আজ পরিবারের সদস্যরা শেষ দেখা করতে গেলে তাদের নিয়ে জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামান কেন্ত্রীয় কারাগারে মোনাজাত করেন বলে তাকে দেখা করতে যাওয়া ২১ জন সদস্যের একজন প্রকাশ করেন। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন,
''আলহামদুলিল্লাহ। কাঁদতে কাঁদতে গিয়েছিলাম, হাসি মুখেই বিদায় জানিয়ে আসলাম প্রিয়জন প্রিয় নেতাকে। আমার দু চোখ, আমার হৃদয় সৌভাগ্যবান। আমি তাকে কাঁদতে দেখিনি, বরং আমাদের কেই সান্ত্বনা দিয়েছেন। উনি যখন বিদায় বেলায় আমাদের কে নিয়ে মোনাজাত করছিলেন বলছিলেন, হে আল্লাহ আমি দেশের জন্য কাজ করেছি ইসলামের জন্য কাজ করেছি যারা এই অন্যায় বিচার করলেন, এই বিচারে সহযোগিতা করেছে এদের বিচার আপনি দুনিয়াতে এবং আখিরাতে উভয় জায়গায় করেবেন। আমি আমার দুই হাত দিয়ে কোন অন্য কাজ করিনি আমার মুখ দিয়ে কাওকে গালি দেইনি আমার সম্পর্কে আপনি ভালো জানেন
আপনি আমাকে শাহাদাতের মর্যাদা দান করুন। আমার পরিবার, স্বজন সহ সকলকে ধৈর্য ধারাণ করার তৌফিক দিন''
অসিয়ত
জনাব কামারুজ্জামান বলেন আমিআইনজীবীদেরকে ও বলেছি তোমাদেরকে ও বলছি, তোমরা জনগণকে জানাবে এটি আমার উপর সুস্পস্ট যুলুম। সোহাগপুরের মিথ্যা অভিযোগে আমাকে হত্যার দায়ে প্রধানমন্ত্রী বিচারক সহ যারা সংশ্লিষ্ট তাদের কেউ মহান রবের আদালতে তাদের কেউ রেহায় পাবে না। এই সুস্পষ্ট জুলুমের প্রতিকার আল্লাহ্ ছাড়া কেউ করতে পারবেন না । তাই আমি এই বিচারের ভার মহামহিম আল্লাহ্র দরবারেই দিলাম। এবং তোমরা দেখবে এই যালিমরা দুনিয়ার বুকে ও কিভাবে লাঞ্চিত এবং অপমানিত হয়। তোমরা দ্বীনের পথে অবিচল থাকবে। জামাতকে জানাবে বর্তমান নেতৃত্ব সঠিক পথে আছে এবং আমি জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এই আন্দোলনের উপর দ্বীন ইসলামের উপর অবিচল ছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ। ছাত্র শিবির তাদের ক্লাস ও পড়ালেখার ক্ষতি সাধন করে জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়ে ত্যাগের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। তাদের এই ত্যাগ বাংলার জমিনে দ্বীন কায়েমকে ত্বরান্বিত করবে ইনশআল্লাহ্। মহান রব আমার এই শাহাদাতকে কবুল করার জন্য সকল কে দোয়া করতে বলবে।
পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ ও উপহার
সকাল থেকে তিনি বিচলিত ছিলেন তার পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাতের জন্য। তবে বিকালে পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় কামারুজ্জামান হাস্যোজ্জ্বল ছিলেন।
কামারুজ্জামানের মেজ ছেলে হাসান ইমান প্রতিবেদককে বলেন, আমার মামার ছেলে আফিসকে বাবা খুব পছন্দ করত, তাই তার জন্য বাবা চকলেট সংগ্রহ করে রেখেছিলেন। বিকালে সাক্ষাতের সময় বাবা আফিস ও আমার চাচাত বোন মুনমুনের ছেলে আবদুল্লাহর হাতে চকলেট তুলে দেন। এ সময় তাদের বলেন, তোমরা অনেক বড় হও। বাবা তাদের হাত বুলিয়ে দেন। আদর করতে থাকেন।
সাক্ষাতের সময় বাবা তসবিহ হাতে নিয়ে তাদের সামনে আসেন। এ সময় তিনি হাসতে থাকেন। বাবার পরনে ছিল সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি। মাথায় ছিল টুপি। বাবা নামাজ আদায় শেষে বিকালে আমাদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বিচলিত ছিলেন, সরকার পরিবারকে দেখা করার শেষ সুযোগ দেয় কিনা।
হাসান ইমান বলেন, ফজরের নামাজের পর সকালের প্রথম প্রহরে বাবা দীর্ঘ সময় দোয়া-দরুদ পাঠ করেন। হাসান ইমান বলেন, বাবা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তসবিহ দোয়া- দরুদ পাঠ করে যাবেন। বাবা আমাদেরও বিচলিত হতে মানা করেছেন। বলেছেন, আমি নিজেও বিচলিত নই। তোমরাও স্বাভাবিত থাক। বাবার ইচ্ছে ছিল ইসলামী আন্দোলন এ দেশে কায়েম হলে তিনি তা দেখে যাবেন। কিন্তু সেটি হল না।
কারা সূত্র জানায়, ফাঁসির মঞ্চে নেয়ার আগ পর্যন্ত কামারুজ্জামান দোয়া পাঠ করেন। এ সময় তিনি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। মুনমুনের ছেলের হাতে চকলেট দেয়ার সময় হাসান ইমান জিজ্ঞেস করেন, কোথায় চকলেট পেলেন বাবা? উত্তরে কামারুজ্জামান বলেন, দুপুর থেকে পাঞ্জাবির পকেটে এ চকলেট নিয়ে আছি। ১২টার দিকে তিনি দুটি চকলেট আনতে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে ইচ্ছে ব্যক্ত করেন। সেই ইচ্ছে অনুযায়ী তারা তাকে চকলেট এনে দেন।
0 comments: