গত পর্বে উল্লেখ করেছিলাম,১৯৬৫ সালে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মিস ফাতেমা জিন্নাহকে আলেম সমাজের অনেকেই মেনে নেয়নি,জামায়াত দলীয়ভাবে মেনে নিলেও দলের ভিতরে কেউ কেউ এই সীদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারেন নি।
(গত পর্বের পর থেকে)
কাউসার নিয়াজি তৎকালীন লাহোর জামায়াতের আমীর,যিনি কিনা মাছিগোথে মাওলানা মওদুদীকে পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে ডিফেন্ড করেছিলেন,তিনি প্রো-জামায়াত পত্রিকা "সাহাব" এ মাওলানা মওদুদীর অবস্থানের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন।(1) নিয়াজি মহিলা প্রার্থীর বিপক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন;Jama'at had gone too far in compromising its principles; as a result it had ceased altogether to be a religious entity(জামায়াত আদর্শের সাথে আপোষ করতে এতদূর গিয়েছে যে,তা ধর্মীয় সংগঠন হওয়া থেকে একেবারে দূরে সড়ে গেছে)।
তিনি শুধু মিস জিন্নাহ'র ইস্যুতে সীমাবদ্ধ না থেকে জামায়াতের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্যে মাওলানা মওদুদীর লেখার সাথে কম্প্রমাইজের অন্যান্য ইস্যুগুলো কেও বিতর্কের টেবিলে নিয়ে আসেন। নির্বাচনের বিপক্ষে মাওলানা মওদুদীর আগের দেয়া যুক্তি ও ১৯৫১ সাল থেকে প্রার্থী নির্বাচনে জামায়াতের পলিসিকেও তিনি পাশাপাশি তুলে ধরেন। এই ধরনের দ্বৈত অবস্থান তুলে ধরে তিনি মাওলানা মওদুদী ও জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মসুচীকে আবারো কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিলেন।(2)
১৯৫৭ সালের মাছিগোথ সম্মেলনের পর থেকে জামায়াতে অনেক পরিবর্তন হয়েছে।জামায়াত এখন অনেক বেশি centralized,নিয়াজি'র মতে জামায়াতের অনেক সদস্যই তখন payroll(ভাতা প্রাপ্ত) যা কিনা তাদেরকে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে,তিনি একাই তখন দ্বিমত করে আওয়াজ তুলেন।(3)
নিজের পত্রিকায় এই জাতীয় সমস্যার কথা তুলে দেয়ার ফলে সমসাময়িক জামায়াতের অনেক সদস্যই তার প্রতি রুষ্ট হন এবং তিনি জামায়াতকে paralyse করার জন্য সরকারের হয়ে কাজ করছেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন।নিয়াজির জবাবে মাওলানা মওদুদী তাকে জামায়াত থেকে পদত্যাগ করতে বলেন।(4)
আদর্শিক Dilemma, হিকমা নাকি প্রয়োজনীয়তাবাদ?
জামায়াত পূনরায় তার আগের পজিশনে ফিরে যায় ১৯৮৯ সালে,সে সময় জামায়াত প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় কারন among other things, "Islam does not approve of a women as the head of an Islamic government or state," (5 ) অথচ জুন ১৯৮৮সালে জামায়াতের নতুন আমীর কাজী হোসাইন আহমেদ ঘোষনা দেন জেনারেল জিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে যৌথভাবে আন্দোলনে যাওয়ার ব্যাপারে জামায়াত ও পিপিপ'র(পাকিস্তান পিপলস পার্টি)মধ্যে ঐক্যমত হয়েছে।(6)
মজার ব্যাপার হচ্ছে কয়েক বছর আগেই জামায়াত করাচির এক গ্রুপ উলামার সাথে একাত্ততা ঘোষণা করে “ভুট্টোর সোসালিজম হচ্ছে কুফর” এই ফতওয়ায় স্বাক্ষর করে যা কিনা পরবর্তিতে signed by Ulema of all school of thought!!(7)
বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একই ধরনের কিছু ঘটনা উল্লেখ করতে হয়।১৯৯৬সালের আগে জামায়াত সেকুলার আওয়ামীলিগের সাথে যুগৎপত আন্দোলন করে অথচ আওয়ামীলিগের সাথে স্বাধীনতার আগে পরে ও বর্তমানে সাপে নেউলে সম্পর্ক।
যেই বিএনপি'র বিরুদ্ধে আন্দোলন সেই বিএনপির সাথেই ২০০০সালের মধ্যে জোট গঠিত হয়,সরকার গঠিত হয়।মাঝখান দিয়ে সাঈদী সাহেব পড়ে গেলেন সমালোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে, নারী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে জেগে উঠা বলিষ্ট কন্ঠস্বর এখন আর আগের মত জ্বলসে উঠেনা।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফলাফল
আগেই উল্লেখ করেছি যে অন্যন্য আলেমগন শুধু ফতওয়াই দেননি বরং এক পর্যায়ে আইয়ূব খানকে সাপোর্ট করে তার পক্ষে প্রচারণা শুরু করেন।ফলে, জামায়াত তার সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে মিস ফাতিমা জিন্নাহর পক্ষে প্রচারণা চালালেও আইয়ুব খান ৬৩.৩% ভোট নিয়ে বিপুল ভোটে জয়ী হন।গোলাম আযম সাহেব এই রেজাল্টকে ব্যখ্যা করেন এই বলে যে,অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার ও উলামাগন আইয়ুব খানের কাছে বিক্রি হয়ে গিয়েছিলেন।
তাসখন্দ ঘোষণা ও আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের দ্বিতীয় ধাপ
১৯৬৫সালের ৬সেপ্টেম্বর ভারত পাকিস্তান আক্রমণ করে ২৪ ঘন্টার মধ্যে লাহোর দখল করে শালিমারবাগে বিজয়োৎসব করার ঘোষণা দেয়।৭দিন যুদ্ধ চলার পর জাতিসংঘের প্রচেষ্টায় ২৩ সেপ্টেম্বর যুদ্ধবিরতি সম্ভব হলেও যুদ্ধে সৃষ্ট সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে তৎকালীন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট কোসিগিনের মধ্যস্থতায় উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দে চুক্তি সাক্ষরিত হয় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে,ঐ চুক্তিই "তাসখন্দ ঘোষণা" নামে বহুল আলোচিত।(8)
এই চুক্তি পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।এটিই আইয়ুব খানের পতনের লক্ষ্যে গনতান্ত্রিক আন্দোলনের দ্বিতীয় ধাপ।এই উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির সূবর্ণ সুযোগ নিলেন আইয়ুব সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো।তাসখন্দ ঘোষণার প্রতিবাদে পদত্যাগ করে জাতীর বীর হবার জন্য তিনি আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন শুরু করলেন।(9) আইয়ুব খান ৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের সময় জামায়াত সহ সকল রাজনৈতিক দলের সমর্থন নিয়ে পুরো দেশকে তার পক্ষে নিয়ে আসতে পারলেও "তাসখন্ড ঘোষনা"তাকে বেশি দিন সেই সাপোর্ট ধরে রাখতে দেয়নি।
রাজনৈতিক ময়দানে ৬দফা
১৯৬৪ সালে যে কয়টি রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধভাবে Combined Opposition Party(COP,সম্মিলিত বিরোধী দল)গঠন করে তারা আবারো গনতান্ত্রিক আন্দোলনে ১৯৬৬সালের ৫ই ফেব্রুয়ারী লাহোরে মিলিত হন।
সবাই যখন আন্দোলনের কর্মসুচী কি হবে তা নিয়ে ব্যাস্ত ঠিক তখনই ঘটল একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা!৫তারিখ সন্ধায় জামায়াতের কর্মপরিষদের বৈঠকে মাওলানা মওদুদী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামীলিগের সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমানের "৬দফা" দাবীর বর্ণনা সম্বলিত একটি কাগজ পেশ করেন।পরদিন এটি জাতীয় নিউজ হয়ে গেল।আইয়ুব সরকারও এটিকে ফলাও করে প্রচার করল যাতে করে COP এর ঐক্যে ফাটল ধরানো যায়।(10)৬দফার জনক বলে অনেকেই দাবী করেছেন,এর মধ্যে সবচেয়ে অবিশ্বাস্য হল আইুয়ব খান নিজে!!
" target="_blank">৬ দফার আবিষ্কারক
এই ৬দফাই পাকিস্তানের ভাঙ্গন ও আজকের বাংলাদেশ সৃষ্টির প্রথম প্রকাশ্য রাজনৈতিক কর্মসূচী।
PDM এবং DAC
১৯৬৭ সালের ৩০ এপ্রিল আওয়ামীলিগের একাংশকে নিয়ে অন্যান্য দলগুলোর সমন্বয়ে পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট(PDM)গঠিত হয়। জামায়াত PDM এ যোগদান করে এবং পরবর্তিতে আদর্শিক ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন ও সরকার উৎখাতের লক্ষ্যে ১৯৬৯ সালে ৮ দলের সমন্বয়ে গঠিত ডেমোক্রেটিক একশান কমিটিতেও(DAC) যোগদান করে।(11)আইয়ুব খানের আমলে বাম ধারার দলগুলো নিষিদ্ধ থাকার ফলে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের মুলে ছিল জামায়াত(পুর্ব এবং পশ্চিম দুই জায়গায়)।জামায়াত ঐ সময় জনগনের ব্যাপক সাপোর্ট পায়।
সরকারের মারমুখী অবস্থান এবং বিরোধী দল সমুহের আন্দোলনে দেশে অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হয়,ফলে অর্জন যেটা হয়েছে,আইয়ুব খান একটা সময় আর্মির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন ঠিকই কিন্তু সাধারন মানুষের ভিতর একটা উগ্র মনোভাব তৈরি হয়।জামায়াতের মত আদর্শিক দলেও পলিটিকাল রেডিকালিজম দেখা দিতে থাকে যা পরবর্তিতে জামায়াতকে একটি পরিপূর্ন পলিটিকাল পার্টিতে পরিনত করে।(12)
সবচেয়ে বড় যে ঘটনাটা ঘটে পূর্ব পাকিস্তানে তা হলো, একটা পর্যায়ে মাঠ হাতছাড়া হয়ে যায় জামায়াত থেকে।বামপন্থি ও জাতীয়তাবাদীরা আন্দোলনের সুফল ন্যায়।ঐ আন্দোলনের ধারাবাহিকতাই পুর্ব পাকিস্তানকে ৭১ এ পৌঁছে দেয়।(13)
(গত পর্বের পর থেকে)
কাউসার নিয়াজি তৎকালীন লাহোর জামায়াতের আমীর,যিনি কিনা মাছিগোথে মাওলানা মওদুদীকে পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে ডিফেন্ড করেছিলেন,তিনি প্রো-জামায়াত পত্রিকা "সাহাব" এ মাওলানা মওদুদীর অবস্থানের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন।(1) নিয়াজি মহিলা প্রার্থীর বিপক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন;Jama'at had gone too far in compromising its principles; as a result it had ceased altogether to be a religious entity(জামায়াত আদর্শের সাথে আপোষ করতে এতদূর গিয়েছে যে,তা ধর্মীয় সংগঠন হওয়া থেকে একেবারে দূরে সড়ে গেছে)।
তিনি শুধু মিস জিন্নাহ'র ইস্যুতে সীমাবদ্ধ না থেকে জামায়াতের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্যে মাওলানা মওদুদীর লেখার সাথে কম্প্রমাইজের অন্যান্য ইস্যুগুলো কেও বিতর্কের টেবিলে নিয়ে আসেন। নির্বাচনের বিপক্ষে মাওলানা মওদুদীর আগের দেয়া যুক্তি ও ১৯৫১ সাল থেকে প্রার্থী নির্বাচনে জামায়াতের পলিসিকেও তিনি পাশাপাশি তুলে ধরেন। এই ধরনের দ্বৈত অবস্থান তুলে ধরে তিনি মাওলানা মওদুদী ও জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মসুচীকে আবারো কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিলেন।(2)
১৯৫৭ সালের মাছিগোথ সম্মেলনের পর থেকে জামায়াতে অনেক পরিবর্তন হয়েছে।জামায়াত এখন অনেক বেশি centralized,নিয়াজি'র মতে জামায়াতের অনেক সদস্যই তখন payroll(ভাতা প্রাপ্ত) যা কিনা তাদেরকে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে,তিনি একাই তখন দ্বিমত করে আওয়াজ তুলেন।(3)
নিজের পত্রিকায় এই জাতীয় সমস্যার কথা তুলে দেয়ার ফলে সমসাময়িক জামায়াতের অনেক সদস্যই তার প্রতি রুষ্ট হন এবং তিনি জামায়াতকে paralyse করার জন্য সরকারের হয়ে কাজ করছেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন।নিয়াজির জবাবে মাওলানা মওদুদী তাকে জামায়াত থেকে পদত্যাগ করতে বলেন।(4)
আদর্শিক Dilemma, হিকমা নাকি প্রয়োজনীয়তাবাদ?
জামায়াত পূনরায় তার আগের পজিশনে ফিরে যায় ১৯৮৯ সালে,সে সময় জামায়াত প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় কারন among other things, "Islam does not approve of a women as the head of an Islamic government or state," (5 ) অথচ জুন ১৯৮৮সালে জামায়াতের নতুন আমীর কাজী হোসাইন আহমেদ ঘোষনা দেন জেনারেল জিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে যৌথভাবে আন্দোলনে যাওয়ার ব্যাপারে জামায়াত ও পিপিপ'র(পাকিস্তান পিপলস পার্টি)মধ্যে ঐক্যমত হয়েছে।(6)
মজার ব্যাপার হচ্ছে কয়েক বছর আগেই জামায়াত করাচির এক গ্রুপ উলামার সাথে একাত্ততা ঘোষণা করে “ভুট্টোর সোসালিজম হচ্ছে কুফর” এই ফতওয়ায় স্বাক্ষর করে যা কিনা পরবর্তিতে signed by Ulema of all school of thought!!(7)
বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একই ধরনের কিছু ঘটনা উল্লেখ করতে হয়।১৯৯৬সালের আগে জামায়াত সেকুলার আওয়ামীলিগের সাথে যুগৎপত আন্দোলন করে অথচ আওয়ামীলিগের সাথে স্বাধীনতার আগে পরে ও বর্তমানে সাপে নেউলে সম্পর্ক।
যেই বিএনপি'র বিরুদ্ধে আন্দোলন সেই বিএনপির সাথেই ২০০০সালের মধ্যে জোট গঠিত হয়,সরকার গঠিত হয়।মাঝখান দিয়ে সাঈদী সাহেব পড়ে গেলেন সমালোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে, নারী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে জেগে উঠা বলিষ্ট কন্ঠস্বর এখন আর আগের মত জ্বলসে উঠেনা।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফলাফল
আগেই উল্লেখ করেছি যে অন্যন্য আলেমগন শুধু ফতওয়াই দেননি বরং এক পর্যায়ে আইয়ূব খানকে সাপোর্ট করে তার পক্ষে প্রচারণা শুরু করেন।ফলে, জামায়াত তার সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে মিস ফাতিমা জিন্নাহর পক্ষে প্রচারণা চালালেও আইয়ুব খান ৬৩.৩% ভোট নিয়ে বিপুল ভোটে জয়ী হন।গোলাম আযম সাহেব এই রেজাল্টকে ব্যখ্যা করেন এই বলে যে,অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার ও উলামাগন আইয়ুব খানের কাছে বিক্রি হয়ে গিয়েছিলেন।
তাসখন্দ ঘোষণা ও আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের দ্বিতীয় ধাপ
১৯৬৫সালের ৬সেপ্টেম্বর ভারত পাকিস্তান আক্রমণ করে ২৪ ঘন্টার মধ্যে লাহোর দখল করে শালিমারবাগে বিজয়োৎসব করার ঘোষণা দেয়।৭দিন যুদ্ধ চলার পর জাতিসংঘের প্রচেষ্টায় ২৩ সেপ্টেম্বর যুদ্ধবিরতি সম্ভব হলেও যুদ্ধে সৃষ্ট সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে তৎকালীন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট কোসিগিনের মধ্যস্থতায় উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দে চুক্তি সাক্ষরিত হয় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে,ঐ চুক্তিই "তাসখন্দ ঘোষণা" নামে বহুল আলোচিত।(8)
এই চুক্তি পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।এটিই আইয়ুব খানের পতনের লক্ষ্যে গনতান্ত্রিক আন্দোলনের দ্বিতীয় ধাপ।এই উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির সূবর্ণ সুযোগ নিলেন আইয়ুব সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো।তাসখন্দ ঘোষণার প্রতিবাদে পদত্যাগ করে জাতীর বীর হবার জন্য তিনি আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন শুরু করলেন।(9) আইয়ুব খান ৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের সময় জামায়াত সহ সকল রাজনৈতিক দলের সমর্থন নিয়ে পুরো দেশকে তার পক্ষে নিয়ে আসতে পারলেও "তাসখন্ড ঘোষনা"তাকে বেশি দিন সেই সাপোর্ট ধরে রাখতে দেয়নি।
রাজনৈতিক ময়দানে ৬দফা
১৯৬৪ সালে যে কয়টি রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধভাবে Combined Opposition Party(COP,সম্মিলিত বিরোধী দল)গঠন করে তারা আবারো গনতান্ত্রিক আন্দোলনে ১৯৬৬সালের ৫ই ফেব্রুয়ারী লাহোরে মিলিত হন।
সবাই যখন আন্দোলনের কর্মসুচী কি হবে তা নিয়ে ব্যাস্ত ঠিক তখনই ঘটল একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা!৫তারিখ সন্ধায় জামায়াতের কর্মপরিষদের বৈঠকে মাওলানা মওদুদী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামীলিগের সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমানের "৬দফা" দাবীর বর্ণনা সম্বলিত একটি কাগজ পেশ করেন।পরদিন এটি জাতীয় নিউজ হয়ে গেল।আইয়ুব সরকারও এটিকে ফলাও করে প্রচার করল যাতে করে COP এর ঐক্যে ফাটল ধরানো যায়।(10)৬দফার জনক বলে অনেকেই দাবী করেছেন,এর মধ্যে সবচেয়ে অবিশ্বাস্য হল আইুয়ব খান নিজে!!
" target="_blank">৬ দফার আবিষ্কারক
এই ৬দফাই পাকিস্তানের ভাঙ্গন ও আজকের বাংলাদেশ সৃষ্টির প্রথম প্রকাশ্য রাজনৈতিক কর্মসূচী।
PDM এবং DAC
১৯৬৭ সালের ৩০ এপ্রিল আওয়ামীলিগের একাংশকে নিয়ে অন্যান্য দলগুলোর সমন্বয়ে পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট(PDM)গঠিত হয়। জামায়াত PDM এ যোগদান করে এবং পরবর্তিতে আদর্শিক ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন ও সরকার উৎখাতের লক্ষ্যে ১৯৬৯ সালে ৮ দলের সমন্বয়ে গঠিত ডেমোক্রেটিক একশান কমিটিতেও(DAC) যোগদান করে।(11)আইয়ুব খানের আমলে বাম ধারার দলগুলো নিষিদ্ধ থাকার ফলে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের মুলে ছিল জামায়াত(পুর্ব এবং পশ্চিম দুই জায়গায়)।জামায়াত ঐ সময় জনগনের ব্যাপক সাপোর্ট পায়।
সরকারের মারমুখী অবস্থান এবং বিরোধী দল সমুহের আন্দোলনে দেশে অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হয়,ফলে অর্জন যেটা হয়েছে,আইয়ুব খান একটা সময় আর্মির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন ঠিকই কিন্তু সাধারন মানুষের ভিতর একটা উগ্র মনোভাব তৈরি হয়।জামায়াতের মত আদর্শিক দলেও পলিটিকাল রেডিকালিজম দেখা দিতে থাকে যা পরবর্তিতে জামায়াতকে একটি পরিপূর্ন পলিটিকাল পার্টিতে পরিনত করে।(12)
সবচেয়ে বড় যে ঘটনাটা ঘটে পূর্ব পাকিস্তানে তা হলো, একটা পর্যায়ে মাঠ হাতছাড়া হয়ে যায় জামায়াত থেকে।বামপন্থি ও জাতীয়তাবাদীরা আন্দোলনের সুফল ন্যায়।ঐ আন্দোলনের ধারাবাহিকতাই পুর্ব পাকিস্তানকে ৭১ এ পৌঁছে দেয়।(13)
0 comments: