(লেখক : এম.এন.হাসান)
এই "পাকিস্তানের শত্রু" ও "ভারতের দালাল"বলে চিহ্নিত জামায়াত কেন অল্প কিছুদিনের মধ্যে ভারতের শত্রু পক্ষান্তরে হালের "বাংলাদেশের শত্রু" হয়ে গেল এবং পাকিস্তানের জন্য নিজেদের জান বাজী রেখে সক্রিয় ভুমিকায় নেমে গেল?এই পর্বে সেই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব।
১৯৭০এর নির্বাচনের পর বাংলাদেশে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ,মি. ভুট্টোর নেতৃত্বে সিন্ধু ও পান্জাবে পিপলস পার্টি এবং বাকী দুটো প্রদেশে অন্য দুটো দলের নিরংকুশ বিজয় একথা প্রমাণ করল যে,পাকিস্তানের ঐক্যের ভিত্তি আর বেঁচে নেই।যে ভিত্তিতে নির্বাচনের ফলে পাকিস্তানের সৃষ্টি হয়েছিল, সে ভিত্তি না থাকায় নির্বাচনের মাধ্যমেই পাকিস্তানের ভিত্তি ভেংগে গেল।(3) জনগনের এরকম পরিষ্কার ম্যান্ডেট থাকা সত্ত্বেও আর্মি প্রশাসন ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করা শুরু করল কারন ভুট্টো কোনভাবেই সংসদে শেখ মুজিবের নেতৃত্ব মেনে নিতে পারছিলনা অন্যদিকে আর্মি প্রশাসনের কাছেও ফলাফল ছিল অপ্রত্যাশিত।এমতবস্থায় ভুট্টো ক্ষমতায় যাবার জন্যে "জেনারেল ইয়াহিয়ার সাথে যে ষড়যন্ত্র করলেন,তাতে পূর্বপাকিস্তানের বিচ্ছিন্ন হওয়া ত্বরান্বিত হয়ে গেল।আর দেশভাগ না হলে ভুট্টোরও ক্ষমতাসীন হবার কোন উপায় ছিলনা"।(4)
পরিস্থিতির এই বুঝ জামায়াত নেতৃবৃন্দের কাছে ছিল যার ফলে ১৯৭১ সালের জানুয়ারিতে লাহোরে মাওলানা মওদুদীর সভাপতিত্বে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরায় সীদ্ধান্ত হয় যে,যদি নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে যেতে থাকে,তাহলে জামায়াত এর বিরোধিতা করবেনা।(5)
কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা পূর্বপাকিস্তান জামায়াতকে পূর্ণ এখতিয়ার দেয়ার পর ৭১এর যাবতীয় কর্মের দায়ভার সম্পূর্ণরুপে এখনকার বাংলাদেশ জামায়াত নেতৃবৃন্দের উপরেই বর্তায়।৭১ এ জামায়াত কেন আর্মিকে সাপোর্ট করতে এগিয়ে গিয়েছিল?? এই সাপোর্ট কি আদর্শিক না রাজনৈতিক?গোলাম আযম সাহেবের লেখা থেকেই এর উত্তর খুঁজে পাওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে একটু ক্রিটিকালি Examine করা হলে,দেখতে পাব ৭১এ ভুমিকা আদর্শিক না রাজনৈতিক!!
৭১ এ জামায়াতের ভুমিকা আদর্শিক না রাজনৈতিক??
৭১ এ জামায়াতের ভুমিকা নিয়ে একটি common stereotypes হল এটা জামায়াতের রাজনৈতিক সীদ্ধান্ত ছিল, আর রাজনৈতিক সীদ্ধন্ত ভুল হতেই পারে। আবার আমরা যারা সংগঠনের সাথে ছিলাম তারা জানি (আমাদেরকে বুঝানো হয়েছে) যে আদর্শিকভাবে জামায়াত অখন্ড পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।এই কথাগুলো পরস্পরবিরোধী নয় কি??গোলাম আযম সাহেব বলছেন, তারা গোটা পাকিস্তানকে বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে রক্ষা করা উচিত বলে বিবেচনা করেছিলেন।(6) তিনি আমাদেরকে আরো বলছেন, ইসলামের নামে পাকিস্তান কায়েম হওয়া সত্ত্বেও যখন ইসলাম বিজয়ী হতে পারলনা,তখন ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ও সমাজতন্ত্রীরা যদি ভারতের সাহায্যে কোন রাষ্ট্র কায়েম করতে পারে,তাহলে সেখানে ইসলামের বিজয় কি করে সম্ভব হবে? (7) তার বইয়ে,তিনি ৭১ এ অবিভক্ত পাকিস্তান চাওয়ার ছয়টি কারনের মধ্যে প্রথম কারনটি উল্লেখ করেছেন এবং তা হচ্ছে; আদর্শগত কারণেই জামায়াতের পক্ষে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও সমাজতন্ত্রের ধারক ও বাহকগনের সহযোগী হওয়া সম্ভব ছিলনা।(8)
এখানেও এটা স্পষ্ট যে, ইসলামের ব্যপারে ওনাদের কনসার্ন ছিল,যার কারনে ওনারা অবিভক্ত পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন। তাহলে আজ ৭১ এর ভূমিকাকে রাজনৈতিক বলার যুক্তি কি??? রাজনৈতিক কারনে হলে তো জামায়াত বাংলাদেশ আণ্দোলনের পক্ষে অবস্থন নিত।ঠিক তেমনটাই তিনি বলছেন, “বাংলাদেশ আন্দোলনের নেতৃবৃন্দু যদি ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও সমাজতন্ত্রের প্রবক্তা না হতেন এবং ভারতের প্রত্যক্ষ সাহায্য ছাড়া যদি শুধু রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন পরিচালনা করতেন তাহলে ইসলাম পন্থীদের পক্ষে ঐ আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করা খুবই স্বাভাবিক ও সহজ হতো ”(9)
ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের ভয়ে ভীত ইসলামী আন্দোলন
জামায়াতের ৭১এ ভুমিকার পক্ষে আরো একটি জোড়ালো যুক্তি হল,ভারতের সাহায্যে দেশ স্বাধীন হলে দেশে ইসলাম থাকবেনা।এখানে প্রশ্ন হচ্ছে পাকিস্তান কি ইসলামিক রাষ্ট্র ছিল? নাকি ইসলাম কায়েমের জন্য পাকিস্তানের সৃষ্টি হয়েছে?১৯৪৭ সালে "তথাকথিত" ইসলামের নামে পাকিস্তান কায়েমের মৌণ বিরোধীতা জামায়াত করেছিল বিধায় এখনো জামায়াতকে রাজনৈতিকভাবে এন্টি-পাকিস্তানি বলা হয়,তখনো বলা হত।জামায়াত তখন সক্রিয় সাপোর্ট করেনি কারন ইসলামের নামে "পাকিস্তান আন্দোলন" ছিল "মুসলিম ন্যাশনালিজম",যেই জাতীয়তাবাদকে মাওলানা মওদুদী "কুফরি" বলে উল্লেখ করেছেন। [এই সিরিজের ২য় পর্বটি লক্ষণীয়]
৭১ এ এসে এই "মুসলিম জাতীয়তাবাদও"শুন্যের কোঠায় পৌঁছে গেল।গোলাম আযম সাহেবের মুখ থেকেই শুনুন, "যে মুসলিম জাতীয়তাবোধের ভিত্তিতে উপমহাদেশের মুসলমানরা ১৯৪৬ সালে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল,যে মুসলিম জাতীয়তার চেতনা নিয়ে ১৯৪৭ সালে ভারতভাগ হয়েছিল সেই চেতনা বাচিঁয়ে রাখার কোন প্রচেষ্টাই সরকারী ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নেয়া হয়নি।যে ইসলামের নামে ভিন্ন জাতি,ভিন্ন ভাষা ও ভৌগলিক দিক দিয়ে বিচ্ছিন্ন রাষ্ট্র(পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান)এক হয়েছিল সেই ইসলামকে রাষ্ট্র পরিচালনায় কোন স্থানই দেয়া হলনা।পাকিস্তান সৃষ্টির ১০-১৫বছর পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের একথা জানারও সুযোগ রইলনা যে,ভারতবর্ষ কেন দুভাগ হলো? ফলে ঈমানভিত্তিক জাতীয়তাবোধ বিনষ্ট হয়ে এলাকা ও ভাষাভিত্তিক ঐক্যবোধ জন্ম নিল।রাজনৈতিক ময়দানে যে আদর্শিক শুন্যতা সৃষ্টি হলো সেখানে সমাজতন্ত্র এগিয়ে আসার সযোগ পেল।রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনে যাতে ইসলামের কোন প্রভাব না পড়ে,সেজন্য ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ ময়দান দখল করতে এগিয়ে এল।এভাবে এলাকা ও ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবোধ,ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র রাজনৈতিক অংগনে মুসলিম জাতীয়তার স্থান দখল করতে লাগল"।(10)
এখানে একথা পানির মত স্বচ্ছ হয়ে ধরা পরে,পাকিস্তানের দুই প্রান্তে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র উথ্থান রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবে জামায়াতের জন্য তীব্র চ্যালেন্জ হয়ে দাড়াল।এই চ্যালেন্জকে আদর্শিকভাবে মোকাবেলা করার মত বুদ্ধিবৃত্তিক যোগ্যতা অন্তত পূর্বপাকিস্তান জামায়াতের ছিলনা।
যেই ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে এত ভয়,যেই ভারতকে জামায়াতের এত ভয় এবং এত বিরোধীতা সেই ধর্মনিরপেক্ষ ভারতেই জামায়াতের আরেকটা বড় অংশ তখনোও খুব ভালভাবেই ইসলামি আন্দোলনের কাজ করে যাচ্ছিল।শুধু তাই নয়, প্রায় ২৫বছর অনেক তর্ক-বিতর্কের পর জামায়াত ইসলামি হিন্দ অবশেষে ১৯৮৫ সালে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহন করার সীদ্ধান্ত নেয়।সবাইকে অবাক করে দিয়ে,ওখানকার জামায়াত শুরা সীদ্ধান্ত নিয়ে ঘোষণা করে বলে, "ভারতের মুসলমানদের স্যাকুলারিজমকে গ্রহন করে নির্বাচনে অংশগ্রহনই শুধু নয় বরং বিজেপি ও অন্যান্য হিন্দুত্ববাদী দলের হাত থেকে স্যাকুলারিজমকে রক্ষা করা উচিত" (11)
শাসক গোষ্ঠির চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধে ব্যবহৃত পূর্বপাকিস্তান জামায়াতের
এটা খুবই পরিষ্কার যে,৭১এ বাংলাদেশের উপর পশ্চিম পাকিস্তান অন্যায়ভাবে যুদ্ধ চাপিয়ে দেয় এবং বাধ্য করে "আওয়ামীলিগ ও বামপন্থিদের" অস্র হাতে তুলে নেয়ার জন্য।জনগনও একটা পর্যায়ে তাদের সশস্র অংশগ্রহনকে স্বাগত জানায় যেটা গোলাম আযম সাহেবের কথায় স্পষ্ট পাওয়া যায়,তিনি বলছেন,"ভুট্টো ও ইয়াহইয়া পূর্বপাকিস্তানের জনগনের ব্যালটের রায়কে বুলেট দ্বারা দমন করার হঠকারী সিদ্ধান্ত না নিলে এবং জনগনের উপর অত্যন্ত অন্যায়ভাবে মুক্তিযু্দ্ধ চাপিয়ে না দিলে এখানকার জনগন কিছুতেই পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া সমর্থন করতেন না"।(12)
তাহলে জামায়াত কেন এই “অন্যায়কে” সাপোর্ট করল?জামায়াত কি সাধারণ জনগনের ভাষা বুঝতে পারেনি?নাকি আর্মির সাথে হাত মিলিয়ে রাজনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার(ব্যাক্তির জন্য নয় সংগঠনের স্বার্থে) সুযোগ কাজে লাগিয়েছিল?? এই বিষয়গুলো বুঝার জন্য ১৯৭০ এর নির্বাচন থেকে শুরু করতে হবে।
ইয়াহহিয়া খানের কাছে আইয়ুব খানের ক্ষমতা হস্তান্তরের পর দেশে কার্যত আর্মি শাসন থাকা সত্ত্বেও ইয়াহহিয়া কতৃক নির্বাচনের ঘোষণা দেয়ার ফলে দেশে নির্বাচনের জন্য একটা আবহ তৈরি হয়।ফলে সকল রাজনৈতিক দলই প্রচারণা চালানোর জন্য প্রায় ১বছর সময় ধরে নির্বাচনী গনসংযোগ করার সুযোগ পায়।সেই প্রচারণায় বাংলাদেশ অংশে আওয়ামীলিগের বিপক্ষে কোন রাজনৈতিক শক্তিই তেমন বলিষ্ঠ ভুমিকা রাখতে পারেনি,একমাত্র জামায়াত ছিল কিছুটা প্রতিদ্বন্দী।আওয়ামীলিগের সাথে জামায়াতের একটা মনস্তাত্বিক দুরুত্বতো ছিলই,সাথে সাথে ১৮ই জানুয়ারী ১৯৭০ পল্টনে জামায়াতের নির্বাচনী সমাবেশে আওয়ামীলিগের সন্ত্রাসী কর্তৃক সশস্র হামলা চালানোর পর হতে রাজনৈতিক দুরুত্বও বাড়তে থাকে।ঐ হামলায় ২জন জামায়াত কর্মি শহীদ হন অথচ আওয়ামীলিগ কর্তৃক মাইক যোগে প্রচার করা হয়, "নিরস্র জনতার উপর জামায়াতে ইসলামী গুন্ডাদের নির্লজ্জ হামলা।"(13)
A political puzzling but sociologically significant point in the arena of power politics in pakistan has been the voters mercurial behaviour toward Jamat-i-Islami. The Jamat appeared to be a formidable force throughout the 1970 campaign, for example, but the election results were disastrous for the party. (14) নির্বাচন ও তার ফলাফলতো গত সংখ্যায় আপনারা জেনেছেন। The disappointing results of 1970 election psychologically prepared the leadership of the JAMAT to seek influence and power through nondemocratic means, including collaboration with the military regimes (৭০ এর নির্বাচনের হতাশাজনক ফলাফল জামায়াত নেতৃত্বকে অগনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার ও ক্ষমতার জন্য আর্মি প্রশাসনকে সাহায্য করতে মানসিকভাবে তৈরি করে ফেলে). The facility and ease with which the JAMAT joined hands with the martial law regime of General Zia-ul-Haq in 1977 can be explained by their disenchantment with the democratic process which they had experienced in 1970. (15)
অথচ, Historically, the relationship between Jamat and the central government in Pakistan has been complex and generally adversarial ( ঐতিহাসিকভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে জামায়াতের সম্পর্ক ছিল জটিল এবং সাংঘর্ষিক). Having taken an aloof and critical stance toward earlier regimes in Pakistan because of their leaning toward secular ideology, the Jamat supported the military regimes of Yahya Khan and General Zia because it feared the spread of Socialism. The Jamat, suspicious of Zulfikar Bhutto's political manoeuvring and his program of "Islam and Socialism", intensified its opposition to his regime. Jamat welcomed Zia's coup perceiving it to be in line with their Ideological thinking. (16)
এখনো যাদের বিশ্বাস, ইসলামে বিশ্বাসী ও কুরআনের অনুসারী হিসেবে জামাআতের ৭১ এর ভূমিকা শুধু ইসলাম সম্মতই নয় বরং ছিল ঈমানের দাবী। কারোরো নিয়তের উপর সন্দেহ না করে তাদের এই যুক্তিটুকুও স্টাডি করার প্রয়োজন। কিছুক্ষণের জন্য মেনে নিলাম ঈমানের দাবীতে জামায়াত ঐযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে,জামায়াতের জিহাদটা কার বিরুদ্ধে ছিল?ভারতের বিরুদ্ধে?না, কেননা ভারতের সাথে পাকিস্তানের সক্রিয় যুদ্ধ বাঁধে ডিসেম্বরে,যদিও ইউএস ডিক্লাসিফইড ডকুমেন্টস অনুসারে পাক-ভারত যুদ্ধের ধামামা বেজে উঠেছিল অগাষ্ট-সেপ্টেম্বরের দিকে,সেখানে এপ্রিলেই আর্মিকে সহযোগিতার সীদ্ধান্ত জামায়াত কিভাবে নিল??তখনও তো শুধু আর্মির একশান ছিল আওয়ামীলিগের নেতা-কর্মিদের উপর।
এবার আসা যাক,জামায়াতের জিহাদটা কি বদর-ওহদ-খন্দকের মত নিজের দেশ বাচাঁনোর জিহাদ ছিল?এখানেও প্রশ্ন হচ্ছে সেপ্টেম্বর/অক্টোবরের আগে কিভাবে বুঝা গেল ভারত পূর্বপাকিস্তান দখল করতে আসছে? ভাল কথা, জামায়াতের জিহাদটা কি ইসলাম কায়েমের জন্য বা "ইসলাম রক্ষার" জন্য ছিল?মনে করলাম তাই,আবার প্রশ্ন আসে মনে, যদি পাকিস্তান যুদ্ধে জয়ীই হত তাহলে কার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করত? আওয়ামীলিগ হত তখন দেশদ্রোহী,জামায়াত হত দেশপ্রেমিক। আমাদের এই জিহাদের কারনে কি মনে করেন মাতাল,ধর্ষক আর্মি প্রশাসন ইসলাম কায়েমের জন্য জামায়াতের কাছে গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তর করত?? চেয়ে দেখুন স্বপ্নের পশ্চিম পাকিস্তানের দিকে,কি ইসলাম কায়েম হয়েছে সেখানে।
এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর পেতে ইজতিহাদ করা লাগেনা,মুজাদ্দিদও হওয়া লাগেনা,লাগে শুধু কমন সেন্স,এ ক্রিটিকাল কমন সেন্স। উপসংহার,জামায়াত শুধু আর্মির হাতের মোয়া হিসেবেই ব্যবহৃত হয়েছে,আর্মি কৈয়ের তেলে কৈ বেঁজেছে।
সিরিজের ১১তম পর্বে বলেছিলাম, মাছিগোটেই ইসলামী আন্দোলন হিসেবে আদর্শিক জামায়াতের ভাগ্য নির্ধারন হয়ে যায়।পরবর্তি ইতিহাস হচ্ছে রাজনৈতিক জামায়াতের ইতিহাস।অনেকে দ্বিমত করে ব্যখ্যা জানতে চেয়েছেন,এই পোষ্টের পর আশাকরি দ্বিমত নিয়েই আমার সাথে একমত হবেন। এখানে বলতেই হচ্ছে ,৭১ এ ইসলামী আন্দোলন হিসেবে জামায়াতের আদর্শিক ও রাজনৈতিক দুটিরই পরাজয় ঘটেছে,সাথে সাথে ঘটেছে নৈতিক পরাজয়ও যে পরাজয়ের গ্লানি বাংলাদেশ জামায়াত ও তাদের আগত নেতা-কর্মিদের বছরের পর বছর বয়ে বেড়াতে হবে।
জামায়াত স্টাডি করতে যেয়ে কিছু বিষয় এমন পাওয়া যায়,যেগুলো ব্লগে বলায় কোন ফায়দা নেই।একটা বিষয় না বললেই নয়, এই যে শুরা থেকে যেকোন সীদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতকে পুরোপুরি ক্ষমতা দেয়া হল সেই শুরাতে কতটুকু আলোচনা হয়েছিল ৭১এ আর্মি প্রশাসনকে সাহায্য করার ব্যাপারে???এখানে লেশন রয়েছে, শুরাকে উপেক্ষা করার ফলাফল খুবই মারাত্বক হয়েছে,জামায়াতের ইতিহাসে এটা স্পষ্ট.
ওস্তাদ খুররম মুরাদ ছিলেন ঐ শুরাতে,যিনি আর্মিকে সহযোগিতার পক্ষে ছিলেন না বলে প্রতিয়মান হয়।আর তাই তিনি মৃত্যুর আগে প্রকাশিত তার জীবনের সর্বশেষ লেখায় ৭১ এ জামায়াতের অবস্থানের ব্যপারে বলে গেছেন, জনগণের সাথে এবং জনগণের জন্য যারা কাজ করেন তাদের উচিত নিজেদের ভুল সিদ্ধান্ত বা ভুল কাজ গোপন না করে অথবা এর ভিন্ন ধরণের ব্যাখ্যা না দিয়ে প্রকাশ্যে জনগণের সামনে ভুলের স্বীকৃতি দেয়া। এর ফলে জনগণের সামনে তাদের সম্মান হ্রাস না পেয়ে আরো বৃদ্ধি পাবে।(17)
মাওলানা মওদুদী বিহীন জামায়াতের পথচলাঃ জামায়াত অধ্যয়ন-১৭
নোট:
1. কে এম আমিনুল হক, আমি আল বদর বলছি:২৩-২৪
2. Ibid(ঐ),পৃষ্ঠা:২৫
3. গোলাম আযম, পলাশী থেকে বাংলাদেশ : (পৃষ্ঠা: 13)
4. Ibid (ঐ)
5. Ibid
6. Ibid:পৃষ্ঠা:33
7. Ibid: পৃষ্ঠা:21
8. Ibid:পৃষ্ঠা:22
9. Ibid:পৃষ্ঠা:21
10. Ibid: পৃষ্ঠা:9
11. Rudaad Majlis-e-Shoora, Jamaat-e-Islami Hind (Proceedings (কার্যবিবরনী) of Jamaat-e-Islami Hind’s central advisory council) (1989), Delhi: Organizational department, Jamaat-e-Islami Hind. cited in IRFAN AHMAD, Between moderation and radicalization: transnational interactions of Jamaat-e-Islami of India, Amsterdam School for Social Science Research, The Netherlands.
12. গোলাম আযম,জীবনে যা দেখলাম,৩য় খন্ড:৭৪
13. আমি আল বদর বলছি: (পৃষ্ঠা: ১১৪) এবং জীবনে যা দেখলাম,৩য় খন্ড
14. Martin E. Marty, R. Scott Apple, Fundamentalisms and Society: Reclaiming the Sciences, the Family, and Education, University of Chicago Press, 1997: Page 199
15. Mumtaz Ahmed, The Jamaat-i-Islami and the Tablighi Jamaat," in Martin E. Marty and R. Scott Appleby, eds., Fundamentalisms Observed (Chicago, 1991): 477
16. Martin E. Marty, R. Scott Apple: Page 199
17. খুররম মুরাদ, তরজমানুল কুরআন, জানুয়ারী ১৯৯৭, পৃষ্ঠা:১৫-১৬ cited from ফরীদ আহমেদ রেজা, মুসলমি বিশ্বে সেকুলারজিম,সাপ্তাহিক সুরমা, জুলাই ২০০৩, লন্ডন, আমার অনুরোধে লেখাটি তিনি সোনার বাংলাদেশ ব্লগেও দিয়েছেন।
এই "পাকিস্তানের শত্রু" ও "ভারতের দালাল"বলে চিহ্নিত জামায়াত কেন অল্প কিছুদিনের মধ্যে ভারতের শত্রু পক্ষান্তরে হালের "বাংলাদেশের শত্রু" হয়ে গেল এবং পাকিস্তানের জন্য নিজেদের জান বাজী রেখে সক্রিয় ভুমিকায় নেমে গেল?এই পর্বে সেই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব।
১৯৭০এর নির্বাচনের পর বাংলাদেশে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ,মি. ভুট্টোর নেতৃত্বে সিন্ধু ও পান্জাবে পিপলস পার্টি এবং বাকী দুটো প্রদেশে অন্য দুটো দলের নিরংকুশ বিজয় একথা প্রমাণ করল যে,পাকিস্তানের ঐক্যের ভিত্তি আর বেঁচে নেই।যে ভিত্তিতে নির্বাচনের ফলে পাকিস্তানের সৃষ্টি হয়েছিল, সে ভিত্তি না থাকায় নির্বাচনের মাধ্যমেই পাকিস্তানের ভিত্তি ভেংগে গেল।(3) জনগনের এরকম পরিষ্কার ম্যান্ডেট থাকা সত্ত্বেও আর্মি প্রশাসন ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করা শুরু করল কারন ভুট্টো কোনভাবেই সংসদে শেখ মুজিবের নেতৃত্ব মেনে নিতে পারছিলনা অন্যদিকে আর্মি প্রশাসনের কাছেও ফলাফল ছিল অপ্রত্যাশিত।এমতবস্থায় ভুট্টো ক্ষমতায় যাবার জন্যে "জেনারেল ইয়াহিয়ার সাথে যে ষড়যন্ত্র করলেন,তাতে পূর্বপাকিস্তানের বিচ্ছিন্ন হওয়া ত্বরান্বিত হয়ে গেল।আর দেশভাগ না হলে ভুট্টোরও ক্ষমতাসীন হবার কোন উপায় ছিলনা"।(4)
পরিস্থিতির এই বুঝ জামায়াত নেতৃবৃন্দের কাছে ছিল যার ফলে ১৯৭১ সালের জানুয়ারিতে লাহোরে মাওলানা মওদুদীর সভাপতিত্বে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরায় সীদ্ধান্ত হয় যে,যদি নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে যেতে থাকে,তাহলে জামায়াত এর বিরোধিতা করবেনা।(5)
কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা পূর্বপাকিস্তান জামায়াতকে পূর্ণ এখতিয়ার দেয়ার পর ৭১এর যাবতীয় কর্মের দায়ভার সম্পূর্ণরুপে এখনকার বাংলাদেশ জামায়াত নেতৃবৃন্দের উপরেই বর্তায়।৭১ এ জামায়াত কেন আর্মিকে সাপোর্ট করতে এগিয়ে গিয়েছিল?? এই সাপোর্ট কি আদর্শিক না রাজনৈতিক?গোলাম আযম সাহেবের লেখা থেকেই এর উত্তর খুঁজে পাওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে একটু ক্রিটিকালি Examine করা হলে,দেখতে পাব ৭১এ ভুমিকা আদর্শিক না রাজনৈতিক!!
৭১ এ জামায়াতের ভুমিকা আদর্শিক না রাজনৈতিক??
৭১ এ জামায়াতের ভুমিকা নিয়ে একটি common stereotypes হল এটা জামায়াতের রাজনৈতিক সীদ্ধান্ত ছিল, আর রাজনৈতিক সীদ্ধন্ত ভুল হতেই পারে। আবার আমরা যারা সংগঠনের সাথে ছিলাম তারা জানি (আমাদেরকে বুঝানো হয়েছে) যে আদর্শিকভাবে জামায়াত অখন্ড পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।এই কথাগুলো পরস্পরবিরোধী নয় কি??গোলাম আযম সাহেব বলছেন, তারা গোটা পাকিস্তানকে বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে রক্ষা করা উচিত বলে বিবেচনা করেছিলেন।(6) তিনি আমাদেরকে আরো বলছেন, ইসলামের নামে পাকিস্তান কায়েম হওয়া সত্ত্বেও যখন ইসলাম বিজয়ী হতে পারলনা,তখন ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ও সমাজতন্ত্রীরা যদি ভারতের সাহায্যে কোন রাষ্ট্র কায়েম করতে পারে,তাহলে সেখানে ইসলামের বিজয় কি করে সম্ভব হবে? (7) তার বইয়ে,তিনি ৭১ এ অবিভক্ত পাকিস্তান চাওয়ার ছয়টি কারনের মধ্যে প্রথম কারনটি উল্লেখ করেছেন এবং তা হচ্ছে; আদর্শগত কারণেই জামায়াতের পক্ষে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও সমাজতন্ত্রের ধারক ও বাহকগনের সহযোগী হওয়া সম্ভব ছিলনা।(8)
এখানেও এটা স্পষ্ট যে, ইসলামের ব্যপারে ওনাদের কনসার্ন ছিল,যার কারনে ওনারা অবিভক্ত পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন। তাহলে আজ ৭১ এর ভূমিকাকে রাজনৈতিক বলার যুক্তি কি??? রাজনৈতিক কারনে হলে তো জামায়াত বাংলাদেশ আণ্দোলনের পক্ষে অবস্থন নিত।ঠিক তেমনটাই তিনি বলছেন, “বাংলাদেশ আন্দোলনের নেতৃবৃন্দু যদি ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও সমাজতন্ত্রের প্রবক্তা না হতেন এবং ভারতের প্রত্যক্ষ সাহায্য ছাড়া যদি শুধু রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন পরিচালনা করতেন তাহলে ইসলাম পন্থীদের পক্ষে ঐ আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করা খুবই স্বাভাবিক ও সহজ হতো ”(9)
ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের ভয়ে ভীত ইসলামী আন্দোলন
জামায়াতের ৭১এ ভুমিকার পক্ষে আরো একটি জোড়ালো যুক্তি হল,ভারতের সাহায্যে দেশ স্বাধীন হলে দেশে ইসলাম থাকবেনা।এখানে প্রশ্ন হচ্ছে পাকিস্তান কি ইসলামিক রাষ্ট্র ছিল? নাকি ইসলাম কায়েমের জন্য পাকিস্তানের সৃষ্টি হয়েছে?১৯৪৭ সালে "তথাকথিত" ইসলামের নামে পাকিস্তান কায়েমের মৌণ বিরোধীতা জামায়াত করেছিল বিধায় এখনো জামায়াতকে রাজনৈতিকভাবে এন্টি-পাকিস্তানি বলা হয়,তখনো বলা হত।জামায়াত তখন সক্রিয় সাপোর্ট করেনি কারন ইসলামের নামে "পাকিস্তান আন্দোলন" ছিল "মুসলিম ন্যাশনালিজম",যেই জাতীয়তাবাদকে মাওলানা মওদুদী "কুফরি" বলে উল্লেখ করেছেন। [এই সিরিজের ২য় পর্বটি লক্ষণীয়]
৭১ এ এসে এই "মুসলিম জাতীয়তাবাদও"শুন্যের কোঠায় পৌঁছে গেল।গোলাম আযম সাহেবের মুখ থেকেই শুনুন, "যে মুসলিম জাতীয়তাবোধের ভিত্তিতে উপমহাদেশের মুসলমানরা ১৯৪৬ সালে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল,যে মুসলিম জাতীয়তার চেতনা নিয়ে ১৯৪৭ সালে ভারতভাগ হয়েছিল সেই চেতনা বাচিঁয়ে রাখার কোন প্রচেষ্টাই সরকারী ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নেয়া হয়নি।যে ইসলামের নামে ভিন্ন জাতি,ভিন্ন ভাষা ও ভৌগলিক দিক দিয়ে বিচ্ছিন্ন রাষ্ট্র(পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান)এক হয়েছিল সেই ইসলামকে রাষ্ট্র পরিচালনায় কোন স্থানই দেয়া হলনা।পাকিস্তান সৃষ্টির ১০-১৫বছর পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের একথা জানারও সুযোগ রইলনা যে,ভারতবর্ষ কেন দুভাগ হলো? ফলে ঈমানভিত্তিক জাতীয়তাবোধ বিনষ্ট হয়ে এলাকা ও ভাষাভিত্তিক ঐক্যবোধ জন্ম নিল।রাজনৈতিক ময়দানে যে আদর্শিক শুন্যতা সৃষ্টি হলো সেখানে সমাজতন্ত্র এগিয়ে আসার সযোগ পেল।রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনে যাতে ইসলামের কোন প্রভাব না পড়ে,সেজন্য ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ ময়দান দখল করতে এগিয়ে এল।এভাবে এলাকা ও ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবোধ,ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র রাজনৈতিক অংগনে মুসলিম জাতীয়তার স্থান দখল করতে লাগল"।(10)
এখানে একথা পানির মত স্বচ্ছ হয়ে ধরা পরে,পাকিস্তানের দুই প্রান্তে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র উথ্থান রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবে জামায়াতের জন্য তীব্র চ্যালেন্জ হয়ে দাড়াল।এই চ্যালেন্জকে আদর্শিকভাবে মোকাবেলা করার মত বুদ্ধিবৃত্তিক যোগ্যতা অন্তত পূর্বপাকিস্তান জামায়াতের ছিলনা।
যেই ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে এত ভয়,যেই ভারতকে জামায়াতের এত ভয় এবং এত বিরোধীতা সেই ধর্মনিরপেক্ষ ভারতেই জামায়াতের আরেকটা বড় অংশ তখনোও খুব ভালভাবেই ইসলামি আন্দোলনের কাজ করে যাচ্ছিল।শুধু তাই নয়, প্রায় ২৫বছর অনেক তর্ক-বিতর্কের পর জামায়াত ইসলামি হিন্দ অবশেষে ১৯৮৫ সালে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহন করার সীদ্ধান্ত নেয়।সবাইকে অবাক করে দিয়ে,ওখানকার জামায়াত শুরা সীদ্ধান্ত নিয়ে ঘোষণা করে বলে, "ভারতের মুসলমানদের স্যাকুলারিজমকে গ্রহন করে নির্বাচনে অংশগ্রহনই শুধু নয় বরং বিজেপি ও অন্যান্য হিন্দুত্ববাদী দলের হাত থেকে স্যাকুলারিজমকে রক্ষা করা উচিত" (11)
শাসক গোষ্ঠির চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধে ব্যবহৃত পূর্বপাকিস্তান জামায়াতের
এটা খুবই পরিষ্কার যে,৭১এ বাংলাদেশের উপর পশ্চিম পাকিস্তান অন্যায়ভাবে যুদ্ধ চাপিয়ে দেয় এবং বাধ্য করে "আওয়ামীলিগ ও বামপন্থিদের" অস্র হাতে তুলে নেয়ার জন্য।জনগনও একটা পর্যায়ে তাদের সশস্র অংশগ্রহনকে স্বাগত জানায় যেটা গোলাম আযম সাহেবের কথায় স্পষ্ট পাওয়া যায়,তিনি বলছেন,"ভুট্টো ও ইয়াহইয়া পূর্বপাকিস্তানের জনগনের ব্যালটের রায়কে বুলেট দ্বারা দমন করার হঠকারী সিদ্ধান্ত না নিলে এবং জনগনের উপর অত্যন্ত অন্যায়ভাবে মুক্তিযু্দ্ধ চাপিয়ে না দিলে এখানকার জনগন কিছুতেই পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া সমর্থন করতেন না"।(12)
তাহলে জামায়াত কেন এই “অন্যায়কে” সাপোর্ট করল?জামায়াত কি সাধারণ জনগনের ভাষা বুঝতে পারেনি?নাকি আর্মির সাথে হাত মিলিয়ে রাজনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার(ব্যাক্তির জন্য নয় সংগঠনের স্বার্থে) সুযোগ কাজে লাগিয়েছিল?? এই বিষয়গুলো বুঝার জন্য ১৯৭০ এর নির্বাচন থেকে শুরু করতে হবে।
ইয়াহহিয়া খানের কাছে আইয়ুব খানের ক্ষমতা হস্তান্তরের পর দেশে কার্যত আর্মি শাসন থাকা সত্ত্বেও ইয়াহহিয়া কতৃক নির্বাচনের ঘোষণা দেয়ার ফলে দেশে নির্বাচনের জন্য একটা আবহ তৈরি হয়।ফলে সকল রাজনৈতিক দলই প্রচারণা চালানোর জন্য প্রায় ১বছর সময় ধরে নির্বাচনী গনসংযোগ করার সুযোগ পায়।সেই প্রচারণায় বাংলাদেশ অংশে আওয়ামীলিগের বিপক্ষে কোন রাজনৈতিক শক্তিই তেমন বলিষ্ঠ ভুমিকা রাখতে পারেনি,একমাত্র জামায়াত ছিল কিছুটা প্রতিদ্বন্দী।আওয়ামীলিগের সাথে জামায়াতের একটা মনস্তাত্বিক দুরুত্বতো ছিলই,সাথে সাথে ১৮ই জানুয়ারী ১৯৭০ পল্টনে জামায়াতের নির্বাচনী সমাবেশে আওয়ামীলিগের সন্ত্রাসী কর্তৃক সশস্র হামলা চালানোর পর হতে রাজনৈতিক দুরুত্বও বাড়তে থাকে।ঐ হামলায় ২জন জামায়াত কর্মি শহীদ হন অথচ আওয়ামীলিগ কর্তৃক মাইক যোগে প্রচার করা হয়, "নিরস্র জনতার উপর জামায়াতে ইসলামী গুন্ডাদের নির্লজ্জ হামলা।"(13)
A political puzzling but sociologically significant point in the arena of power politics in pakistan has been the voters mercurial behaviour toward Jamat-i-Islami. The Jamat appeared to be a formidable force throughout the 1970 campaign, for example, but the election results were disastrous for the party. (14) নির্বাচন ও তার ফলাফলতো গত সংখ্যায় আপনারা জেনেছেন। The disappointing results of 1970 election psychologically prepared the leadership of the JAMAT to seek influence and power through nondemocratic means, including collaboration with the military regimes (৭০ এর নির্বাচনের হতাশাজনক ফলাফল জামায়াত নেতৃত্বকে অগনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার ও ক্ষমতার জন্য আর্মি প্রশাসনকে সাহায্য করতে মানসিকভাবে তৈরি করে ফেলে). The facility and ease with which the JAMAT joined hands with the martial law regime of General Zia-ul-Haq in 1977 can be explained by their disenchantment with the democratic process which they had experienced in 1970. (15)
অথচ, Historically, the relationship between Jamat and the central government in Pakistan has been complex and generally adversarial ( ঐতিহাসিকভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে জামায়াতের সম্পর্ক ছিল জটিল এবং সাংঘর্ষিক). Having taken an aloof and critical stance toward earlier regimes in Pakistan because of their leaning toward secular ideology, the Jamat supported the military regimes of Yahya Khan and General Zia because it feared the spread of Socialism. The Jamat, suspicious of Zulfikar Bhutto's political manoeuvring and his program of "Islam and Socialism", intensified its opposition to his regime. Jamat welcomed Zia's coup perceiving it to be in line with their Ideological thinking. (16)
এখনো যাদের বিশ্বাস, ইসলামে বিশ্বাসী ও কুরআনের অনুসারী হিসেবে জামাআতের ৭১ এর ভূমিকা শুধু ইসলাম সম্মতই নয় বরং ছিল ঈমানের দাবী। কারোরো নিয়তের উপর সন্দেহ না করে তাদের এই যুক্তিটুকুও স্টাডি করার প্রয়োজন। কিছুক্ষণের জন্য মেনে নিলাম ঈমানের দাবীতে জামায়াত ঐযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে,জামায়াতের জিহাদটা কার বিরুদ্ধে ছিল?ভারতের বিরুদ্ধে?না, কেননা ভারতের সাথে পাকিস্তানের সক্রিয় যুদ্ধ বাঁধে ডিসেম্বরে,যদিও ইউএস ডিক্লাসিফইড ডকুমেন্টস অনুসারে পাক-ভারত যুদ্ধের ধামামা বেজে উঠেছিল অগাষ্ট-সেপ্টেম্বরের দিকে,সেখানে এপ্রিলেই আর্মিকে সহযোগিতার সীদ্ধান্ত জামায়াত কিভাবে নিল??তখনও তো শুধু আর্মির একশান ছিল আওয়ামীলিগের নেতা-কর্মিদের উপর।
এবার আসা যাক,জামায়াতের জিহাদটা কি বদর-ওহদ-খন্দকের মত নিজের দেশ বাচাঁনোর জিহাদ ছিল?এখানেও প্রশ্ন হচ্ছে সেপ্টেম্বর/অক্টোবরের আগে কিভাবে বুঝা গেল ভারত পূর্বপাকিস্তান দখল করতে আসছে? ভাল কথা, জামায়াতের জিহাদটা কি ইসলাম কায়েমের জন্য বা "ইসলাম রক্ষার" জন্য ছিল?মনে করলাম তাই,আবার প্রশ্ন আসে মনে, যদি পাকিস্তান যুদ্ধে জয়ীই হত তাহলে কার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করত? আওয়ামীলিগ হত তখন দেশদ্রোহী,জামায়াত হত দেশপ্রেমিক। আমাদের এই জিহাদের কারনে কি মনে করেন মাতাল,ধর্ষক আর্মি প্রশাসন ইসলাম কায়েমের জন্য জামায়াতের কাছে গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তর করত?? চেয়ে দেখুন স্বপ্নের পশ্চিম পাকিস্তানের দিকে,কি ইসলাম কায়েম হয়েছে সেখানে।
এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর পেতে ইজতিহাদ করা লাগেনা,মুজাদ্দিদও হওয়া লাগেনা,লাগে শুধু কমন সেন্স,এ ক্রিটিকাল কমন সেন্স। উপসংহার,জামায়াত শুধু আর্মির হাতের মোয়া হিসেবেই ব্যবহৃত হয়েছে,আর্মি কৈয়ের তেলে কৈ বেঁজেছে।
সিরিজের ১১তম পর্বে বলেছিলাম, মাছিগোটেই ইসলামী আন্দোলন হিসেবে আদর্শিক জামায়াতের ভাগ্য নির্ধারন হয়ে যায়।পরবর্তি ইতিহাস হচ্ছে রাজনৈতিক জামায়াতের ইতিহাস।অনেকে দ্বিমত করে ব্যখ্যা জানতে চেয়েছেন,এই পোষ্টের পর আশাকরি দ্বিমত নিয়েই আমার সাথে একমত হবেন। এখানে বলতেই হচ্ছে ,৭১ এ ইসলামী আন্দোলন হিসেবে জামায়াতের আদর্শিক ও রাজনৈতিক দুটিরই পরাজয় ঘটেছে,সাথে সাথে ঘটেছে নৈতিক পরাজয়ও যে পরাজয়ের গ্লানি বাংলাদেশ জামায়াত ও তাদের আগত নেতা-কর্মিদের বছরের পর বছর বয়ে বেড়াতে হবে।
জামায়াত স্টাডি করতে যেয়ে কিছু বিষয় এমন পাওয়া যায়,যেগুলো ব্লগে বলায় কোন ফায়দা নেই।একটা বিষয় না বললেই নয়, এই যে শুরা থেকে যেকোন সীদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতকে পুরোপুরি ক্ষমতা দেয়া হল সেই শুরাতে কতটুকু আলোচনা হয়েছিল ৭১এ আর্মি প্রশাসনকে সাহায্য করার ব্যাপারে???এখানে লেশন রয়েছে, শুরাকে উপেক্ষা করার ফলাফল খুবই মারাত্বক হয়েছে,জামায়াতের ইতিহাসে এটা স্পষ্ট.
ওস্তাদ খুররম মুরাদ ছিলেন ঐ শুরাতে,যিনি আর্মিকে সহযোগিতার পক্ষে ছিলেন না বলে প্রতিয়মান হয়।আর তাই তিনি মৃত্যুর আগে প্রকাশিত তার জীবনের সর্বশেষ লেখায় ৭১ এ জামায়াতের অবস্থানের ব্যপারে বলে গেছেন, জনগণের সাথে এবং জনগণের জন্য যারা কাজ করেন তাদের উচিত নিজেদের ভুল সিদ্ধান্ত বা ভুল কাজ গোপন না করে অথবা এর ভিন্ন ধরণের ব্যাখ্যা না দিয়ে প্রকাশ্যে জনগণের সামনে ভুলের স্বীকৃতি দেয়া। এর ফলে জনগণের সামনে তাদের সম্মান হ্রাস না পেয়ে আরো বৃদ্ধি পাবে।(17)
মাওলানা মওদুদী বিহীন জামায়াতের পথচলাঃ জামায়াত অধ্যয়ন-১৭
নোট:
1. কে এম আমিনুল হক, আমি আল বদর বলছি:২৩-২৪
2. Ibid(ঐ),পৃষ্ঠা:২৫
3. গোলাম আযম, পলাশী থেকে বাংলাদেশ : (পৃষ্ঠা: 13)
4. Ibid (ঐ)
5. Ibid
6. Ibid:পৃষ্ঠা:33
7. Ibid: পৃষ্ঠা:21
8. Ibid:পৃষ্ঠা:22
9. Ibid:পৃষ্ঠা:21
10. Ibid: পৃষ্ঠা:9
11. Rudaad Majlis-e-Shoora, Jamaat-e-Islami Hind (Proceedings (কার্যবিবরনী) of Jamaat-e-Islami Hind’s central advisory council) (1989), Delhi: Organizational department, Jamaat-e-Islami Hind. cited in IRFAN AHMAD, Between moderation and radicalization: transnational interactions of Jamaat-e-Islami of India, Amsterdam School for Social Science Research, The Netherlands.
12. গোলাম আযম,জীবনে যা দেখলাম,৩য় খন্ড:৭৪
13. আমি আল বদর বলছি: (পৃষ্ঠা: ১১৪) এবং জীবনে যা দেখলাম,৩য় খন্ড
14. Martin E. Marty, R. Scott Apple, Fundamentalisms and Society: Reclaiming the Sciences, the Family, and Education, University of Chicago Press, 1997: Page 199
15. Mumtaz Ahmed, The Jamaat-i-Islami and the Tablighi Jamaat," in Martin E. Marty and R. Scott Appleby, eds., Fundamentalisms Observed (Chicago, 1991): 477
16. Martin E. Marty, R. Scott Apple: Page 199
17. খুররম মুরাদ, তরজমানুল কুরআন, জানুয়ারী ১৯৯৭, পৃষ্ঠা:১৫-১৬ cited from ফরীদ আহমেদ রেজা, মুসলমি বিশ্বে সেকুলারজিম,সাপ্তাহিক সুরমা, জুলাই ২০০৩, লন্ডন, আমার অনুরোধে লেখাটি তিনি সোনার বাংলাদেশ ব্লগেও দিয়েছেন।
0 comments: