লাশের চেহারাই শাহাদাতের প্রমাণ দেয়! গত শুক্রবার শাহবাগের নাস্তিকদের ফাঁসির দাবীতে মিছিলে মুসল্লীদের উপর পুলিশের হামলার পর নিখোঁজ মাদরাসা ছাত্র হাফিজ রাশিদুলের লাশ আজ সকালে পদ্মা নদীতে ভেসে ওঠে। |
সেদিন রাজশাহী মহানগরীতে মিছিলের পর পুলিশ ও ছাত্রলীগ তাকে আহত করে নদীতে ফেলে দেয়। আমরা কেউ জানতাম না। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তার কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে আজ সকালে তার লাশ নদীতে ভেসে উঠে। স্থানীয় জনতা তার মায়ের, বোনের কান্না সহ্য করতে না পেরে পুলিশের উপর হামলা করে। ৩ দিন নদীতে ডুবে থাকার পরও তার চেহারা দেখুন। কি হাস্যোজ্জল চেহারা। তার চেহারা দেখার সাথে সাথে মনে হল আমি কোন ‘জান্নাতি’কে দেখছি। হে আল্লাহ! তুমি তাকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান কর-আমিন।
১৪৬ তম শহীদ হাফেজ রাশেদুল ইসলাম - (২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩)
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩, ২২ ফেব্র“য়ারি শুক্রবার বাদ জুমা কেন্দ্র ঘোষিত দেশব্যাপী উলামায়ে কেরামদের বিক্ষোভ সমাবেশে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আক্রমণ চালালে খন্ড মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় এবং হাফেজ রাশেদুল ইসলামসহ প্রায় ১৫/২০ জন কওমী মাদ্রাসার ছাত্র রাজশাহীল শাহ-মখ্দুম কলেজের পাশে পঞ্চবটি মহল্লার ভিতর দিয়ে পদ্মা নদীর কিনারায় আশ্রয় নেয়। পরে পুলিশ আবারো আক্রমণ চালালে বুকে, পিঠে ও পাঁজরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা চালায়। কিন্তু অহত হওয়ায় ও সাতার না জানায় পানিতে ডুবে শাহাদাত বরণ করেন সংগঠনের কর্মী হাফেজ রাশেদুল ইসলাম। পিতা মাও. আনওয়ারুল হক ও মাতা সালেহা বেগম এর সাত সন্তানের মধ্যে পঞ্চম। শহীদের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর থানার আন্দব বাড়িয়া গ্রামে।
পত্রিকা রিপোর্টঃ
রাজশাহীতে গত শুক্রবার ইসলামী সমমনা ১২ দলের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে পুলিশের তাড়া খেয়ে নিখোঁজ হওয়া মাদরাসা ছাত্র হাফেজ রাশেদুল ইসলামের (১৯) লাশ পদ্মা নদী থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। স্থানীয়দের সংবাদের ভিত্তিতে বোয়ালিয়া থানা পুলিশের একটি দল গতকাল সকাল সাড়ে ৮টায় মহানগরীর কেদুর মোড় এলাকার পদ্মা নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় লাশটি উদ্ধার করে। নিহত হাফেজ রাশেদুল মহানগরীর নিউমার্কেট সুলতানাবাদ এলাকার কাশেমিয়া ইসলামিয়া মাদরাসার জামায়াতে নাহমীরের ছাত্র। তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার আন্দোলবাড়িয়া গ্রামের আনারুল হক আনোয়ারের ছেলে। নিহতের বুকের বাঁ পাশে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এদিকে লাশ উদ্ধারের খবরে মাদরাসার শিক্ষক ও সহপাঠীদের মধ্যে শোকের মাতম বিরাজ করছে। নিহতের লাশ দেখতে নগরীর হাজার হাজার মানুষ ভিড় করে।
এদিকে লাশ উদ্ধারের পর ইসলামী সমমনা দলের কর্মীরা প্রায় ৩০ মিনিট মহানগরীর সাহেববাজার-তালাইমারী সড়ক অবরোধ করে রাখে। আধা ঘণ্টা অবরোধের পর পুলিশের একটি ভ্যান এলাকায় গেলে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর তোপের মুখে পিছু হটে যায়। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।
হাফেজ রাশেদুলের সহপাঠীরা জানান, ইসলামবিরোধী ব্লগার চক্রের ইসলাম অবমাননার প্রতিবাদে গত শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজ শেষে রাজশাহী মহানগরীতে সহপাঠীদের সঙ্গে ইসলামপন্থী ১২ দলের ডাকা বিক্ষোভে অংশ নেয় হাফেজ রাশেদুল। বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালাতে চালাতে ধাওয়া করলে আত্মরক্ষার জন্য চার সহপাঠীর সঙ্গে সে মহানগরীর কুমারপাড়া এলাকা দিয়ে নৌকায় পদ্মার চরে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। এসময় পুলিশ তাদের লক্ষ করে কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ও শটগানের গুলি ছোড়ে। এ সময় একটি গুলি রাশেদুলের বুকের বাঁ পাশে লাগলে সে জ্ঞান হারিয়ে পদ্মা নদীতে পড়ে যায়। পুলিশ তাকে উদ্ধারের চেষ্টা না চালিয়ে বাকিদের লক্ষ করে আরো কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে চলে যায় বলে জানায় তারা।
অপর একটি সূত্র জানায়, এ ঘটনার পর হাফেজ রাশেদুলের খোঁজ না পেয়ে পরদিন শনিবার সকালে বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। এসময় পুলিশের গুলিতে হাফেজ রাশেদুল আহত হয়ে পদ্মায় নিখোঁজ হয়েছেন বলে জানানো হলে উদ্ধার তত্পরতা না চালিয়ে গড়িমসি করতে থাকে পুলিশ। সর্বশেষ পদ্মা নদী থেকে লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই তড়িঘড়ি করে লাশ দাফনের জন্য মাদরাসা কর্তৃপক্ষকে চাপ দেয় বলে অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে এ নিয়ে কোনো ধরনের ‘বাড়াবাড়ি’ না করার জন্য নিহতের পরিবারকে শাসিয়ে যায় তারা।
এ অভিযোগ অস্বীকার করে মহানগরীর বোয়ালিয়া জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) রোকনুজ্জামান বলেন, নিখোঁজ ওই মাদরাসা ছাত্রকে উদ্ধারে পুলিশি তত্পরতা অব্যাহত ছিল। তবে ওই সময় তাদের লক্ষ করে পুলিশ গুলি ছোড়েনি বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না থাকায় লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এ নিয়ে নিহতের পরিবারকে চাপ প্রয়োগের বিষয়টিও অস্বীকার করেন তিনি।
অন্যদিকে সংবাদ পেয়ে হেফাজতে ইসলাম রাজশাহীর সভাপতি হাফেজ মাওলানা আবদুস সামাদসহ ইসলামপন্থী ১২ দলের নেতাকর্মীরা লাশ দেখতে কাশেমিয়া ইসলামিয়া মাদরাসায় গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ ঘটনায় সাধারণ মুসল্লিদের মধ্যে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ওই এলাকায় বিপুলসংখ্যক র্যাব-পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে বলে রাজশাহী মহানগর পুলিশ সদর দফতর সূত্র নিশ্চিত করেছে। এছাড়াও মহানগরীর বিভিন্ন স্পর্শকাতর পয়েন্টগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি। (২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩, আমারদেশ)
0 comments: