অধ্যায় ০৩ : যৌবনকাল

ব্যবসায়ী মুহাম্মাদের (সা)
মুহাম্মাদের (সা) চাচা আবু তালিব একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। কিশোর মুহাম্মাদের (সা) চাচার সাথে ব্যবসা উপলক্ষে সিরিয়া সফর করেন। যৌবনে তিনি নিজে ব্যবসা শুরু করেন। লোকেরা তাঁর সততায় মুদ্ধ ছিলো। অনেকেই মূলধন দিয়ে তাঁর সাথে ব্যবসায় শরীক হতে লাগলো। ব্যবসায়িক প্রয়োজন তিনি সিরিয়া, বসরা, বাহরাইন ও ইয়ামান গমন করেন। ওয়াদা পালন, বিশ্বস্ততা ও ন্যায়পরায়ণতা কারণে তিনি একজন বিশিষ্ট শ্রদ্ধাভাজনে ব্যক্তিতে পরিণত হন। সকলে তাঁকে নতুন নামে ডাকতে শুরু করে। সেই নাম আল-আমীন। খাদিজা ছিলেন একজন ধনী মহিলা। প্রথম স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর দ্বিতীয় বিবাহ হয়। কিন্তু দ্বিতীয় স্বামীও মারা যান। খাদীজা যেমনি ধনশালী ছিলেন তেমনি ছিলেন সচ্চরিত্রা। এই পবিত্র মহিলাকে লোকেরা আত তাহিরাহ বলে ডকাতো।
বিধবা খাদীজা পুঁজি দিয়ে লোকদের দ্বারা ব্যবসা চালাতেন। মুহাম্মাদের (সা) ব্যবসায়িক যোগ্যতা ও সততার কথা তাঁর কানে গেলো। তিনি মুহাম্মাদ (সা) তাঁর ব্যবসা-বাণিজ্যের কর্মাধ্যক্ষ নিযুক্ত করার প্রস্তাব দেন। মুহাম্মাদের (সা) এই প্রস্তাব গ্রহণ করেন। বাণিজ্য উপলক্ষে তিনি বেশ কয়েকবার সিরিয়া যান এবং প্রচুর মুনাফা উপার্জন করেন।
বিবাহ
মুহাম্মাদের (সা) আমানাতদারী ও ব্যবসায়িক যোগ্যতা খাদীজাতুল কুবরাকে মুদ্ধ করে। খাদীজা মুহাম্মাদের (সা) নিকট বিয়ের প্রস্তাব পাঠান। মুহাম্মাদের (সা) এই সচ্চরিত্রা মহিলার প্রস্তাব সানন্দে গ্রহণ করেন। নির্দিষ্ট দিন চাচা আবু তালিব, হামজা ও অন্যান্য আত্মীয় স্বজন নিয়ে মুহাম্মাদের (সা) খাদীজার বাড়ীতে উপস্থিত হন। পাঁচ শো দিরহাম মুহরানা ধার্য হয়। আবু তালিব বিয়ে পড়ান। বিবাহকালে খাদিজার বয়স ছিলো চল্লিশ বছর। মুহাম্মাদের (সা) বয়স ছিলো পঁচিশ বছর।
শিরক থেকে আত্মরক্ষা
তখন মক্কা ছিলো মূর্তি পূজার প্রধান কেন্দ্র। কাবা ঘরের ৩৬০ টি মূর্তি স্থাপিত ছিলো। কুরাইশরা ছিলো কাবার তত্ত্বাবধায়ক। তাদের তত্ত্বাবধানে পূজা হতো। মুহাম্মাদ (সা) কোনদিন পূজায় অংশ নেননি। কোনদিন তিনি মূর্তির কাছে মাথা নত করেননি। এই সব কিছু তাঁর কাছে নিরর্থক মনে হতো। তাঁর বিবেক তাঁকে শিরক থেকে বাঁচিয়ে রেখেছিলো।
অধীন ব্যক্তির প্রতি সদাচরণ
খাদীজার ভাইয়ের ছেলে হাকিম ইবনু হিযাম তাঁকে একজন কেনা বালক উপহার দেন। খাদীজা সেই ছেলেটিকে তাঁর স্বামী মুহামম্মাদের (সা) হাতে তুলে দেন।
সাধারণতঃ ক্রীতদাসের প্রতি মনিবেরা দুর্ব্যবহার করতো। কিন্তু মুহাম্মাদ (সা) ছিলেন ভিন্ন রকমের মানুষ। তিনি ক্রীতদাসের প্রতি সদাচরণ করতেন।
তাঁর নিকট হস্তারিত ক্রীতদাসের নাম ছিল যায়িদ ইবনু হারিসা। যায়িদ মুহাম্মাদ (সা) কাছে এসে টের পেলো তাঁর চেয়ে উত্তম আর কেউ নেই। যায়িদের আব্বা হারিসা এবং চাচা কাব জানতে পেলো যে যায়িদ মক্কায় আছে। তারা তাকে মুক্ত করে নেয়ার জন্যে মক্কায় আসে। মুহাম্মাদ (সা) সাথে দেখা করে তারা যায়িদকে মুক্ত করে দেয়ার অনুরোধ জানায়।]
মুহাম্মাদ (সা) জানালেন এতে তাঁর কোন আপত্তি নেই। কিন্তু যায়িদ যেতে রাজী হলো না। যায়িদের আব্বা স্বাধীনতার পরিবর্তে গোলামীকে বেছে নেওয়ায় তার ছেলেকে তিরস্কার করলো। যায়িদ বললোঃ আমি মুহাম্মাদ এর জীবনে এমন সব গুন দেখেছি যার কারণে আর কাউকে শ্রেয়ঃ ভাবতে পারি না। এই কথা শুনে মুহাম্মাদ (সা) যায়িদকে কাবার কাছে নিয়ে আযাদ করে দিলেন ও তাকে পুত্ররূপে গ্রহণ করলেন। এই সব দেখে যায়িদের আব্বা ও চাচা অবাক হলো। খুশী মনে যায়িদকে মুহাম্মাদ (সা) কাছে রেখে তারা বাড়ি ফিরে গেলো।
হিরা গুহায় অবস্থান
আরবের জাহিলী পরিবেশ দেখে মুহাম্মাদ (সা) মনে খুব জ্বালা অনুভব করতেন। শিরক, যুলম ও পাপের পথ থেকে কাউমকে কিভাবে ফিরয়ে আনা যায় বসে বসে তিনি তাই ভাবতেন। কাবা থেকে তিন মাইল দূরে নূর পাহাড়। পাহাড়ের চূড়ায় আছে একটি গুহা নাম তার হিরা গুহা। মুহাম্মাদ (সা) প্রতি বছর একমাস এই গুহাতে কাটাতেন।

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম