মদীনা সনদ
মদীনার ইয়াহুদী ও মুসলিমদের মধ্যে একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়। এই চুক্তি মাদীনার সনদ নামে খ্যাত। এই সনদে লিখা ছিলো-
মুসলিম ও ইয়াহুদীগণ এক রাষ্ট্র জাতিতে পরিণত হবে।
হত্যার বিনিময়ে নিহত ব্যক্তির আত্মীয়কে অর্থদান প্রথা বহাল থাকবে।
ইয়াহুদীদের পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা থাককে।
ইয়াহুদী বা মুসলিম কেউ কুরাইশ শত্রুকে আশ্রয় দেবে না।
মদীনা আক্রান্ত হলে সবাই মিলে মদীনা রক্ষা করবে।
কোন সম্প্রদায় শত্রুর সঙ্গে সন্ধি করলে অন্য সম্প্রদায়ও করবে। ধর্ম যুদ্ধের ক্ষেত্রে এই শর্তে প্রযোজ্য হবে ন।
মাদীনা রাষ্ট্রের সকল নাগরিক তাদের ভবিষ্যৎ বিবাদ নিষ্পতির ভার মুহাম্মাদের (সা) উপর অর্পণ করবে।
এই সনদেই ছিলো মাদীনা রাষ্ট্রের প্রথম সংবিধান।হত্যার বিনিময়ে নিহত ব্যক্তির আত্মীয়কে অর্থদান প্রথা বহাল থাকবে।
ইয়াহুদীদের পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা থাককে।
ইয়াহুদী বা মুসলিম কেউ কুরাইশ শত্রুকে আশ্রয় দেবে না।
মদীনা আক্রান্ত হলে সবাই মিলে মদীনা রক্ষা করবে।
কোন সম্প্রদায় শত্রুর সঙ্গে সন্ধি করলে অন্য সম্প্রদায়ও করবে। ধর্ম যুদ্ধের ক্ষেত্রে এই শর্তে প্রযোজ্য হবে ন।
মাদীনা রাষ্ট্রের সকল নাগরিক তাদের ভবিষ্যৎ বিবাদ নিষ্পতির ভার মুহাম্মাদের (সা) উপর অর্পণ করবে।
মুহাম্মাদ (সা) হলেন মদীনা রাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্র প্রধান।
কিবলা পরিবর্তন:
হিজরী দ্বিতীয় সনের শাবান মাস। মুসলিমদেরকে নিয়ে ছালাত আদায় করছিলেন আল্লাহর রাসূল (সা) মসজিদুল আকসা তখনো মুসলিমদের কিবলা। ছালাতের মধ্যেই নির্দেশ এলো :
তোমার চেহারা মাসজিদুল হারামের দিকে ফিরাও। সূরা আল বাকারা: ১৪৪
সংগে সংগে আল্লাহর রাসূল (সা) পুরো জামায়াত নিয়ে কাবা মুখী হয়ে ছালাতের বাকী অংশ আদায় করেন।
কিবলা পরিবর্তনের সাক্ষী হয়ে মদীনার একাংশে দাঁড়িয়ে আছে মসজিদে কিবলাতাইন বা দুই কিবলার মসজিদ।
রমাদানে ছাওম বা রোযা পালন
আল্লাহর রাসূল (সা) মক্কায় থাকাকালেই প্রতি মাসে তিন দিন ছাওম পালন করতেন।মুমিনের নৈতিক ট্রেনিংয়ের অন্যতম প্রধান উপায় রোযা পালন। হিজরী দ্বিতীয় সনে পুরো রমাদান মাসে ছাওম বা রোযা পালনের নির্দেশ আসে।
মুমিনগণ, তোমাদের জন্য রোযাকে ফরয করে দেয়া হলো যেমন করে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করতে পার। সূরা আল-বাকারা ;১ ৮৩
এই বছর থেকে মুসলিম উম্মাহ রামাদানে মাসে ছাওম পালন করতে থাকে। এই বছরই ছাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হয়। জামায়াতের সাথে ঈদুল ফিতরের ছালাত এই বছরই শুরু হয়।
হিজরী দ্বিতীয় সন। রামাদান মাস। এক হাজার সুসজ্জিত যোদ্ধা নিয়ে মক্কায় কুরাইশরা মদীনা আক্রমনের জন্য অগ্রসর হয়। সংবাদ পেয়ে রাসূল (সা) মুকাবিলায়র প্রস্তুতি নেন। তিনশত তের জনের একটি বাহিনী তৈরী হয়। এই বাহিনী নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা) মদীনা থেকে ৮০ মাইল দক্ষিণ পশ্চিমে এক প্রান্তরে এসে উপস্থিত হন। এই প্রান্তরের নাম বদর। প্রচন্ড লড়াই করেন। মুশরিক সরদারদের মধ্যে শাইবা, উৎবা, আবু জাহাল, জামায়াহ, আস, উমাইয়া নিহত হয়। সত্তর জন মুশরিক নিহত হয়। আরো সত্তর জন হয় বন্দী। চৌদ্দজন মুসলিম শহীদ হন। বদর প্রান্তরে মুসলিমদের এই বিজয় ইসলামের গৌরব বাড়িয়ে তোলে। বদরের বিজয়ের পর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুমিনদের প্রশিক্ষণের জন্যে দীর্ঘ বাণী নাযিল করেন। তার একাংশে বলা হয়-
হে মুমিনগণ, কোন বাহিনীর সংগে যখন তোমাদের মুকাবিলা হয় তখন দৃঢ়পদ থাক এবং আল্লাহ বেশী বেশী স্মরণ কর যাতে তোমরা সাফল্য লাভ করতে পার। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর এবং মতবিরোধ করো না, অন্যথায় তোমাদের মধ্যে দুর্বলতা সৃষ্টি হবে ও তোমাদের প্রতিপত্তি খতম হয়ে যাবে। ছবর অবলম্বন কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ছবর অবলম্বনকারীদের সংগে আছেন। (সূরা আল আনফাল : ৪৫-৪৬)
বনু কাইনুকার বিরুদ্ধে অভিযান
বানু কাইনুকা ছিলো একটি ইয়াহুদী গোত্র। মদীনা সনদের আওতায় তারা মদীনা রাষ্ট্রের নাগরিক। নির্বিবাদে তারা মদীনায় বসবাস করছিলো। দ্বিতীয় হিজরী সনের রমাদান মাসে বদর প্রান্তরে মুসলিম বাহিনী প্রথম সামরিক বিজয় লাভ করে। মুসলিমদের এই বিজয় ইয়াহুদীদেরকে শংকিত করে তোলে। তারা গোড়াতেই এই শক্তিকে বিনষ্ট করার চক্রান্তে মেতে উঠৈ। কিন্তু মুসলিমদের সাথে চুক্তিবদ্ধ থাকার কারণে তারা কি করবে ভেবে পাচ্ছিলো না।
একদিন এক ইয়াহুদী একজন মুসলিম মহিলার শ্লীলতা হানি করে। মহিলার ক্রুদ্ধ স্বামী উক্ত ইয়াহুদীকে হত্যা করে বসে। আল্লাহর রাসূল (সা) বিচরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু বানু কাইনুকার ইয়াহুদীর এই ঘটনাকে বাহানা বানিয়ে এক তরফা ভাবে চুক্তি বাতিল করে দেয়। মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে তারা অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে তাদের দুর্গে অবস্থান গ্রহণ করে। মুসলিমগণ দুর্গ অবরোধ করেন। এই অবরোধ পনর দিন স্থায়ী হয়। ইয়াহুদীরা বুঝতে পারে যে মুসলিম বাহিনীর সাথে লড়ে যাওয়া বৃথা। তারা মদীনা ছেড়ে চলে যাবার অনুমতি প্রার্থনা করে। আল্লাহর রাসূল (সা) তাদের সেই প্রার্থনা মনজুর করেন। দুর্গ থেকে বেরিয়ে বানু কাইনুকা সিরিয়ার দিকে চলে যায়। এটা ছিলো দ্বিতীয় হিজরী সনের শাওতাল মাসের ঘটনা।
0 comments: