বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী নামাজ ‘কায়েম করা’ কথাটির অর্থ
‘কায়েম করা’ কথাটির অর্থ হচ্ছে, প্রতিষ্ঠা করা। বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী যে কোন আনুষ্ঠানিক কাজ ‘প্রতিষ্ঠা করা’ কথাটির মাত্র দুটি অর্থ হতে পারে। যথা
১. কর্মকাণ্ডটির শুধু অনুষ্ঠানটি সঠিক ও সুন্দরভাবে করার ব্যবস্থা সমাজে প্রতিষ্ঠা করা। অর্থাৎ কর্মকাণ্ডটির সকল অনুষ্ঠান নিয়ম-কানুন মেনে কিভাবে করতে হবে তা মানুষকে শিখানো এবং সে অনুষ্ঠান পালন করার জন্যে জায়গা বা ভবন () তৈরি করে সেখানে সে অনুষ্ঠানটি সুন্দরভাবে করার ব্যবস্থা কায়েম বা প্রতিষ্ঠা করা।
২. অনুষ্ঠানটির অনুষ্ঠানগুলো নিয়ম-কানুন মেনে করে তা থেকে দিতে চাওয়া শিক্ষাগুলো নিয়ে সে শিক্ষা ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে প্রতিষ্ঠা বা কায়েম করা।
চিন্তা করে দেখুন, যে কোন আনুষ্ঠানিক কাজ ‘প্রতিষ্ঠা করা’ কথাটির এর বাইরে অন্য কোন অর্থই হতে পারে না। আর বিবেক-বুদ্ধির চির সত্য () রায় হচ্ছে, যে কোন আনুষ্ঠানিক কাজ প্রতিষ্ঠা করা বলতে দ্বিতীয় অর্থটি অবশ্যই হবে এবং প্রথম অর্থটি কখনই হবে না।
তাহলে নামাজ নামক আনুষ্ঠানিক আমলটি ‘কায়েম করা’ তথা ‘প্রতিষ্ঠা করা’ কথাটির যে দুটি অর্থ বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী হওয়া সম্ভব তা হচ্ছে
১. নামাজের অনুষ্ঠানটির আরকান-আহকাম বিভিন্নভাবে (দাওয়াত, মসজিদ, মাদ্রাসা, বই ইত্যাদি) মানুষকে শিক্ষা দিয়ে, সুন্দর সুন্দর মসজিদ বানিয়ে সেখানে ঐ আরকান-আহকাম অনুযায়ী নামাজ পড়তে পারার ব্যবস্থা করা।
২. নামাজের অনুষ্ঠানগুলো আরকান-আহকাম মেনে নিষ্ঠার সঙ্গে করে তা থেকে মহান আল্লাহর দিতে চাওয়া শিক্ষাগুলো নিয়ে সে শিক্ষা ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে কায়েম তথা প্রতিষ্ঠা করা।
এ দুটির মধ্যে বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী ‘নামাজ কায়েম করা’ কথাটির প্রকৃত অর্থ হবে ২য় টি। অর্থাৎ নামাজের অনুষ্ঠানগুলো আরকান-আহকাম মেনে নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে তা থেকে আল্লাহর দিতে চাওয়া শিক্ষাগুলো নিয়ে সে শিক্ষা ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে কায়েম বা প্রতিষ্ঠা করা।
আল-কুরআন অনুযায়ী ‘নামাজ কায়েম করা’ কথাটির অর্থ
তথ্য-১
ক.
وَمَا جَعَلْنَا الْقِبْلَةَ الَّتِي كُنْتَ عَلَيْهَا إِلاَّ لِنَعْلَمَ مَنْ يَتَّبِعُ الرَّسُوْلَ مِمَّن يَّنْقَلِبُ عَلَى عَقِبَيْهِ.
অর্থ: পূর্বে তোমরা যেদিকে মুখ করে দাঁড়াতে, সেটিকে আমি কেবলারূপে নির্দিষ্ট করেছিলাম শুধু এটি বুঝে নেয়ার জন্যে যে, কে রাসূলের অনুসরণ করে, আর কে বিপরীত দিকে ফিরে যায় (পিঠটান দেয়)। (বাকারা : ১৪৩)
ব্যাখ্যা: এই আয়াতটিতে আল্লাহ নামাজের ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা বলেছেন। আয়াতটি ভালভাবে বুঝতে হলে এর নাযিলের পটভূমিটি আগে জানা দরকার। মদিনায় হিজরতের পর মুসলমানরা প্রথমে বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে নামাজ পড়ত। পরে আল্লাহর নির্দেশ আসে কাবা শরীফের দিকে অর্থাৎ পূর্ব দিকে মুখ করে নামাজ পড়ার জন্যে। আল্লাহর নির্দেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুসলমানরা তা পালন করতে শুরু করে। এটি দেখে কাফেররা উপহাস করে বলতে লাগল, দেখ মুসলমানরা কী পাগলামি শুরু করেছে। কাল তারা নামাজ পড়েছে পশ্চিম দিকে মুখ করে আর আজ পড়ছে পূর্ব দিকে মুখ করে। কাফেরদের এই কথার জবাবে আল্লাহ এই আয়াতটি নাযিল করেন এবং এর মাধ্যমে তিনি ঐ কেবলা পরিবর্তন করার আদেশের উদ্দেশ্যটি বলে দেন। আল্লাহ বলছেন, নামাজ পড়ার সময় তোমাদের মুখ একদিক থেকে আর একদিকে ফেরানোর অর্থাৎ কেবলা পরিবর্তনের যে আদেশ আমি দিয়েছিলাম, তার পেছনে মুখ ফেরানোর অনুষ্ঠানটি করানো আমার উদ্দেশ্য ছিল না। বরং আমার উদ্দেশ্য ছিল এটি জেনে নেয়া যে, কে রাসূলের সা. তথা আমার আদেশ মেনে নেয়াকে তাদের অন্য সব কিছুর উপর অগ্রাধিকার দেয়।
এ কথা থেকে এটিই বুঝা যায় যে, নামাজের সময় কাবা শরীফের দিকে মুখ ফেরানো, রুকু, সিজদা ইত্যাদি অনুষ্ঠান পালনের আদেশের পেছনে আল্লাহর উদ্দেশ্য হচ্ছে, মুসলমানদের শিক্ষা দেয়া। আর সে শিক্ষার সবচেয়ে বড়টি হচ্ছে- তাঁর আদেশ পালনকে অন্য সব কিছুর উপর অগ্রাধিকার দেয়া। আর এটিই হচ্ছে, নামাজের অনুষ্ঠান পালন থেকে আল্লাহর দিতে চাওয়া শিক্ষার মধ্যে সব চেয়ে প্রধান শিক্ষা।
খ.
........مَا يُرِيْدُ اللهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِّنْ حَرَجٍ وَّلَكِنْ يُّرِيْدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ.
অর্থ: .............. (নামাজের আগে ওজু গোসল করার শর্ত আরোপের দ্বারা) তোমাদের অহেতুক অসুবিধায় ফেলা (কষ্ট দেয়া) আল্লাহর ইচ্ছা নয়, বরং এর মাধ্যমে তিনি তোমাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন (পবিত্র) করতে চান (বা করার শিক্ষা দিতে চান) এবং তোমাদের জন্যে তাঁর নেয়ামত (কল্যাণ কামনা) পরিপূর্ণ করে দিতে চান, যাতে তোমরা (কল্যাণপ্রাপ্ত ও খুশি হয়ে) তাঁর গুণগান করতে পার। (মায়েদাহ : ০৬)
ব্যাখ্যা: সূরা মায়েদার এই আয়াতটির প্রথম দিকে (অনুল্লিখিত) নামাজের আগে ওজু, গোসল বা তায়াম্মুম করা এবং কখন ও কিভাবে তা করতে হবে, তার বিস্তারিত বিবরণ দেয়ার পর আয়াতটির শেষাংশে আল্লাহ এই বক্তব্যটি উল্লেখ করেছেন।
আল্লাহ এখানে বলেছেন, নামাজের আগে ওজু, গোসল (এবং কুরআনের অন্য স্থানের আদেশের মাধ্যমে কাপড় ও জায়গা পাক তথা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন) করার ঐ শর্ত আরোপ করার পেছনে তাঁর উদ্দেশ্য অবশ্যই মানুষকে কষ্ট দেয়া নয়। বরং এর পেছনে তাঁর উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে তার শরীর, পোশাক ও পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার একটি নীতিমালা শিক্ষা দেয়া। আর সে নীতিমালা হচ্ছে শরীরের উন্মুক্ত জায়গাগুলো প্রত্যেক দিন কয়েকবার পানি দিয়ে ধুয়ে-মুছে এবং পুরো শরীর, পোশাক-পরিচ্ছদ ও পরিবেশ, প্রতিদিন বা কয়েক দিন পর পর ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা বা পরিষ্কার রাখা।
নামাজের আগে শরীর, কাপড় ও জায়গা তথা পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার আদেশের পেছনে উদ্দেশ্য যে ঐ সকল জিনিস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার সময়ের ব্যবধান কী হবে তার একটি সাধারণ নীতিমালা শিক্ষা দেয়া, তা বুঝা যায় আয়াতটির সর্বশেষে উল্লেখ করা আল্লাহর কথাটির মাধ্যমে। আল্লাহ সেখানে বলেছেন, শরীর, পোশাক-পরিচ্ছদ ও পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার ঐ আদেশের মাধ্যমে, আমার প থেকে তোমাদের কল্যাণ করার অভিপ্রায়কে পূর্ণ করে দিতে চাই। যাতে তোমরা ঐভাবে কল্যাণপ্রাপ্ত হয়ে আমি যে তোমাদের কল্যাণকামী তা বুঝতে পেরে খুশি হয়ে আমার শুকর বা গুণগান করতে পার।
আল্লাহর সেই কল্যাণ কামনা হচ্ছে মানুষকে রোগমুক্ত রাখা। মানুষের শরীর, পোশাক-পরিচ্ছদ ও পরিবেশ যদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে তবে তাদের অনেক রোগ কম হয় বা অনেক রোগ হয় না। তাই আল্লাহ মানুষের শরীরের বিভিন্ন জায়গা, পোশাক-পরিচ্ছদ ও পরিবেশ কত ঘন ঘন পরিষ্কার করতে হবে, তার একটি সাধারণ নীতিমালার শিক্ষা এই আয়াতের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন। আর শরীর, কাপড় ও জায়গা পাকের উদ্দেশ্য যদি এটি না হত তবে বিবাহ না করা, স্ত্রী বা স্বামী না থাকা বা বার্ধক্য ও অন্য কারণে বৈধ যৌন মিলনের মতা না থাকা ইত্যাদি অবস্থায় সপ্তাহ, মাস বা বছর গোসল না করে শুধু ওজু করে একজন লোক নামাজ পড়তে পারত। এ েেত্র ঐ ব্যক্তি ঘন ঘন গোসল করে পুরো শরীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার মাধ্যমে অনেক রোগ থেকে মুক্ত থাকাস্বরূপ আল্লাহর চাওয়া বড় কল্যাণটি থেকে বঞ্চিত হত।
তাই আয়াতটি থেকে সহজেই বলা ও বুঝা যায়, নামাজের জন্যে ওজু-গোসল করে বা ধুয়ে মুছে শরীর, পোশাক-পরিচ্ছদ ও জায়গা অর্থাৎ পরিবেশ, পাক তথা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার নির্দেশের মাধ্যমে মহান আল্লাহ মানুষকে ঘন ঘন ধুয়ে-মুছে শরীর, পোশাক-পরিচ্ছদ ও পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার শিক্ষা দিতে চেয়েছেন।
তথ্য দু’টি থেকে পরিষ্কার বুঝা যায়, নামাজের বিভিন্ন অনুষ্ঠান থেকে মহান আল্লাহ নামাজীকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিতে চেয়েছেন।
তথ্য-২
সূরা বাকারার ১৭৭ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন:
لَيْسَ الْبِرَّ أَنْ تُوَلُّوا وُجُوْهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَالْمَلاَئِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّيْنَج وَآتَى الْمَالَ عَلَى حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِيْنَ وَابْنَ السَّبِيْلِلا وَالسَّائِلِيْنَ وَفِي الرِّقَابِط وَأَقَامَ الصَّلَوةَ وَآتَى الزَّكَوةَج وَالْمُوْفُوْنَ بِعَهْدِهِمْ إِذَا عَاهَدُواج وَالصَّابِرِيْنَ فِي الْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ وَحِيْنَ الْبَأْسِط أُوْلَئِكَ الَّذِيْنَ صَدَقُواط وَأُوْلَئِكَ هُمْ الْمُتَّقُوْنَ.
অর্থ: তোমরা মুখ পূর্ব দিক করলে না পশ্চিম দিক করলে, এটি কোন সওয়াব বা কল্যাণের কাজ নয়। বরং সওয়াব বা কল্যাণের কাজ সে-ই করে, যে আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতা, কিতাব ও নবীদের বিশ্বাস করে বা মান্য করে। আর শুধু আল্লাহর ভালবাসায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তাঁর ধনসম্পদকে আত্মীয়-স্বজন, মিসকিন, পথিক, সাহায্যপ্রার্থী ও ক্রীতদাস মুক্তির জন্যে ব্যয় করে এবং নামাজ কায়েম করে, জাকাত আদায় করে, ওয়াদা করলে তা পূরণ করে, দারিদ্র্য, বিপদ-আপদ ও হক বাতিলের দ্বন্দ্বের সময় হকের পে ধৈর্য ধারণ করে। এরাই (ঈমানের ব্যাপারে) সত্যবাদী এবং এরাই মুত্তাকী।
ব্যাখ্যা: এ আয়াতটিও মুসলমানদের কেবলা পরিবর্তন করে নামাজ পড়ার জন্যে কাফেরদের ঠাট্টা-বিদ্রƒপের পরিপ্রেেিত নাযিল হয়।
আল্লাহ এখানে বলছেন, তোমাদের মুখ পশ্চিম দিকে না পূর্ব দিকে ঘুরালে, এতে কোন সওয়াব বা কল্যাণ নেই। অর্থাৎ নামাজের শুধু অনুষ্ঠানটি করার মধ্যে কোন সওয়াব বা কল্যাণ নেই। এরপর যে সব কাজের মধ্যে সওয়াব বা কল্যাণ রয়েছে, তার কয়েকটি বর্ণনা তিনি এখানে দিয়েছেন। বাকিগুলো সমস্ত কুরআন শরীফে ছড়িয়ে আছে। এই আয়াতে প্রকৃত সওয়াব বা কল্যাণের কাজ হিসেবে যেগুলো উল্লেখ করা হয়েছে তা হচ্ছে
১. আল্লাহ, পরকাল, কিতাব ও নবীদের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা,
২. শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে নিজ সম্পদ অভাবী আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতিম, মিসকিন, পথিক, সাহায্যপ্রার্থী ও ক্রীতদাস মুক্তির জন্যে ব্যয় করা,
৩. নামাজ কায়েম করা,
৪. জাকাত দেয়া,
৫. ওয়াদা করলে তা রা করা এবং
৬. বিপদ-আপদ ও হক-বাতিলের দ্বন্দ্বের সময়, হকের পে ধৈর্য ধারণ করা অর্থাৎ দৃঢ় পদে দাঁড়িয়ে থাকা।
ল্য করুন,আয়াতটির প্রথমে আল্লাহ বলছেন, নামাজের সময় মুখ পশ্চিম বা পূর্ব দিকে ফিরানোর মধ্যে কোন কল্যাণ বা সওয়াব নেই। অর্থাৎ নামাজের শুধু অনুষ্ঠান করার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই। এরপর যে সমস্ত কাজের মধ্যে সওয়াব বা কল্যাণ আছে তার কয়েকটির বর্ণনা তিনি দিয়েছেন। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ‘নামাজ কায়েম করা’। সুতরাং এ আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, নামাজ কায়েম করার অর্থ নামাজের অনুষ্ঠানটি কায়েম বা প্রতিষ্ঠা করা নয়।
১ নং তথ্যের আয়াত দু’টির মাধ্যমে আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন নামাজের অনুষ্ঠান করতে বলার পেছনে তাঁর উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষা দেয়া। তাহলে ২ নম্বর তথ্যের আয়াত দুটির সঙ্গে এক নম্বর তথ্যের আয়াত দু’খানি মিলালে সহজেই বুঝা যায় ‘নামাজ কায়েম করা’ বলতে মহান আল্লাহ বুঝিয়েছেন নামাজের অনুষ্ঠান কায়েম করা নয় বরং সে অনুষ্ঠান থেকে তাঁর দিতে চাওয়া শিক্ষা নিয়ে সে শিক্ষা বাস্তবে কায়েম করা।
আয়াতটির শেষাংশে আল্লাহ বলেছেন, যারা আয়াতে বর্ণিত আমলগুলি করে তারাই ঈমানের ব্যাপারে সত্যবাদী এবং মুত্তাকী। তাহলে আয়াতটিতে নামাজের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত তথ্য দুটির আলোকে নিঃসন্দেহে বলা যায়, মহান আল্লাহ এই আয়াতের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন, জানা সত্ত্বেও যারা ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজের শুধু অনুষ্ঠানটি পালন করাকে নামাজ কায়েম করা মনে করে নামাজ আদায় করবে, তারা ঈমানের ব্যাপারে সত্যবাদী ও মুত্তাকী নয় অর্থাৎ পরকালে তাদের স্থান হবে জাহান্নাম। পান্তরে যারা নামাজের অনুষ্ঠানগুলো নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে তা থেকে আল্লাহর দিতে চাওয়া শিক্ষাগুলো নিয়ে সে শিক্ষা বাস্তবে কায়েম করবে, তারা ঈমানের ব্যাপারে সত্যবাদী এবং তারই মুত্তাকী, অর্থাৎ পরকালে তারা জান্নাতী হবে।
তথ্য-৩
يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا إِذَا نُوْدِي لِلصَّلَوةِ مِن يَّوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللهِ وَذَرُوا الْبَيْعَط ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنتُمْ تَعْلَمُوْنَ.
অর্থ: হে ব্যক্তিগণ, যারা ঈমান এনেছ, জুমআর দিন যখন নামাজের জন্যে (আজানের মাধ্যমে) ডাকা হয়, তখন বেচা-কেনা রেখে আল্লাহর স্মরণের দিকে (নামাজের দিকে) দ্রুত চলে যাও। এটি তোমাদের জন্যে উত্তম যদি জানতে।
(জুমআ : ৯)
ব্যাখ্যা: আয়াতেকারীমায় জুমআর নামাজের আজান হওয়ার সাথে সাথে সকলকে কেনা-বেচা অর্থাৎ কাজকর্ম ছেড়ে জামায়াতে নামাজ আদায়ের জন্যে দ্রুত মসজিদে চলে যেতে বলার পর মহান আল্লাহ বলেছেন, এটি যে ঈমানদারদের জন্যে অধিক কল্যাণকর তা বুঝতে পারত যদি বাস্তবে তারা তা দেখতে পেত।
সাধারণভাবে বুঝা যায়, সকল কাজ-কর্ম রেখে জামায়াতে নামাজ আদায় করতে চলে গেলে কিছু না কিছু তি হয়। কিন্তু আল্লাহ বলেছেন, এটি অধিক কল্যাণকর। কেন আল্লাহ এরকম বললেন, তা আজ সকল মুসলমানের ভেবে দেখা দরকার।
পূর্বের তিনটি তথ্যের আলোকে সহজে বলা যায়, এখানে আল্লাহ বলেছেন, সকল কাজ-কর্ম রেখে জামায়াতে নামাজ আদায় করতে মসজিদে চলে গেলে কিছু তি অবশ্যই হয়। কিন্তু জামায়াতে নামাজ আদায়ের মাধ্যমে তিনি সমাজ জীবনের যে শিক্ষা দিয়েছেন, সে শিক্ষাগুলো বুঝে বুঝে মনে-প্রাণে গ্রহণ করে প্রতিটি নামাজী যদি তা তাদের সমাজ জীবনে প্রয়োগ করে, তবে দুনিয়ায় তাদের যে সামগ্রিক কল্যাণ হবে তার পরিমাণ, জামায়াতে নামাজ আদায় করার সময়টুকুতে অন্য কাজ করলে যে কল্যাণ হবে তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি। কথাটি যে কত বাস্তব জামায়াতে নামাজের শিক্ষাগুলো (পরে আসছে) পর্যালোচনা করলে যে কেউই সহজে তা বুঝতে পারবে।
আর পরকালে জামায়াতে নামাজ আদায় করার জন্যে যে অতিরিক্ত পুরস্কার বা কল্যাণ পাওয়া যাবে, তার সঙ্গে ঐ অল্প সময় কাজ-কর্ম করার দরুন যে লাভ হবে, তার তো কোন তুলনাই হবে না।
তথ্য-৪
فَوَيْلٌ لِلْمُصَلِّيْنَ.الَّذِيْنَ هُمْ عَنْ صَلَوتِهِمْ سَاهُوْنَ. الَّذِيْنَ هُمْ يُرَاءُوْنَ.وَيَمْنَعُوْنَ الْمَاعُوْنَ.
অর্থ: ধ্বংস (ওয়াইল নামক জাহান্নাম) সেই নামাজীদের জন্যে যারা নিজেদের নামাজের (সময়ের) ব্যাপারে বেখেয়াল। যারা লোক দেখানোর জন্যে কাজ করে এবং পাতিলের ঢাকনির মতো ছোটখাট জিনিসও মানুষকে দিতে চায় না।
(মা’উন : ৪-৬)
ব্যাখ্যা: আয়াতটি থেকে বুঝা যায়, যে নামাজীরা নামাজের সময়ের ব্যাপারে তথা যে কোন কাজের সময়ের ব্যাপারে বেখেয়াল থাকবে, লোক দেখানোর জন্যে কাজ করবে এবং অন্যদের ছোটখাট জিনিসও দিবে না বা দিতে নিষেধ করবে, তারা পরকালে জাহান্নামে যাবে। সময়ের ব্যাপারে বেখেয়াল থাকা অর্থাৎ সময় জ্ঞান না থাকা, লোক দেখানোর জন্যে কোন কাজ করা এবং ছোটখাট জিনিসও অপরকে না দেয়া বা দিতে নিষেধ করা নামাজের শিক্ষা বিরোধী।
সুতরাং এ আয়াত থেকে বুঝা যায়, নামাজের অনুষ্ঠান করে তা থেকে আল্লাহর দিতে চাওয়া শিক্ষা নিয়ে সে শিক্ষা বাস্তবে প্রয়োগ না করলে ঐ নামাজ কবুল হবে না। আর তাই ঐ নামাজীকে পরকালে জাহান্নামে যেতে হবে। আর এ তথ্যটি দুই নাম্বার তথ্যের আয়াতটির শেষাংশের ব্যাখ্যার সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যশীল।
সুধী পাঠক, তাহলে কুরআনের উল্লিখিত এ তিনটি তথ্য থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা যায়, কুরআন অনুযায়ী নামাজ সফল বা কবুল হতে হলে নামাজকে কায়েম করতে হবে। আর কুরআন অনুযায়ী এই নামাজ কায়েম করার অর্থ হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে (মানুষ দেখানোর জন্যে নয়) নামাজের সকল অনুষ্ঠান আরকান-আহকাম মেনে নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে তা থেকে আল্লাহর দিতে চাওয়া শিক্ষা নিয়ে সে শিক্ষা নামাজের উদ্দেশ্য সাধনের ল্েয ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে বাস্তবায়ন করা। আর তা না করলে নামাজ ব্যর্থ হবে তথা কবুল হবে না এবং ঐ নামাজীকে পরকালে জাহান্নামে যেতে হবে।
হাদীস অনুযায়ী নামাজ কায়েম করা’ কথাটির অর্থ
তথ্য-১
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ فُلاَنَةً يُذْكَرُ مِنْ كَثْرَةِ صَلَوتِهَا وَصِيَامِهَا وَصَدَقَتِهَا غَيْرَ أَنَّهَا تُؤْذِي جِيْرَانَهَا بِلِسَانِهَا قَالَ هِيَ فِي النَّارِ قَالَ يَا رَسُولَ اللهِ فَإِنَّ فُلاَنَةً يُذْكَرُ مِنْ قِلَّةِ صِيَامِهَا وَصَدَقَتِهَا وَصَلَوتِهَا وَإِنَّهَا تَصَدَّقُ بِالْأَثْوَارِ مِنَ الْأَقِطِ وَلاَ تُؤْذِي جِيْرَانَهَا بِلِسَانِهَا قَالَ هِيَ فِي الْجَنَّةِ.
অর্থ: আবু হুরায়রা রা. বলেন, একদা জনৈক ব্যক্তি বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ, অমুক মহিলা নামাজ ও যাকাতে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। তবে সে নিজের মুখ দ্বারা তার প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়। তিনি বললেন, সে জাহান্নামী। লোকটি আবার বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ, অমুক মহিলা সম্পর্কে জনশ্র“তি আছে যে, সে কম (নফল) রোজা রাখে, কম (নফল) সদকা করে এবং নামাজও (নফল) কম পড়ে। তার দানের পরিমাণ হলো পনিরের টুকরাবিশেষ। কিন্তু সে নিজের মুখ দ্বারা প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয় না। রাসূল সা. বললেন, সে জান্নাতী।
(আহমাদ ও বায়হাকী, শো’আবুল ঈমান)
ব্যাখ্যা: প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়া নামাজের পঠিত বিষয়ের একটি শিক্ষা। হাদীসটিতে দেখা যায়, প্রথম মহিলাটি প্রচুর নামাজ পড়ার পরও মুখের দ্বারা প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়ার কারণে জাহান্নামী হয়ে গিয়েছে। এর কারণ, প্রচুর নামাজ আদায় করেও তা থেকে সে শিক্ষা নেয়নি এবং সে শিক্ষা বাস্তবে কায়েম বা প্রতিষ্ঠা করেনি।
অন্যদিকে হাদীসে উল্লেখিত দ্বিতীয় মহিলাটি অল্প নামাজ আদায় করেও প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়ার কারণে জান্নাতী হয়েছে। এর কারণ, মহিলাটি ঐ অল্প নামাজ থেকে শিক্ষা নিয়ে সে শিক্ষা বাস্তবে কায়েম করেছে।
তাহলে এ হাদীসটি থেকে সহজেই বলা যায়, নামাজের অনুষ্ঠানগুলো নিষ্ঠার সঙ্গে আরকান-আহকাম মেনে পালন করে তা থেকে আল্লাহর দিতে চাওয়া শিক্ষাগুলো নিয়ে সে শিক্ষা বাস্তবে প্রয়োগ করলেই শুধু নামাজ সফল, কবুল বা কায়েম হবে এবং ফলস্বরূপ ঐ নামাজী পরকালে বেহেশতে যেতে পারবে। আর তা না হলে নামাজ কবুল হবে না বা ব্যর্থ হবে এবং পরকালে ঐ নামাজীকে জাহান্নামে যেতে হবে।
তথ্য-২
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ أَتَدْرُوْنَ مَا الْمُفْلِسُ قَالُوا الْمُفْلِسُ فِيْنَا مَنْ لاَ دِرْهَمَ لَهُ وَلاَ مَتَاعَ فَقَالَ إِنَّ الْمُفْلِسَ مِنْ أُمَّتِي يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِصَلَوةٍ وَصِيَامٍ وَزَكَوةٍ وَيَأْتِي قَدْ شَتَمَ هَذَا وَقَذَفَ هَذَا وَأَكَلَ مَالَ هَذَا وَسَفَكَ دَمَ هَذَا وَضَرَبَ هَذَا فَيُعْطَى هَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ وَهَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ فَإِنْ فَنِيَتْ حَسَنَاتُهُ قَبْلَ أَنْ يُقْضَى مَا عَلَيْهِ أُخِذَ مِنْ خَطَايَاهُمْ فَطُرِحَتْ عَلَيْهِ ثُمَّ طُرِحَ فِي النَّارِ.
অর্থ: আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূল সা. বললেন, তোমরা কি জান, সবচেয়ে দরিদ্র ব্যক্তি কে? সাহাবায়ে কিরাম জবাব দিলেন, আমাদের মধ্যে দরিদ্র হল সে, যার টাকা-পয়সা ও ধন-সম্পদ নেই। তিনি বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে দরিদ্র ব্যক্তি সে, যে কিয়ামতের ময়দানে নামাজ, রোজা ও যাকাত নিয়ে উপস্থিত হবে কিন্তু তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসতে থাকবে যে সে কোন মানুষকে গালি দিয়েছে, কাউকে মিথ্যা দোষারোপ করেছে, কারোর সম্পদ অন্যায়ভাবে ভণ করেছে, কারো রক্ত অন্যায়ভাবে প্রবাহিত করেছে বা কাউকে অন্যায়ভাবে আঘাত করেছে। অতঃপর তার নামাজ, রোজা, যাকাত ইত্যাদি আমলগুলোকে বিনিময় হিসাবে ঐ তিগ্রস্ত বা কষ্টপ্রাপ্ত লোকগুলোকে দেয়া হতে থাকবে। এভাবে তার সকল আমল বিনিময় দিয়ে শেষ হয়ে যাবার পর দাবিদারদের পাপগুলো তার উপর চাপানো হবে। অবশেষে তাকে জাহান্নামে নিপে করা হবে। (মুসলিম)
ব্যাখ্যা: হাদীসটিতে দেখা যায়, নামাজ আদায় করার সাথে সাথে কেউ যদি মানুষকে গালি দেয়, কাউকে মিথ্যা দোষারোপ করে, কারো সম্পদ অন্যায়ভাবে ভণ করে, কারো রক্ত অন্যায়ভাবে প্রবাহিত করে, কাউকে অন্যায়ভাবে আঘাত করে তবে তার ঐ নামাজ পরকালে কাজে আসবে না অর্থাৎ কবুল হবে না এবং তাকে জাহান্নামে যেতে হবে। কারণ ঐ কাজগুলো না করা নামাজের পঠিত বিষয়ের শিক্ষার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।
তাই, এ হাদীসটি থেকেও বলা যায় নামাজের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আল্লাহর দিতে চাওয়া শিক্ষাগুলো নিয়ে সে শিক্ষা বাস্তবে প্রয়োগ না করলে নামাজ সফল, কবুল বা কায়েম হবে না। অর্থাৎ নামাজ ব্যর্থ হবে এবং ফলস্বরূপ নামাজীকে পরকালে জাহান্নামে যেতে হবে।
তথ্য-৩
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَوْحَى اللهُ عَزَّ وَجَلَّ اِلَى جِبْرَائِيْلَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ، اَنِ اقْلِبْ مَدِيْنَةَ كَذَا وَكَذَا بِاَهْلِهَا فَقَالَ يَارَبِّ اِنَّ فِيْهِمْ عَبْدُكَ فُلاَنًا لَّمْ يَعْصِكَ طَرْفَةَ عَيْنِ قَالَ فَقَالَ اَقْلِبْهَا عَلَيْهِ وَعَلَيْهِمْ فَاِنَّ وَجْهَهُ لَمْ يَتَمَعَّرْ فِىْ سَاعَةٍ قَطُّ.
অর্থ: জাবের রা. বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ জিব্রাইল আ.কে নির্দেশ দিলেন, অমুক অমুক শহরকে তার অধিবাসী সমেত উল্টিয়ে দাও। তিনি বললেন, হে রব, তাদের মধ্যে তো তোমার অমুক এক বান্দা আছে যে মুহূর্তের জন্যেও তোমার নাফরমানী করে নাই। রাসূল সা. বলেন, তখন আল্লাহ তায়ালা বললেন, তার ও তাদের সকলের উপরই শহরটিকে উল্টিয়ে দাও। কারণ, সম্মুখে পাপাচার হতে দেখে মুহূর্তের জন্যেও তার চেহারা মলিন হয় নাই। (বায়হাকী, শো’আবুল ঈমান)
ব্যাখ্যা: হাদীসটি থেকে বুঝা যায়, লোকটি নামাজসহ সকল উপাসনামূলক ইবাদতই নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করছিল কিন্তু তার সম্মুখে সংঘটিত হওয়া পাপাচার অর্থাৎ অন্যায় কাজ বন্ধ করার ব্যাপারে সে কোন রকম ভূমিকা রাখে নাই। আর তাই তাকে শাস্তি পেতে হয়েছে।
শক্তি প্রয়োগ বা কথার মাধ্যমে পাপাচার বন্ধ করা, না পারলে অন্তত ঐ পাপ কাজ বা পাপ কাজ সংঘটনকারীকে অন্তরে ঘৃণা করা নামাজের পঠিত বিষয়ের (আল-কুরআনের) একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। হাদীসটিতে উল্লিখিত ব্যক্তির নামাজ পড়ার পর সামনে পাপাচার হতে দেখে ভ্রƒকুটিও না করা থেকে বুঝা যায়, সে নামাজের অনুষ্ঠানটি করেছে কিন্তু ঐ অনুষ্ঠান থেকে শিক্ষা নেয়নি। তাই সামনে পাপাচার হতে দেখেও তার ভ্রƒকুটি হয়নি এবং ফলস্বরূপ তাকে শাস্তি পেতে হয়েছে।
সুতরাং এ হাদীসটি থেকেও জানা যায়, নামাজ সফল, কবুল বা কায়েম হতে হলে নামাজকে শুধু তার অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে পালন করলে চলবে না। বরং নামাজের অনুষ্ঠানগুলো নিষ্ঠার সঙ্গে করে তা থেকে দিতে চাওয়া শিক্ষাগুলো নিয়ে সে শিক্ষা নামাজের উদ্দেশ্য সাধনের ল্েয বাস্তবে প্রয়োগ, কায়েম বা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
সুধী পাঠক
তাহলে দেখা যাচ্ছে, নামাজ বর্তমানে ব্যর্থ হওয়ার কারণের ব্যাপারে কুরআন, হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধির বক্তব্য একই। আর সে কারণগুলো হচ্ছে অধিকাংশ নামাজীর
১. নামাজের কুরআনে বর্ণিত উদ্দেশ্যটি না জানা।
২. নামাজের অনুষ্ঠানটিকে পাথেয় তথা উদ্দেশ্য সাধনের মাধ্যম মনে না করে উদ্দেশ্য মনে করা।
৩. নামাজের অনুষ্ঠানটি আরকান-আহকাম মেনে সঠিকভাবে নিষ্ঠার সঙ্গে (লোক দেখানোর জন্যে নয়) পালন না করা।
৪. নামাজের প্রতিটি অনুষ্ঠান থেকে আল্লাহ যে শিক্ষা দিতে চেয়েছেন, তা বুঝে বুঝে মনে-প্রাণে গ্রহণ না করা।
৫. সে শিক্ষা নামাজের উদ্দেশ্য সাধনের ল্েয ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে কায়েম, প্রতিষ্ঠা বা বাস্তবায়ন না করা।
অধ্যায় ০৫ : নামাজ ‘কায়েম করা’ কথাটির অর্থ (বিবেক-বুদ্ধি-কুরআন-হাদীস আনুযায়ী)
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
রিসেন্ট ব্লগ পোষ্টস
বিষয়শ্রেণী
রাইটার
প্রিয়-ক্লিক
কিছু বই
- অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা
- অর্থনীতিতে রাসূল (সা) এর দশ দফা
- আদর্শ মানব মুহাম্মদ (সা)
- আসহাবে রাসূলের জীবনকথা
- ইসলাম ও জিহাদ
- ইসলাম পরিচিতি
- ইসলামী আন্দোলন : সাফল্যের শর্তাবলী
- ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক
- ইসলামী আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি
- ইসলামী দাওয়াত ও কর্মনীতি
- ইসলামী নেতৃত্বের গুণাবলী
- ইসলামী বিপ্লবের পথ
- ইসলামী রেনেসাঁ আন্দোলন
- ইসলামী সমাজে মজুরের অধিকার
- একটি আদর্শবাদী দলের পতনের কারণঃ তার থেকে বাঁচার উপায়
- চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান
- দায়ী’ ইলাল্লাহ - দা’ওয়াত ইলাল্লাহ
- নামাজ কেন আজ ব্যর্থ হচ্ছে
- নামায-রোজার হাকীকত
- মোরা বড় হতে চাই
- যাকাতের হাকীকত
- রাসূলুল্লাহর বিপ্লবী জীবন
- শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী ও তাঁর চিন্তাধারা
- সত্যের সাক্ষ্য
- হেদায়াত
1 comments:
so in this book - "bibek o budhdhi" goes above than "Ijma and Kiyas" (Chapter 1)!! WOW!!