তারাবাঈ - সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন সিরাজী

পরদিন প্রত্যুষে মালোজীকে শূলে চড়ান হইল। মুহুর্ত মধ্যে নৈরাশ্য-দিগ্ধ হিংসাপরায়ন আত্মা শূন্যে মিশিয়া গেল। রায়গড়ের বিষাদ ভার আরও বাড়িয়া গেল। কারণ সকলেই বুঝিল যে, মালোজী তারার প্রতি একান্তই আসক্ত এবং অনুরক্ত ছিলেন। কিন্তু তারা তাহাকে একেবারেই চাহিত না। সে আফজাল খাঁর রূপসরোবরেই প্রেমের কমল তুলিতে সাঁতার দিয়াছিল। কিন্তু হায়! হতভাগিনীর আশা পূরণ হইল না। দগ্ধজীবনের অতৃপ্ত আকাঙ্খা এবং প্রেমের আগ্নেয়-পিপাসা লইয়াই জীবন ত্যাগ করিল! প্রেম-সরোবরে ডুবিয়াও এক বিন্দু প্রেমসুধা পানের পূর্বেই তাহার জীবনলীলা শেষ হইল। কি তীব্র বিষাদপূর্ণ ভয়াবহ ঘটনা! শিবাজী কন্যার শোকে নিতান্ত বিমনায়মান এবং কিংকর্তব্যবিমূঢ় হইয়া পড়িলেন। আফজাল খাঁর নিকটে গভীর দুঃখ ও করুণ বিলাপ প্রকাশ করিলেন। আফজাল খাঁর চক্ষু হইতে অশ্রুধারা নির্গত হইল।
অনন্তর আফজাল খাঁর সহিত আত্মীয়তা এবং কুটুম্বিতা বজায় রাখিবার জন্য শিবাজী তাঁহার ভগ্নী কামিনীবাঈকে আফজাল খাঁর করে সমর্পণ করিবার প্রস্তাব করিলেন। কিন্তু আফজাল খাঁ কিছুতেই স্বীকৃত হইলেন না। আফজাল খাঁ তৎপর দিবস প্রাতঃকালে বিজাপুরে কুচ করিবার জন্য প্রস্তুত হইলেন। শিবাজীও অগত্যা তাহাতে সম্মত হইলেন। পরদিন প্রত্যুষে সেনাপতি সাহেব রাজধানীতে প্রত্যাবর্তন
করিবার জন্য প্রস্তুত হইলে, শিবাজী, রামদাস স্বামী প্রভৃতি সকলেই বিদায় দিতে আসিলেন। শিবাজী দুঃখ প্রকাশ করিয়া বলিলেন, “মহাবীর সেনাপতে! আমার আসা পূর্ণ হ’ল না। নৌকা কূলে লেগেও ডুবে গেল। আপনি আমার প্রবল শক্র ছিলেন। আপনি অসাধারণ বীরপুরুষ! আপনি আমার দক্ষিণ হস্ত হলে, দিল্লীর সিংহাসন দখন করাও অসম্ভব ছিল না। আমার আশা পূর্ণ হ’ল না। আপনার সহিত যুদ্ধে কখনও পারব না! আমার রাজ্যলিপ্সা কখনও দমিত হবে না; সে পথের আপনি কণ্টক। যে উপায়ে সে কণ্টক দূর করার জন্য আশা করেছিলাম, তা’ ব্যর্থ হ’ল! সুতরাং এক্ষণে দস্যুবৃত্তি ব্যতীত আর উপায় নাই।”।


 




0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম