অধ্যায় ০২ : বাল্যকাল ও হিলফুল ফুজুল

মুহাম্মাদ (সা) এলেন দুনিয়ায়
ঈসায়ী ৫৭১ সনের এপ্রিল মাসে তথা রবিউল আউয়াল মাসে মুহাম্মাদ (স) কাবার মুতাওয়াল্লী আবদুল মুত্তালিবের বাস গৃহে ভূমিষ্ট হন। তাঁর আব্বা আবদুল্লাহ ইতিপূর্বে মারা যান। আম্মা আমিনা শিশুপুত্রকে নিয়ে শ্বশুর আবদুল মুত্তালিবের ঘরে বসবাস করতে থাকেন।
মুহাম্মাদের (সা) জন্মসনে আবরাহার অভিযান
ইয়ামেনের খৃষ্টান বাদশাহ আবরাহ রাজধানী সানা শহরে একটি বিরাট গীর্জা নির্মাণ করে। অতঃপর সে আরবদের হাজ অনুষ্ঠনে কাবা থেকে এই গীর্জায় স্থানান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেয়।
এই উদ্দেশ্য সে কাবা ধ্বংস করার জন্য ৬০ হাজার সৈন্য নিয়ে মক্কার দিকে অগ্রসর হয়। তার বাহিনীতে বেশ কিছু হাতীও ছিলো। এটা ছিলো ঈসায়ী ৫৭১ সনের ঘটনা।
কাবার মুতাওয়াল্লী আবদুল মুত্তালিব আছছিফাহ নামক স্থানে আবরাহার সংগে সাক্ষাৎ করে তাকে ধন-সম্পদ নিয়ে দেশে ফিরে যাবার অনুরোধ জানান। আবরাহ কাবা ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত ব্যক্ত করে। আবদুল মুত্তালিব কুরাইশদেরকে পাহাড়ী অঞ্চলে চলে যান।
আবরাহা অগ্রসর হলো মক্কার দিকে। মিনা ও মুজদালিফার মধ্যবর্তী মুহাসসির নামক স্থানে তার বাহিনী পৌঁছলে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি এসে তাদের উপর বৃষ্টির মতো পাথর খন্ড ফেলতে লাগলো।
এবং তিনি তাদের উপর পাথর খন্ড নিক্ষেপ করছিলো। ফলে তাদের অবস্থা হলো চিবানো ভূষির মতো। (সূরা আল-ফিলঃ ৩-৫)
মুহাম্মাদের (সা) বাল্যজীবন
সুরাইবাহ নামক এক মহিলা হন শিশু মুহাম্মাদের (সা) প্রথম দুধ-মা। পরে হালীমাহ আস সাদীয়াহ শিশু মুহাম্মাদ (সা) কে নিয়ে এলেন চির স্বাধীন মরু বেদুইনদের মাঝে। ছয় বছর বয়সে মুহাম্মাদ (সা) ফিরে এলেন তাঁর আম্মার কাছে। আম্মা তাঁকে নিয়ে ইয়াসরিব যান।
স্বামীর কবর দেখা ও আত্মীয় বাড়ীতে প্রায় মাস খানেক থাকার পর আমিনা পুত্রকে নিয়ে মক্কার দিকে রওয়ানা হন। আবওয়া নামক স্থানে আমিনা মৃত্যু বরণ করেন।
দাসী উম্মু আইমান মুহাম্মাদকে (সা) মক্কায় নিয়ে আসেন। দাদা আবদুল মুত্তালিবের স্নেহ ছায়ায় মুহাম্মাদ (সা) পালিত হতে থাকেন।
মুহাম্মাদের (সা) বয়স যখন আট, তখন দাদা আবদুল মুত্তালিবও মারা যান। এবার চাচা আবু তালিব মুহাম্মাদের (সা) লালন-পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই সময় আযইয়াদ উপত্যাকায় মুক্ত আকাশের নীচে মুহাম্মাদ (সা) মেষ চরাতেন।
বারো বছর বয়সে মুহাম্মাদ (সা) চাচা আবু তালিবের সংগে সিরিয়া সফর করেন।
যুদ্ধের ময়দানে যুবক মুহাম্মাদ (সা)
মুহাম্মাদের (সা) বয়স তখন ১৫ বছর। কুরাইশ ও কাইস গোত্রের মাঝে পুরানো শত্রুতার কারণে যুদ্ধ বাঁধে। এই যুদ্ধে কুরাইশগণ ন্যায়ের উপর ছিলো। মুহাম্মাদ (সা) কুরাইশদের পক্ষে যুদ্ধে যান। কিন্তু তিনি কারো প্রতি আঘাত হানেননি। যুদ্ধে কুরাইশদের জয়ী হয়। এই যুদ্ধেরই নাম ফিজারের যুদ্ধ।
হিলফুল ফুদুল
যুদ্ধ ছিলো আরবদের নেশা। শত শত পরিবার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিলো। মানুষের কোন নিরাপত্তা ছিলো না। সবাই আতংকের মধ্যে দিন কাটাতো। আয যুবাইর ইবনু আবদিল মুত্তালিব ছিলেন একজন কল্যাণকামী ব্যক্তি। তিনি এই অবস্থার পরিবর্তনের লক্ষ্যে বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে মত বিনিময় করেন। অনুকুল সাড়াও পেলেন। শিগগিরই গড়ে উঠলো একটি সাংগঠন। নাম তার হিলফুল ফুদুল। মুহাম্মাদের (সা) বয়স তখন সতর বছর। তিনি সানন্দে এই সংগঠনের অন্তর্ভূক্ত হন।
হিলফুল ফুদুলের পাঁচ দফা
১। আমরা দেশ থেকে অশান্তি দূর করবো।
২। পথিকের জান-মালের হিফাজাত করবো।
৩। অভাবগ্রস্থদের সাহায্য করবো।
৪। মাযলুমের সাহায্য করবো।
৫। কোন যালিমকে মক্কায় আশ্রয় দেবো না।
হাজরে আসওয়াদ বিরোধ মীমসাংসা
পাহাড়ের উপত্যকায় অবস্থিত কাবা। একবার পাহাড়ের পানি এসে তার দেয়াল ভেঙ্গে ফেলে। কুরাইশদের নতুনভাবে গড়ে তোলে কাবার দেয়াল। নির্মাণ কালে হাজরে আসওয়াদ কাবার কোণ থেকে সরিয়ে রাখা হয়। দেয়াল নির্মাণের পর পাথরটি আবার স্বাস্থানে বসাতে হবে।
কুরাইশদের সব খান্দান এই মহান কাজ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করলো। এই নিয়ে শুরু হলো বিবাদ। যুদ্ধ বেঁধে যাবার উপক্রম। আবু উমাইয়াহ ইবনুল মুগীরাহ প্রস্তাব দেন যে, যেই ব্যক্তি সবার আগে প্রাংগণে পৌঁছাবে তার উপর এই বিরোধ মীমাংসার ভার দেয়া হবে। সে যেই সিদ্ধান্তে দেবে তা সবাই মেনে নেবে। সকলে এই প্রস্তাব মেনে নেয়।
অতপর দেখা গেলো সকলের ধীর পদে এগিয়ে আসছেন এক যুবক মুহাম্মদ (সা) সবাই ছুটে এলো তাঁর কাছে। ফায়সালার দায়িত্ব তুলে দিলো তাঁর হাতে। তিনি একটি চাদর আনার নির্দেশ দেন। চাদর এনে ছিলো হলো। মুহাম্মাদের (সা) নিজ হাতে হাজরে আসওয়াদ তুলে চাদরের মাঝখানে রাখলেন। হাজরে আসওয়াদ স্থাপন করতে ইচ্ছুক প্রত্যেক খান্দানের এক একজন প্রতিনিধিকে চাদর ধরে উপরে তুলতে বললেন। সকলে মিলে পাথরটি নিয়ে এলো কাবার দেয়ালের কাছে। মুহাম্মাদের (সা) চাদর থেকে পাথরটি তুলে যথাস্থানে বসিয়ে দিলেন। সবাই খুশী। এড়ানো গেলো একটি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ।

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম