যারা বেশি আবেগ নিয়ে সংগঠন করেন তাদের মধ্যে আল্লাহ ও তার রাসুলের চেয়ে সংগঠনের প্রতি আবেগ বেশি মনে হয়। আজকের লিখায় প্রথমে আমার কিছু ব্যক্তি অভিজ্ঞতা এবং পরে আমার সংগঠন ভাবনা তুলে ধরব ইনশাল্লাহ।
যখন চারদলীয় সরকারে অংশগ্রহন করে সংগঠনের দায়িত্বশীলরা তৃপ্তির ঢেকুর তুলছিলো, স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলো পুনরায় ক্ষমতায় যাওয়ার। যখন ক্ষমতার মোহময় গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে পরেছিলো তাই সবার মেজাজ ও ছিলো ফুরফুরে। ঠিক সেই সময়টিতে সংগঠনের ভাইদের ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলির প্রতি উদাসীনত, সংগঠনের প্রতি, সংগঠনের লক্ষ্যের প্রতি কিছু মানুষকে সন্দেহগ্রস্থ করে তুলে। আমি দেখেছি সেই সময় হলে সাথীদের ভিতর কেমন যানি নিজেদের মধ্যে সমালোচনার মাত্রা বেশি হয়ে গিয়েছিলো। কারন দায়িত্বশীলরা নিজেদের অধস্তনদের অভিযোগ ও পরামর্শের প্রতি একটু উদাসীন হয়ে গিয়েছিলেন। যাহোক নিচে কিছু বাস্তব ঘটনা তুলে ধরলাম।
ঘটনা-১: নির্বাচনী ক্যাম্পেইন নীলফামারী
ইলেকশন হবে হবে ভাব এরকম সময়ে প্রস্তুতিস্বরূপ যে যে এলাকার সে সেই এলাকায় ভ্রমন শুরু হলো। তো যথারীতি সৈয়দপুর বাড়ি হওয়ায় আমাকেও সাংগাঠনিক দলের সাথে নীলফামারী যেতে হলো। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত নীলফামারীর সব উপজেলার সব ছাত্র রওয়া দিলাম। নীলফামারী আল-হেলাল একাডেমি মাঠে আমরা সবাই জমা হলাম। সেদিন শুক্রবার ছিলো। নামাজ পড়ে দুপুরের খাবার দেয়া হলো। যখন খাবার দেয়া হলো তখন দেখলাম আমরা যারা মাঠে কর্মী, সাথী আর সাধারন সদস্য ছিলাম তাদেরকে পলিথিন ব্যাগে আলু খিচুরী দেয়া হলো। নীলফামারী যাওয়ার সময় আমাদের সৈয়দপুর এর এক সাংগাঠনিক দায়িত্বশীল ভাই আমাকে বললেন যে আমি যেন সালেহী ভাইয়ের সাথে দেখা করে আসি। দুপুরের খাওয়ার কিছুক্ষন বিরতি পেলাম আমি এই ফাকে সালেহী ভাইদের খোজে বের হলাম। খোজ নিয়ে জানলাম উনারা সার্কিট হাউসে আছেন। আমি ওখানে পৌছার সাথে সাথে ভেসে আসতে লাগলো কিছু খাবারের সুগন্ধ, আর এই গন্ধ নাকে ঢুকতেই আমার মনে খটকা লাগলো। যাহোক নিচ তলা থেকে ২য় তলায় উঠলাম, দেখলাম এক পাশে টিভি অন করা কেউ খাচ্ছে আর কেউ বা বিছানায় শুয়ে রেস্ট নিচ্ছে। মনের মধ্যে শুধু একটি প্রশ্ন ই জেগে উঠলো যে, কর্মী আর নেতাদের মধ্যে এরকম বৈষম্য নিয়ে হয়তো প্রকৃত ইসলাম প্রতিষ্ঠা সম্ভব না। পড়ে জিগগেস করে জানছিলাম যে তৎকালীন জামায়াতের এমপি মিজানুর রহমান উনি উনাদের সন্মানে খাবারের ব্যবস্থা করেছেন আর কর্মী সাথীদের আলু-খিচুরী খেতে দিয়েছেন, পড়ে যিনি কিনা টিন চুরির জন্য অভিযুক্ত হয়েছিলেন, হয়তো মিথ্যা মামলা ছিলো, কিন্তু পুরোটাই যে মিথ্যা মামলা উনার সেই বৈষম্যমুলক আচরন দেখে আমার কিন্তু তা মনেহয়নি। অনেকে বলবেন যে আমি সংগঠনের বিরুদ্ধে লিখছি, আসলে তা না, এসব ত্রুটিমুক্ত হতে না পারলে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের জায়গা অন্য কেউ দখল করবে।
ঘটনা-২: বিশ্ববিদ্যালয় কোচিং রংপুর
আমার এলাকার ২ জন গরীব ছাত্রকে ফ্রী কোচিং এর জন্য অনুরোধ করেছিলাম, দুজনেই মাদ্রাসা থেকে পাশ করা, ভালো রেজাল্টধারী, এর মধ্যে একজন ইয়াতীম ওর মা অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন, কিন্তু এদের সেই সুজোগ হয়নি কোচিং করার, শিবির যেখানে কোচিং করে লক্ষ্য লক্ষ্য টাকা ইনকাম করছে, বড় বড় বিল্ডিং করছে সেখানে অস হায়দের নাকি সুজোগ নেই। ভাবতেই অবাক লাগে। মানুষের ভালোবাসা পাও্যা কি এত ই সহজ। যেখানে ইসলাম প্রচার হয়েছে ত্যাগ আর অপূর্ব এক মিশ্রনে সেখানে আমরা সম্পদকে কুক্ষীগত করে নিজেদের কে আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করে ইসলাম কায়েম করতে চাচ্ছি। আসলেই কি এটি সম্ভব??? চিন্তা করে দেখা দরকার, আর কত শিবির কিংবা জামায়াতের লোক দরকার দেশে ইসলাম কায়েক করার জন্য?? আসলে আমরা হয়তো সবাই স্বপ্ন দেখছি ঠিকই হয়তো স্বপ্নটার পথ ঠিক না নয়তো আমরা ভূল স্বপ্ন দেখছি, আমরা আবেগ দিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চাই, আর তাই রাজপথে তাজা রক্ত ঝরছে ঠিকই কিন্তু কোন পরিবর্তন চোখে পড়ছে না। হ্যা কিছু পরিবর্তন অবশ্য চোখে পড়ছে, এখন শিবির আর্থিকভাবে অন্যদের তুলনায় প্রতিষ্ঠিত, শিবিরের ভাইয়েরা এখন সংগঠনের পাশাপাশি রিয়েলস্টেইট ব্যবসা করেন। এখন সম্মেলন হয় চীনমৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে কিন্তু যে পরিবর্তন হওয়া অতীব জরূরী ছিলো সেটি কি হয়েছে?? সম্পদে প্রতিষ্ঠা লাভের সাথে সাথে ঈমান ও আমল ও আখলাকের চর্চা থেকে বিচ্যুতি ঘটেছে বেশি। আগের চেয়ে প্রতি থানায় সাথি সদস্য অনেক বেশি কারন রাজপথে লোক দরকার, কিন্তু ঈমানের বলে বলীয়ান সৈনিকের সংখ্যা অনেক কমে গেছে।
ঘটনা-৩: বঙ্গবন্ধু হল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
২০০৬ সালের কথা বাংলাদেশে বাংলাভাইয়ের উৎপাত শুরু হয়ে গেলো। চারদিকে আলোচিত নাম বাংলাভাই। বাংলাভাই নামক সুন্দর একটা টপিক পেয়ে আওয়ামী ঘরানার লোক জামায়াতে ইসালামী ও ইসলামি ছাত্রশিবিরের উপর সন্দেহের আংগুল উঠানো শুরু করলো। বাংলা ভাইয়ের সাথে ইসলামী দলগুওর কানেকশন খুজে বের করতে সবাই তখন ব্যতিব্যস্ত। জামায়াতে ইসলামি বাংলাদেশ এর সন্মানিত সেক্রেটারী ও কম যান না, উনিও মতামত দিলেন যে, এটা মিডিয়ার সৃষ্টি। যাহোক, ইসলামী ছাত্রশিবির সদা সর্বদা এসব বিষয়ে ছিল সচেতন। তাই সেই সময়ে বলে দেয়া হলো কেউ যাতে হলগুলোতে কিছু ঘটিয়ে শিবির কে যেন বিপদে না ফেলায় এজন্য নির্দেশ আসলো, অপরিচিত ও সন্দেহযুক্ত কেউ আসলে যেন, সভাপতি অথবা দায়িত্বশীলের নজরে নিয়ে আসা হয়। সে যাই হোক এটাকে অনেকে অপব্যবহার কিংবা ভূল ব্যবহার শুরু করলো। আমার বন্ধু সেও শিবিরের কর্মী ছিলো, সে সায়েন্স ফেকাল্টিতে কাজ করতো। ইমতিয়াজ ভাই, সাখাওয়াত ভাই ওকে চিনবেন, এই দুজনেই ফ্যাকাল্টি সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন ইমতিয়াজ ভাই আগে , তারপর সাখাওয়াত ভাই, যারা বর্তমান সভাপতি দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী ভাইয়ের ক্লাসমেট আমার ও ক্লাসমেট, আমি বায়োকেমিস্ট্রিতে পড়তাম উনারা কেমিস্ট্রিতে পড়তেন। যাহোক আমার বন্ধু হাবিবের রুমমেট দিনাজপুরে বাড়ি এক ছেলের গ্রাম থেকে ২ জন লোক আসলো রাজশাহীতে কাজে। সাধারনত কারো গেস্ট আসলে হল এ থাকত। তো যেহেতু গ্রামের লোক আমার বন্ধুর রুমমেট তাদেরকে হলে নিয়ে আসলো নিজের সিটে রাখার জন্য যাতে, উনাদের টাকা খরচ কম হয়। এখানেই বিপত্তি ঘটল, সেই রুমে থাকতো ব্লক সভাপতি, সে বললো যে, কেউ রুমে থাকতে পারবেনা, হল সভাপতির অনুমতি ছাড়া। আমার বন্ধুতো অবাক যে নিজেদের গ্রামের লোককে রাখবে নিজের সিটে সেটার জন্য সভাপতির অনুমতি লাগবে কেন। যাহোক এ নিয়ে আমার বন্ধুর সাথে অনেক কথা কাটাকাটি হয়েছে, ফলশ্রুতিতে আমার বন্ধু, সাংগঠন থেকে দুরে সরে গেলো, সাথে সাথে সেই গ্রাম থেকে আসা দুজন লোক ও সংগঠন এর সম্পর্কে খারাপ ধারণা নিয়ে ফিরে গেল। লাভটা কার হলো। পাঠকরাই বিবেচনা করবেন।
ঘটনা-৪: নবাব আব্দুল লতিফ হল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
২০০৬ সাল সামার ভ্যাকেইশন এর ঠিক আগ মুহুর্তে এমন একটি ঘটনা ঘটলো যেটার জন্য আমি নিজেই আপসেট হয়ে গেলাম। সংগঠন থেকে নিজেকে কিছুটা সরিয়ে নিলাম। থমকে দাড় করালাম নিজেকে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে "স্বজন" একটি পরিচিত নাম। এটি একটি সোস্যাল ওরগানাইজেশন, যেটি বিনামুল্যে গ্রহিতাদের কাছে তাজা রক্ত সরবরাহ করে থাকে। সেই স্বজনের কমিটি গঠন নিয়ে ঘটনা। তৎকালীন স্বজন সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করতো আমার বন্ধু নুরন্নবী, স্বজনের কাছে এক পরিচিত নাম। আমরাও কেমন করে যেন জড়িত ছিলাম। আমাদের প্রানরসায়ন এর ফার্ষ্টবয় রমজান আলী জীবন ও সহ-সভাপতি ছিলো। আমার অপর বন্ধু আহসান হাবীব (মুকুল) ও আমি ছিলাম উপ-উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। বলে রাখা ভালো যে জীবন এবং আমি দুজনেই সংগঠনের সাথী ছিলাম। আমি ছিলাম সৈয়দ আমীর আলী (৩৪৫নং রূম) এর ছাত্র। নবাব আব্দুল লতিফ হলের কমিটি গঠনের দিনের কথা সেদিন সন্ধ্যায় আমি, নুর, মুকুল ও জীবন একসাথে ছিলাম। জীবন প্রশ্ন শুরু করলো যে,ওর পছন্দের এক ছেলেকে কেন কমিটিতে নেয়া হলোনা। ঐ ছেলে অ্যাকটিভ ছিলোনা বলে কমিটিতে নেয়া হয়নি। এই নিয়ে নুর আর জীবনের মধ্যে একটু কথা বিনিময় হচ্ছিলো। সেই সময় মুকুল জীবনকে বললো যে, তুই তো জোড় করে কাউকে কমিটিতে নিতে পারিস না। নূর বললো যে নেক্সট টাইম ঐ ছেলেকে নিবে। যে যার মতো হলে ফিরে গেলাম। মুকুল ছিলো , নবাব আব্দুল লতিফ হলে , মানে জীবনের সাথে এক ই হল এ। রাতে আমি পড়ছিলাম নিচ থেকে মুকুলের হঠাৎ ডাক পেয়ে নিচে নামলাম। দেখি ও কাদছে , আমি জিজ্ঞেস করলাম কাদিস কেনো?? ও বললো যে জীবন ওকে রুমে গিয়ে ওর জুনিওর রুমমেট এর সামনে ওকে মারছে। আমরা তখন মাস্টার্স এ পড়ি। আমিতো অবাক, মাস্টার্সের ছাত্রের গায়ে হাত উঠানো মেনে নিতে পারলাম না, ওকে জিজ্ঞেস করলাম কেন মেরেছে, বললো যে সন্ধ্যায় আমরা সবাই মিলে যে কথা বলছিলাম এই জন্য সে ওকে মেরেছে। আমি ওকে বললাম যে তুই ওকে মেরে আমার কাছে আসতি। যাহোক সংগঠনের নিয়মে আমি জীবন কে ডাকলাম ওকে বললাম যে কনটাক্ট করবো ওর সাথে। তারপর ওকে জিজ্ঞেস করলাম যে সে কেন মেরেছে ওকে। বললো যে আমার ইচ্ছে হয়েছে মেরেছি। আমিতো অবাক বললাম যে, থাকিস হলে, করিস শিবির আবার বলিস নিজে মেরেছিস, কার শক্তিতে ওকে মারলি বল। বললো যে আমি ই মেরেছি। তো তখন আমি বললাম যে ঠিক আছে, তাহলে মুকুল তোকে এখন মারুক আমি ওর হয়ে সাক্ষী দিব যে ও ব্যক্তি জীবনকে মেরেছে কোন সাংগাঠনিক জীবনকে মারেনি।
যাহোক এটা অনেক বড় কাহিনী, আমরা অভিযোগ করলাম, তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ভাইকে। শিবিরের টেন্টে লিচু তলায়। সালেহী ভাই, আলাউদ্দীন ভাইকে দায়িত্ব দিয়ে বললেন যে জীবনকে সংগঠন থেকে বের করে দিয়ে এই ঘটনার একটা সমাধা করতে। এটা উল্লেখ করতেই হয় যে, সেই এময়ে সব হল কমিটির উপদেষ্টা ছিলো হল শিবির সভাপতি, এবং প্রতিটা হল কমিটিতে ২-১ জন শিবিরের ভাই ছিলো।
দূর্ভাগ্যবশত এর কয়েকদিন পর ই সালেহী ভাইকে জেল এ যেতে হয়। আর ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পান, নূর মুহাম্মদ মন্ডল ভাই, সাংগাঠনিক সম্পাদাক ছিলেন দেলওয়ার হোসেন সাঈদী ভাই, আমার হল সভাপতি ছিলেন, সাঈদী ভাইয়ের ক্লাসমেট, আরাফাত হোসেন রানা ভাই। এদিকে স্বজনের শৃংখলা ভংগের জন্য স্বজন জীবনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ওকে বহিষ্কার এর সিদ্ধান্ত নিলো।
এরপর ঘটনার দ্রুত পরিবর্তন হওয়া শুরু হলো, জীবন বহিষ্কারাদেশ অস্বীকার করে বসলো। শেষে মারার ঘটনাও অস্বীকার করে বসলো। ঘটনাটি বিশ্ববিদায়লয়ের ভাইস চ্যান্সেলর পর্যন্ত পৌছালো, কারন স্বজন এর উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্যদের মধ্যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ টি বিভাগের সভাপতি, বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল চিফ, এবং ভাইস-চ্যান্সেলর ও ছিলেন। এদিকে জীবন সংগঠনের কাছে মিথ্যা অভিযোগ করলে যে তার বিরুদ্ধে ষঢ়যন্ত্র করছে সবাই। যেভাবে হোক সে সংগঠনকে এটা বুঝাতে পেরেছিলো যে এটি তার বিরুদ্ধে ষঢ়যন্ত্র। ফলশ্রুতিতে শিবির অবিবেচকের মতো কাজ করলো, স্বজন সভাপতিকে থ্রেট করা হলো যে সব কিছু সেখানেই বন্ধ করে দিতে। স্বজন সভাপতি মিটিং ডাকলো খুব আপসেট হয়ে গেলেন উনি যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে মানুষের জন্য কিছু করতে এসো যদি থ্রেত খাইতে হয় তাহলে এরকম সংগঠন (স্বজন) না করাই ভালো। উনারা বিশ্ববিদ্যালয় স্বজন এর উপদেষ্টা মন্ডলীকে বিষয়টি গোচরে আনার জন্য সিদ্ধান্ত নিলেন। আমি তখন বললাম যে এরকম করার প্রয়োজন নেই বেপারটা মিটিয়ে ফেলেন। তাহলে সবার ভালো হবে। আমাদের প্রান-রসায়নের ৩ জন সাথী নিয়ে রওয়া দিলাম শিবিরের বিনোদপুর অফিসে। সাঈদী ভাইয়ের সাথে কথা হলো। এর আগে জীবন এর সম্বন্ধে অনেক অভিযোগ ছিলো। যা হোক উনাকে বললাম যে, আপনারা জীবনের কাছে যা শুনেছেন সেটা ঠিক না, আসলে ও এরকম ঘটনা ঘটিয়েছে। সাক্ষী হিসেবে ৩ জন সাথীকে উপস্থাপন করলাম। উনি বললেন যে উনারা সব জানেন। আমার কাছে উনি জানতে চাইলেন যে পরামর্শ দেন, আমি বললাম যে সংগঠনের কিছু ভাই, স্বজনের কিছু ভাই আর মাঝখানে একজন শিক্ষককে রাখেন, যে মার খেয়েছে এবং যে দিয়েছে দুজনের কথা শুনেন, ব্যাপারটা মীমাংসা করে ফেলেন। উনি বললেন যে না, মাঝখানে কাউকে না রাখাই সংগঠনের জন্য ভালো কারন যাতে ঘটনাটি বেশি কেউ না যানে, কিন্তু আমার ভয় হতে লাগলো যে যারা থ্রেট মারতে পারে তারা কিছু চাপিয়ে দিতে ও পারে। যাহোক আমি নিজেও যেহেতু সংগঠনের ছিলাম ব্যাপারটা মেনে নিলাম। এবং মিটিং এর স্থান করা হলো, স্টুডেন্ট ওেয়লফেয়ার ফাউন্ডেশন এর কনফারেন্স রুম। আমি একটি কথাই শিখেছিলাম ইসলামী বই পড়ে যে ন্যায় বিচারককে মজলুমের কথা শুনতে হবে, এবং বিচারের সময় বাদী এবং বিবাদী দুজনের কথাই শোনা উচিত। একটি কথা বলে রাখা ভালো, আমি যা কিছু করতাম আমার হল সভাপতি (রানা ভাইকে জানিয়ে কর্তাম, উনি বলতেন যে হালিম ভাই আপনি ঠিকই করছেন এগিয়ে যান, সেদিন উনিও সেখানে গিয়েছিলেন বিচার দেখার জন্য) কোন কথা শুরুর আগে স্বজনের সভাপতিতে একা ডেকে নেয়া হলো, তখনে আমার মনে সন্দেহ শুরু হলো যে কিছু একটা অন্যায় হতে যাচ্ছে। প্রথমে শিবিরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দাড়িয়ে বললেন যে, আমরা সবার কথা শুনেছি, কারো কথা শুনার দরকার নেই, দরকার আছে কি? অথচ উনারা বাদীর কোন কথাই শুনেননি। আমি আগেই আমার বন্ধু (যে মার খেয়েছিলো বলে রেখেছিলাম যে এরকম কিছু ঘটলে উঠে দাড়িয়ে বলবি সে তোর কথা শোনার জন্য কারন তুই মজলুম) যাহোক সেই ঘটনাই যখন ঘটল আমার বন্ধুও উঠে দাড়িয়ে বললো যে তার কিছু বলার আছে। তখন নুর মুহাম্মদ মন্ডল ভাই বললেন যে, যদি আপনআরাই বলেন তো বিচারের জন্য এখানে আসছেন কেন। যাহোক ঠিক তখন আমার সকল বিশ্বাস নষ্ট হয়ে গেলো। আমি উঠে দাড়াবো কিন্তু পারলাম শুধু সংগঠনের জন্য। এবার বিচারের পালা শুরু হলো। প্রথমে স্বজন সভাপতিতে বলতে বলা হলো। স্বজন সভাপতি বললেন যে, বিশ্ববিদ্যালয় স্বজন সিদ্ধান্ত নিয়েছে , জীবনকে ৯ মাসের সাসপেনশনে রাখার। তখন শিবির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দ্বি-মত পোষন করলেন যে না ৯ মাসের সাসপেনশন এ রাখা যাবে না, তখন স্বজন সভাপতি বললেন যে আমি সভাপতির ক্ষমতাবলে ৯ মাস কে ৬ মাস করতে পারি এর চেয়ে বেশি কিছু করতে পারিনা। তখন নুর মুহাম্য´মাদ মন্ডল ভাই বললেন যে, এক মাসের সাসপেনশন রাখতে হবে, সেটা কোন মাস, সামার ভ্যাকেইশন, আমার হল সভাপতি এরকম অবস্থা দেখে আগে ই বেরিয়ে গিয়েছিলান, আমি এতটা কষ্ট সেদিন পেয়েছিলাম যে, এই ঘটনা আমি কোন দিন এ ভূলতে পারবো কিনা বলতে পারিনা। সেদিন আমি হলে গিয়ে কেদেছিলাম সভাপতির সামনে যে, এইজন্য তো আমরা শিবির করিনা, তখন হল সভাপতি রানা ভাই বলেছিলেন যে সংগঠন একটি ইম ম্যাচিউর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাকে বললেন যে আপনি পরামর্শ দেন নুর মুহাম্মদ মন্ডল ভাইকে। আমি বলেছিলাম যে কিছু কিছু সময় মানুষ নিজেকে ভূলের উর্ধ্বে মনে করে তখন তাকে কিছু বলে সুফল পাওয়া যায় না। যাহোক এই ঘটনার ফলশ্রুতিতে, জীবন কে স্বজন ইনেকটিভ করে রাখলো আর আমিও সন্মান হারালম। অনেক স্বজন কর্মীরা শিবির বিরোধী হয়ে গেলো। এবং সকল কমিটি থেকে আস্তে আস্তে শিবির ছাটাই শুরে হলো।
আর আমার সদস্য হওয়ার স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হলো। আমি পড়াশুনায় মনোযোগ দিলাম। নিজেকে কিছুটা গুটিয়ে নিলাম।
আমি এসব লিখছি শিবির কে হেয় করার জন্য নয়, কিংবা নিজের লিখার পাঠক সংখ্যা বাড়ানো আমার লক্ষ্য নয়। আমার লক্ষ্য অন্যখানে, আর সেটা হলো- কিছু সত্য বিষয় নিয়ে সংগঠনের চিন্তা করা খুব ই প্রয়োজন। আমরা সংগঠনকে এতোটাই ভালোবাসি যে মাঝে মাঝে ইসলামের চেয়ে সংঘটনকে বড় করে তুলি। আমরা তাই বলি প্রানের সংগঠন কিন্তু আমরা যার জন্য এই সংগঠন করি সেই ইসলামের মৌলিক বিষয়কে অনেক সময় ভূলে যাই সংগঠনের মিথ্যা ভালোবাসার কারনে, মিথ্যা এই কারনে যে ভালোবাসা মানুষকে অন্যায় থেকে বিরত রাখতে পারেনা আর যাই হোক সেটা প্রকৃত ইসলামের জন্য ভালোবাসা নয়। সংগঠনের ভালোবাসা আমাদের মধ্যে শুধুই বিভেদ তৈরী করেছে ফলে, আমরা শ্রেনীবিভেদের বেড়াজালে বন্দী হয়ে পড়েছি। এর খোলস থেকে বের হতে পারিনা বলেই আজ আমরা শিবির ছাত্র মজলিস, ইসলামি ছাত্রসেনা এসব নামে পরিচিত হই, মুসলিম নামে পরিচিত হতে পারছিনা। আমরা কিছু শৃংখলিত কর্মীর নেতা হয়ে তৃপ্তির ঢেকুড় তুলছি কিন্তু গ্রামের সাধারন জনগন তথা আম জনতার নেতা হতে পারছিনা। আমরা সমাজের অবহেলিত যুবক সমাজকে নিজেদের সাথে নিয়ে আসতে পারছিনা। এই সব সংগঠনের বেড়াজালে নিজেদের বন্ধী করে ফেলার কারনে আমাদের বক্তৃতায় ও উদ্ধত্ত প্রকাশ পায়। আমরা থুতু দিয়ে বিরোধী দলকে বঙ্গোপসাগরে ফেলে দিতে চাই, ইসলামের কোমলতাকে ভূলে গিয়ে। সংগঠনকে আজ আমরা নিজেদের প্রতিষ্ঠানে পরিনত করতে পেরেছি বটে কিন্তু জনগনের সংগঠনে পরিণত করতে পারিনি। আমরা যেভাবে সংগঠনের ভাইদের জন্য চোখের পানি ফেলি অন্যকোন মুসলিমের জন্য কিংবা প্রতিবেশির জন্য ফেলি কিনা জানিনা। এখানে ই আমরা সমাজ থেকে নিজেদের পক্ষান্তরে পৃথক করে ফেলেছি। আমরা মনেকরি শিবির আমাদের ই সংগঠন কিন্তু আমরা মানুষকে এটা বুঝাতে ব্যর্থ হয়েছি যে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, বাংলাদেশের একটি জাতীয় সম্পদ।
সংগঠন বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত চিন্তা তুলে ধরার জন্য মূলত সংগঠন বিষয়ে আমার এই লিখা। আমার সাংগাঠনিক জীবন যদিও খুব বেশি সময়ের না। তবে সাংগাঠনিক চিন্তার শুরু যেমন শিবিরের সাথে আসার আগে থেকেই ছিলো ঠিক তেমনি সেই চিন্তার গতির কোন বিচ্যুতি ঘটেনি আজও। আর সংগঠন নিয়ে সেই চিন্তার ফলশ্রুতিতে সংগঠন বিষয়ে লিখতে বসা। সংগঠনের কোন বিষয়ে সমালোচনা করলেই আমরা সংগঠন কে ইসলামের সাথে মিলিয়ে ফেলি। সংগঠন ও ইসলাম দুটি একবারেই ভিন্ন জিনিস। তবে হ্যা যদি সেই ইসলামকে শুধু সংগঠনের সমালোচনার সময় ব্যবহার না করে সব বিষয়ে ব্যবহারে সক্ষম হওয়া যায়, তখন হয়ত আমরা একটা স্ট্যান্ডর্ড হিসেবে ব্যবহার করতে পারি, নতুবা ডাবল স্ট্যান্ডর্ড শব্দিটির সঠিক প্রয়োগ করা যেতে পারে। আপনি যেমন ইসলামী নাম রাখলেই আপনি প্রকৃত মুসলিমের দাবি করতে পারেন না। ঠিক তেমনি ইসলামী নাম থাকলেই কোন সংগঠনকে ইসলামী সংগঠনের অগ্রদূত কিংবা একমাত্র সংগঠন মনে করা এবং তার সমালোচনা করা হলে সেটাকে ইসলাম এর সমালোচনা করার ন্যায় ঘৃণা তথা অন্যায় মনে করা আমাদের ব্যক্তি মানুষের ক্ষুদ্রচিন্তার বহিপ্রকাশ ছাড়া আমি কিছুই মনে করিনা। এটা আমাদের মানবীয় বৈশিষ্ট্য ই বলা যেতে পারে। আমরা যখন ই কোন কিছুতে নিজেদের ব্যক্তি কর্তৃত্ব কিংবা সামষ্টিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে যাই, ঠিক তখন ই আমাদের এই বৈশিষ্ট্যর প্রকাশ ঘটে। চিন্তার প্রকাশের ক্ষেত্রে আমরা যেমন উদার হতে পারিনা ঠিক তেমনি আমরা সমালোচনা কে নিজেদের স্বার্থের জন্য কল্যানকর মনে করতে পারিনা। কিন্তু ইসলাম এমন একটি দ্বীন ও ব্যবস্থা যেটাকে কেউই নিজেদের সম্পদ কিংবা সামষ্টিক উত্তরাধিকার দাবী করতে পারেনা। তবে অবশ্যই বাই ডেফিনেশন এটি মুসলিমরাই এর অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে সেই উত্তরাধীকার দাবির প্রক্রিয়া কিংবা দাবিদারদের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। আর এটা হয়েছে সময়ের বিবর্তনের ফলে। ইসলামের সোনালী যুগের পর থেকে আজ পর্যন্ত যতদিন যাচ্ছে মুসলিমদের মধ্যে গুনগত মানের ও অনেক পরিবর্তন হয়েছে এবং হচ্ছে। সময়ের সাথে বিশ্বাস ও আমল থেকে বিচ্যুতি ঘটছে। আর এই বিচ্যুতির ফলে এক ই গোত্রের মধ্যে ভিন্ন উপমত ও উপপথ তৈরী হচ্ছে। সবার ইসলামের প্রতি মহ্বত ও ডেডিকেশন এতো বেরে গিয়েছে সবাই জিহাদ করছে। তবে ধরণ একটু পাল্টেছে বৈকি। আগে মসুলিমরা জিহাদ করত কাফের ও মুসরিকদের বিরুদ্ধে আর এখন করছে নিজেরা নিজেদের সাথে। আর তাই চিন্তাশীল ও জান্নাত প্রত্যাশী মুসলিমদের উচিত একটু চিন্তা করে পথ চলা। আমরা এতো বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছি যে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হয়ত আমরা ছাড়া সম্ভব ই না। দেখুন যিনি ইসলামকে আমাদের জন্য মনোনীত করেছেন, তিনি পারেন ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে অন্য কেউ নয়। সুতরাং আল্লাহর দেয়া বিধানকে পাশকাটিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠার যে আবেগ, শুধু সেটা দিয়ে মনেহয় সম্ভব নয়। আমাদের যদি আল্লাহর প্রতি আসলেই বিশ্বাস থাকে, তাহলে সংগঠনের প্রতিটি কাজের আগে নিজেদের উদ্দেশ্য যাচাই করা, আল্লাহর সন্তুষ্টি যাচাই করা। সাথে সাথে এটাও খেয়াল রাখা প্রয়োজন যে, আনুগত্যর নামে আপনার আবেগ কে কেউ অপব্যবহার করছে কিনা। কারন প্রত্যেক মানুষকে তার ব্যক্তিগত কাজে হিসেব দিতে হবে। আল্লাহ বিবেক নামে যে নিয়ামত দিয়েছেন সেই নিয়ামতের কতটুকু প্রয়োগ আমরা করতে পেরেছি সেই জবাব ও আমাদের দিতে হবে।
এখানে কিছু ঘটনা তুলে ধরলাম।
সৈয়দ আমীর আলী হল:
১) সৈয়দ আমীর আলী হলে আমাদের এ এক সাথী ভাই ছিলেন, যিনি দেখতে মোটামোটি স্বাস্থ্যবান ছিলেন। উনি মানুষ হিসেবে ভালো ছিলেন। একদিন সভাপতি ভাইয়ের রুম এ বসে আমরা গল্প করছিলাম উনি কথা প্রসংগে বলে ফেললেন যে, উনি এক ছেলেকে রাতে চড় মেরেছে। কারন তেমন কিছু ই না, অত্যন্ত ব্যক্তিগত কারন। রাতে টিভি রুম টিভি চ্যানেল পাল্টানো নিয়ে উনার সাথে একছেলের মতবিরোধ দেখা উনি যে চ্যানেল দেখতে চাচ্ছিলেন ইউ ছেলে সেই চ্যানেল না দিয়ে অন্য চ্যানেল দেখছিলো। ব্যস টিভি রুম থেকে বের হলে ছেলেকে চড় লাগায়ে দিয়েছে।
আরো কিছু ঘটনা ছিলো, তবে আমাদের হলের পরিবেশ অত্যন্ত ভালো ছিলো। কারনগুলো পরে আলোচনা করব। তবে একটি জিনিস লক্ষ্য করেছি যারা মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাইন্ড উনাদের মধ্যে এসব ব্যাপারে অনেক সমস্যা ছিলো।
এখানে যে ব্যাপারটি লক্ষণীয় যে, উনি ছেলেটির গায়ে হাত দেয়ার পর ও অনুশোচনা করেননি বরং উনি খুব আগ্রহের সাথে তার প্রকাশ করছে। লক্ষ্যণীয় যে উনি যে একটি অপরাধ করেছেন সেটি উনি নিজেও বুঝতে পারেননি, দ্বিতীয়ত উনি আঘাত করার পরে আত্নতৃপ্তিবোধ করছেন। তৃতিয়তঃ এটা শোনার পরও উনাকে কেউ এই ব্যাপারে কিছু বললোনা, অর্থাত সবাই ওটাকে মৌণ সমর্থন করলো। যেটি ইসলামের আদর্শের সাথে পুরো বিপরীত।
সোহরাওয়ার্দী হল:
সালটা হয়তো ২০০৪-০৫ হবে। বাংলা ভাইয়ের সময়ের কথা। এর আগে ও বলেছি আমাদের উপর নির্দেশ ছিলো হলে অপরিচিত কেউ আসলে যেন জানানো হয়। আমি রাতে শুয়ে আছি বিছানায়, মাঝরাতে হঠাত দরজায় করাঘাত। আমি শুয়ে এ আছি। বুঝলাম আমার রুমমেট এর বন্ধু। হঠাত ফিসফিসানি কোন এক ছেলে আমার রুমমেটকে বলছে যে এই রুম এ শিবির থাকে কিনা, কারন সে দরজায় দেখেছে শিবিরের ট্যাগ লাগানো আছে। সে যখন শুনলো শিবিরের ছেলে থাকে ঐ রুম তখন সে আস্তে আস্তে কথা বলা শুরু করলো। আমি শুধু শুনলাম যে দোস্ত মাইর খেয়েছি। আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে উঠেই ব্লক সভাপতিকে জিগগেস করলাম, যে রাতে কোথাও কিছু ঘটেছে কিনা। উনাকে জিগগেস করার কারন উনার অনেক বন্ধু শিবির করত। কোথাও কিছু ঘটলে উনি জেনে যেতেন। যাহোক উনি বললেন যে দুটি ঘটনা ঘটেছে, একটি হলো শাহ মখদুম হলে, আর একটি শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে। এই দু হলে সেই রাতে দুটি পৃথক ঘটনায় দুজন ছেলে মাইর খায়। শাহ মখদুম এর ঘটনাটি ঘটে একান্ত ব্যক্তগত আক্রোশ থেকে। পাবনার এক ছেলের (সাথী) পারিবারিক কারনে সে সংগঠনের আরো কিছু সাথী ভাইকে সাথে নিয়ে এক ছেলেকে পিটিয়ে আহত করে। পরে এই ঘটনায় জড়িত থাকার কারনে কিছু সাথীর সাথীপদ বাতিল হয়ে যায়, পরে অবশ্য ঠিক এ সংগঠনকে ব্যবহার করে ইসলামে ব্যাংকের চাকুরীর মাধ্যমে পূনর্বাসিত হয়।
ব্যক্তিগত কারনে অন্যের গায়ে আঘাত এটা শুধু ইসলামে ই নিষেধ না, এটা একটি ফৌজদারী অপরাধ ও বৈকি। হয়ত ব্যাপারটা জানাজানি হওয়ার কারনে উনাদের বহিষ্কার করা হয়েছিলো। এই ঘটনাটির দিকে লক্ষ্যকরুন হয়ত কোথাও আরো কোন ঘটনার ঘটনার সাথে মিল খুজে পাবেন। এরকম দা্যোত্বের অপব্যবহার যে নিয়মিত হচ্ছেনা বলা মুশকিল। এর কারন নিয়ে পরে আলোচনা করা যাবে তবে এটুকু বলি যে, ইসলাম ও ইসলামি আন্দোলনের বিষয়ে সঠিক ধারণা দেয়া হয়নি নতুবা উনারা সেই ধারণা নিতে পারেননি, নতুবা উনারা এরকম কোন কিছু দেখে শিখেছে।
দ্বিতীয় যে ঘটনাটি ঘটে সেটি খুবই দুঃখজনক। সেই ছেলেকে আমি নিজেও দেখেছি। সেই রাতে আমার রুমে সেই ছেলেটি ঘুয়মানোর জন্য এসেছিলো। আমি যখন সকালে ব্লক সভাপতির সাথে কথা বলছিলাম, আমার রুমমেট ব্যাপারটি বুঝতে পেরেছিলো যে আমি ওদের সব কিছু বুঝতে পেরেছি। যাহোক আমি ব্লক সভাপতিকে বলেছিলাম যে যেন এই ব্যাপারটি (ামার রুমে যে ঐ ছেলেটি আছে) হল সভাপতিকে না জানানো হয়। তারপরে রুম এসে দেখি সেই ছেলে নেই। তখন আমার রুমমেট আমাকে সব খুলে বললো যে কি ঘটেছিলো। যেটি শুনেছিলাম সেটি হলো মাওলানা নিজামী সম্বন্ধে এবং সংগঠন এর ব্যাপারে ওনেক আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলো। এইজন্য সেই ছেলেকে পেটানো হয়েছিলো। ঐ ছেলের নাম ছিলো জুয়েল, সম্ভবত অ্যাকাইন্টিং এ পড়ত।
এটি আমি এখন ও বুঝিনা যে, কেউ যদি কাউকে গালিদেয় তাকে মারতে হবে কেন?? ইসলাম কি আমাদের এরকম কিছু শিখিয়েছে যে, কাউকে লাঞ্চিত করতে হবে মারতে হবে গালি দেয়ার কারনে।
শহীদ হাবিবুর রহমান হল:
সংগঠনের সিদ্ধান্ত হলো যে, কোন বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষার্থীকে হলে উঠানো হবে না। অনেকে কোচিং করা কালীন থেকে শুরু করে হলে থাকত, ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের লিগ্যাল ছেলে রা সিট পেতোনা। আমাদের হল এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হলো। কিন্তু সব হলে যে এক এ অবস্থা নেই সেটি বুঝতে পারলাম, যখন আমার আপন ভাইয়ের হলে সিট বরাদ্ধ হলো শহীদ হবিবুর রহমান হল এ। আমার ভাই প্রাণিবিদ্যায় পড়ত। সে তখন তৃতীয় বর্ষে পড়ে। হলে সিট বরাদ্ধ হওয়ার পরেও সে সিট পাচ্ছেনা। আমিতো অবাক, দেখলাম অবস্থা বেগতিক তখন কনটেস্ট কোচিং এ কাজ করতে, খাইরুল ইসলাম , আমার রুমমেট এবং সংগঠনের সাথী পরে সে হবিবুর রহমান হলে গিয়েছিলো, ওকে বললাম। সে খোজ নিয়ে দেখল যে হবিবুর রহমান হলের সভাপতি উনার একালার অনেক বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্ষার্থীকে হলের সিট এ থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। উনার বাড়ি ছিলো চাপাইনবাবগন্জ। উনার নাম আমার মনে নেই। অথচ আমাদের সৈয়দ আমীর আলী হলে আমি এ রকম কোন ঘটনা দেখিনি।
সংগঠনের অপব্যবহার।
সৈয়দপুর:
, নীলফামারি জিলা আমীর ছিলেন। আমি উনার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করছিনা , আমার লিখার সাথে প্রাসাংগিক বলেই লিখছি। উনি গভঃ হাইস্কুল শিক্ষক ছিলেন। রিটায়ার্ড করার পর ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। ইসলামী ব্যাংকে ব্যবহার বলব এই কারনে যে উনি প্রথম যেভাবে ব্যবসা শুরু করেন তাতে উনার মূলধন তত ছিলোনা। উনি এল সি খুলে ইনডিয়া থেকে চাল এনে ব্যবসা শুরু করেছিলেন প্রথমে। ব্যাংক উনার ব্যবসার পরিমান অর্থ না থাকলেও উনি পেপারস ম্যানেজ করে চালের অর্ডার নেন। যাহোক, এখন উনি ওনেক টাকার মালিক, সৈয়দপুর ও দিনাজপুর এ মটরসাইকেল এর উনার শোরুম আছে। ছেলেকে বিদেশে এ পড়াচ্ছেন। কিন্তু ঘটনা হলো উনার টাকার পরিমান ব্যবসা যতটা বেড়েছে উনার সাংগাঠনিক কাজের পরিধি ও ততটা কমে গিয়েছে। উনি ব্যবসার জন্য মালেসিয়া, নেপাল ভ্রমন করেন কিন্তু সাংগাঠনিক কাজের বেলায় অলসতা করেন বয়সের অজুহাত দেখিয়ে। দেখেন আমি উনাকে ব্যক্তিগত ভাবে আক্রমন করছিনা। কিছু বিষয় নিয়ে আসলে আলোচনা করা দরকার, সেজন্যই এসব লিখতে হচ্ছে।
সংগঠনকে ব্যবহার করে ব্যক্তি লাভ। আগে যেখানে ইসলাম করার কারনে দারিদ্রতা মানুষকে গ্রাস করতো, মানুষ নিজের সহায় সম্পদ বিলিয়ে দিতো এখন সেখানে সম্পদকে কুক্ষিগত করার মানসিকতা তৈরী হয়েছে।
সৈয়দপুর থানার একটি গ্রাম নাম উত্তর সোনাখুলী। সেই গ্রামে বাস করেন দুই জামাতি, বিশ্বাস না হয় খোজ নিয়ে দেখেন ওখানে দুজন লোক আছেন যাদের নামের সাথে জামাতি শব্দটা উচ্চারন করেন সবাই। একজন হলেন জসিম জামাতি আর একজন ইউনুস জামায়াতি। সৈয়দপুর এর বোতলাগারী ইউনিয়ন এর উত্তর সোনাখুলী সরকার পাড়ায় গিয়ে খোজ নিলে জানত এপারবেন, সেখান থেকে অবশ্য আমার পথচলা, আমার ভালোবাসার ছোট্ট গ্রাম। জসিম জামাতী নাকি আবার জামায়াতের রুকন, নাকি বলছি এই কারনে যে আমি শুনেছি, এনাকে আমি ভাই ডাকি, উনার বাড়ির সামনে ছোট একটি বাজার আছে, নাম বুদ্ধির বাজার, কারন এখানে বুদ্ধি কেনা বেচা হয়। উনাকে আমি ও নেক কয়েকদিন দেখেছি বাজারে বসে টিভি দেখতে। বাজারের টিভিতে বাংলা সিনেমা। উনি আবার সূদের ও ব্যবসা করেন। সংগঠন কে ব্যবহার করে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছে ইসলামী ব্যাংকে চাকরিরত সংগঠনের এক ভাইকে। ছেলেকে চাকুরী নিয়ে দিয়েছে ইসলামী ব্যাংকে।
সংগঠনকে ব্যবহার করে ব্যক্তি সুবিধা আদায়।
অপর জামাতি ইউনুস জামাতী এনাকে আমি চাচা ডাকি। এনি বড়ই করুন অবস্থায় আছে।
এনার আগে থেকেই এক পায়ে সমস্যা। সংগঠন থেকে কিছু এ পায়নি তারপর ও জামায়াতকে ভালোবাসেন। কিছুদিন আগে উনার স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেয়। অপারেশন এর প্রয়োজন দেখা দেয়। উনি সংগঠনের কাছে হাত পেতে কিছু এ পাননি। বরং নীলফামারীর সাংসদ আসাদুজ্জামান নুর কাছে গেলে উনি কোন দলের এটা খোজ না করে যতটুকু পরেছেন সাহায্য করেছেন।
সংগঠনের সবার ক্ষে্ত্রে সমতা এটার অনুপস্থিতি।
এরকম আরো কিছু ঘটনা হয়ত আছে। ঘটনা বর্ণনা করা আমার আসল উদ্দেশ্য না। তাই সংগঠনের সব ভাইদের নিকট ক্ষমা চাচ্ছি। আমার আসল উদ্দেশ্য হলো- এসব ঘটনার কারন খুজে বের করা। কেন এমন সব ঘটনা ঘটছে, যা সংগঠন এবং ইসলামী আদর্শের সাথে সামন্জস্যপূর্ণ না। অথচ এর কোন প্রতিকার এ হচ্ছেনা। বরং এগুলো এখন সংগঠনের পদ্ধতির সাথে এক হয়ে যাচ্ছে, ফলে ইসলামী আন্দোলন নিয়ে মানুষের মনে সংশয় তৈরী হচ্ছে।
লেখক : আব্দুল হালিম
সংগঠন ভাবনা : কিছু বাস্তব ঘটনা
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
রিসেন্ট ব্লগ পোষ্টস
বিষয়শ্রেণী
রাইটার
প্রিয়-ক্লিক
কিছু বই
- অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা
- অর্থনীতিতে রাসূল (সা) এর দশ দফা
- আদর্শ মানব মুহাম্মদ (সা)
- আসহাবে রাসূলের জীবনকথা
- ইসলাম ও জিহাদ
- ইসলাম পরিচিতি
- ইসলামী আন্দোলন : সাফল্যের শর্তাবলী
- ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক
- ইসলামী আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি
- ইসলামী দাওয়াত ও কর্মনীতি
- ইসলামী নেতৃত্বের গুণাবলী
- ইসলামী বিপ্লবের পথ
- ইসলামী রেনেসাঁ আন্দোলন
- ইসলামী সমাজে মজুরের অধিকার
- একটি আদর্শবাদী দলের পতনের কারণঃ তার থেকে বাঁচার উপায়
- চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান
- দায়ী’ ইলাল্লাহ - দা’ওয়াত ইলাল্লাহ
- নামাজ কেন আজ ব্যর্থ হচ্ছে
- নামায-রোজার হাকীকত
- মোরা বড় হতে চাই
- যাকাতের হাকীকত
- রাসূলুল্লাহর বিপ্লবী জীবন
- শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী ও তাঁর চিন্তাধারা
- সত্যের সাক্ষ্য
- হেদায়াত
0 comments: