুশ অধিকার একমাত্র তারই। কোন কিছু করার আদেশ দেয়া এবং কোন কাজের নিষেধ করার ক্ষমতা শুধু তারই কাছে বর্তমান। আল্লাহ তায়ালার সাথে মানুষ কাউকে শরীক করবে না। আমরা যে সত্তার দরুন বেচে আছি, আমাদের যে শারীরিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও বল-শক্তি দ্বারা আমরা কাজ করি, দুনিয়ার সকল জিনিসেরই উপর আমাদের এই যে অধিকার ও ব্যবহার ক্ষমতা প্রয়োগ করি - তার কোনটাই আমাদের উপার্জিত নয়। এর সৃষ্টি ও অবদানের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার সাথে অন্য কেউ শরীক নেই। আমাদের নিজেদের এ অস্তিত্বের উদ্দেশ্য এবং আমাদের ক্ষমতা ও ইচ্ছাশক্তির সীমা নির্ধারণ করা আমাদের করণীয় কাজ নয়, আর না এতে অন্য কারোও একবিন্দু অধিকার আছে। এ সবকিছু শুধু সেই আল্লাহর করণীয় যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন। তিনিই আমাদের এত শক্তি ও স্বাধীনতা দান করেছেন এবং দুনিয়ার অসংখ্য জিনিসকে আমাদের ভোগ-ব্যবহারের জন্য দিয়েছেন। তাদের এ ধারণা মানবীয় প্রভুত্বকে সম্পূর্ণরূপে বাতিল করে দেয়। একজন ব্যক্তি মানুষই হোক কিংবা একটি পরিবার বা একটি শ্রেণী হোক কিংবা মানুষের একটি বড় দল, একটি জাতি কিংবা সামগ্রিকভাবে সারা দুনিয়ার মানুষ হোক, সার্বভৌ্ম ক্ষমতার অধিকারী একমাত্র আল্লাহ তায়ালা, তার আদেশই হচ্ছে মানুষের জন্য একমাত্র আইন।

নবুয়াত

আল্লাহ তায়ালার এ আইন যে উপায়ে মানুষের নিকট এসে পৌছেছে, তার নাম নবুয়াত। এ নবুয়াতের ভিতর দিয়ে আমরা দু’টি জিনিস লাভ করে থাকি। এক : কিতাব - যাতে আল্লাহ তায়ালা তার নিজের আইন-কানুনের বিবরণ দিয়েছেন। দুই : সেই কিতাবের বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা - যা রাসূল (সা) আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে নিজের কথা ও কাজের ভিতর দিয়ে সুস্পষ্টরূপে পেশ করেছেন। যে মূলনীতির উপর মানুষের ধর্মীয় জীবনের ভিত্তি স্থাপিত হওয়া উচিত আল্লাহ তায়ালা সবই তার কিতাবে এক এক করে বর্ণনা করেছেন এবং রাসূল (সা) আল্লাহর কিতাবের সেই উদ্দেশ্য অনুসারে কার্যকরীভাবে জীবন যাপনের একটি পরিপূর্ণ ব্যবস্থা তৈরী করেছেন। আর তার আবশ্যকীয় ব্যাখ্যা বলে দিয়ে আমাদের জন্য একটি উজ্জল আদর্শ রূপে উপস্থিত করেছেন। ইসলামের পরিভাষায় এ দু’টি জিনিসের সমষ্টিগত নাম হচ্ছে শরীয়াত। ইসলামী রাষ্ট্র এ বুনিয়াদী নীতির উপরই প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে।

খিলাফত

এখন খিলাফতের কথা আলোচনা করা যাক। আরবী ভাষায় এ শব্দ প্রয়োগ করা হয় প্রতিনিধিত্বের অর্থ বুঝার জন্য। ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ এ দুনিয়ায় আল্লাহ তায়ালার দেয়া স্বাধীনতা অনুযায়ী কাজ করবে। আপনি যখন কারো উপর আপনার জায়গা-জমির ব্যবস্থাপনার ভার অর্পণ করেন, তখন চারটি কথা আপনার মনে অবশ্যই বর্তমান থাকে। প্রথম এই যে, জমির প্রকৃত মালি সে নয়, - আপনি নিজে। দ্বিতীয়, আপনার জমিতে সে কাজ করবে আপনারই দেয়া আদেশ-উপদেশ অনুসারে। তৃতীয়, আপনি তাকে কাজকর্ম করার যে সীমা নির্দিষ্ট করে দেবেন, সেই সীমার মধ্যে থেকেই তাকে কাজ করতে হবে - আপনার দেয়া স্বাধীনতাকে সেই সীমার মধ্যেই তার ব্যবহার করতে হবে। আর চতুর্থ এই যে, আপনার জমিতে তাকে - তার নিজের নয়-আপনার উদ্দশ্যকে পূর্ণ করতে হবে। এ চারটি শর্ত প্রতিনিধিত্বের ধারণার মধ্যে এমনভাবে মিলে-মিশে আছে যে, ‘প্রতিনিধি’ শব্দ উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গেই আপনা আপনিই মানুষের মনে এটা জেগে উঠে।

আপনার কোন প্রতিনিধি যদি এ চারটি শর্ত পূর্ণ না করে তবে আপনি অবশ্যই বলবেন যে, সে প্রতিনিধিত্বের সীমালংঘন করেছে এবং সে সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে, যা ‘প্রতিনিধির’ শব্দের অর্থেই নিহিত রয়েছে। ইসলাম মানুষকে দুনিয়ায় আল্লাহ তায়ালার ‘প্রতিনিধি’ বলে নির্দিষ্ট করেছে। এই খিলাফত বা প্রতিনিধিত্বের ধারণার মধ্যেই উক্ত চারটি শর্ত অনিবার্য রূপে বিদ্যমান। ইসলামী রাজনীতির এ মহান আদর্শ অনুসারে যে রাষ্ট্র কায়েম হবে, মূলত তা হবে আল্লাহ তায়ালার নিরংকুশ প্রভুত্বের অধীনে মানুষের খিলাফত। আল্লাহর এ রাজ্যে তারই দেয়া আদেশ-উপদেশ অনুসারে তার নির্ধারিত সীমার মধ্যে থেকে কাজ করে তার উদ্দেশ্যকে পূর্ণ করা হচ্ছে এ দুনিয়ায় মানুষের একমাত্র কাজ।

খিলাফতের এ ব্যাখ্যা প্রসংগে আর একটি কথা বুঝে নেয়া দরকার। তা এই যে, ইসলামের এ রাজনৈতিক মত কোন ব্যক্তি বিশেষকে কিংবা কোন পরিবার বা কোন শ্রেণী বিশেষকে ‘প্রতিনিধি’ বলে আখ্যা দেয়নি, বরং মানুষের সেই গোটা সমাজকেই এ খিলাফতের পদে অভিষিক্ত করেছে, যারা তাওহীদ ও রেসালাতের মূলনীতিগুলোকে স্বীকার করে খিলাফতের উল্লেখিত শর্তাবলী পূর্ণ করতে প্রস্তুত হবে, এমন সমাজই সমষ্টিগতভাবে খিলাফতের অধিকারী - এ খিলাফত এহেন সমাজের প্রত্যেকটি মানুষের প্রাপ্য।

নামহীন বলেছেন...

ইসলামের রাজনীতি

ইসলামের রাজনীতির বুনিয়াদ তিনটি মূলনীতির উপর স্থাপিত : তাওহীদ, নবুয়াত এবং খিলাফত। এ তিনটি মূলনীতিকে বিস্তৃতভাবে বুঝতে না পারলে ইসলামী রাজনীতির বিস্তারিত বিধান হৃদয়ংগম করা বড়ই কঠিন ব্যাপার। কাজেই সর্বপ্রথম আমি এ তিনটি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা করব।

তাওহীদ

তাওহীদের অর্থ এই যে, আল্লাহ তায়ালা এ দুনিয়া এবং দুনিয়ার মানুষ সহ সবকিছুরই সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা এবং একমাত্র মালিক। প্রভুত্ব, শাসন এবং আইন রচনার নিরংকুশ অধিকার একমাত্র তারই। কোন কিছু করার আদেশ দেয়া এবং কোন কাজের নিষেধ করার ক্ষমতা শুধু তারই কাছে বর্তমান। আল্লাহ তায়ালার সাথে মানুষ কাউকে শরীক করবে না। আমরা যে সত্তার দরুন বেচে আছি, আমাদের যে শারীরিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও বল-শক্তি দ্বারা আমরা কাজ করি, দুনিয়ার সকল জিনিসেরই উপর আমাদের এই যে অধিকার ও ব্যবহার ক্ষমতা প্রয়োগ করি - তার কোনটাই আমাদের উপার্জিত নয়। এর সৃষ্টি ও অবদানের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার সাথে অন্য কেউ শরীক নেই। আমাদের নিজেদের এ অস্তিত্বের উদ্দেশ্য এবং আমাদের ক্ষমতা ও ইচ্ছাশক্তির সীমা নির্ধারণ করা আমাদের করণীয় কাজ নয়, আর না এতে অন্য কারোও একবিন্দু অধিকার আছে। এ সবকিছু শুধু সেই আল্লাহর করণীয় যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন। তিনিই আমাদের এত শক্তি ও স্বাধীনতা দান করেছেন এবং দুনিয়ার অসংখ্য জিনিসকে আমাদের ভোগ-ব্যবহারের জন্য দিয়েছেন। তাদের এ ধারণা মানবীয় প্রভুত্বকে সম্পূর্ণরূপে বাতিল করে দেয়। একজন ব্যক্তি মানুষই হোক কিংবা একটি পরিবার বা একটি শ্রেণী হোক কিংবা মানুষের একটি বড় দল, একটি জাতি কিংবা সামগ্রিকভাবে সারা দুনিয়ার মানুষ হোক, সার্বভৌ্ম ক্ষমতার অধিকারী একমাত্র আল্লাহ তায়ালা, তার আদেশই হচ্ছে মানুষের জন্য একমাত্র আইন।

নবুয়াত

আল্লাহ তায়ালার এ আইন যে উপায়ে মানুষের নিকট এসে পৌছেছে, তার নাম নবুয়াত। এ নবুয়াতের ভিতর দিয়ে আমরা দু’টি জিনিস লাভ করে থাকি। এক : কিতাব - যাতে আল্লাহ তায়ালা তার নিজের আইন-কানুনের বিবরণ দিয়েছেন। দুই : সেই কিতাবের বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা - যা রাসূল (সা) আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে নিজের কথা ও কাজের ভিতর দিয়ে সুস্পষ্টরূপে পেশ করেছেন। যে মূলনীতির উপর মানুষের ধর্মীয় জীবনের ভিত্তি স্থাপিত হওয়া উচিত আল্লাহ তায়ালা সবই তার কিতাবে এক এক করে বর্ণনা করেছেন এবং রাসূল (সা) আল্লাহর কিতাবের সেই উদ্দেশ্য অনুসারে কার্যকরীভাবে জীবন যাপনের একটি পরিপূর্ণ ব্যবস্থা তৈরী করেছেন। আর তার আবশ্যকীয় ব্যাখ্যা বলে দিয়ে আমাদের জন্য একটি উজ্জল আদর্শ রূপে উপস্থিত করেছেন। ইসলামের পরিভাষায় এ দু’টি জিনিসের সমষ্টিগত নাম হচ্ছে শরীয়াত। ইসলামী রাষ্ট্র এ বুনিয়াদী নীতির উপরই প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে।

খিলাফত

এখন খিলাফতের কথা আলোচনা করা যাক। আরবী ভাষায় এ শব্দ প্রয়োগ করা হয় প্রতিনিধিত্বের অর্থ বুঝার জন্য। ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ এ দুনিয়ায় আল্লাহ তায়ালার দেয়া স্বাধীনতা অনুযায়ী কাজ করবে। আপনি যখন কারো উপর আপনার জায়গা-জমির ব্যবস্থাপনার ভার অর্পণ করেন, তখন চারটি কথা আপনার মনে অবশ্যই বর্তমান থাকে। প্রথম এই যে, জমির প্রকৃত মালি সে নয়, - আপনি নিজে। দ্বিতীয়, আপনার জমিতে সে কাজ করবে আপনারই দেয়া আদেশ-উপদেশ অনুসারে। তৃতীয়, আপনি তাকে কাজকর্ম করার যে সীমা নির্দিষ্ট করে দেবেন, সেই সীমার মধ্যে থেকেই তাকে কাজ করতে হবে - আপনার দেয়া স্বাধীনতাকে সেই সীমার মধ্যেই তার ব্যবহার করতে হবে। আর চতুর্থ এই যে, আপনার জমিতে তাকে - তার নিজের নয়-আপনার উদ্দশ্যকে পূর্ণ করতে হবে। এ চারটি শর্ত প্রতিনিধিত্বের ধারণার মধ্যে এমনভাবে মিলে-মিশে আছে যে, ‘প্রতিনিধি’ শব্দ উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গেই আপনা আপনিই মানুষের মনে এটা জেগে উঠে।

আপনার কোন প্রতিনিধি যদি এ চারটি শর্ত পূর্ণ না করে তবে আপনি অবশ্যই বলবেন যে, সে প্রতিনিধিত্বের সীমালংঘন করেছে এবং সে সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে, যা ‘প্রতিনিধির’ শব্দের অর্থেই নিহিত রয়েছে। ইসলাম মানুষকে দুনিয়ায় আল্লাহ তায়ালার ‘প্রতিনিধি’ বলে নির্দিষ্ট করেছে। এই খিলাফত বা প্রতিনিধিত্বের ধারণার মধ্যেই উক্ত চারটি শর্ত অনিবার্য রূপে বিদ্যমান। ইসলামী রাজনীতির এ মহান আদর্শ অনুসারে যে রাষ্ট্র কায়েম হবে, মূলত তা হবে আল্লাহ তায়ালার নিরংকুশ প্রভুত্বের অধীনে মানুষের খিলাফত। আল্লাহর এ রাজ্যে তারই দেয়া আদেশ-উপদেশ অনুসারে তার নির্ধারিত সীমার মধ্যে থেকে কাজ করে তার উদ্দেশ্যকে পূর্ণ করা হচ্ছে এ দুনিয়ায় মানুষের একমাত্র কাজ।

খিলাফতের এ ব্যাখ্যা প্রসংগে আর একটি কথা বুঝে নেয়া দরকার। তা এই যে, ইসলামের এ রাজনৈতিক মত কোন ব্যক্তি বিশেষকে কিংবা কোন পরিবার বা কোন শ্রেণী বিশেষকে ‘প্রতিনিধি’ বলে আখ্যা দেয়নি, বরং মানুষের সেই গোটা সমাজকেই এ খিলাফতের পদে অভিষিক্ত করেছে, যারা তাওহীদ ও রেসালাতের মূলনীতিগুলোকে স্বীকার করে খিলাফতের উল্লেখিত শর্তাবলী পূর্ণ করতে প্রস্তুত হবে, এমন সমাজই সমষ্টিগতভাবে খিলাফতের অধিকারী - এ খিলাফত এহেন সমাজের প্রত্যেকটি মানুষের প্রাপ্য।

নামহীন বলেছেন...

COMMENT KORA JAI NA KENO?

নামহীন বলেছেন...

কুরআন খিলাফত ও খিলাফত লাভকে তিনটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার করে। প্রত্যেক জায়গায় পূর্বাপর আলোচ্য বিষয় থেকে কোথায় এ শব্দটি কি অর্থে বলা হয়েছে তা জানা যায়।

এর একটি অর্থ হচ্ছে, ''আল্লাহর দেয়া ক্ষমতার অধিকারী হওয়া।'' এ অর্থ অনুসারে সারা দুনিয়ার সমস্ত মানব সন্তান পৃথিবীতে খিলাফতের আসনে অধিষ্ঠিত।

দ্বিতীয় অর্থটি হচ্ছে, ''আল্লাহর সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব মেনে নিয়ে তাঁর শরীয়াতী বিধানের (নিছক প্রাকৃতিক বিধানের নয়) আওতায় খিলাফতের ক্ষমতা ব্যবহার করা।'' এ অর্থে কেবল মাত্র সৎ মুমিনই খলীফা গণ্য হয়। কারণ সে সঠিকভাবে খিলাফতের হক আদায় করে। বিপরীত পক্ষে কাফের ও ফাসেক খলীফা নয় বরং বিদ্রোহী । কারণ তারা আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতাকে নাফরমানীর পথে ব্যবহার করে ।

তৃতীয় অর্থ হচ্ছে, ''এক যুগের বিজয়ী ও ক্ষমতাশালী জাতির পরে অন্য জাতির তার স্থান দখল করা।'' খিলাফতের প্রথম দু'টি অর্থ গৃহীত হয়েছে ''প্রতিনিধিত্ব''। শব্দের অন্তর্নিহিত অর্থ থেকে। আর এ শেষ অর্থটি ''স্থলাভিষিক্ত''। শব্দ থেকে নেয়া হয়েছে। এ শব্দটির এ দু'টি অর্থ আরবী ভাষায় সর্বজন পরিচিত।

এখন যে ব্যক্তিই এখানে এ প্রেক্ষাপটে খিলাফতলাভের আয়াতটি SURA NUR AYAT 55 পাঠ করবে সে এক মুহূর্তের জন্যও এ ব্যাপারে সন্দেহ পোষন করতে পারে না যে, এখানে খিলাফত শব্দটি এমন এক রাষ্ট্র ব্যবস্থার অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, যা আল্লাহর শরীয়াতী বিধান অনুযায়ী (নিছক প্রাকৃতিক বিধান অনুযায়ী নয়) তাঁর প্রতিনিধিত্বের যথাযথ হক আদায় করে।

নামহীন বলেছেন...

হিযবুত তাহরীর is best.they r work for khilafah.khilafah is the only system for mankind.হিযবুত তাহরীর is the team of Muhammad (SWA).

নামহীন বলেছেন...

লেখার শিরোনাম "উসুল ভিত্তিক জবাব" অথচ উসুল উল ফিকহ এর একটা উসুল তো দুরের কথা কোন কুরআন সুন্নাহ থেকে পরিষ্কার কোন দলিল উপস্থাপন করা হয় নাই।এই লেখাকে বড়জোর "(দুর্বল)যুক্তিভিত্তিক জবাব" বলা যেতে পারে।

Almahmud বলেছেন...

ইসলামী বিপ্লব নিছক সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করে হয়ে যাবেনা বরং এর জন্য দরকার সুষ্ঠু পরিকল্পনা। সমাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা, সাহিত্য, চিকিৎসা সব ক্ষেত্রকে ইসলামীকীকরণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে কৌশলে। মোটকথা বিপ্লবের জন্যে একটা উপযোগী পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। তা না হলে বিপ্লব দ্রুতই নিষ্ফল যেতে পারে। সৈয়দ আহমদ শহীদের গড়া ইসলামী সমাজের দ্রুত পতনের অন্যতম কারণ এটিও ছিল যে তখনো উক্ত এলাকার মানুষের মনমানসিকতার বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়নি। ফলে তারা স্বার্থের খাতিরে ইংরেজ ও শিখদের পক্ষ নিয়ে ইসলামের বারোটা বাজিয়ে দেয়। এ জন্যেই রাসুল সা. কে যখন মক্কায় ক্ষমতার লোভ দেখানো হয় তিনি তো সহজেই খলীফা হয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু তার আগে তিলি তিল পরিশ্রম করে সমাজটকে সংস্কার করতে হবে। সকল কুসংস্কার, অসার-ধ্যান ধারণা মন মগজ থেকে সরানোর ব্যাবস্থা নিতে হবে। জীবনের সকল ক্ষেত্রে নৈতিকতা গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিতে হবে।
এক্ষেত্রে জামায়াত-শিবিরই কৌশলগত কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করেছে। তারা সমাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা, সাহিত্য, চিকিৎসা সব ক্ষেত্রকে ইসলামীকীকরণের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে গেলে মিশরের ইখওয়ানের মতো ইনশা’আল্লাহ এখানেও ইসলামের পতাকা উডঈন হবে।

নামহীন বলেছেন...

Clear your own way first, what do you work for? for Islam or Kufr? Then be such daring to talk about Islam in next time, My words may hurt but its more appropriate for followers of own desires?

নামহীন বলেছেন...

Habiba ............. think before you write or comment, cause every action is recorded.

copy fb বলেছেন...

"..বলিষ্ঠ কন্ঠে নবী বললেন, আল্লাহর কসম, ওরা যদি আমার এক হাতে চাঁদ ও অন্য হাতে সূর্য এনে দেয়, তবুও আমি আমার কর্তব্য থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হবো না।.."

- ইসলামী আন্দোলন ও ইসলামী বিপ্লবের লক্ষ্য কেবলমাত্র রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করা না। রাষ্ট্রের প্রতিটা সেক্টরের মানুষের মন-মগজ যতক্ষণ পর্যন্ত ইসলামের সত্যিকারের চেতনা সমৃদ্ধ না হবে, মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত ইসলামী জীবনব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে - ইসলামের প্রচার চালিয়ে যেতে হবে, শত অত্যাচার নির্যাতনের মাঝেও
মানুষকে বুঝাতে হবে, যোগ্য একেকটি করে মানুষ তৈরী করে যেতে হবে তিল তিল করে। রাষ্ট্র পরিচালনা করার জন্য
প্রতিটি অফিস - প্রতিটি ডিপার্টমেন্ট
- প্রতিটি সেক্টর যেমন চিকিৎসাব্যবস্থা - বাজার নিয়ন্ত্রন - ব্যাঙ্কিং সিস্টেম - সচিবালয়সমূহ - সীমান্তরক্ষা - সব জায়গাতে যখন যোগ্য মানুষ তৈরী হবে যারা টেকনিক্যাল জ্ঞান ও দ্বীনি চেতনায় শ্রেষ্ঠ, তখনই কেবল সার্বিক বিপ্লব ও (খিলাফতের) সেই কাঙ্খিত মুহুর্তের আশা করা যেতে পারে। কেবল ভোটের হিসেব করে কিংবা হটকারী মারামারি সংঘর্ষ বিশৃঙ্খলা তৈরী করে যারা বিপ্লবের আশা করে তারা স্বল্পজ্ঞানী অদূরদর্শী ।

কুরাইশরা যখন রাসুল সা. এর বিপ্লবী দাওয়াতী কর্মকান্ডে অতিষ্ট হয়ে উঠলো অথচ তারা জানতো রাসুল মুহাম্মাদ সা. তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মানুষ, তখন তারা প্রস্তাব নিয়ে আসছিলো , "মুহাম্মাদ, তুমি কি চাও? মক্কার শাসন কর্তৃত্ব চাও? কোন বড়ো ঘরে বিয়ে করতে চাও? অনেক ধন সম্পদ চাও? আমরা এই সব
তোমাকে দিতে পারি। মক্কা তোমার অধীন করে দিতে পারি। অন্য কিছু চাইলে তা দিতে পারি। কিন্তু তুমি এই কাজে থেকে বিরত হও।" - রাসূল সা. মক্কার শাষন কর্তৃত্ব কিন্তু তখন নেননি বরং খুবই কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন! এই শাষনক্ষমতা দিয়ে মক্কার পৌত্তলিক সমাজব্যবস্থা পরিবর্তনের মত যথেষ্ট শিক্ষিত উপযুক্ত লোক রাসুল সা. তখনো তৈরী করতে পারেননি। যে রাষ্ট্রক্ষমতা দিয়ে মানুষের দু:খ কষ্ট দূর করা যাবেনা, যে শাষনক্ষমতা দিয়ে সমাজ জীবনের
বিশৃংখলা অন্যায় জুলুম প্রতিকার
করা যাবেনা, কিংবা হয়তো জুলুম দূর
করতে গিয়ে আরো বড় জুলুম সংঘটিত
হবে, সেই রাষ্ট্রক্ষমতা ইসলাম গ্রহণ করেনা। হযরত ইউসুফ আ: অর্থ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব নিজে চেয়ে নিয়েছিলেন। কেননা, তার এই
আত্মবিশ্বাস ছিলো যে ততকালীন ওই
সমাজে মানুষের দু:খ দূর করার জন্য
অর্থমন্ত্রনালয়ের গুরুত্ব সবচেয়ৈ বেশি এবং তিনি তা ম্যানেজ করতে পারবেন, পারবেন দুর্ভিক্ষ থেকে আল্লাহর বান্দাদের মুক্ত করতে। পড়ুন এবং বুঝুন রাসুল সা. এর জীবনি -
চিন্তা করুন প্রতিটা বাক্য নিয়ৈ । অন্য আর দশজনের মত কেবল সওয়াব
অর্জনের জন্য রিডিং পড়বেন না।
রাসুলের সীরাত বুঝে পড়াটা জরুরী।
→ আদর্শ মানব মুহাম্মদ (সা)
http://goo.gl/nbdnx
→ রাসূলুল্লাহর বিপ্লবী জীবন
http://goo.gl/3cWfZ

নামহীন বলেছেন...

lekok mohodoi intellectual er dikh theke decline obosthau asen!! haire manush compromise practise krta gia islam k badh dia west der kichu chinta dia bichar kra shuru krsa

নামহীন বলেছেন...

din protisthar jonno democracy ki Halal ?
Nationalism ki islam sommoto ?
Kono kufor ki Islam protisthar poth hote pare ? How ?
kono jaheleat ka dia ki Islam protistha hote pare ?
Din protistha Allar daitto , amake din protistar jonno Haram poth obolombon korar onumuti niscoi Allah diben na .

Real Muslim বলেছেন...

আসুন সবার আগে আমরা সুদকে প্রতিরোধ করি , মুমিনদের সহজে যানাবেন সুদ বিষয়ে কোরআন ও হাদিস
থেকে লিফলেট আকারে লিফলেট লাগাবেন মসযিদের দেয়ালে

প্রচারে সুদ প্রতিরোধ কমিটি

Be Rich বলেছেন...

ইসলাম একটি সাম্য মৈত্রী ও নেয় নীতি ভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্য একটি আন্দোলন সংগ্রামের নাম.

যুগে যুগে যত নবী-রাসুল, আউলিয়া, দরবেশ দুনিয়াতে এসেছে. সকলে এই একই আন্দোলন সংগ্রাম করেছে.
যেখানেই অন্যায় দেখেছে সেখানেই এই আন্দোলন হয়ছে. সমাজে যারা নিপীড়িত হয় তারাই প্রতিবাদ করে, আন্দোলন করে, নায্য অধিকারের জন্য. আর এই আন্দোলন সংগ্রাম যারা করে তাদের মাঝে মুসলিম অমুসলিম দুই ধরনের লোক থাকে. আমরা দেখতে পাই ইসলাম শান্তির ধর্ম. এখানে সাম্য মৈত্রী মানবাধিকার সহ সব কিছুই আছে. তাই অমুসলিমরা ইসলামের ছায়া তলে আসে. অন্য দিকে ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মেতো এগুলোর কোনো কিছুই পাওয়া যায়না আর যে শাসক ইসলামী হুকুমতের ভিত্তিতে দেশ শাসন করেনা দেখাযায় তারাই স্বৈরআচার করেছে.

এখন খিলাফাহ্ত প্রতিষ্ঠার কথা যারা বলেন. তারা কি বুঝলেন? আপনারা আগে জাহেলি যুগের ইতিহাস খুঁজে রিচার্চ করেন.
জাহিলিয়া যুগের নিপীড়িত মানুষেরা সর্বদা সত্যকে খুজত. মহানবীও (সা:) সত্যকে খুজতেন. কি ভাবে জাহেলি সমাজটাকে পরিবর্তন করা যায়. তিনি তাই ভাবতেন. কোরান যখন ছিলনা তখন কিন্তু তিনি বসে থাকেননি. তিনি হিলফুল ফুজুল গঠন করেছিলেন. তার নিকট ওহি এসেছিল তার ৪০ বছর বয়সে. তিনি সমাজ পরিবর্তন করেছেন ২৩ বছর লেগেছে. আর আমরা সলিমুদ্দিন আর কলিমুদ্দিনেরা তো অনেক দুরের পাপী.
আমরা কোরান পড়ি, আত্মস্থ করি, চুমু খাই, কোরান রিচার্চ করিনা, তার্তিলের সহিত সুমধুর কন্ঠে তিলাওয়াত করতে বলি আর এত সওয়াব এত সওয়াব বলে ওয়াজ করি. যারা কোরান রিচার্চ করেন ইসলামী সাহিত্য লিখেন, তাদের সমালোচনা নিয়া বেস্ত. রাসুলের যুগে সমাজ পরিবর্তনের জন্য তিনি কাজ করেছেন, তিনি ছিলেন আল্লাহর রাসুল, আল্লাহ তাকে সরা সরি পরিচালনা করতেন, জিব্রাইলের মাধমে ওহি পেতেন, কখন কি হবে, কি করতে হবে গাইড করতেন সয়ং আল্লাহ. দ্বীন প্রিতিষ্ঠার দায়িত্ব আল্লাহর মানুষের না. মানুষের দায়িত্ব সংগ্রাম করা, চেষ্টা প্রসেসটা করা. মানুষকে আল্লাহর দীনের প্রতি আহবান করা. দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য যুগ উপযুগী প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা. এটাও জানতে হবে কোরানের আয়াতের অনেক হুকুম যুগে যুগে আধুনিক. ভাবতে হবে সমালোচনা করার আগে.

আপনার আমার দায়িত্ব দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজ করা. আল্লাহ বিজয় দিবেন. যদি হুট করে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা যেত তাহলে আল্লাহ তালা ২৩ বছর না লাগাইয়া ১ দিনেই দ্বীন কে প্রতিষ্ঠা করে দিতেন. বদর ওহুদ খোন্দক তাবুকের দরকার হতনা. কোরান জাহেলি সমাজের জন্য সময় সাপেক্ষে এসেছে. যখন যা প্রয়োজন তাই নাজিল করেছেন.

যারা সমালোচনা করেন তারা রিচার্চ করেন. কওমী দেওবন্দী মার্কা আলেমরা দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য কবে কি করছেন তা আমাদের জানা আছে. দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে অন্যের পকেটের দিকে চেয়ে, দুম্বা, গরু, ছাগলের আগমনের পথ চেয়ে, ইসলাম বিজয়ের সপ্ন দেখেন, জীবনেও সম্ভব নয়. সাহাবীরা নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করেছেন. আল্লাহর রাসুল সা. তো আমাদের দুম্বা, গরু, ছাগলের আগমনের দিকে চেয়ে থাকতে বলেননি.

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম