শহীদ মুন্নার সাথে জীবনে এক মিনিট কথা হয়েছে এমন কেউও ভুলতে পারবেনা তাকে! তার কী অপরাধ ছিলো? কেনো তাকে হত্যা করলো আওয়ামী স্বশস্র বাহিনী? তার অপরাধ ছিল শুধু মাত্র একটাই, সেটা হলো চট্টগ্রামের একজন মানবতার অবিভাবক গরীব দুঃখী মেহনতি মানুষের পরম বন্ধু। বাতিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কন্ঠস্বর বার বার কারা নির্যাতিত বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ চট্টগ্রাম ১৪ আসন থেকে নির্বাচিত দু’বারে জাতীয় সংসদ সদস্য মজলুম জননেতা আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরীর সন্তানতুল্য একান্ত প্রিয় ভাগনে। তার মামার অপরাধ ছিল শ্লোগানে শ্লোগানে বক্তীতায় কথায় ইসলাম প্রিয় মানুষগুলোকে জাগিয়ে তোলা।
দিনটা ছিল ১৬ ই মার্চ ২০১৩ রোজ শনিবার প্রতিদিনের মতো প্রিয় মুন্না ভাই ফজরের নামাজ পড়ে সকালে একসাথে নাস্তার টেবিলে নাস্তা করলাম।
নাস্তা করার পর মুন্না ভাই কর্মচঞ্চলতার সাথে বাসা থেকে বেড়িয়ে যায় আগ্রাবাদ সি এন এফ’র অফিসে। সেখানে তার কর্মস্থলে যাওয়ার পর আমাকে ফোন করে বলে আরমান তুমি কি করতেছ। আমি বললাম আমি টিভি দেখতেছি।
দুপুরের সময় আবার ফোন করে বলল তুমি ভাত খেয়েছ, বিকালে অফিস থেকে ফিরার আগে আবারো ফোন করে বলে তোমার কি কিছু লাগবে। আমি বললাম না মুন্না ভাই আমার কিছু লাগবে না। তার একদিন আগে মুন্না ভাই আমাকে নিউমার্কেটে রিয়াজউদ্দিন বাজার থেকে দুটি গেঞ্জি কিনে দেয়। তার জন্যও কাপড় কিনে। শনিবার দিন ঠিক আগের মতোই কাজ শেষ করে বাসায় আসে। বলেছে মাগরিবের পর আমাকে নিয়ে চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় যাবে। কিন্তু সিদ্ধান্ত পাল্টে গেল। বলল আজকে আর বের হব না। রবিবার বিকালে যাব। এশার আযান দিয়ে একসাথে নামাজ আদায় করলাম। তারপর আমার মোবাইলটা নিয়ে বলল আমাকে ফেসবুকটা চালু করে দাও। তার পর তিনি ফেসবুক চালু করলেন।
আমি টিভিতে সংবাদ দেখতেছিলাম। রাত যখন ১১টা তখন তিনি আমাকে বলল, আরমান আসো ভাত খাবে, একসাথে বসে আমরা রাতে ভাত খেলাম, কিন্তু কে যানে ঐ রাতের খাবার হবে মুন্নার জীবনের সর্বশেষ ভাত খাওয়া। কেউ জানে না! ভাত খাওয়ার পর আরো কিছুক্ষণ বাসায় বসলাম। বসার পর রাত যখন ১২টা তখন তিনি বললেন আরমান চলো মোবাইলটা নিয়ে আস। আমরা ছাদে উঠি এর আগে মুন্না ভাই তার জীবনের সর্বশেষ কাজটি করেন। সেই কাজটি হল আমাদের দুজনের জন্য রাত্রের শোবার বিছানা করলেন।ছাদ থেকে নেমে ঘুমাবে কিন্তু ঘুমতো আরা নিজের করা বিছানায় যাওয়া হল না, যেতে হলো মাটির বিছানায় সর্বশেষ ঘুম।
আমরা ছাদের উপরে উঠে পড়লাম মোবাইলে ইসলামী সংগীত শুনতে লাগলাম। তখন আমরা বিল্ডিং এর চতুর্থ তলায় রাতে অন্ধকারে মুন্না ভাই কিছুক্ষণ পর আমার কাছে প্রশ্ন করল এখন কয়টা বাজে আমি তখন মোবাইল দেখে বললাম যে রাত বারোটা ২৫ মিনিট। তখন মুন্না ভাই রাহাত্তার পুলের চান্দা পুকুর পাড়ে সুরবী আবাসিক এলাকার রাস্তা দিকে চোখ দিল, বলল যে, আরমান? ঐগুলো কিসের গাড়ি আসতেছে।
তখন ঠিক বুঝা যাচ্ছে না গাড়ি তখন বিল্ডিং নিচে এসে পড়ল। তখন বুঝতে পাড়লাম সে এগুলি হলো হিন্দুস্থান থেকে আমদানীকৃত ভারতীয় হানাদার বাহিনী। অর্থাৎ ২০১৩ সালের পুলিশ বাহিনী। প্রায় ২০-৩০ টা গাড়িতে করে তারা আসল। ১ম দুটা ছিল সাদা মাইক্রোবাস ঐ গাড়ি দুটি থেকে সাদা পোশাকে ১৫/১৮ জনের একটা দল নামল। তারা দেওয়ালের ভিতরে তালা ভাঙ্গানোর জন্য বন্ধুক দিয়ে আঘাত শুরু করল। তারা এক পর্যায়ে দেওয়াল টপকে বিল্ডিংয়ের মধ্যে ঢুকে পড়ল। বাকী ২০০/২৫০ জনের মত পুলিশের পোশাকধারীরা পুরো বাড়িটা ঘিরে ফেললো। তখন মুন্না ভাই আমাকে বলল যে আরমান চল আমরা অন্যস্থানে যাই। সে আমাকে নিয়ে ছাদের পাশে দাড়িয়ে রইল। বলল তুমি ঔখানে দাড়াও। আমি দেখি ওরা কি করে। ঠিক ততক্ষনে বিল্ডিং চার তলার ছাদে চলো আসল। আমি দেখলাম এক ভয়ানক দৃশ্য যা মনে পড়লে আমার শরীর এখনো শিউরে ওঠে। দেখলাম সাদা পোশাকধারীরা আমাদের কাছে আসতে শুরু করল। তখন মুন্না ভাই আমাকে বলল আরমান তুমি ভিতরে চলে যাও। আমি এখানে আছি।
তখন আমি মুন্না ভাইকে বললাম মুন্না ভাই আপনিও চলে আসেন।
মুন্না ভাই আমাকে উত্তর দিল তুমি যাও আমি আসতেছি।আমি তখন দেওয়ার পাশে দিয়ে দেখলাম যে কয়েকটি টচ লাইটের আলো মুন্না ভাইয়ের চোখকে ঘিরে ফেললো। তার পর ৬/৭ জন সাদা পোশাকধারী মুন্না ভাইকে ঘিরে ফেললো। তারপর তাকে প্রশ্ন করল শাহাজাহান চৌধুরী কোথায়? সে বলল আমার সাথে যোগাযোগ নেই । আমি জানি না।
মুন্না ভাই একথা বলার পর সাথে সাথে তাকে বিভিন্ন কায়দায় আঘাত করতে লাগল। কয়েকমিনিট আঘাত করার পর তারা সবাই মুন্না ভাইকে ধাক্কা দিয়ে ছাদের উপর শুয়ে রাখল। অভিনব কায়দায় তার বুকের উপর বুট জুতা দিয়ে লাথি মারতে লাগল এবং তার উপর দাড়িয়ে রইল। তার কিছুক্ষণ পর বন্ধুক দিয়ে বুকের উপর আঘাত করলে লাগল। বলতে লাগলো যে, এখই বল, শাহজাহান চৌধুরী কোথায়।
যেভাবে ২৫ মার্চে পাকহানাদার বাহিনীরা প্রশ্ন করেছিল মুক্তিবাহিনীরা কোথায়। মেরেছিল মুন্না ভাইয়ের মতো নিরীহ অনেক লোককে। তারা একপর্যায়ে মুন্নাভাইকে বন্ধুক আর লাঠি দিয়ে সাপ মারা মত করে মারতে লাগল। যে ভাবে মেরেছিল আওয়ামী হায়ানারা ২০০৬ সালে ২৮ অক্টোবরে আমাদের প্রিয় ভাই মুজাহিদ সহ আরো অনেককে। মুন্না ভাই তখন চিৎকার আর আহাযারী করতে লাগল। বলতে লাগলো আল্লাহ আমাকে বাচাও। তখন তাদের মধ্যে একজন মুন্না ভাইয়ের মুখের ভিতরে জুতা ঢুকিয়ে দিল বলল, শালারপুত আওয়াজ করবি না। তারা একটার পর একটা নারকীয় ভাবে মুন্না ভাইকে আঘাত করলে লাগল। তারা বন্দুক দিয়ে তার পায়ে শরীরের ডান পার্শ্বে আঘাতকরল তার বুকের উপর দুজন দাড়িয়ে রইল। মুন্না ভাই মুন্না বাচার জন্য চিৎকার আর আর্তনাদ করতে লাগল।
তখন তারা এক পর্যায়ে মুন্না ভাইকে টেনে হিচড়ে বিল্ডিং এর ৬ তলার মধ্যে নিয়ে গেল। আবার শুরুকরল আগের মতো একই প্রশ্ন শাহাজাহান চৌধুরী কোথায়। চালিয়ে যেতে লাগল পাশবিক নির্যাতন। তাদের মধ্যে থেকে ৪ জন মুন্না ভাইকে দাড় করালো ছাদের পাশে নিয়ে গেল। তখন ২ জন তার বুকের মধ্যেলাথি মেরে তাকে ৬ তলা থেকে নিচে ফেলে দিল, তখন সাদা পোশাকধারীরা সবাই তন্ন তন্ন করে কি যেন খূজে বেড়াল। আমি তখন বাথরুমের পাইপ লাইনের রুমে ছোট্ট একটা রুমে নিজেকে আড়াল করলাম। দেখলাম এদের নারকীয়তা। মুন্না ভাইয়ের উপর নির্যাতন দেখে আমার দুচোখ বেয়ে অশ্রু বেয়ে পড়ল। সেদিন প্রতিবাদ করার মতো আমার কোন ভাষা ছিল না। আমি অধিক শোকে পাথর হয়ে গেলাম। আমি নিচে উকি মেরে দেখলাম যে, শুধু মাত্র সাদা পোশাকধারীরাই বিল্ডিং এ উঠেছে এবং যারা ড্রেস পড়া ছিল তারা নিচে দাড়িয়ে রইল। তারপর সাদা পোশাধারীরা নিচে নেমে গাড়িতে করে চলে গেলেন।
পুলিশ বেহুশ অবস্থায় তাদের গাড়িতে তুলে নিল। এর আগে মুন্না ভাইয়ের মামীকে কারা যেন বলল যে গাড়ীতে যেন কাকে তোলা হয়েছে তখন মামী পুলিশের গাড়ীর পেছনে দৌড়াতে লাগল। যে গাড়ীতে করে মুন্নাভাইকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এবং চিৎকার করতে লাগল গাড়ী থামানোর জন্য। মামীতো জানে না গাড়িতে তোলা লোকটি তার প্রিয় ভাগ্নে মুন্না। তখন মামী গাড়ির সামনে গিয়ে দাড়ালো আর তখন পুলিশ তাদের গাড়ি থামালো, মামী তখন দেখলো যে, গাড়ি মধ্যে শুয়ে রাখা হয়েছে মুন্নাকে। তখন মামী মুন্নাকে দেখে চিৎকার করে কান্না শুরু করল। তখন পুলিশরা মামীকে তাদের গাড়ীতে তুলে নিল।
হঠাৎ এক পুলিশ এসে বলে উঠল যে, সেতো মরে নাই- বেচে আছে। তখন মামী পুলিশের সাথে রেগে গেলেন। তারপর মুন্নাভাইকে তারা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ২৬ নং ওয়ার্ডে ভর্তি করালো। মুন্নাভাইকে ৭ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হলো। তারপরও তার অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি। এই সময়ও মুন্নাভাইকে ঘিরে রইল পুলিশরা।
এমনভাবে চলতে থাকে ৬ দিন। ইতিমধ্যে মুন্নাভাইকে দেয়া মিথ্যা মামলার চট্টগ্রাম কোর্ট থেকে জামিন হয়ে আসল। মৃত্যুর একদিন আগে পুলিশরা চলে যায়। যখন তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা জামিন হয়। ৬ দিন পর অবশেষে প্রিয় মুন্নাভাই ২২ মার্চ রোজ জুমাবার ভারতীয় রাজতন্ত্রের বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের আই সি ইউ’তে রাত ১১টা ৫৩ মিনিটে শাহাদাত বরণ করেন। তার মায়ের বুক ফাটা আর্তনাদ, তার প্রিয় সন্তান মুন্না আর নাই। হিন্দুস্তানেরা কেড়ে নিয়েছে তার প্রিয় সন্তান মুন্নার তাজা জীবন। এভাবে আর কতদিন আমাদেরকে এই ভারতের প্রতিনিধি দল আওয়ামীলীগ নামের এক ভয়ঙ্কর জালের মধ্যে পড়ে থাকতে হবে। স্বাধীনতার নামে আমরা আর কত দিন পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে থাকব।
কেন কোন অপরাধে মুন্নাভাইকে এভাবে হায়ানার মতো আঘাতের আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে? কি অপরাধ করেছিল মুন্না ভাই? এভাবে আর কত মুন্না লাশের গন্ধ পেলে এই রক্ত পিপাসুটি শান্ত হবে? শুধুমাত্র ইসলামী আন্দোলনের অপরাধে আর কত মুন্নাকে এইভাবে জীবন বিলিয়ে দিতে হবে? এর শেষ কোথায়? আজ জাতীর বিবেকের কাছে এক নগন্য ছাত্র হিসাবে প্রশ্ন রাখতে চায় এই নারকীয়তার শেষ কোথায়? কখন পাবে শহীদ মুন্নার পরিবার তাদের মুন্না হত্যার বিচার। এবং জাতীর কাছে আমার আরেকটি আবেদন এভাবে আর কত মুন্নাকে জীবন দিতে হবে। শহীদ মুন্নার অপরাধ ছিল দুটি ১। সে ইসলামী আন্দোলন করত ২। সে আরেক ইসলামী আন্দোলনের অতন্দ্র প্রহরী মজলুম জননেতা আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরীর ভাগ্নে। একটা স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্রে যদি ইসলামী আন্দোলনের অপরাধে রাতের আঁধারে তল্লাশির নামে বিল্ডিং এর ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয় তাহলে এদেশের মুসলিম জনতাকে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি হত্যা করা হয়। আজকে সবাই শহীদ মুন্না হত্যার বিচার চাই, জাতি কি পারবে মুন্নাসহ ২৮ শে ফেব্র“য়ারীর যে আরো ২ শতাধিক নিরীহ লোককে হত্যা করা হয়েছে সে গুলির বিচার আদায় করে নিতে???
লেখক
মোহাম্মদ আরমান উদ্দিন
আমিরাবাদ, লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম।
ছাত্র-বার আউলিয়া ডিগ্রি কলেজ
আমার ছেলে কোনো ধরনের অপরাধের সাথে জড়িত ছিল না, থানায় তার নামে কোনো মামলাতো দূরের কথা সাধারণ ডায়েরি পর্যন্ত নেই। এলাকাবাসীর কাছে অত্যন্ত স্নেহের পাত্র ছিল। তার সুমধুর ব্যবহারে সহজেই আকৃষ্ট হত লোকজন। কিন্তু আমার সেই ছেলেকেই পুলিশ নির্দয় ভাবে পিটিয়ে ছাঁদ থেকে ফেলে দিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করল। পুলিশ নামের হিংস্র দানবদের এহেন কর্ম সারা জীবনেও ভুলতে পারবনা। আমি ছেলে হত্যার বিচার শেষ বিচারের বিচারক রাব্বুল আলামিনকে দিলাম!
কথাগুলো বলছিলেন, চট্টগ্রামের জামায়াত নেতা সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরীর ভগ্নিপতি সাতকানিয়া পৌরসভার ছমদর পাড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রহমান। তার অভিযোগ গত ১৬ মার্চ রাত আনুমানিক বারটার সময় আমেরিকা প্রবাসী মামা শাহ আলম চৌধুরীর চট্টগ্রাম শহরের রাহাত্তারপুল সৌরভী আবাসিক এলাকায় বাড়িতে অবস্থানকালে পুলিশ বিনা কারণে তার ছেলে মইনুদ্দিন হাসান মুন্নাকে আটক করে মারতে মারতে চারতলা ভবন থেকে ফেলে দেয়। গুরুতর আহত অবস্থায় পরিবারের লোকজন উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় ২২ মার্চ সন্ধ্যায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
জামায়াতের একটি সূত্র জানায়, মুন্না শিা জীবন শেষ করে একটি বেসরকারি কোম্পানীতে চাকরিরত থাকলেও চলমান সরকার বিরোধী আন্দোলনে ছিল অগ্রসৈনিক। মামা শাহজাহান চৌধুরীর সাথে সব মিছিল মিটিংয়ে অংশ নিত সে। পিতা আব্দুর রহমান জানান, মুন্না ছোট বেলা থেকেই বড় হয়েছে নানার বাড়িতে। সেই সুবাদে মামা শাহজাহান চৌধুরীর খুবই আদরের পাত্র ছিল। শাহজাহান চৌধুরী গ্রামের বাড়িতে আসলে তৎপর হয়ে উঠতো মুন্না। মামার খাওয়া, থাকা ও দলীয় নেতাকর্মীদের মেহমানদারীর দায়িত্ব পালন করত সে। ছমদর পাড়ার বাসিন্দা মিনহাজুর রহমান জানান, মুন্না শাহজাহান চৌধুরীর ভাগিনা হলেও তার মধ্যে কোনো ধরনের অহংকার অহমিকা ছিলনা। তার সুমধুর ব্যবহারে বিমোহিত হত সবাই। তাইতো মুন্নার মৃত্যুর পর তিনদফায় অনুষ্ঠিত নামাজে জানাজায় হাজার হাজার জনতার ঢল নামে।
মুন্নার বাল্য বন্ধু হাসিবুর রহমান মিন্টু বলেন, মুন্না ছিল অত্যন্ত চরিত্রবান ছেলে, তার মধ্যে কোনো দিন দুষ্টুমি দেখিনি। অত্যন্ত সাঈদী ভক্ত মুন্না সাঈদীর মুক্তি আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করেছিল।
মুন্নার মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চাইলে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের সাবেক এমপি আলহাজ শাহজাহান চৌধুরী বলেন, মুন্নার আমার অত্যন্ত প্রিয় ছিল। সে প্রায় সময় আমার সাথে মিছিল মিটিংয়ে অংশ নিত। আলেমে দ্বীন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় দেয়াকে কেন্দ্র করে দেশে অনেক মানুষ শহীদ হয়েছে। সেই শহীদের তালিকায় মুন্না নাম লিখিয়েছে। এতে আমার কিংবা আমার পরিবারের কোনো অভিযোগ নেই। শুধু মুন্না কেন ইসলামী আন্দোলনের নেতামকর্মীদের মুক্ত করতে আমার পুরো পরিবার শহীদ হতে প্রস্তুত। তিনি প্রশ্ন রাখেন রাজনীতি করলে মামলা-হামলা হবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীরও রাজনৈতিক মামলা রয়েছে। তাই বলে মামলার আসামি ধরতে গিয়ে তাকে না পেয়ে আত্মীয়-স্বজনদের নির্মমভাবে হত্যা করবে এটা পৃথিবীর কোনো সভ্য সমাজ মেনে নিতে পারেনা। দুনিয়ায় এ বিচার না পেলেও পরকালে অবশ্যই আল্লাহর কাছে পাব।
এদিকে মাঈনুদ্দীন হাসান মুন্নার মা হোসনেআরা বেগম (৫০) আদরের ছেলে হারানোর সুখে এখনো পাগলপ্রায়। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমি পুত্র হারানোর ব্যথায় ব্যথিত। কিন্তু পুত্র হত্যার বিচার দুনিয়ার কারো কাছে চাইনা। শেষ দিনের বিচারকের কাছেই এ বিচার চাই।
0 comments: