উইকিলিকসের তথ্য : জিল্লুর রহমানের পর প্রেসিডেন্ট হতে চান এরশাদ : বিএনপির প্রতি দুর্বলতা রয়েছে
রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের পর ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রেসি-ডেন্টের দায়িত্ব নেবেন। বর্তমান মহাজোট সরকার গঠনের আগের দিন ২০০৯ সালের ৫ জানুয়ারি মার্কিন দূতা-বাসকে এসব কথা বলেছিলেন তিনি। ২০০৬ সালের ৩ জুলাই আরেক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘মহাজোট না-কি চারদলীয় জোট কোন পক্ষে যোগ দেব তা নিয়ে আমার নির্ঘুম রাত কাটছে। বিএনপির প্রতি আমার দুর্বলতা রয়েছে।’ ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনে পাঠানো পৃথক তারবার্তায় এসব কথা উল্লেখ করা হয়। সারাবিশ্বে সাড়া জাগানো ওয়েবসাইট উইকিলিকস এসব গোপন তথ্য ফাঁস করেছে।
২০০৯ সালের ৫ আগস্ট ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনে একটি তারবার্তা পাঠানো হয়। গত ৩০ আগস্ট তারবার্তাটি প্রকাশ করে উইকিলিকস। এতে বলা হয়, এরশাদ মার্কিন দূতাবাসকে বলেন, জিল্লুর রহমানের পর তিনি কোনো এক সময় প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেবেন। তিনি আরও বলেন, সরকার গঠনের জন্য আওয়ামী লীগের জাতীয় পার্টিকে প্রয়োজন হবে। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব না পাওয়ার পর তিনি আশা করছেন, পার্লামেন্টে তিনি উপনেতার দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন। গোপন তারবার্তায় মন্তব্য করা হয়, যদিও পরে তার সব কথাই ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়। তারবার্তায় তত্কালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি মন্তব্য করেন, দলের জন্য অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ জিল্লুর রহমানকে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব দিলেও আওয়ামী লীগের ইচ্ছা প্রেসিডেন্টের ভূমিকা দুর্বল করা ও প্রধানমন্ত্রীর অধীনে রাখা। তারবার্তায় বলা হয়, ছোট কয়েকটি প্রশাসনিক অনিয়মের ঘটনা ঘটলেও বাংলাদেশের ইতিহাসে ডিসেম্বরের নির্বাচনটি ছিল সবচেয়ে স্বাধীন, স্বচ্ছ ও বিশ্বস্ত। নির্বাচনটি পর্যবেক্ষণ করে ওয়াশিংটনভিত্তিক ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই), ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই), ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ ও এশিয়া ফাউন্ডেশন।
তারবার্তাটির মন্তব্য অংশে মরিয়ার্টি বলেন, এখন শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ স্বাভাবিকভাবেই ক্ষমতা বদলের প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই চিন্তিত হয়ে পড়েছেন তারা মন্ত্রিসভায় স্থান পাবেন কিনা। তবে হাসিনা জানিয়েছেন, তার সরকার নতুন বোতলে পুরনো মদ কৌশলে যাবে না।
এদিকে ২০০৬ সালের ৩ জুলাই এরশাদ মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে বৈঠকে বলেন, মহাজোট না-কি চারদলীয় জোট কোন পক্ষে যোগ দেব তা নিয়ে আমার নির্ঘুম রাত কাটছে। ওই বছরের ১৮ জুলাই ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনে গোপন কূটনৈতিক এ সংক্রান্ত একটি তারবার্তা পাঠানো হয়। গত ৩০ আগস্ট তারবার্তাটি প্রকাশ করে উইকিলিকস। এরশাদ দূতাবাসের সঙ্গে বৈঠকে বলেন, বিএনপির প্রতি আমার দুর্বলতা রয়েছে। আমি মৌলবাদের বিরোধিতা করি। আমি মনে করি, বিএনপি প্রাথমিক অবস্থায় জেএমবিকে সমর্থন দিয়েছিল এবং এর উত্থানের পেছনে সংগঠনটির ভূমিকা আছে। এরশাদ বলেন, তিনি বিএনপি ও আওয়ামী লীগ উভয় দলের সঙ্গে কথা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের কাছে তার বিভিন্ন দাবি-দাওয়া উত্থাপন করেছেন। এর মধ্যে তার প্রধান দাবি ছিল প্রেসিডেন্ট হতে চাওয়া। একই বছর ২ জুলাই এরশাদ ও তার স্ত্রী রওশন এরশাদ তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন। তারবার্তায় উল্লেখ করা হয়, এরশাদ বলেছেন, নির্বাচনে জিতলে হলে জাতীয় পার্টিকে শেখ হাসিনার প্রয়োজন হবে। আওয়ামী লীগ যদি তাকে প্রেসিডেন্ট বানায় তাহলে আওয়ামী লীগের হাতে তিনি যে পরিমাণ অপমানিত হয়েছেন তার খেসারত দেয়া হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ তার বেশিরভাগ দাবি পূরণ করতে রাজি হয়েছে। তবে বিএনপিও তাকে বিবেচনা করছে। তারবার্তায় বলা হয়, এরশাদ এও বলেন, তারেক রহমান তাকে হুমকি দিয়েছেন তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে গেলে তাকে আবারও কারাগারে পাঠানো হবে। তত্কালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রিসিয়া এ বিউটেনিসকে এরশাদ বলেন, বিএনপি তার ওপর নজরদারি রেখেছে, তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো চুক্তি করতে বাধাও দিচ্ছে। তারবার্তাটির মন্তব্য অংশ বলা হয়, এরশাদ মনে করেন তার দলই কিংমেকারের (সরকার গঠনে করতে নির্ধারক) ভূমিকা পালন করবে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে এরশাদের বৈঠক ও তার দলের নেতাদের মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় মনে হচ্ছে, প্রধান দুটি দলের সঙ্গেই এরশাদ আলোচনা চালিয়ে যাবেন। এরশাদ এও জানেন, তিনি ভুল সিদ্ধান্ত নিলেই জেলে ফেরত যেতে হবে। একটি ভুল সিদ্ধান্তই তার রাজনৈতিক জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটতে পারে।
0 comments: