প্রথমে বলে নেয়া ভাল এটি একটি কপি পেষ্ট পোষ্ট।নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক "এখন সময়" পত্রিকায় এই আর্টিকেলটি প্রকাশিত।
রাজনৈতিক ভাষ্যকার : জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠার পর ৭০ বছর কেটে গেছে, কিন্তু অদ্যাবধি দলটি গণসংগঠনে পরিণত না হবার পিছনে যে কারণগুলো রয়েছে তার অন্যতম হচ্ছে শীর্ষ নেতৃত্ব তথা আমীর পদটি একজনের জন্য প্রায় নির্দিষ্ট করে রাখার রীতি এবং সিদ্ধান্তের জন্য তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকা। এর ফলে জামায়াতে নতুন নেতৃত্ব যেমন সৃষ্টি হয়নি, তেমনি অগণতান্ত্রিকতা দলের মধ্যে দারুণভাবে আছড় করেছে।
এ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠে বিশেষত জামায়াত বর্তমানে যে অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে তা থেকে জামায়াতকে রক্ষা করার জন্য যে প্রস্তাব বর্তমান সংকটকালীন নেতৃত্বের কাছে আসছে তার মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর নাম এবং নেতৃত্ব পরিবর্তনের প্রস্তাবই বেশি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
প্রতিষ্ঠাকালীন আদর্শ, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে সময়ের প্রেক্ষাপটে জামায়াতকে সরে আসতে হয়েছে, কিন্তু তা সত্বেও জামায়াতের কিছু নেতার অহমিকা ও অদূরদর্শিতার কারণে দলটি আজ মানুষের অশ্রদ্ধা ও অনাস্থার শিকারে পরিণত হয়েছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে জামায়াত নেতারা কোন জাতীয় অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলে আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি বলে দাবীদার আরো কিছু দলের নেতারা সে অনুষ্ঠানে না যাওয়ার ঘোষণা দেন। জামায়াত নেতাদের সাথে করমর্দন করা এড়িয়ে চলেন অনেকে এবং কারো সাথে করমর্দনরত ছবি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হলে তারা বিব্রত বোধ করেন।
জামায়াত নেতারা কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারেন না এবং জামায়াতের সাথে সংশ্লিষ্টতার কারণে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রাবাসে থাকতে পারেন না। প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠনের হামলায় দেশে ইসলামী ছাত্রশিবিরের যতো নেতাকর্মী নিহত হয়েছে এতো অধিক সংখ্যক নেতাকর্মী আর কোন সংগঠনের নিহত হয়নি। ফলে শিবিরের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে যে জামায়াতের ভুল সিদ্ধান্তের খেসারত তাদেরকে কেন দিতে হবে। বিভিন্ন সময়ে তারা জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা বিশেষ করে যারা একসময় শিবিরের শীর্ষ দায়িত্বে ছিলেন তাদেরকে পরিস্থিতির প্রয়োজনে জামায়াতে সংস্কার সাধনের পরামর্শ দিলেও তা কোন কাজে লাগেনি। এ কারণে শিবিরে বড় ধরণের ভাঙ্গনের ঘটনা ঘটেছে এবং সে ভাঙ্গনে জামায়াতের সাংগঠনিক ও ইমেজগত ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
কিন্তু জামায়াত কি বদলায়নি? দলের লোকদের পরামর্শে বদলায়নি। বিপদে পড়ে জামায়াতকে তার গঠনতন্ত্রের খোলনলচে পাল্টে ফেলতে হয়েছে। ২০০৯ সালের নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন যেভাবে নির্দেশ করেছে ঠিক সেভাবেই জামায়াতকে তার গঠনতন্ত্র এবং দলের কাঠামো পরিবর্তন করতে হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সংবিধানের আলোকে ভবিষ্যতেও যে নির্দেশ দেবে অর্থ্যাৎ দলের নাম, নেতাদের পদবী ও দলের বিভিন্ন কমিটির বাংলা হতে হবে, দলের কমিটিগুলোতে আনুপাতিক হারে সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে তখন জামায়াতকে রাজনৈতিক মাঠে থাকতে হলে তাই করতে হবে। এ কাজগুলো দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের পরামর্শে করায় দোষের কি আছে তা খোদ দলের লোকরাই বুঝতে পারেন না। বাংলাদেশের বাস্তবতা স্বীকার করেই জামায়াতকে রাজনীতি করতে হচ্ছে এবং শূন্যাবস্থা থেকে জামায়াত অনেক ভালো করেছে তাতে সন্দেহ নেই। এই ভালো অবস্থা ধরে রাখার স্বার্থেই জামায়াতকে গণমানুষের কাছে আসতে হবে।
জামায়াতে ইসলামীর অনেক নেতাকর্মী মনে করেন ‘জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ’ নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’তে পরিবর্তিত হওয়ার আগেই এটা করা উচিত ছিল। অনেকের অনুরূপ পরামর্শ থাকলেও শীর্ষ নেতারা তা আমলে নেননি কারণ তারা এটা পরিবর্তনযোগ্য নয় বলে মনে করতেন এবং দলের কারো পক্ষ থেকে পরামর্শ আদবের খেলাপ ভাবতেন। এখন বাকী রয়ে গেছে ‘আমীর’, ‘নায়েবে আমীর’, ‘নাজেম’, ‘রোকন’, ‘মজলিশে শুরা,’ ‘মজলিশে আমেলা’ ইত্যাদি প্রতিশব্দগুলো। জামায়াতের গঠনতন্ত্রেই এর বৈপরীত্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন আমীর, নায়েবে আমীরের পর যে পদটি রয়েছে সেটির নাম ‘সেক্রেটারী জেনারেল’, জিলা বা শহর পর্যায়ে ‘সেক্রেটারী’। এগুলো তরুণদের মধ্যে প্রশ্নের সৃষ্টি করে। এসব আরবী শব্দের যে বাংলা প্রতিশব্দ আছে তা ব্যবহার করতে অসুবিধা কোথায়? বরং ব্যবহার করলেই সুবিধা বেশি। তদুপরি পরিস্থিতিই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে এসব বদলাতেই হবে। বেকায়দায় পড়ে বদলানোর চেয়ে নিজেদের নেতাকর্মীদের পরামর্শে বদলাতে পারলে সেটাই বেশি লাভজনক।
কারাগার থেকে প্রেরিত জামায়াতের সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের চিঠিতে অনেক পরামর্শের মধ্যে এই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করার জন্য জামায়াতে বর্তমান নেতাদের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে। তার পরামর্শ জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের কিছুটা বিব্রত করলেও মাঝারি নেতারা এবং দলের কর্মীবাহিনী, বিশেষ করে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের দ্বারা সাদরে গৃহীত হয়েছে। এই আলোকে জামায়াতে পরিবর্তন আনার জন্য নেতৃত্বে একটি অংশ ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে বলেও জানা গেছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী দলের নেতৃত্বে আমূল পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে মীর কাশেম আলী ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান কাজ করে যাচ্ছেন। এই দু’জনই ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন এবং দলের নেতাকর্মীদের বৃহৎ অংশের উপর তাদের প্রভাবও বেশি। জানা গেছে, কারাবন্দী মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীও নেতৃত্বের পরিবর্তনের পক্ষে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগ দাখিল করতে না পারাকেও জামায়াতের এই অংশটি ইতিবাচক বলেই ভাবছে। দেশজুড়ে তার যে ভক্ত অনুরক্ত রয়েছে তারা আশা করছেন যে মাওলানা সাঈদীকে ট্রাইব্যুনাল বিনা অভিযোগে আর বেশিদিন আটকে রাখতে পারবে না। তিনি কারাগার থেকে বের হয়ে আসতে পারলে জামায়াতের মধ্যে নতুন চেতনার উন্মেষ ঘটবে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে জামায়াত ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ব্যাপারে যে বিরূপতা সৃষ্টি করা হয়েছে তা বহুলাংশে কেটে যাবে।
গত ২১ মার্চ সোমবার জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর আমীর রফিকুল ইসলাম খানকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। গত সাত মাস থেকে তিনি কারারুদ্ধ ছিলেন। তাকেও আটক করা হয়েছিল মহানবীর (সঃ) সাথে নিজামীকে তুলনা করা, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্মী হত্যার উস্কানি দেয়াসহ অনেকগুলো জামিনযোগ্য মামলায়। সরকার তার বিরুদ্ধেও ৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সরকারের জন্য হতাশার ব্যাপার ছিল যে ৭১ সালে রফিকুল ইসলামের বয়স ছিল মাত্র চার বছর। অতএব তাকে মুক্তি দেয়া ছাড়া গত্যন্তর ছিল না। কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে তার বের হয়ে আসা জামায়াতের জন্য একটি ইতিবাচক দিক। ঢাকা মহানগরী জামায়াতকে সরকার বিরোধী আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করার পাশাপাশি দলের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনার জন্য যে প্রস্তাব আসছে সেগুলোকে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
মুল উৎস
জনাব কামারুজ্জামান এর চিঠি সহ আরো যে সমস্ত বিষয় আলোচনায় আসছে সব জায়গায় শুধু একটি বিষয়েরই আধিক্য,আর সেটা হল জামায়াতের রাজনৈতিক এনালাইসিস এবং পরিবর্তনের আওয়াজ যারা তুলছেন তারাও মনে করছেন রাজনৈতিক পরিবর্তন হয়ে গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। বড়ই অদ্ভুদ চিন্তা ধারা। আদর্শিক যে ভেকুয়াম দেখতে পাচ্ছি সে বিষয়ে কোন আলোচনাই নেই। ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হচ্ছে সেটা থেকে মানুষ শিক্ষা নেয়না। এই মুহর্তে সবচেয়ে জরুরী হচ্ছে ইউনিটি বজায় রাখা এবং আদর্শিক রিফর্মের জায়গাগুলো বের করার চেষ্টা করা।
রাজনৈতিক ভাষ্যকার : জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠার পর ৭০ বছর কেটে গেছে, কিন্তু অদ্যাবধি দলটি গণসংগঠনে পরিণত না হবার পিছনে যে কারণগুলো রয়েছে তার অন্যতম হচ্ছে শীর্ষ নেতৃত্ব তথা আমীর পদটি একজনের জন্য প্রায় নির্দিষ্ট করে রাখার রীতি এবং সিদ্ধান্তের জন্য তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকা। এর ফলে জামায়াতে নতুন নেতৃত্ব যেমন সৃষ্টি হয়নি, তেমনি অগণতান্ত্রিকতা দলের মধ্যে দারুণভাবে আছড় করেছে।
এ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠে বিশেষত জামায়াত বর্তমানে যে অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে তা থেকে জামায়াতকে রক্ষা করার জন্য যে প্রস্তাব বর্তমান সংকটকালীন নেতৃত্বের কাছে আসছে তার মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর নাম এবং নেতৃত্ব পরিবর্তনের প্রস্তাবই বেশি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
প্রতিষ্ঠাকালীন আদর্শ, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে সময়ের প্রেক্ষাপটে জামায়াতকে সরে আসতে হয়েছে, কিন্তু তা সত্বেও জামায়াতের কিছু নেতার অহমিকা ও অদূরদর্শিতার কারণে দলটি আজ মানুষের অশ্রদ্ধা ও অনাস্থার শিকারে পরিণত হয়েছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে জামায়াত নেতারা কোন জাতীয় অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলে আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি বলে দাবীদার আরো কিছু দলের নেতারা সে অনুষ্ঠানে না যাওয়ার ঘোষণা দেন। জামায়াত নেতাদের সাথে করমর্দন করা এড়িয়ে চলেন অনেকে এবং কারো সাথে করমর্দনরত ছবি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হলে তারা বিব্রত বোধ করেন।
জামায়াত নেতারা কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারেন না এবং জামায়াতের সাথে সংশ্লিষ্টতার কারণে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রাবাসে থাকতে পারেন না। প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠনের হামলায় দেশে ইসলামী ছাত্রশিবিরের যতো নেতাকর্মী নিহত হয়েছে এতো অধিক সংখ্যক নেতাকর্মী আর কোন সংগঠনের নিহত হয়নি। ফলে শিবিরের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে যে জামায়াতের ভুল সিদ্ধান্তের খেসারত তাদেরকে কেন দিতে হবে। বিভিন্ন সময়ে তারা জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা বিশেষ করে যারা একসময় শিবিরের শীর্ষ দায়িত্বে ছিলেন তাদেরকে পরিস্থিতির প্রয়োজনে জামায়াতে সংস্কার সাধনের পরামর্শ দিলেও তা কোন কাজে লাগেনি। এ কারণে শিবিরে বড় ধরণের ভাঙ্গনের ঘটনা ঘটেছে এবং সে ভাঙ্গনে জামায়াতের সাংগঠনিক ও ইমেজগত ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
কিন্তু জামায়াত কি বদলায়নি? দলের লোকদের পরামর্শে বদলায়নি। বিপদে পড়ে জামায়াতকে তার গঠনতন্ত্রের খোলনলচে পাল্টে ফেলতে হয়েছে। ২০০৯ সালের নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন যেভাবে নির্দেশ করেছে ঠিক সেভাবেই জামায়াতকে তার গঠনতন্ত্র এবং দলের কাঠামো পরিবর্তন করতে হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সংবিধানের আলোকে ভবিষ্যতেও যে নির্দেশ দেবে অর্থ্যাৎ দলের নাম, নেতাদের পদবী ও দলের বিভিন্ন কমিটির বাংলা হতে হবে, দলের কমিটিগুলোতে আনুপাতিক হারে সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে তখন জামায়াতকে রাজনৈতিক মাঠে থাকতে হলে তাই করতে হবে। এ কাজগুলো দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের পরামর্শে করায় দোষের কি আছে তা খোদ দলের লোকরাই বুঝতে পারেন না। বাংলাদেশের বাস্তবতা স্বীকার করেই জামায়াতকে রাজনীতি করতে হচ্ছে এবং শূন্যাবস্থা থেকে জামায়াত অনেক ভালো করেছে তাতে সন্দেহ নেই। এই ভালো অবস্থা ধরে রাখার স্বার্থেই জামায়াতকে গণমানুষের কাছে আসতে হবে।
জামায়াতে ইসলামীর অনেক নেতাকর্মী মনে করেন ‘জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ’ নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’তে পরিবর্তিত হওয়ার আগেই এটা করা উচিত ছিল। অনেকের অনুরূপ পরামর্শ থাকলেও শীর্ষ নেতারা তা আমলে নেননি কারণ তারা এটা পরিবর্তনযোগ্য নয় বলে মনে করতেন এবং দলের কারো পক্ষ থেকে পরামর্শ আদবের খেলাপ ভাবতেন। এখন বাকী রয়ে গেছে ‘আমীর’, ‘নায়েবে আমীর’, ‘নাজেম’, ‘রোকন’, ‘মজলিশে শুরা,’ ‘মজলিশে আমেলা’ ইত্যাদি প্রতিশব্দগুলো। জামায়াতের গঠনতন্ত্রেই এর বৈপরীত্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন আমীর, নায়েবে আমীরের পর যে পদটি রয়েছে সেটির নাম ‘সেক্রেটারী জেনারেল’, জিলা বা শহর পর্যায়ে ‘সেক্রেটারী’। এগুলো তরুণদের মধ্যে প্রশ্নের সৃষ্টি করে। এসব আরবী শব্দের যে বাংলা প্রতিশব্দ আছে তা ব্যবহার করতে অসুবিধা কোথায়? বরং ব্যবহার করলেই সুবিধা বেশি। তদুপরি পরিস্থিতিই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে এসব বদলাতেই হবে। বেকায়দায় পড়ে বদলানোর চেয়ে নিজেদের নেতাকর্মীদের পরামর্শে বদলাতে পারলে সেটাই বেশি লাভজনক।
কারাগার থেকে প্রেরিত জামায়াতের সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের চিঠিতে অনেক পরামর্শের মধ্যে এই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করার জন্য জামায়াতে বর্তমান নেতাদের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে। তার পরামর্শ জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের কিছুটা বিব্রত করলেও মাঝারি নেতারা এবং দলের কর্মীবাহিনী, বিশেষ করে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের দ্বারা সাদরে গৃহীত হয়েছে। এই আলোকে জামায়াতে পরিবর্তন আনার জন্য নেতৃত্বে একটি অংশ ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে বলেও জানা গেছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী দলের নেতৃত্বে আমূল পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে মীর কাশেম আলী ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান কাজ করে যাচ্ছেন। এই দু’জনই ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন এবং দলের নেতাকর্মীদের বৃহৎ অংশের উপর তাদের প্রভাবও বেশি। জানা গেছে, কারাবন্দী মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীও নেতৃত্বের পরিবর্তনের পক্ষে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগ দাখিল করতে না পারাকেও জামায়াতের এই অংশটি ইতিবাচক বলেই ভাবছে। দেশজুড়ে তার যে ভক্ত অনুরক্ত রয়েছে তারা আশা করছেন যে মাওলানা সাঈদীকে ট্রাইব্যুনাল বিনা অভিযোগে আর বেশিদিন আটকে রাখতে পারবে না। তিনি কারাগার থেকে বের হয়ে আসতে পারলে জামায়াতের মধ্যে নতুন চেতনার উন্মেষ ঘটবে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে জামায়াত ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ব্যাপারে যে বিরূপতা সৃষ্টি করা হয়েছে তা বহুলাংশে কেটে যাবে।
গত ২১ মার্চ সোমবার জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর আমীর রফিকুল ইসলাম খানকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। গত সাত মাস থেকে তিনি কারারুদ্ধ ছিলেন। তাকেও আটক করা হয়েছিল মহানবীর (সঃ) সাথে নিজামীকে তুলনা করা, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্মী হত্যার উস্কানি দেয়াসহ অনেকগুলো জামিনযোগ্য মামলায়। সরকার তার বিরুদ্ধেও ৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সরকারের জন্য হতাশার ব্যাপার ছিল যে ৭১ সালে রফিকুল ইসলামের বয়স ছিল মাত্র চার বছর। অতএব তাকে মুক্তি দেয়া ছাড়া গত্যন্তর ছিল না। কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে তার বের হয়ে আসা জামায়াতের জন্য একটি ইতিবাচক দিক। ঢাকা মহানগরী জামায়াতকে সরকার বিরোধী আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করার পাশাপাশি দলের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনার জন্য যে প্রস্তাব আসছে সেগুলোকে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
মুল উৎস
জনাব কামারুজ্জামান এর চিঠি সহ আরো যে সমস্ত বিষয় আলোচনায় আসছে সব জায়গায় শুধু একটি বিষয়েরই আধিক্য,আর সেটা হল জামায়াতের রাজনৈতিক এনালাইসিস এবং পরিবর্তনের আওয়াজ যারা তুলছেন তারাও মনে করছেন রাজনৈতিক পরিবর্তন হয়ে গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। বড়ই অদ্ভুদ চিন্তা ধারা। আদর্শিক যে ভেকুয়াম দেখতে পাচ্ছি সে বিষয়ে কোন আলোচনাই নেই। ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হচ্ছে সেটা থেকে মানুষ শিক্ষা নেয়না। এই মুহর্তে সবচেয়ে জরুরী হচ্ছে ইউনিটি বজায় রাখা এবং আদর্শিক রিফর্মের জায়গাগুলো বের করার চেষ্টা করা।
0 comments: