(লেখক : এম.এন.হাসান) শুরু করার আগে কিছু কথা: ৭১ সালে জামায়াতের ভুমিকা কি ছিল এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম একটি অমিমাংসিত প্রশ্ন এবং বিতর্কের বিষয়।এই পোষ্ট টি দেয়ার একটা স্পেশাল উদ্দেশ্য রয়েছে।ডিসেম্বর মাসে এই পর্বটি দেবনা ভেবেছিলাম কিন্তু বার্তার মাধ্যমে অনেকের বার বার অনুরোধে এবং সমসাময়িক ব্লগের কিছু বিষয়ে বিতর্ক সামনে রেখে এই লেখা।জামায়াত "কি" রোল প্লে করেছে এই তথ্য খোজার চেয়ে আমি বরং একটু রিভার্স স্টাডি করে দেখতে চেয়েছি "কেন" ক্রান্তিকালে তথাকথিত "বিতর্কিত"কিছু সীদ্ধান্ত জামায়াত নিয়েছিল।যেহেতু এই স্টাডিটিকে ননজাজমেন্টাল রাখতে চেষ্টা করেছি শুরু থেকে, তাই কোন সীদ্ধান্তে যাবনা,ঠিক করেছে না বেঠিক।তবে আশাকরি এই "কেন" এর উত্তর যদি আমাদের কাছে পরিষ্কার থাকে তাহলে আমরা নিজেরাই "কি" করেছে সময়ের প্রয়োজনে এর একটা প্রেডিক্টেবল উত্তর খুঁজে পাব। এই পর্বে এই "কেন" এর কিছু ক্লু আশাকরি পরিষ্কার হবে,পরের পোষ্টে বাকীটুকু শেষ করার প্রচেষ্টা থাকবে।
(প্রথম কয়েকটা লাইন গত পর্বের সারাংশ)
পয়ষট্টির হিন্দুস্থানের আগ্রাসী হামলার পরবর্তী পর্যায়ে জামায়াতে
ইসলামী ও ছাত্রসংঘ প্রচলিত রাজনীতির সাথে তাল দিতে গিয়ে গোল পাকিয়ে ফেলে।নেতৃত্বের সূদুরপ্রসারী ভাবনা না থাকার কারণে দ্রুত সাংগঠনিক সম্প্রসারণ নিরীক্ষণ করে তারা অতি আশাবাদী হয়ে উঠে।এরা মনে করে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানকে ক্ষমতাচ্যুত করলেই তারা রাজনৈতিক অবস্থান নিতে সক্ষম হবে।
রাজনৈতিক স্থিতবস্থা যত প্রলম্বিত হত ততই ইসলামী আন্দোলনের পথ সুগম হতে পারত।কিন্তু সুদূরপ্রসারী সে চিন্তা না করেই ১৯৬৬ সালের শুরুর দিকে তাসখন্দ ঘোষণা কেন্দ্রিক আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন সূচনা করে
জামায়াতে ইসলামী। পরবর্তী পর্যায়ে ৬৫ ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধকে কেন্দ্র করে পূর্ব পাকিস্তানের নিরাপত্তাহীনতার যুক্তি দেখিয়ে আওয়ামীলীগ সূচনা করে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন,যে আন্দোলন ৬ দফা পর্যন্ত গড়ায়।যার অর্থ দাঁড়ায় বিচ্ছিন্নতা।
৭ই জুনের পর ৬দফা নিয়ে আওয়ামীলীগের আন্দোলন ঝিমিয়ে পড়লেও জামায়াত আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন নিরলস তৎপরতা দিয়ে সুদূর প্রত্যন্ত অন্ঞল পর্যন্ত ছড়িয়ে দেয়। আন্দোলনকে সম্প্রসারিত করার জন্য জামায়াতে ইসলামীর উদ্যেগে পিডিএম(পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট),পরবর্তী পর্যায়ে আন্দোলনের আরো ব্যাপ্তি আনার জন্য ডেমোক্রেটিক একশ্যান কমিটি গঠন করা হয়। দুই অবস্থানে জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।(1)
১৯৬৭সালের শেষের দিকের কথা।পশ্চিম পাকিস্তানে আইয়ুব খানের কেবিনেট থেকে সদ্য পদত্যাগ করে জুলফিকার আলী ভুট্টো সরাসরি রাজনীতির ময়দানে আবিভূর্ত হলেন।তিনি পাকিস্তান পিপলস পার্টি(পিপিপি) নামে দল গঠন করে ময়দানে তোলপাড় সৃষ্টি করেন।সিনেমার অভিনেতার মত নাটকীয় ভঙ্গিতে বক্তৃতা করে তিনি জনপ্রিয় হতে লাগলেন।(2)
১৯৬৮সাল পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।পূর্ব পাকিস্তানে ৬দফা ও ১১ দফার আন্দোলন ময়দানে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। আগড়তলা মামলা (আগড়তলা মামলা সম্পর্কে সংক্ষেপে জানতে)এ আন্দোলনে বলিষ্ঠ মাত্রা যোগ করে। পিডিএম প্রায় ২বছর আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন করে ময়দানে যেটুকু উত্তাপ সৃষ্টি করেছিল,তাও ১১ দফার আন্দোলনের খাতাই জমা হয়ে যায়।পিডিএম ময়দানে সক্রিয় থাকলেও ছাত্র-শ্রমিকদের উগ্র আন্দোলনের তুলনায় তা নগন্যই বলা যায়।মওলানা ভাসানী ১১ দফার সমর্থক হলেও তিনি আওয়ামীলিগ থেকে ভিন্নভাবে জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন শুরু করলেন।পশ্চিম পাকিস্তানেও একই ভাবে ভুট্টো জ্বালাও পোড়াও আন্দোলনের মাধ্যমে পিডিএম থেকে মাঠ দখল করে নিলেন।(3)
পূর্বে আণ্ঞলিকতা ভিত্তিক স্যকুলার ফোর্স ও পশ্চিমে ভুট্টোর সোসালিজমের ব্যাপক উপস্থিতি জামায়াতের রাজনীতির জন্য চ্যালেন্জ হয়ে দাড়াল।আপনাদের মনে করিয়ে দেই মাওলানা মওদুদী ধর্মনিরপেক্ষ ও জাতীয়তাবাদকে কুফর হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বহু আগেই,এর সাথে এখন যুক্ত হয়েছে সমাজতন্ত্র!!
এত দিনের এতসব প্রচেষ্টা ইসলাম কায়েমের জন্য কেন যেন নিমিষে দঃস্বপ্নের মত মনে হতে লাগল।মমতাজ আহমেদ বলছেন The raise of secular and socialist force leave religious force irrelevant. এই অনুভূতিই জামায়াতকে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের শেষের দিকে pro-status quo political stance নিতে প্রভাবিত করে।The alarming prospects of the rise of secular, socialist, and regionalist political forces had in fact left the JAMAT with no option but to support the existing power structure, which at least paid lip service to ISLAM. (4)
এর রেসপন্সে জামায়াত করাচির এক গ্রুপ উলামার সাথে একাত্ততা ঘোষণা করে “ভুট্টোর সোসালিজম হচ্ছে কুফর” এই !!(5)
পূর্ব পাকিস্তানে সম্ভব না হলেও পশ্চিম পাকিস্তানে ভুট্টোর সোসালিজমের বিরুদ্ধে ১৯৬৮-১৯৭০ সালে জামায়াতের ক্যাম্পেইন became the most important event in its recent history।জামায়াত এক প্রকার নিশ্চিত ছিল যে পিপিপি জালাও-পোড়াও আন্দোলনের মাধ্যমে একটি কমিউনিষ্ট ক্যু করবে,আর যদি তাতে তারা সফল হয়,such a move would frustrate the JAMAT's thirty years of efforts for ISLAM, democracy and political power. এই পরিস্থিতিতে জামায়াত মিলিটারি প্রশাসনের পক্ষে অবস্থান নিল।(6)
ভিন্ন জাতীয়তা,ভাষা,ভৌগলিক অবস্থান,সংস্কৃতি সব দিকে দিয়েই ভিন্ন পূর্ব পাকিস্তানের এই অংশটিকে জামায়াত দেখল আদর্শিক সংহতি রক্ষার একটা টেষ্ট কেস হিসেবে।Therefore the rise of Bengali Nationalist forces and separatist elements in East Pakistan was not only a threat to the integrity of Pakistan but was also likely to be interpreted as an evidence of the failure of Islam as a basis for political unity. এই পরিস্থিতিতে জামায়াত পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্নতা ও সোসালিজম থেকে রক্ষা করার জন্য সামরিক শক্তির পক্ষে অবস্থান নিল।(7)
ইয়াহইয়া খানের শাসন আমল অবাক হয়ে দেখল জমিয়তে তালাবা(ছাত্র সংঘ)কিভাবে একটি শান্তি প্রিয় দাওয়া সংগঠন থেকে মিলিট্যান্ট ফোর্সে পরিণত হল,even willing to meet violence with violence (8)
পশ্চিমে ইসলাম ও সোসালিজমের মধ্যে এবং পূর্বে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের মধ্যে এই ধরনের দাঙ্গা হাঙ্গামার মধ্যেই জেনারেল ইয়াহইয়া খান ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন ঘোষণা করলেন। জামায়াতের কৌশল ও প্রচার-প্রচারণা দেখে নির্বাচন পর্যবেক্ষকগন আশা করছিল জামায়াত জাতীয় পরিষদে ভাল পরিমাণ সিট পাবে(9)
নির্বাচনের ইশতিহার: ১৯৭০সালের নির্বাচনের ইশতিহার জামায়াত তথা ইসলামি রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়,কারন এই ইশতিহারে জামায়াত একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামিক স্টেটের খসড়া তুলে ধরে জাতির সামনে। এর কিছু অংশ খুবই জরুরী।উপরোক্ত আলোচনার একটা বিশাল অংশ আমি এনেছি মুলত মুমতাজ আহমেদের বই থেকে তাই কারো যাতে কোন প্রকার সন্দেহ না থাকে তাই ইশতিহারের মুল কিছু বিষয় তুলে দিলাম যাতে উপরে বর্ণিত কথার সামন্জস্য পাওয়া যাবে।
রাষ্ট্র পরিচালনার মোটামুটি সব বিষয়েই এই ইশতিহারে স্থান পেয়েছে।
কন্টেন্ট।
জামায়াত দেশে কি করতে চায়;মুল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
পলিসি কেমন হবে;
একটি ইসলামিক রাষ্ট্রে গনতন্ত্রের পূর্বশর্ত;
রাজনীতি করার ফ্রেম ওয়ার্ক কি হবে আদর্শবাদী রাষ্ট্রে;
এখানে মাত্র কয়েকটা ধারা তুলে ধরলাম যেগুলো মুল লেখার সাথে রিলেটেড এবং আজকের বাস্তবতায় খুবই চিন্তার বিষয়।
এখানে যেই বিষয়টা প্রশ্ন তৈরি করে,জামায়াত যদি আসলেই ক্ষমতায় যেত তাহলে ভিন্ন আদর্শের অন্যান্য দলকে রাজনীতি করতে দিত কি??
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টা ইশতিহারে এসেছে তা হল পূর্ব পাকিস্তানের সমস্যা।জামায়াত পূর্ব পাকিস্তানকে স্পেশাল অগ্রাধিকার দিয়েছিল ইশতিহারে।
নির্বাচনের ফলাফল:
১৯৭০সালের নির্বাচনের ঐতিহাসিক ফলাফল
তো আশাকরি সবাই জানেন।জামায়াত সর্ব সাকুল্যে ৪টি সিট পেয়েছিল জাতীয় পরিষদে।
এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ১টি। ওবারল ভোট পেয়েছে জামায়াত ৬%,তবে কিছু কিছু প্রদেশে জামায়াতের চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে জমিয়তে উলেমা ইসলাম।
বিশ বছর যাবত জামায়াত গনতন্ত্র ও নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করে আসছিল এই আশায় যে পাকিস্তানের জনগন ইসলামের জন্য ভোট দেবে!! এই ফলাফলের মাধ্যমে the greatest political set-back the Jamat had received ever since its inception(10)
এই পর্ব শেষ করার আগে একটা রিমার্কেবল প্রশ্ন করে শেষ করতে চাই,১৯৭০সালে নির্বাচনে জামায়াতের পরাজয়কে কি ইসলামের পরাজয়(As a political ideology) বলতে পারি আমরা???
৭১ এ জামায়াতের ভুমিকা আদর্শিক না রাজনৈতিকঃজামায়াত অধ্যয়ন-১৬
নোট:
1. দুই পলাশী দুই আম্রকানন,কে এম আমিনুল হক, পৃষ্ঠা:১৬৪,কিশোরগন্জ,২০০৮
2. গোলাম আযম, জীবনে যা দেখলাম,৩য় খন্ড,(পৃষ্ঠা:৪৭)
3. Ibid
4. Mumtaz ahmed, The Jamaat-i-Islami and the Tablighi Jamaat," in Martin E. Marty and R. Scott Appleby, eds., Fundamentalisms Observed (Chicago, 1991):474
5. Ibid:475
6. M. Ahmmed: 475 cited from Gilani, Fundamentalist Groups: 18
7. Mumtaz Ahmed:475
8. Ibid:476
9. Ibid
10. Ibid:476
(প্রথম কয়েকটা লাইন গত পর্বের সারাংশ)
পয়ষট্টির হিন্দুস্থানের আগ্রাসী হামলার পরবর্তী পর্যায়ে জামায়াতে
ইসলামী ও ছাত্রসংঘ প্রচলিত রাজনীতির সাথে তাল দিতে গিয়ে গোল পাকিয়ে ফেলে।নেতৃত্বের সূদুরপ্রসারী ভাবনা না থাকার কারণে দ্রুত সাংগঠনিক সম্প্রসারণ নিরীক্ষণ করে তারা অতি আশাবাদী হয়ে উঠে।এরা মনে করে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানকে ক্ষমতাচ্যুত করলেই তারা রাজনৈতিক অবস্থান নিতে সক্ষম হবে।
রাজনৈতিক স্থিতবস্থা যত প্রলম্বিত হত ততই ইসলামী আন্দোলনের পথ সুগম হতে পারত।কিন্তু সুদূরপ্রসারী সে চিন্তা না করেই ১৯৬৬ সালের শুরুর দিকে তাসখন্দ ঘোষণা কেন্দ্রিক আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন সূচনা করে
জামায়াতে ইসলামী। পরবর্তী পর্যায়ে ৬৫ ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধকে কেন্দ্র করে পূর্ব পাকিস্তানের নিরাপত্তাহীনতার যুক্তি দেখিয়ে আওয়ামীলীগ সূচনা করে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন,যে আন্দোলন ৬ দফা পর্যন্ত গড়ায়।যার অর্থ দাঁড়ায় বিচ্ছিন্নতা।
৭ই জুনের পর ৬দফা নিয়ে আওয়ামীলীগের আন্দোলন ঝিমিয়ে পড়লেও জামায়াত আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন নিরলস তৎপরতা দিয়ে সুদূর প্রত্যন্ত অন্ঞল পর্যন্ত ছড়িয়ে দেয়। আন্দোলনকে সম্প্রসারিত করার জন্য জামায়াতে ইসলামীর উদ্যেগে পিডিএম(পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট),পরবর্তী পর্যায়ে আন্দোলনের আরো ব্যাপ্তি আনার জন্য ডেমোক্রেটিক একশ্যান কমিটি গঠন করা হয়। দুই অবস্থানে জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।(1)
১৯৬৭সালের শেষের দিকের কথা।পশ্চিম পাকিস্তানে আইয়ুব খানের কেবিনেট থেকে সদ্য পদত্যাগ করে জুলফিকার আলী ভুট্টো সরাসরি রাজনীতির ময়দানে আবিভূর্ত হলেন।তিনি পাকিস্তান পিপলস পার্টি(পিপিপি) নামে দল গঠন করে ময়দানে তোলপাড় সৃষ্টি করেন।সিনেমার অভিনেতার মত নাটকীয় ভঙ্গিতে বক্তৃতা করে তিনি জনপ্রিয় হতে লাগলেন।(2)
১৯৬৮সাল পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।পূর্ব পাকিস্তানে ৬দফা ও ১১ দফার আন্দোলন ময়দানে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। আগড়তলা মামলা (আগড়তলা মামলা সম্পর্কে সংক্ষেপে জানতে)এ আন্দোলনে বলিষ্ঠ মাত্রা যোগ করে। পিডিএম প্রায় ২বছর আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন করে ময়দানে যেটুকু উত্তাপ সৃষ্টি করেছিল,তাও ১১ দফার আন্দোলনের খাতাই জমা হয়ে যায়।পিডিএম ময়দানে সক্রিয় থাকলেও ছাত্র-শ্রমিকদের উগ্র আন্দোলনের তুলনায় তা নগন্যই বলা যায়।মওলানা ভাসানী ১১ দফার সমর্থক হলেও তিনি আওয়ামীলিগ থেকে ভিন্নভাবে জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন শুরু করলেন।পশ্চিম পাকিস্তানেও একই ভাবে ভুট্টো জ্বালাও পোড়াও আন্দোলনের মাধ্যমে পিডিএম থেকে মাঠ দখল করে নিলেন।(3)
পূর্বে আণ্ঞলিকতা ভিত্তিক স্যকুলার ফোর্স ও পশ্চিমে ভুট্টোর সোসালিজমের ব্যাপক উপস্থিতি জামায়াতের রাজনীতির জন্য চ্যালেন্জ হয়ে দাড়াল।আপনাদের মনে করিয়ে দেই মাওলানা মওদুদী ধর্মনিরপেক্ষ ও জাতীয়তাবাদকে কুফর হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বহু আগেই,এর সাথে এখন যুক্ত হয়েছে সমাজতন্ত্র!!
এত দিনের এতসব প্রচেষ্টা ইসলাম কায়েমের জন্য কেন যেন নিমিষে দঃস্বপ্নের মত মনে হতে লাগল।মমতাজ আহমেদ বলছেন The raise of secular and socialist force leave religious force irrelevant. এই অনুভূতিই জামায়াতকে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের শেষের দিকে pro-status quo political stance নিতে প্রভাবিত করে।The alarming prospects of the rise of secular, socialist, and regionalist political forces had in fact left the JAMAT with no option but to support the existing power structure, which at least paid lip service to ISLAM. (4)
এর রেসপন্সে জামায়াত করাচির এক গ্রুপ উলামার সাথে একাত্ততা ঘোষণা করে “ভুট্টোর সোসালিজম হচ্ছে কুফর” এই !!(5)
পূর্ব পাকিস্তানে সম্ভব না হলেও পশ্চিম পাকিস্তানে ভুট্টোর সোসালিজমের বিরুদ্ধে ১৯৬৮-১৯৭০ সালে জামায়াতের ক্যাম্পেইন became the most important event in its recent history।জামায়াত এক প্রকার নিশ্চিত ছিল যে পিপিপি জালাও-পোড়াও আন্দোলনের মাধ্যমে একটি কমিউনিষ্ট ক্যু করবে,আর যদি তাতে তারা সফল হয়,such a move would frustrate the JAMAT's thirty years of efforts for ISLAM, democracy and political power. এই পরিস্থিতিতে জামায়াত মিলিটারি প্রশাসনের পক্ষে অবস্থান নিল।(6)
ভিন্ন জাতীয়তা,ভাষা,ভৌগলিক অবস্থান,সংস্কৃতি সব দিকে দিয়েই ভিন্ন পূর্ব পাকিস্তানের এই অংশটিকে জামায়াত দেখল আদর্শিক সংহতি রক্ষার একটা টেষ্ট কেস হিসেবে।Therefore the rise of Bengali Nationalist forces and separatist elements in East Pakistan was not only a threat to the integrity of Pakistan but was also likely to be interpreted as an evidence of the failure of Islam as a basis for political unity. এই পরিস্থিতিতে জামায়াত পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্নতা ও সোসালিজম থেকে রক্ষা করার জন্য সামরিক শক্তির পক্ষে অবস্থান নিল।(7)
ইয়াহইয়া খানের শাসন আমল অবাক হয়ে দেখল জমিয়তে তালাবা(ছাত্র সংঘ)কিভাবে একটি শান্তি প্রিয় দাওয়া সংগঠন থেকে মিলিট্যান্ট ফোর্সে পরিণত হল,even willing to meet violence with violence (8)
পশ্চিমে ইসলাম ও সোসালিজমের মধ্যে এবং পূর্বে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের মধ্যে এই ধরনের দাঙ্গা হাঙ্গামার মধ্যেই জেনারেল ইয়াহইয়া খান ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন ঘোষণা করলেন। জামায়াতের কৌশল ও প্রচার-প্রচারণা দেখে নির্বাচন পর্যবেক্ষকগন আশা করছিল জামায়াত জাতীয় পরিষদে ভাল পরিমাণ সিট পাবে(9)
নির্বাচনের ইশতিহার: ১৯৭০সালের নির্বাচনের ইশতিহার জামায়াত তথা ইসলামি রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়,কারন এই ইশতিহারে জামায়াত একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামিক স্টেটের খসড়া তুলে ধরে জাতির সামনে। এর কিছু অংশ খুবই জরুরী।উপরোক্ত আলোচনার একটা বিশাল অংশ আমি এনেছি মুলত মুমতাজ আহমেদের বই থেকে তাই কারো যাতে কোন প্রকার সন্দেহ না থাকে তাই ইশতিহারের মুল কিছু বিষয় তুলে দিলাম যাতে উপরে বর্ণিত কথার সামন্জস্য পাওয়া যাবে।
রাষ্ট্র পরিচালনার মোটামুটি সব বিষয়েই এই ইশতিহারে স্থান পেয়েছে।
কন্টেন্ট।
জামায়াত দেশে কি করতে চায়;মুল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
পলিসি কেমন হবে;
একটি ইসলামিক রাষ্ট্রে গনতন্ত্রের পূর্বশর্ত;
রাজনীতি করার ফ্রেম ওয়ার্ক কি হবে আদর্শবাদী রাষ্ট্রে;
এখানে মাত্র কয়েকটা ধারা তুলে ধরলাম যেগুলো মুল লেখার সাথে রিলেটেড এবং আজকের বাস্তবতায় খুবই চিন্তার বিষয়।
এখানে যেই বিষয়টা প্রশ্ন তৈরি করে,জামায়াত যদি আসলেই ক্ষমতায় যেত তাহলে ভিন্ন আদর্শের অন্যান্য দলকে রাজনীতি করতে দিত কি??
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টা ইশতিহারে এসেছে তা হল পূর্ব পাকিস্তানের সমস্যা।জামায়াত পূর্ব পাকিস্তানকে স্পেশাল অগ্রাধিকার দিয়েছিল ইশতিহারে।
নির্বাচনের ফলাফল:
১৯৭০সালের নির্বাচনের ঐতিহাসিক ফলাফল
তো আশাকরি সবাই জানেন।জামায়াত সর্ব সাকুল্যে ৪টি সিট পেয়েছিল জাতীয় পরিষদে।
এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ১টি। ওবারল ভোট পেয়েছে জামায়াত ৬%,তবে কিছু কিছু প্রদেশে জামায়াতের চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে জমিয়তে উলেমা ইসলাম।
বিশ বছর যাবত জামায়াত গনতন্ত্র ও নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করে আসছিল এই আশায় যে পাকিস্তানের জনগন ইসলামের জন্য ভোট দেবে!! এই ফলাফলের মাধ্যমে the greatest political set-back the Jamat had received ever since its inception(10)
এই পর্ব শেষ করার আগে একটা রিমার্কেবল প্রশ্ন করে শেষ করতে চাই,১৯৭০সালে নির্বাচনে জামায়াতের পরাজয়কে কি ইসলামের পরাজয়(As a political ideology) বলতে পারি আমরা???
৭১ এ জামায়াতের ভুমিকা আদর্শিক না রাজনৈতিকঃজামায়াত অধ্যয়ন-১৬
নোট:
1. দুই পলাশী দুই আম্রকানন,কে এম আমিনুল হক, পৃষ্ঠা:১৬৪,কিশোরগন্জ,২০০৮
2. গোলাম আযম, জীবনে যা দেখলাম,৩য় খন্ড,(পৃষ্ঠা:৪৭)
3. Ibid
4. Mumtaz ahmed, The Jamaat-i-Islami and the Tablighi Jamaat," in Martin E. Marty and R. Scott Appleby, eds., Fundamentalisms Observed (Chicago, 1991):474
5. Ibid:475
6. M. Ahmmed: 475 cited from Gilani, Fundamentalist Groups: 18
7. Mumtaz Ahmed:475
8. Ibid:476
9. Ibid
10. Ibid:476
0 comments: