দ্বিতীয় দল কে (নৈকট্য) ও(নিকটত্ব) অর্থে গ্রহণ করেছেন। তাদের দৃষ্টিতে আয়াতটির তাৎপর্য হচ্ছে একাজে আমি তোমাদের কাছে এতটুকু ছাড়া আর কিছুই চাই না যে, ‘তোমাদের মাঝে আল্লাহর নৈকট্যের ভঅব জাগ্রত হোক’ অর্থাৎ-তোমরা ঠিক হয়ে যাও। ব্যস এটাই আমার পুরস্কার। এ তাফসীল হযরত হাসান বসরী (রঃ) থেকে বর্ণিত। এর সমর্থনে কাতাদা থেকেও একটি কথার উদ্ধৃতি রয়েছে। এমনকি তাবরানীল বর্ণনায় এর সমর্থনে হযরত ইবনে আব্বাসেরও একটা মত উদ্ধৃত হয়েছে। কুরআনে মজীদেরই অন্য জায়গায় এ বিষয়টা নিম্নোক্ত ভাষায় এরশাদ হয়েছেঃ
‘এ লোকদের বলে দাও এ কাজে আমি তোমাদের কাছে কিছুই চাইনা। আমার পারিশ্যমিক হচ্ছে এ যে, যার ইচ্ছ সে নিজের খোদার পথ গ্রহণ করবে’। (ফোরকান-৫৭)
তৃতীয় দল শব্দের অর্থ করেছেন (আত্মীয়-স্বজন)। তাদের দৃষ্টিতে আয়াতটির তাৎপর্য হচ্ছে-‘তোমরা আমার নিকটাত্মীয়দের ভালবাসবে-এছাড়া এ কাজের আর কোনো পুরস্কারই আমি তোমাদের কাছে চাই না’। অতঃপর এ দলের কেউ কেউ মনে করেন। নিকটাত্মীয় বলতে আবদুল মুত্তালিবের গোটা বংশধরদেরই বুঝায়। আর কেউ কেউ কেবলমাত্র হযরত আলী, ফাতেমা (রাঃ) এবং তাঁদের সন্তানদের পর্যন্ত এটাকে সীমাবদ্ধ মনে করেন, হযরত সায়ীদ ইবনে যুবায়ের (রাঃ) ও আমর ইবনে শুয়াইব (রাঃ) থেকে এ তাফসীরই বর্ণিত হয়েছে। আবার কোনো কোন বর্ণনায় এ তাফসীল ইবনে আব্বাস ও হযরত আলী ইবনে হুসাইন (যয়নুল আবেদীন) এর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু কয়েকটি কারণে এ তাফসীল কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রথমতঃ মক্কায় যখন সূরা আশ-শূরা নাযিল হয়, তখন হযরত আলী ও ফাতেমার বিয়েই হয়নি, সন্তান হওয়ার তো দূরের কথা। আর আবদুল মুত্তালিবের বংশধররাও সকলেই তখনো নবী (সঃ) এর সঙ্গী-সাথী হয়নি, বরং তাদের অনেকেই প্রকাশ্যভাবে দুশমনদের সঙ্গী-সাথী ছিলো। আবু লাহাবের দুশমনী তো গোটা দুনিয়া জানে। দ্বিতীয়তঃ নবী (সঃ)-এর আত্মীয় কেবল আবদুল মুত্তালিবের বংশধররাই ছিল না। তাঁর মাতা, তাঁর পিতা ও সম্মানিতা স্ত্রীর (হযরত খাদীজা) সূত্রে কুরাইশদের সব ঘরেই তাঁর আত্মীয় এগানা ছিলো। এমনি করে কুরাইশদের সকল ঘরেই তাঁর মহোত্তম সাহাবিরা যেমন বর্তমান ছিলেন, তেমনি নিকৃষ্টতম দুশমনরাও বর্তমান ছিলো। এসব নিকৃষ্টতম লোকদের মধ্যে কেবল আবদুল মুত্তালিবের বংশধরদেরকেই নিজেরআত্মীয় বলে আখ্যা দেয়া এবং তাদের জন্যে বিশেষ ভালবাসা পাবার আবেদন জানানো নবী করীম (সঃ) এর পক্ষে কি করে সম্ভব ছিলো ? এ ব্যাপারে তৃতীয় কথাটি সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। তা হচ্ছে একজন নবী যিনি অতি উন্নত মর্যঅদায় অবস্থান করে মানুষকে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দান করেন, সে উচ্চতম মর্যাদায় অভিষিক্ত থেকে এ মহান কাজের জন্যে পারিশ্রমিক চাওয়া যে, তোরা আমার আত্মীয়-স্বজনকে মহব্বত করো-নিতান্তই নীচু স্তরের কাজ। কোনো সুরুচিসম্পন্ন ব্যাক্তি এমনকি কল্পনাও করতে পারে না যে, আল্লাহ তাঁর নবীকে এমন কথা শিক্ষা দেবেন আর নবী কুরাইশদের সামনে দাঁড়িয়ে এমন কথা বলবেন। কুরআন মজীদে আম্বিয়ায়ে কেরামের যে সব কাহিনী আলোচিত হয়েছে, তাতে আমরা দেখতে প্ই প্রথ্যেক নবীই তাঁর জাতির লোকদের পরিস্কার ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন আমি তোমাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক চাইনা, আমার পারিশ্রমিক তো মহান্আল্লাহর দায়িত্ব রয়েছে। (ইউনুস-৭,২,হুদ-২৯,৫১,আশশূয়ারা ১০৯,১২৭,১৪৫,১৬৪,১৮০)। সূরা ইয়াসীনে নবীর সত্যতা যাচাইর মানদণ্ড হিসেবে বলা হয়েছে নবী তাঁর দাওয়াতী কাজে সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থ হয়ে থঅকেন (আয়াত-২১)। স্বয়ং নবী (সঃ)-এর মুখ দিয়ে কুরআন মজিদে বার বার বলানো হয়েছেঃ আমি তোমাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক চাইনা, এ সম্পর্কে উপরে উদ্ধৃত হয়েছে। অতঃপর এ কথা বলার কি অবকাশ আছে যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে দাওয়াত দানের যে কাজ আমি করছি তার বিনিময়ে তোমরা আমার আত্মীয়-স্বজনকে ভালবাসো। এরপর যাখন আমরা দেখি এ ভাষণ্ঈমানদারদের নয় বরং কাফেরদের সম্বোধান করা হয়েছে, তখন এমন বক্তব্য আরো অধিক অযাচিত বলে দৃষ্টিগোচর হয়। উপর থেকে গোটা ভাষণেই কাফেরদের সম্বোধন করা হয়েছে আর সম্মুখের সম্বোধনও তাদেরই প্রতি। কথার এ প্রাসঙ্গিকতায় বিরুদ্ধবাদীদের কাছ থেকে কোনো প্রকার পারিশ্রমিক চাওয়ার প্রশ্ন শেষ পর্যন্ত কেমন করে সৃষ্টি হতে পারে ? পারিশ্রমিক ঐসব লোকদের কছেই চাওয়া যায় যাদের দৃষ্টিতে কাজটা খুবই মূল্যবান এবং যাদের জন্যে তিনি তাদের এ মূল্যবান কাজটির সুব্যবস্থা করেছেন। কাফেররা হুজুর (সঃ) এর এ মহান কাজের কি মূল্যটা দিচ্ছিল যে, তিন তাদের বলতে পারেনঃআমি যে তোমাদের এ বিরাট খেদমত আঞ্জাম দিচ্ছি এর বিনেময়ে তোমরা আমার আত্মীয়-স্বজনকে ভালোবাসো ? বরং তারা তো উল্টা এ কাজটাকে বিরাট দোষ ও অপরাধ মনে করছিল, যার কারণে তার তাঁর প্রাণ পযন্ত নাশ করতে চেয়েছিল।
দাওয়াতী কাজের সূচনায় পরকালীন ধারণা বিশ্বাসের প্রতি অধিকতর গুরুত্ব প্রদান
মক্কা মুয়অযযমায় রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন ইসলাম প্রচারের কাজ আরম্ভ করেন, তখন তাঁর এ কাজের ভিত্তি ছিলো ৩টি। প্রথমতঃ খোদয়ীর ব্যাপারে আল্লাহর সাথে আর কাউকে শরীক মানা যাবে না। দ্বিতীয়তঃ আল্লাহ তায়ালা তাঁকে স্বীয় রাসূল মনোনীত করেছেন। তৃতীয়তঃ একদিন এ পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে, অতঃপর আর একটি পৃথিবী বানানো হবে। তখন আদি থেকে অন্ত পর্যন্তকার সমস্ত মানুষকে পুনরুন্খিত করা হবে এবং ঠিক সে দেহ ও শরীর সহ হাশরের ময়দানে উপস্থিত করানো হবে, যে দেহ ও শরীল নিয়ে কাজ করছিল। অতঃপর তাদের আকীদা বিশ্বাস ও যাবতীয় কাজ-কর্মের হিসেব নেয়া হবে। এ হিসেব-নিকেষে যারা ঈমানদার ও সৎ প্রমাণিত হবে-তারা চিরদিনের জন্য জান্নাতে প্রবেশ করবে। পক্ষান্তরে যারা কাফের ও ফাসেক প্রমাণিত হবে, তারা চিরকালে জন্যে জাহান্নামবাসী হবে।
এ তিনটি কথার প্রথম কখাটি মেনে নেয়া যদিও মক্কাবাসীদের জন্যে কঠিন ব্যাপার ছিলো, কিন্তু অথাপি তারা আলআলাহর অস্তিত্বের অস্বীকারকারী ছিল না। আল্লাহকে সর্বশ্রেষ্ঠ রব, সৃষ্টিকর্তা এবং রেযেকদাতা হিসেবেও তারর মানত এবং আল্লাহকে ছাড়া অন্য যাদের তারা উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছিল, সেগুলোকেও আল্লাহর সৃষ্টি বলেই তারা স্বীকার করতো। সুতরাং তাদের সাথে কেবলমাত্র বিরোধ ছিলো খোদার গুণাবলী ক্ষমতা ইখতিয়ার ও ইলাহর মূল সত্তায় ঐসব উপাস্যদের কোনো অংশীদারিত্ব আছে কি নেই-এ বিষয় নিয়ে।
দ্বিতীয় কথাটা মক্কার লোকেরা মেনে নিতে প্রস্তুত ছিলো না। কিন্তু তাদের পক্ষে একথঅ স্বীকার করা অসম্ভব ছিলো যে, নবী করীম (সঃ) নবুওয়াতের দাবী করার পূর্বে সুদীর্ঘ চল্লিশটি বছর তাদের মাঝেই জীবন যাপন করেছিলেন এবং দীর্ঘ সময়ে তারা তাঁকে খখনো মিথ্যাবাদী, ধোকাবজ, কিংবা আত্মস্বার্থরক্ষার জন্যে অবৈধ পন্থা অবলম্বনকারী হিসেবে দেখতে পায়নি। তারা তো সব সময় র্তাঁর বুদ্ধিমত্তা; বিচক্ষণতা, সুস্থমস্তিস্ক এবং উন্নত নৈতিক চরিত্রের সমর্থক ও প্রশংসাকারী ছিলো। এ কারণে হাজারো টালবাহানা ও অভিযোগ রচনা সত্ত্বেও তা অন্য লোকদের বিশ্বাস করানো তো দূরের কথা স্বয়ং তাদের পক্ষেও তাদের এসব কথা সত্য বলে মেনে নেয়া সম্ভবপর ছিল না। কারণ, নবী করীম (সঃ) যখন সব ব্যাপারেই সত্যবাদী ও সত্যপন্থী তখন কেবলমাত্র রেসালাতের দাবীর ব্যাপারে মায়াযাল্লাহ! মিথ্যাবাদী কেমন করে হতে পারেন ?
এমনি করে প্রথম দুটি কথা মক্কাবাসীদের এতো বেমী আপত্তিকর ছিল না। যতটা আপত্তিকর ছিল তৃতীয় কথাটি। একথাটি তাদের সম্মুখে পেশ করা হলে এটা নিয়েই তারা সর্বাধিক বিদ্রূপ করে। এ ব্যাপারটা শুনে তারা সবচাইতে বেশী বিস্ময় ও হয়রানী প্রকাশ করলো এবং তার এটাকে অযৌক্তিক ও অসম্ভব মনে করে বিভিন্ন স্থানে তা ধারণার অতীত, গ্রহণ অযোগ্য বলে প্রচার করতে লাগলো। অথচ ইসলামে আনার জন্যে তাদেরকে পরকালের প্রতি বিশ্বাসী বানানো ছিলো অপরিহার্য কারণ পরকালের সম্ভাব্যতা স্বীকার করে না নিলে হক ও বাতিলের নির্ভু চিন্তা পদ্ধতি গ্রহণ, ভাল-মন্দ নির্বাচনের মেরুদণ্ড পরিবর্তন ও দুনিয়া পূজার পথ পরিহার করে ইসলাম প্রদর্শিত পথে চলঅ তাদের পক্ষে একান্তিই অসম্ভব ছিলো। এ জন্যে মক্কা মুয়াযযমায় অবতীর্ণ প্রাথমিক যুগের সূরাগুলোতে সর্বাধিক প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে পরকাল বিশ্বাসকে মানষের অন্তরে পতিষ্ঠিত করে দেবার জন্যে। অবশ্য সেজন্যে দলিল প্রমাণ পেশ করার ক্ষেত্রেও এমন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়-যাতে লোকদেরকেমনে তৌহিদের ধারণা আপনাতেই বসে যায়। মাঝে মধ্যে রাসূলে করীম (সঃ) ও কুরআন মজীদের সত্যতা প্রমাণের যুক্তি প্রমাণও সংক্ষেপে আলাচনা করা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (সঃ) গোপন দাওয়াতের তিন বছর
গোপন দাওয়াতের তিন বছর
আল্লাহ তাঁর নবীকে রিসালাতের পয়গাম পৌঁছে দেয়ার জন্য বিশেষ হিকমত শিক্ষা দিয়েছেন। সে অনুযায়ী তিনি নিজ কর্মতৎপরতার সূচনাতেই নবুওয়াতের ঘোষণঅ এবং সাধারণ দাওয়াত দেয়ার কাজ শুরু করেননি বরং যেসব কৎকর্মশীল ব্যক্তি নিছক দলিল-প্রমাণ ও বুদ্ধি যুক্তির মাধ্যমে তৌহিদকে গ্রহণ ও শিরককে পরিত্যাগ করতে সম্মত ছিলেন প্রাথমিক তিন বছরে তিনি গোপন পদ্ধতিতে তাদের নিকট ইসলামকে পৌঁছে দেয়ার কজা করছিলেন্ এ ছাড়া এমন কিছু বিশ্বস্ত লোকের নিকটও এ কাজরে কথঅ প্রকাশ করা হতো, যাদের ব্যাপারে নির্ভর করা যেতো যে, তারা সে সময় পর্যন্ত আল্লাহর নির্দেশে রসূলুল্লঅহ (সঃ) সাধারণ ঘোষণা ও প্রকাশ্যে আল্লাহর দিকে আহ্বান করতে শুরু করার সিদ্ধান্ত না দেন। এ কাজে হযরত আবুবকর¬১ (রাঃ) এর প্রভাব সবচাইতে বেশী কার্যকর প্রমাণিত হয়।
এ কারণেই তাবারী ও ইবনে হিশাম লিখেছেন, তিনি ছিলেন খুবই মিশুকে ও প্রফুল্ল চিত্ত। সুন্দুর সুকুমার গুণাবলীর কারণে তার কওমের মধ্যে তিনি খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। কুরাইদের মধ্যে তাঁর চাইতে বড় বংশ-বিশারদ আর কেউ ছিলনা। কুরাইশদের ভাল ও মন্দ লোদের পরিচয় এবং লোকদের দোষগুণ সম্পর্কে আবুবকর (রাঃ)-এর চাইতে বেশী।
ওয়অকিফহাল আর কেউ ছিলনা। ব্যবসায় ছিলো তাঁর পেশা। সুন্দর পরিচ্ছন্ন লেনদেনে তিনি চিলৈন খ্যাতিমান। কওমের লোকেরা তাঁর জ্ঞান, ব্যবসায় এবং উত্তম আচরণের কারণের তাঁর সাথে অধিক মেলা-মেশা ও উঠা-বসা করতো। এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করে এ সময় তিনি নির্ভরযোগ্য ও আস্থাবান লোকদের কাছে দাওয়াত পৌঁছে দেন। তাঁর দাওয়াতে আকৃষ্ট হয়ে বেশ কিছু সংখ্যক লোক মুসলমান হয়ে যান। অতঃপর যে যে ব্যক্তিই মুসলমান হচ্ছিলেন, তার তাদের বন্ধু মহলের সৎ লোকদের নিকট ইসলামের বাণী পৌঁছে দিচ্ছিলেন। এ সময় মুসলিমগণ মক্কার নির্জণ আস্তানা সমূহে চুপিসারে নামায পড়তেন যেন তাঁদের ধর্ম পরিবর্তন কেউ জানতে না পারে।
দ্বারে আরকামে দাওয়াতের কেন্দ্র ও ইজতেমা কায়েম
মাত্র আড়াই বছর অতীত হয়েছে। এ সময় এমন এক ঘটনা ঘটে, যাতে মক্কার কাফেরদের সাথে সময় হওয়ার পূর্বেই-সংঘর্ঘ বাধঅর আশংকা দেখা দেয়। ইবনে ইসহাক থেকে বর্ণিতঃ একদিন মক্কার মুশরিকরা মুসলামানদেরকে কোনো একটি ঘাটিতে নামযরত অসস্থায় দেখে ফেলে এবং দুর্বল-কাপুরুষ বলে গালি দিতে আরম্ভ করে। কথা বাড়তে বাড়তে উভয় দলের মধ্যে সংঘর্ঘ বাধে। হযরত সা’আদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) এক ব্যক্তির প্রতি উটের হাড় নিক্ষেপ করলে তার মাথঅ ফেটে যায়। ইবনে জরীর এবং ইবনে হিশাম সংক্ষিপ্ত আকারে এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন। কিন্তু হাফেয উমাভী তাঁর মাগাযী গ্রন্থে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ লিপিবদ্ধ করে বলেছেন, যে ব্যক্তির মাথা কেটে গিয়েছিল সে ছিল বনী তাইমের আবদুল।লাহ ইবনে কাতাল । এ ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর হুজুর (সঃ) অবিলম্বে সাফা পর্বতের সন্নিকটে অবসিথত হযরত আরকামের বাড়ীতে মুসলমানদের ইজতিমা এবং দাওয়াত ও তাবলীগের কেন্দ্র বানিয়ে নেন। মুসলমানরা এখানে একত্রিত হয়ে নামায এবং যেসব লোক গোপনে মুসলমানরা এখঅনে একত্রিত হয়ে নামায পড়ত এবং যেসব লোক গোপনে মুসলমান হতে চায় তারাও এখানে আসতে থাকে। ইসলামের ইতিহাসে এই দ্বারে আকাম চির খ্যাতিমান। গোপন দাওয়াতের তিন বছর পরসমাপ্তির পর প্রকাশ্যে সাধঅরণ দাওয়াত শুরু হবার পরও এই দ্বারে আরকামই মুসলামানদের কেন্দ্র ছিলো। এখানেই হুজুর (সঃ) আসেতন। এখানে এসেই মুসলমানরা তাঁর কাছে একত্রিত হতো এবং শেবে আবু তালিবে অন্তরীণ হওয়া পযন্ত এ বাড়ীই ইসলামী দাওয়াতের কেন্দ্রীয় মর্যাদার অভিষিক্ত ছিলো।
তিন বছর গোপন দাওয়াতের খতিয়ান
প্রকাশ্য দাওয়াত সংক্রান্ত আলাচনার পূর্বে তিন বছরের গোপন দাওয়াতে কি পরিমাণ কাজ হলো, তার প্রতিবেদন দেখে নেয়া যাক। কুরাইশদের কোন কোন কবিলার কোন কোন ব্যক্তি মুসলমান হলেন, কুরআশি, মাওলা১ ক্রীতদাস আবং ক্রীতদাসীদের মধ্যে কারা কারা ইসলাম কবুল করলেন-তাও খতিয়ে দেখা যাক। ব্যাপক গবেষণঅ ও অনুসন্ধানের পর সংগ্রহ করা নাম সমহের তালিকা আমরা নিম্নে লিপিবদ্ধ করলাম যা আর কোথাও একত্রে লিপিবদ্ধ নেই।২
বনি হাশিমঃ (১) জাফর ইবনে আবু তালিব (রাঃ) (২) তাঁর স্ত্রী আসমা বিনতে উমাইস খাসআমী। ইনি ছিলেন অকুরাইশ৩ (৩) সাফিয়া বিনতে আবদুল মুত্তালিব (হুযুর (সঃ) এর ফুফু এবং হযরত যুবায়েরের মা)। (৪) আরওয়া বিনতে আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) (হুযুর (সঃ) এর ফুফু এবং তুলাইব ইবনে উমাইর (রাঃ)-এর মা)।
বনি আবদুল মুত্তালিবঃ (৫) উবাইদা ইবনে হারেসে ইবনে মুত্তালিব (রাঃ)।
বনি আবদে শামস ইবনে আবদে মান্নাফঃ (৬) আবু হুযাইফা ইবনে উৎবা ইবনে রাবিআ (রাঃ) (৭) তাঁর স্ত্রী সাহলা বিনতে সুহাই ইবনে আমর (রাঃ)।
বনি উমাইয়াঃ (৮) উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) (৯) তাঁর মাতা আরওয়া বিনতে কুরাইয (রাঃ) (১০) কালিদ ইবনে সাঈদ ইবনে আস ইবনে উমায়া (রাঃ) (তার পিতা সায়ীদের কুনিয়াত ছিলোঃ আবু উহাইহা) (১১) তাঁর স্ত্রী উমাইমা বিনতে খালফ খোজায়ীয়া (রাঃ) কেউ কেউ এর নাম উমাইনা লিখেছেন) (১২) উম্মে হাবীবা বিনতে আবু সফিয়া (রাঃ) (প্রথমে উবাইদুল্লাহ ইবনে জাহাশের স্ত্রী ছিলেন। পরে উম্মুল মু’মিনীনের মর্যাদা লাভ করেন)।
বনি উমাইয়ার মিত্র গোত্রসমূহ থেকেঃ (১৩) আবদুল্লাহ ইবনে জাহাশ ইবনে রিয়াব (১৪) আবু আহমদ ইবনে জাহাশ (১৫) উবায়দুল্লাহ ইবনে জাহাশ১। এরা ছিলেন বনি গণম বিন দুদানের লোক, হুযুরের ফুফু উমাইমা বিনতে আবদুল মুত্তালিবের পুত্র এবং উম্মুল মুমিনীন যয়নব বিনতে জাহাশের ভ্রাতৃবৃন্দ।
বনি তাইমঃ (১৬) আসমা বিনতে আবুবকর (রাঃ) (১৭) উম্মে রুমান (রাঃ) (হযরত আবুবকরের স্ত্রী এবং হযরত আয়েশা ও আবদুর রহমান ইবনে আবুবকরের মা) (১৮) তালহা আবনে উবাইদুল্লাহ (রাঃ) (১৯) তাঁর মাত সা’বা বিনতে হাজরামী (রাঃ) (২০) হারেস ইবনে খালদ (রাঃ)।
বনি তাইমের মিত্র গোত্র থেকেঃ (২১) সুহাইব ইবনে সিনান রুমী (রাঃ)।
বনি আসাদ ইবনে আদুল উজ্জাঃ (২২) যুবায়ের ইবনে আওয়াম (রাঃ) (হযরত খাদীজার ভাতিজা এবং হুযুর (সঃ)-এর ফুফাতো ভাই) (২৩) খালেদ ইবনে হেযাম (রাঃ) (হাকীম ইবনে হেযামের ভাই এবং হযরত খাদীজার ভাতিজা) (২৪) আসওয়াদ ইবনে নওফেল (রাঃ) (২৫) অমর ইবনে উমাইয়অ (রাঃ)।
বনি আবদুল উজ্জা ইবনে কুসাইঃ (২৬) ইয়াযীদ ইবনে যামআ ইবনে আসওয়াদ (রাঃ)।
বনি যুহরাঃ (২৭) আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রাঃ) (২৮) তাঁর মাতা শেফা বিনতে আওফ (রাঃ) (২৯) সাআদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) (তাঁর আসল নাম ছিল মালেক ইবনে উহাইব) (৩০) তাঁর ভ্রাতা উমাইর ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) (৩১) তাঁর ভ্রাতা আরে ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) (৩২) মুত্তালিব ইবনে আযহার (রাঃ) (আঃ রহমান ইবনে আওফের চাচাতো ভাই) (৩৩) তাঁর স্ত্রী রামলা বিনেত আবি আওফ সাহমীয়া (রাঃ) (৩৪) তুলাইব ইবনে আযহার (রাঃ) (৩৫) আবদুল্লাহ ইবনে শিহাব (রাঃ) (মায়ের দিক থেকে ইনি ইমাম যুহরীর নানা ছিলেন)।
বনি যুহরার মিত্রদের মধ্যে থেকেঃ (৩৬) আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) (ইন হুযাইল গোত্রের লোক। বনি যুহরার মিত্র হিসেবে মক্কায় বসবাস করতেন)। (৩৭) উৎবা ইবনে মাসউদ (রাঃ) (আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদের ভাই) (৩৮) মিকদাদ ইবনে আমরুল কিন্দি (রাঃ) (আসাওয়াদ ইবনে আবদে ইয়াগুছ তাঁকে মিত্রকরে রেখেছিলেন। (৩৯) খাব্বাব ইবনে ইরত (রাঃ) (৪০) শুরাহ বিল ইবনে হাসনা আল-কিন্দি (রাঃ) (৪১) জাবির ইবনে হাসনা আল কিন্দি (রাঃ) (মুবারহবিলের ভ্রাতা) (৪২) জুনাদা ইবনো হাসনা (রাঃ) (শুরাহবিলের ভাই)।
বনি আদীঃ (৪৩) সাঈদ ইবনে যায়েদ ইবনে আমর ইবনে নুফাইল (রাঃ) (হযরত উমর (রাঃ) এর ভগ্নিপতি ও চাচাতো ভাই) (৪৪) যায়েদ ইবনে খাত্তাব (রাঃ) (হযরত উমরের বোন) (৪৫) যায়েদ ইবনে খাত্তাব (রাঃ) (হযরত উমরের বড় ভাই) (৪৬) আমের ইবনে রবীয়া আল আনাযী (রাঃ) (ইনি ছিলেন বনি আদির মিত্র। খাত্তাব তাঁকে পুত্র বানিয়ে রেখেছিলেন। আবু আবদুল্লাহ আনাসী ছিলো তার কুনিয়াত) (৪৭) তাঁর স্ত্রী লাইলা বিনতে আবু হাসমা (রাঃ) (৪৮) মা’মার ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে নাদমা (রাঃ) (৪৯) নুয়াইম ইবনে আবদুল্লাহ আননাহহম (রাঃ) (৫০) আদী ইবনে নাদলা (রাঃ) (৫১) উরওয়া ইবনে আবু উসাসা (রাঃ) (আরম ইবনে আসের মায়ের পক্ষের ভাই) (৫২) মাসউদ (রাঃ) ইবনে সুয়াইদ ইবনে হারেসা ইবনে নাদালা।
বনি আদীর মিত্রদের মধ্য থেকেঃ (৫৩) ওয়াকিদ ইবনে আবদুল্লাহ (একে খাত্তাব চুক্তিবদ্ধ করে আশ্রয় দিয়ে রেখেছিলেন) (৫৪) খালেদ ইবনে বুকাইর ইবনে আবদে ইয়ালিল লাইছী (রাঃ) (৫৫) ইয়াস (রাঃ) (৫৬) আমের (রাঃ) (৫৭) আকিল (রাঃ)।
বনি আবদুদ দারঃ (৫৮) মুসয়াব ইবনে উমায়ের (রাঃ) (৫৯) আবু রুম উবনে উমায়ের (রাঃ) (মুসআবের ভ্রাতা) (৬০) ফিরাস ইবনে নদর (রাঃ) (৬১) জহম ইবনে কায়েস (রাঃ)।
বনি জুমাহঃ (৬২) উসমান ইবনে মাযউন (রাঃ) (৬৩) তাঁর ভাই কুদামা ইবনে মাযউন (রাঃ) (৬৪) তাঁর ভাই আবদুল্লাহ ইবনে মাযউন (রাঃ) (৬৫) সায়েম ইবনে উসমান ইবনে মাযউন (রাঃ) (৬৬) মা’মার ইবনে হারেস ইবনে মা’মার (রাঃ) (৬৭) তাঁর ভাই হাতেব ইবনে হারেস (রাঃ) (৬৮) তাঁর স্ত্রী ফাতেমা বিনতে মুজাললাল আমেরী (রাঃ) (৬৯) মা’মারের ভাই খাত্তাব ইবনে হারেস (রাঃ) (৭০) তাঁর স্ত্রী ফুকাইহা বিনতে ইয়াসার (রাঃ) (৭১) সুফিয়ান ইবনে মা’মার (রাঃ) (৭২) নুবাইহ ইবনে উসমান (রাঃ)।
বনি সাহামঃ (৭৩) আবদুল্লাহ ইবনে হুযাফা (রাঃ) (৭৪) খুনাইস ইবনে হুযাফা (রাঃ) হযরত উমরের জামাই (উম্মুল মুমিনীন হাফসা (রাঃ)-র প্রথম স্বামী (৭৫) হিশাম ইবনে আস ইবনে ওয়ায়েল (রাঃ) (৭৬) হারেস ইবনে কায়েস (রাঃ) (৭৭) তাঁর পুত্র বশীল ইবনে হারেস (রাঃ) (৭৮) তাঁর অপর পুত্র মা’মার ইবনে হারেস (রাঃ) (৭৯) কায়েস ইবনে হুযাফা (রাঃ) (আবদুল্লাহ ইবনে হুযাফার ভাই) (৮০) আবু কায়েস ইবনে হারেস (রাঃ) (৮১) আবদুল্লাহ ইবনে হারেস (রাঃ) (৮২) সায়েব ইবনে হারেস (রাঃ) (৮৩) হাজ্জাজ ইবনে হারেস (রাঃ) (৮৪) বেশর ইবনে হারেস (রাঃ) (৮৫) সা’ঈদ ইবনে হারেস (রাঃ)।
বনি সাহমের মিত্রদের মধ্য থেকেঃ (৮৬) উমায়ের ইবনে রিযাব (রাঃ) (৮৭) মাহমিয়া ইবনে জাযউ (রাঃ) (ইন ছিলেন হযরত আব্বাসের স্ত্রী উম্মুল ফদলের মায়ের পক্ষের ভাই)।
বনি মাখজুমঃ (৮৮) আবু সালমা আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল আসাদ (রাঃ) (হুজুর (সঃ) এর ফুফাতো ভাই এবং দুধ ভাই। উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালমার প্রথম স্বামী) (৮৯) তাঁর স্ত্রী উম্মে সালামা (রাঃ)। (ইনি এবং তাঁর স্বামী আবু সালমা আবু জেহেলের নিকটাত্মীয় ছিলেন) (৯০) আরকাম ইবনে আবুল আরকাম (রাঃ) (এর দ্বারে আরকামের কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে) (৯১) আইয়াস ইবনে আবু রাবিয়া (রাঃ) (আবু জেহেলের মায়ের পক্ষের ভাই ও হযরত খালেদ ইবনে অলীদের চাচাতো ভাই) (৯২) তাঁর স্ত্রী আসমা বিনতে সালামা তামিমী (রাঃ) (৯৩) অলীদ ইবনে অলীদ ইবনে মুগীরা (রাঃ) (৯৪) হিশাম ইবনে আবু হুজাইফা (রাঃ) (৯৫) সালামা ইবনে হিশাম (রাঃ) (৯৬) হাশেম ইবনে আবু হুজাইফা (রাঃ) (৯৭) হাববার ইবনে সুফিয়ান (রাঃ) (৯৮) তাঁর ভ্রাতা আবদুল্লাহ ইবনে সুফিয়ান (রাঃ)।
বনি মাখযুমের মিত্রদের মধ্য থেকেঃ (৯৯) ইয়াসির (রাঃ) (আম্মার ইবনে ইয়াসিরের পিতা) (১০০) আম্মার ইবনে ইয়াসির (রাঃ) (১০১) তাঁর ভাই আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াসির (রাঃ)।
বনি আমের ইবনে লুওয়াইঃ (১০২) আবু সাবরা ইবনে রুহম (রাঃ) (হুজুর (সঃ) এর ফুফু বাররাহ বিনতে আবুল মুত্তালিবের পুত্র) (১০৩) তাঁর স্ত্রী উম্মে কুলসুম বিনতে সুহাইল ইবনে আমর (রাঃ) (আবু জান্দালের ভগ্নি) (১০৪) আবদুল্লাহ ইবনে সুহাইল ইবনে আমর (রাঃ) (১০৫) হাতেম ইবনে আমর (রাঃ) (সুহাইল ইবনে আমরের ভাই) (১০৬) সালিম ইবনে আমর (রাঃ) সুহাইল ইবনে আমরের ভাই)। ইসাবা গ্রন্থে তাঁকে সুহাইল ইবনে আমরের ভাতিজা বলা হয়েছে) (১০৭) সাকরান ইবনে আমর (রাঃ) (সুহাইল ইবনে আমরের ভাই এবং উম্মুল মুমিনীন হযরত সওদা বিনতে যাময়ার প্রথম স্বামী) (১০৮) তাঁর স্ত্রী সওদা বিনতে যাময়া (রাঃ) (সুকরানের মুত্যুর পর তিনি উম্মুল মুমিনীনের মর্যাদা লাভ করেন) (১০৯) সালিত উবনে আমরের স্ত্রী ইয়াকাযা বিনতে আলকামা (ইসাবা গ্রন্থে উম্মে ইয়াকাযা লেখা হয়েছে এবং ইবনে সাআদ তার নাম ফাতেমা বিনতে আলকামা বলেছেন) (১১০) মালিক ইবনে যাময়া (রাঃ) (হযরত সওদার ভাই) (১১১) ইবনে উম্মে মাকতুম(রাঃ)।
বনি ফিহর ইবনে মালিকঃ (১১২) আবু উবাইদা ইবনে জাররাহ (রাঃ) (১১৩) সুহাইল ইবনে বাইদা (রাঃ) (১১৪) সা’ঈদ ইবনে কাসে (রাঃ) (১১৫) আমর ইবনে হারেস ইবনে যুহাইর (রাঃ) (১১৬) উসমান ইবনে আবদে গানাম ইবনে যুহাইর (রাঃ) (হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফের ফুফাতো ভাই) (১১৭) হারেস ইবনে সা’ঈদ (রাঃ)।
বনি আবদে কুসাইঃ (১১৮) তুলাইব উমাইর (রাঃ) (হুজুর (সঃ) এর ফুফু আরওয়া বিতে আবদুল মুত্তালিবের পুত্র)।
এ পর্যন্ত উল্লেখিত ব্যক্তিরা সবাআ কোরাইশের বড় বড় খান্দানের সাথে সম্পর্কিত। এছাড়াও বেশ কিছু সংখ্যক মাওলা, দাস ও দাসী গোপন দাওয়াতের তিন বছরে ইসলাম কবুল করেন। তাঁদের নাম নিম্নে প্রদত্ত হলোঃ (১১৯) উম্মে আয়মান বারকা বিনতে সালাবা (ইন শৈশব থেকে হুজুর (সঃ)-কে কোলে করে লালন পালন করেন। (১২০) যিন্নিরা, রূমীয়া, (আমর ইবনে মুয়াম্মিল এর মুক্ত দাসী) (১২১) বিলাল ইবনে রাবাহ (রাঃ), (ইনি উমাইয়া ইবনে খালফের দাস ছিলেন) (১২২) তাঁর মাতা হামামা (রাঃ) (১২৩) আবু ফুকাইয়া ইয়াসার জাহমী (রাঃ) সুফওয়ান ইবনে উমাইয়ার আযাদকৃত গোলাম। (১২৪) লবিবা-মুয়াম্মিল ইবনে হাবীবের দাসী। (১২৫) উম্মে উবাইস (রাঃ) বনি তাইম ইবনে মুররাহ অথবা বনি যুহরার দাসী। (পথশ মত যুবাইর ইবনে বাককারের এবং দ্বিতীয় মত বালাজুরীর) (১২৬) আমের ইবনে ফুহাইরা (রাঃ) (তোফায়েল ইবনে আবদুল্লাহর গোলাম)। (১২৭) সুমাইয়া (রাঃ) (হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসারের মাতা এবং আবু হুযাইফা ইবনে মুগীরা মাখযুমীর দাসী)।
এ ছাড়া অকুরাইশদের মধ্যে যারা মক্কার এই প্রাথমিক অধ্যায়ে ইসলাম কবুল করেন, তাঁরা হচ্ছেনঃ (১২৮) মেহজান (রাঃ) ইবনে আদরা আসলমী। (১২৯) মাসউদ (রাঃ) ইবনে রবীয়া ইবনে আমর। ইনি ছিলেন বনি উলুহুন ইবনে খুযাইমার কাররাহ কবিলার লোক।
এভাবে প্রথম চারজন মুসলামানদের সাথে এ ১২৯ জন মিলিত হওয়ায় তাঁদের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩৩। সাধারণ দাওয়াত আরম্ভ হওয়ার পূর্বে এরা হুজুর (সঃ)-এর প্রতি ঈমান এনে মুসলিম জামায়াতে শরীক হয়েছিলেন।১
এরা ছিলেন স্থির স্বভাব, প্রশান্তি চিত্ত ও বিশুদ্ধ চিন্তার অধিকারী। এরা কেবল যুক্তি ও সাধারণ জ্ঞানের মাধ্যমেই শিরকের অনিষ্টতা বুঝতে পেরছিলেন। এরা মেনে নিয়েছিলেন তৌহিদের তাৎপর্য ও সত্যতা। মুহাম্মদ (সঃ)-কে স্বীকৃতি দান করেছিলেন, কুরআনকে আল্লাহর বাণী হিসেবে নিজেদের হেদায়েতের একমাত্র পথ এবং আখেরাতের যিন্দেগীকে অবশ্যম্ভাবী মহাসত্য বলে বুঝে নিয়েছেলেন। এই মুখলিস ও দ্বীনের যথার্থ জ্ঞান সম্পন্ন কর্মী বাহিনী তৈরী করে নেয়অর পর আল্লাহর নির্দেশে হুজুর (সঃ) প্রকাশ্যভাবে ইসলামী দাওয়াতের কাজ আরম্ভ করেন।
“হে আমাদের প্রতিপালক! সবরের পথ অবলম্বন কর। বাতিলপন্থিদের মোকাবিলায় দৃঢ়তা দেখাও। হকের খেদমত করার জন্য উঠে পড়ে লাগো এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাকো। আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হবে”। (আলে-ইমরান-২০০)
১। আল ইসতিয়াব গ্রন্থে ইবনে আবদুল বার এবং উসদুলগাবা গ্রন্থে ইবনে আসীর লিখেছেনঃ “বলা হয়ে থাকে হযরত আব্বাসের স্ত্রী উম্মুল ফদল প্রথম মহিলা, যিনি হযরত খাদীজার পরে মুসলমান হন”। এ কথা যদি সঠিক হয়ে থাকে তবে এই প্রাথমিক অধ্যায়ের মুসলমানদের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩৪। এ মহিলার আসল নাম হচ্ছে লুবাবা বিনতে হারেস। ইন উম্মুল মুমিনীন হযরত মাইমুনার বোন, হযরত খালেদ ইবনে অলীদের খালা এবং হযরত জাফর ইবনে আবু তালিবের স্ত্রী আসমা বিনতে উমাইসের মায়ের পক্ষের বোন ছিলেন। তার প্রসঙ্গে “বলা হয়ে থাকে” তার মতে দুর্বল বাক্য ব্যবহূহ হওয়ায় আমরা তালিকায় তার নাম উল্লেখ করিনি। -গ্রন্থকার
তৃতীয় অধ্যায় : রাসূলুল্লাহ (সঃ) গোপন দাওয়াতের তিন বছর
সমাপ্ত
(এই বইয়ে আর কোন অধ্যায় নেই । নিচের লিষ্টটি লেখকের অন্যান্য বই)
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
রিসেন্ট ব্লগ পোষ্টস
বিষয়শ্রেণী
রাইটার
প্রিয়-ক্লিক
কিছু বই
- অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা
- অর্থনীতিতে রাসূল (সা) এর দশ দফা
- আদর্শ মানব মুহাম্মদ (সা)
- আসহাবে রাসূলের জীবনকথা
- ইসলাম ও জিহাদ
- ইসলাম পরিচিতি
- ইসলামী আন্দোলন : সাফল্যের শর্তাবলী
- ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক
- ইসলামী আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি
- ইসলামী দাওয়াত ও কর্মনীতি
- ইসলামী নেতৃত্বের গুণাবলী
- ইসলামী বিপ্লবের পথ
- ইসলামী রেনেসাঁ আন্দোলন
- ইসলামী সমাজে মজুরের অধিকার
- একটি আদর্শবাদী দলের পতনের কারণঃ তার থেকে বাঁচার উপায়
- চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান
- দায়ী’ ইলাল্লাহ - দা’ওয়াত ইলাল্লাহ
- নামাজ কেন আজ ব্যর্থ হচ্ছে
- নামায-রোজার হাকীকত
- মোরা বড় হতে চাই
- যাকাতের হাকীকত
- রাসূলুল্লাহর বিপ্লবী জীবন
- শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী ও তাঁর চিন্তাধারা
- সত্যের সাক্ষ্য
- হেদায়াত
0 comments: