আজকের দৈনিক আমাদের সময় হতে উদ্ধৃতঃ
আকিদুল ইসলাম, সিডনি।।
বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার একদিন আগে ১৪ আগস্ট খন্দকার মোশতাক আহমেদ ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে যান। তিনি বেগম মুজিবের সঙ্গে দেখা করে এক বাটি রান্না করা বালিহাঁস দিয়ে বলেছিলেন, ‘মুজিবুর বালিহাঁস খেতে খুব পছন্দ করে, ওকে খাইয়ে দিও।’ এই মর্মান্তিক তথ্যটি লেখা হয়েছে মোহাম্মদ হাননান রচিত ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের ইতিহাস’ গ্রন্থে। ঘটনাটি সত্য হলে এরচেয়ে ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুরতা আর কিছু হতে পারে না।
এ গ্রন্থের রচয়িতা মোহম্মদ হাননান বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে রাজপথে প্রকাশ্য প্রথম প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন। স্বাধীনতার স্থপতি নিহত হওয়ার পরদিনই খন্দকার মোশতাক আহমেদ রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ঘাতকের বুলেটের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত প্রিয় নেতার লাশ ডিঙিয়ে খুনি মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগ দেন বঙ্গবন্ধুর চিরকালের অনুগতরা। যারা তাকে নেতার চেয়ে পিতা বলতেই বেশি পছন্দ করতেন।
বঙ্গবন্ধুর রক্ত শুকিয়ে যাওয়ার আগেই তার চাটুকারদের খুনি মন্ত্রিপরিষদে যোগদান যেমন জাতিকে অবাক করেছিল ঠিক তেমনি দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু সংবাদে উল্লাস প্রকাশ দেখে জাতি বিস্ময় মেনেছিল। ইত্তেফাকের সূচনাপর্ব থেকে শুরু করে উত্থানপর্ব পর্যন্ত শেখ মুজিবের অবদান ছিল অনস্বীকার্য। পরাধীন জনপদে এই কাগজটির সকল বিকাশ ধারায় আওয়ামী প্রধানের ভূমিকা ইতিহাস হয়ে আছে। ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া আর শেখ মুজিবুর রহমান দু’জনই ছিলেন আমাদের স্বাধিকার আন্দোলনের স্বাপ্নিক। রাজনৈতিক নানা মতান্তর থাকলেও মানিক মিয়া ইত্তেফাক নিয়ে সবসময়ই দেশের তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ ও তার প্রধানের পাশে ছিলেন।
’৭৫-এর ১৫ আগস্ট রক্তাক্ত পটপরিবর্তনের পর ১৬ আগস্ট দৈনিক ইত্তেফাক লিখেছিল, ‘গতকাল ছিল গতানুগতিক জীবনধারায় একটি ব্যতিক্রম। চলার পথে শক্তি সঞ্চয়ের দিন। তাই আমাদের জাতীয় জীবনে একটি ঐতিহাসিক দিন। দেশের প্রবীণ নেতা খন্দকার মোশতাক আহমদের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী দেশের ভার গ্রহণ করিয়াছে। প্রত্যুষে বেতারে এই ঘোষণা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জনগণ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলিয়া একটি আকাংক্ষিত সূর্যরাঙা প্রভাত দেখিতে পায়। মনের ভাব প্রকাশের জন্য রাস্তায় নামিয়া পড়ার ইচ্ছা থাকিলেও শান্তিপ্রিয় জনগণ নয়া সরকারের নির্দেশ লঙ্ঘন করে নাই।’ ওই সময় ইত্তেফাকের কর্ণধার ছিলেন মানিক মিয়ার জ্যেষ্ঠপুত্র ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন।
0 comments: