দিনটি ছিল ৫ নভেম্বর ২০১২, সোমবার বিকেল ৩টা। বিক্ষোভ মিছিল শহরের জিরো পয়েন্ট কেন্দ্রীয় মসজিদ চত্বর থেকে শুরু হবে। ঘোষণা অনুযায়ী ঠিক ৩টার সময়ে “নারায়ে তাকবীর” শ্লোগানে ধ্বনিত হতে লাগল কিন্তু আওয়ামী বাকশালী শাসকের তাবেদার আওয়ামী হায়েনার দল পুলিশের অবস্থান খুব নিকটেই ছিল ফলে তারা খুব দ্রুত ছুঠে এসে আমাদের মিছিলে লাঠি চার্জ শুরু করল কোন প্রকার ইস্যু ছাড়াই। সে সময় নিরস্ত্র শত শত মানুষ ক্ষোভে হাতের কাছে যা ছিল তা এবং রাস্তার পাশে যে ইট পাথর তা দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলছিল। আমি এবং জেলা সেক্রেটারিসহ আমরা সবাই সামনের সারিতেই ছিলাম। বদিউজ্জামান ভাই আমাদের পিছনে ছিলেন। হঠাৎ করেই তিনি দৌড়ে এসে আমাদের সামনে সাহসী ভূমিকা রাখছিলেন। একটু পরে দেখি তার চোখ থেকে রক্ত ঝরছে। ইতোমধ্যে পুলিশ আমাদের সামনে থেকে অসংখ্য রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ শুরু করে। আমি পাশের একজন ভাইকে ডেকে তাকে নিয়ে হাসপাতালে পাঠাতে বললাম।
কিন্তু আমাদের পিছন থেকেও একদল হায়েনা আক্রমণ চালানোর চেষ্টা করছিল। তাই বদিউজ্জামান ভাইকে অন্য একটি পথ দিয়ে হাসপাতালে পঠানোর ব্যবস্থা করলাম। ইতোমধ্যে হাসপাতালে পৌঁছলে তারা আমাকে জানালেন সেখান থেকেও আমাদের ভাইদের পুলিশ গ্রেফতার করছে। তাই আমাদের দায়িত্বশীল ভাইয়েরা সেখানে যেতে পারছে না। একটু পরে খবর পেলাম হাসপাতালের ডাক্তার বদিউজ্জামান ভাইকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর রেফার্ড করেছেন বগুড়াতে । ফলে সেখান থেকে আমাদের একজন ভাই এ্যাম্বুলেন্স ঠিক করেছেন বগুড়ায় পাঠানোর জন্য।
এদিকে পুলিশি হামলায় আরো আহত হয়েছেন আমাদের বেশ কিছু ভাই। তাদের কে একটি বাড়িতে রেখে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সেদিন কোন ক্লিন্কি বা হাসপাতাল আমাদের ভাইদের চিকিৎসা দেয়ার সাহস পাচ্ছিল না। আহত ভাইদের মধ্যে আরো একজন গুরুতর আমাদের মিজানুর রহমান ভাই। তার চোখেও রাবার বুলেট লেগেছে। সুতরাং আমাদের ভাইয়েরা বদিউজ্জামান ও মিজানুর রহমানকে নিয়ে বগুড়ার উদ্দেশে রওনা হলেন।
বগুড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেলে পৌছালে সেখারনকার ডাক্তার তাদের অবস্থা দেখে ঢাকা পাঠানোর কথা বলেছেন। এর পর বগুড়ার ভাইদের সহযোগিতায় তাদেরকে ইবনেসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হল। সেখানকার প্রাথমিক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর আমরা জানলাম দুইজন ভাইয়ের একটি করে চোখ দিয়ে আর পৃথিবীর আলো দেখবেন না। একদিন পর অপারেশন করা হল মিজানুর রহমান ভাইয়ের। ফলে তিনি আশঙ্কামুক্ত। আর বদিউজ্জামান ভাইয়ের চোখে শুধু রাবার বুলেটই লাগেনি সেদিন বুলেট লাগানোর পর তিনি পড়ে গিয়েছিলেন যার ফলে পুলিশ তার মাথার উপর উপর্যপুরি লাঠির আঘাত করে। যার কারণে মাথার কয়েকটি জায়গায় ফেটে যায় এবং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয় ফলে তাকে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এবং সেখানে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। সেখানেই তিনি দীর্ঘক্ষণ অজ্ঞান অবস্থায় থাকার পর জ্ঞান ফিরে এবং পরে তিনি তার বাড়িতে ফোনে কথা বলেন ও মোটামুটি সুস্থ হয়ে ওঠেন। তার অপারেশন হওয়ার কথা ১০ নভেম্বর। সেদিন তিনি সকাল ৬.৩০ মিনিট পর্যন্ত কথাও বলেছেন। কিন্তু আল্লাহ যাকে কবুল করবেন তাকে তো আর অপারেশন করার সময় দিবেন না। ঠিক ৬.৩০ মিনিটের পর তার কথা বন্ধ হয়ে যায় হার্ট আ্যাটাকের কারণে। আর ৬.৪৫মিনিটে তিনি সবাইকে হতবাক করে শোকের সাগড়ে ভাসিয়ে পাড়ি জমালেন প্রভুর সান্নিধ্যে ওপারের সুন্দর ভূবনে।
শহীদের নামাজের জানাযা :
উত্তাল তরঙ্গের মতই শাহাদাতের সংবাদ যেন সকলের কর্ণকুহরে পৌঁছে গেল। আমরা জয়পুরহাটের প্রথম শহীদ বদিউজ্জামানের জানাযা নামাজের পরিকল্পনা করলাম এবং প্রশাসনের অনুমতিক্রমে শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে করার সিন্ধান্ত নিলাম। কিন্তু এর পরেই শুরু হল প্রশাসনের নাটকীয় পরিবর্তন। অদৃশ্য হাতের ইশারায় বেঁকে বসল এবং বলল শহরে না বদিউজ্জামান যে মাদ্রাসায় পড়ে সেখানে জানাযা হবে। আমরা তাতেও রাজি হলাম। কিন্তু হায়েনার দল তাতেও বাঁধ সাধল। শুরু করল নানা ষরযন্ত্র। তাতে যোগ হল নব্যফেরাউনের দল আওয়ামী লীগ আর বদিউজ্জামান ভাইয়ের পার্শ্ববর্তী চাচাতো ভাইয়ের দ্বারা তার মাকে সাথে নিয়ে ভুল বুঝে উল্টো তাদের কর্মী বলে দাবি করতে লাগল। শুধু তাই নয় ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে উল্টো শিবিরের নেতৃবৃন্দের নামে হত্যা মামলা দিল। এবং প্রশাসন আর কোথাও জানাযা নামাজের অনুমতি দিল না।
এদিকে ঢাকা থেকে শহীদ বদিউজ্জামান ভাইয়ের কফিন অ্যাম্বুলেন্সে করে জয়পুরহাটে আনা হচ্ছিল, সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় সহকারী বায়তুলমাল সম্পাদক আব্দুল খালেক ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের অফিস সম্পাদক সাবিত। পথিমধ্যেই বগুড়ায় আওয়ামী প্রশাসন তাদের কাছ থেকে লাশ ছিনিয়ে নেয়। আমরা আমাদের শহীদ বদিউজ্জামান ভাইয়ের কফিনের অধিকারও হারালাম। পুলিশি প্রহরায় রাতে কফিন নিয়ে আসা হয় জয়পুরহাট আধুনিক হাসপাতালে। সেখানে কফিন পৌঁছানোর পূর্বেই প্রশাসনের ঘোষণা ছিল হাসপাতালের সীমানার মধ্যে যারা প্রবেশ করবে তাদেরকেও গ্রেফতার করা হবে। ফলে আমরা সেখানেও যেতে পারলাম না। ১০ নভেম্বর রাত কাটল নির্ঘুম। ১১ নভেম্বর সকালে প্রশাসন বলল গ্রামের বাড়িতে সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে জানাযার নামাজ অনুষ্টিত হবে। সকাল বেলা আমাদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় এইচআরডি সম্পাদক ইয়াছিন আরাফাত ও তথ্য সম্পাদক জাকির হোসেন সেলিম ভাই।
তাদের পরামর্শক্রমে আমরা সবাই জানাযার নামাজে শরিক হলাম। শুনলাম জানাযা হবে স্থানীয় হাবীবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে। ব্যাপক পুলিশি প্রহরায় শহীদের কফিন আনা হল স্কুল মাঠে। কফিন আসার পূর্বেই শহীদের হাজার হাজার সাথী হাজির হয়েছিল সেখানে। জনগণের দাবি উপেক্ষা করে কাউকে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ না দিয়ে জানাযা পড়ার নির্দেশ দেয়া হল। জানাযা নামাজের ইমামতি করলেন শিবিরের সাবেক সাথী মাওলানা সানোয়ার হোসেন।
জানাযা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে দাফন করা হল। এদিকে প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র করে বদিউজ্জামান ভাইয়ের শাহাদাতকে কেন্দ্র করে চারটি মামলা দিয়ে জামায়াত ও শিবিরের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের ব্যাপক প্রচেষ্টা চালাতে শুরু করে এবং প্রায় শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে। এমনকি সাধারণ মানুষও এখান থেকে বাদ যায়নি।
শহীদের মা ও বোনদের প্রতিক্রিয়া :
শহীদ বদিউজ্জামান ছিলেন সাত ভাইবোনের মধ্যে পিতা-মাতার একমাত্র পুত্র সন্তান। বাবা মারা যাবার পর মা ও বোনেরা অত্যন্ত ভালবাসত তাকে। তাই ছেলে হারিয়ে বৃদ্ধা মা ও বোনেরা পাগল প্রায়। মা বলছেন আমার একটি মাত্র ছেলেকে হারিয়ে আমি আজ কি নিয়ে বাঁচব। আমার সংসার আজ কে দেখবে। কি দোষ ছিল আমার ছেলের। কারা আমার ছেলেকে এভাবে মেরে ফেলল্। কিন্তু ছেলের একটি কথাকে তিনি বারবার স্মরন করছিলেন এবং কাঁদছিলেন, “বদিউজ্জামান খুবই বলত, শহীদ শিপন, মুজাহিদ, ফয়সাল ভাইয়ের মত আমিও যেন শহীদ হই। মা আমার জন্য দেয়া করবেন। আর শহীদ হলে আপনাকে নিয়ে আমি জান্নাতে থাকব।” আমার ছেলের এ আশা পূরণ হয়েছে। বোনেরা বলছেন আমাদের একটি মাত্র ভাই সবসময় আমাদের বাসায় যাতায়াত করতেন এবং আমরা সবাই তাকে ভালবাসতাম প্রান দিয়ে। এখন আমরা কাকে ভাই বলে ডাকব। বাবা মারা যাবার পর ভাইকে বাবার মত মনে করতাম। আজ তাকেও হারালাম। আমাদের আর কোন ভাই থাকলে দুঃখ করতাম না। তবুও সে আল্লাহর পথে কাজ করতে গিয়ে জীবন দিয়েছে এটাই আমাদের শান্তনা। আল্লাহ তাকে শাহাদাতের মর্যাদা দান করুন।
শহীদের পরিচিতি :
পুরো নাম মো: বদিউজ্জামান খোকন। ৬ বোন জন্মের দীর্ঘদিন পর ১৯৯১ সালের ১৮ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি থানার বাঁশবাগানের ভেতর ছাঁয়াঘেরা গ্রাম তেলিহারে। ছয় বোন হওয়ার পর যখন আর কোন সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না তখন তার বাবা আব্বাস্ আলী মন্ডল সম্পদের অংশ মেয়েদের নামে লিখে দেয়া শুরু করবেন। এমন সময় তিনি সংবাদ পান তার স্ত্রী খোবেলা বেগম সন্তান সম্ভাবনা। অবশেষে জন্ম নিলো ফুটফুটে একটি শিশু সন্তান বদিউজ্জামান। সংসারে আনন্দের বন্যা বইয়ে গেল। বাবা নাম রাখলেন বদিউজ্জামান খোকন। ৬ বোনের একটি ভাই বলে বোনেরা তার রাখেন সোনা মিয়া, আদর করে ডাকতেন সোনা বলে। সোনা যখন বড় হলেন তখন তাকে গ্রামের হাতিগাড়া দাখিল মাদ্রাসায় ভর্তি করালেন। বাবার বড় সখ আমার ছেলে বড় হয়ে একজন আলেম হবেন এবং আমার জানাযা করাবেন। কিন্তু বাবার সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি। সোনা মিয়া যখন ৬ষ্ট শ্রেনীতে পড়তেন তখন তার বাবা মারা যান। এর পর মা ও বোনেরা খুব আদর এবং যতœ করে তাকে বড় করে তোলার চেষ্টা করলেন। এমনি করে তিনি বড় হতে থাকেন। ২০০৭ সালে দাখিল গ্রামের হাতিগাড়া এবং ২০০৯ সালে কড়ই নুরুলহুদা কামিল মাদরাসা থেকে আলিম কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন। এবং সে কড়ই নুরুলহুদা মাদ্রাসায় ফাযিল শ্রেণীতে ভর্তি হন এবং সর্বশেষ ফাযিল ৩য় বর্ষে অধ্যয়ন করছিলেন। ২০০৯ সালে তিনি সাথী শপথ গ্রহণ করেন এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি তেলিহার উপশাখার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
শাহাদাতের চেতনায় ব্যাকুল যে জীবন :
শহীদ বদিউজ্জামান ইসলাম প্রতিষ্ঠাকে নিজের জীবনের মিশন হিসেবে গ্রহন করেছিলেন বাবা না থাকার কারণে তাকেই সংসার দেখতে হত তাই সংসারের কাজের ফাঁকে যখন সময় পেতেন তখনই দাওয়াতী কাজে বেরিয়ে পড়তেন। সদা হাস্যোজ্জ্বল চেহারা দিয়ে তিনি সকলকে সালাম দিতেন এবং নামাজের আহবান করতেন। এলাকার কোন মানুষের সাথে কোনদিন তার সর্ম্পক খারাপ ছিল না। মা বোনের কোন নির্দেশকে তিনি কোন দিনই অমান্য করতেন না।
যখন যেভাবে তাকে কাজের কথা বলা হত তখনই সে কাজ করেছিলেন। আবার দায়িত্বশীলের কথাও তিনি অমান্য করতেন না। সংসার ও দ্বীনি কাজ দুটিই সমান গুরুত্ব দিয়ে সমন্বয় করতেন।
দায়িত্বশীলেরা যখনই তার বাড়িতে যেত তখনই হাসিমাখা চেহারা নিয়ে তাদের সামনে দাঁড়াতেন। আবার শহীদ বদিউজ্জামান এর পরিবার ছিল খুবই অতিথি পরায়ন। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকে খুব ভালবাসতেন। ফলে যখনই আমরা তাদের বাড়িতে যেতাম তখন আমাদের খাবারের ব্যবস্থা করতেন। তার শিক্ষক এবং তার পাড়া প্রতিবেশী সবাই তার অমায়িক ব্যবহারের মুগ্ধ হতেন।
শহীদ বদিউজ্জামান বেশী পছন্দ করতেন শহীদ ভাইদের জীবনী পড়তে। তিনি শহীদ ভাইদের জীবনি পড়তেন এবং সেটা মা ও বোনদের শোনাতেন। আর বলতেন আমি যদি শহীদ হতাম তাহলে এই ভাইদের সাথে জান্নাতে থাকতে পারতাম এবং তোমাদেরকেও সাথে নিতে পাড়তাম।
তিনি বেশি বেশি পড়তেন ২৮ অক্টোবরের শহীদের জীবনী। যখন শহীদ ভাইদের কোন পোস্টার তিনি পেতেন লাগানোর জন্য তখন খুব সম্মানের সাথে উঁচু স্থানে লাগাতেন এবং তার পূর্বে পরিবারের সবাইকে দেখাতেন। জাতীয় নেতৃবৃন্দের মুক্তির যে পোষ্টার সর্বশেষ বের হয় তা নিয়ে তিনি বাড়িতে যান এবং বলেন আমার প্রাণের চেয়ে প্রিয় এই নেতৃবৃন্দকে মুক্ত করতে হবে যা আমার জীবন দিয়ে হলেও তাদের মুক্ত করার আন্দোলনে সামিল থাকবো সবসময়। ঘটনার দিন বাড়িতে অনেক কাজ ছিল, জমি থেকে ধান নিয়ে আসতে হবে কিন্তু শাহাদাতের চেতনায় যে ব্যাকুল সে কি দুনিয়ার কাজকে বড় করে দেখতে পারে। দায়িত্বশীলের কাছ থেকে শুনার পরই তিনি আর বাড়িতে থাকতে পারেন নি, মিছিলে ছুটে গিয়েছিলেন। কিন্তু কে জানত এ যাওয়াই তার শেষ যাওয়া হবে। তাকে যখন ১০ নভেম্বর রাত ১১টায় জয়পুরহাট আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে আসা হলো সেখানে আমাদের একজন আইনজীবি ছিলেন এবং আরো ২জন ভাই তারা প্রথমে বদিউজ্জামান ভাইয়ের কফিন গ্রহণ করেন। তারা বদিউজ্জামান ভাই এর লাশ দেখে অবাক হন, তার মৃত্যুর এতক্ষণ পরেও চেহারা ছিল খুব উজ্জ্বল। আর তারা যখন কফিনটি হাসপাতালের মর্গে নিচ্ছিলেন তখন নাকি তার ওজন অনেক কম মনে হচ্ছিল। তাদের মন্তব্য ছিল এরকম যে, আমরা অনেক লাশইত কবরে নামিয়েছি কিন্তু এরকম ওজন কমের লাশ আমরা পাইনি। এ লাশ সাধারণ কোন লাশ নয়। এ মৃত্যু দেহ জান্নাতী। তাইত মনে হয় এর ওজন এত কম। শহীদ বদিউজ্জামান ভাই ছিলেন সাংস্কৃতি মনা। অভিনয়,গান কবিতা এসব তিনি চর্চা করতেন। তিনি নাতে রাসূল বেশি পছন্দ করতেন। তার নিজের লেখা একটি কবিতা যার ভিতরেও ছিল শাহাদাতের চেতনা-
সম্মান
মোঃ বদিউজ্জামান
ইসলামের জন্য যদি করতে হয়
মোদের জীবন দান
তবু দেবনা লুটাতে ধুলায়
আল কুরআনের সম্মান
লক্ষ মুজাহিদ মোরা সেজেছি রণবেশ
সৌহার্দ্য সম্প্রীতিতে ভরা নেই কোনা রেশারেশ
শত শহীদের রক্তের বিনিময়ে
যেমনি গড়েছিল একটি ইসলামী স্টেট
শপথ নিয়েছি তেমনি মোরা
গড়ব এই দেশ
চেয়ে দেখ বিশ্ব মাঝে কেমন
করে মুসলিমগল বেঁচে আছে
সেরকম ভাবে বাঁচতে চাই-
আল কুর আনের সম্মান রাখতে চাই
ইরাক, কাশ্মীর, আফগানিস্থান
নয় বাংলাদেশের একই অবস্থা
তাদের মতকে মিটিয়ে দিতে
নিতে হবে কঠোর ব্যবস্থা
শহীদ বদিউজ্জামান একটি নাম, একটি সংগ্রামী জীবন। আল্লাহর পথের অকুতোভয় সৈনিক, ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি বাতিলের অপপ্রচার, অত্যাচার আর রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে আমরণ সংগ্রাম করেছেন। আমাদেরকেও তার মতো দুর্বার বেগে এগিয়ে যেতে হবে। তবেই তার শাহাদাত সার্থক হবে এবং তার আত্মা শান্তি পাবে। আল্লাহ তার শাহাদাত কবুল করুন। আমীন।
লেখক : আসলাম হোসেন(সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, জয়পুরহাট জেলা শাখা)
0 comments: