উইকিলিকস ► বিডিআর বিদ্রোহ : এরশাদ বলেন, সেনাবাহিনী জানত


উইকিলিকসের তথ্য : বিডিআর বিদ্রোহ : এরশাদ বলেন, সেনাবাহিনী জানত

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় প্রধান দুই দলের নেতারা এমনকি শীর্ষ দুই নেত্রী পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ চলছেই। তবে ওই ঘটনায় বাইরের কারো সংশ্লিষ্টতা ছিল_এ বিষয়টি এখনো প্রমাণিত হয়নি। এ ঘটনায় ভারতের সংশ্লিষ্টতার কথাও কেউ কেউ তুলেছেন। বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার সহযোগিতার প্রস্তাব সরকার রূঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করায় তিনি এ বিষয়ে পরে কোনো রকম সহযোগিতা করতে রাজি হননি। ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সুস্পষ্ট কারণ এখনো উদ্ঘাটিত না হলেও বিষয়টি নিয়ে প্রধান দুই দলের রাজনৈতিক বাহাস চলছেই।
বিডিআর বিদ্রোহের ১২ দিন পর ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনে পাঠানো এক তারবার্তায় এসব তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। উইকিলিকসের ফাঁস করা নথিগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। ২০০৯ সালের ৯ মার্চ তারবার্তাটি ওয়াশিংটনে পাঠিয়েছিলেন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের তদানীন্তন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি। ওই তারবার্তায় তিনি লেখেন, বিডিআর বিদ্রোহের তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত বাইরের কোনো পক্ষের জড়িত থাকার প্রমাণ না মিললেও বেশ কিছু রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে এক নাগাড়ে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ওঠানো হচ্ছে। বার্তায় বলা হয়, প্রচারমাধ্যমগুলোর গভীর পর্যবেক্ষণের মধ্যেই সরকারি সংস্থাগুলোকে তদন্তে সহায়তা করতে নয়াদিলি্ল হয়ে ঢাকা পেঁৗছেছে এফবিআইয়ের দুই সদস্যের একটি তদন্ত দল। রাষ্ট্রদূত ওয়াশিংটনকে জানান, সাবেক সেনাপ্রধান এবং রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এক আলাপচারিতায় তাঁকে বলেন, বিডিআরে অসন্তোষের ব্যাপারটা বিদ্রোহ শুরুর কয়েক দিন আগে থেকেই সেনাবাহিনী জানত। বিদ্রোহে এত প্রাণহানির ঘটনা ঘটত না, যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্রোহ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনীকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিতেন। তবে তিনি এর আগে বিডিআর বিদ্রোহের পেছনে ভারতীয় তৎপরতাকে দায়ী করলেও পরে তাঁর মন্তব্য প্রত্যাহার করে নেন। ভারতীয় প্রচারমাধ্যমগুলোয় বিডিআর বিদ্রোহে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে বিএনপির সংসদ সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে। সাকা চৌধুরী একান্ত আলাপচারিতায় আমাদের জানিয়েছেন, বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার সহযোগিতার উদ্যোগকে সরকার অবজ্ঞার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করায় বিদ্রোহের ঘটনায় সরকারকে সহযোগিতা করার কোনো পরিকল্পনা এখন আর তাঁর নেই। তারবার্তায় বলা হয়, বিডিআর বিদ্রোহে ৭৪ জন অফিসার নিহত হওয়ার ঘটনায় তিনটি সংস্থার তদন্ত চলছে, তবে কোনো পক্ষ এখনো কোনো সমাধানে পেঁৗছাতে পারেনি। সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির ৯ মার্চ রিপোর্ট দেওয়ার কথা থাকলেও কমিটির প্রধান আনিসুজ্জামান খান গত ৮ মার্চ অধিকতর তদন্তের জন্য আরো দুই সপ্তাহ সময় চেয়েছেন। তবে এ ঘটনায় বাইরের কোনো পক্ষের সংশ্লিষ্ট থাকার জোরালো গুঞ্জন থাকলেও কোনো পক্ষই এ বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠ কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। সরকারি তদন্তে সহযোগিতা করতে ঢাকায় এসেছে এফবিআইয়ের দুই সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত দল। আশা করা যাচ্ছে, তদন্তে সহযোগিতা করার জন্য নিউ স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের একটি পরামর্শক দল কয়েক দিনের মধ্যেই ঢাকায় আসবে। তারবার্তায় বলা হয়, বিডিআর বিদ্রোহের কারণ এবং তদন্তে অগ্রগতি নিয়ে পরস্পরকে দায়ী করে সরকারি ও বিরোধী দলের মধ্যে বাকযুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ঘটনায় ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। খালেদা জিয়া অভিযোগ অস্বীকার করে বিষয়টি প্রমাণ করার জন্য পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে। সাকা চৌধুরী এর পরিপ্রেক্ষিতে জানান, সরকার রূঢ় আচরণ করায় বিরোধী দল এ বিষয়ে সরকারকে আর কোনো সহযোগিতা করবে না। সাকা চৌধুরী বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় তাঁকে জড়িয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর সংবাদকে ভিত্তিহীন দাবি করে আমাদের জানান, বিদ্রোহ দমনে সরকার সেনাবাহিনীকে নির্দেশ না দেওয়ায় সেনাবাহিনীতে মারাত্মক অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে মেজর এবং এর নিচের পদের অফিসাররা এ ঘটনায় মারাত্মক ফুঁসে উঠেছেন। তাঁদের মধ্যে বিএনপির প্রতি সমর্থন বেশি রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। এরশাদের উল্টো সুর : রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনায় এরশাদ খুব ভেবেচিন্তে বলেন, বিদ্রোহের ঘটনায় বাহিরের কারো ইন্ধন নেই। তাঁর এ মন্তব্য আগের মন্তব্যের ঠিক উল্টো। ২৮ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলাপচারিতায় এরশাদ খুব জোর দিয়ে বলেছিলেন, ভারত কোনো না কোনোভাবে বিদ্রোহের সঙ্গে জড়িত। ৯ মার্চের আলাপচারিতায় তিনি বলেন, ভারত সরকার বিদ্রোহে ইন্ধন জুগিয়েছে_এ কথার কোনো মানে হয় না।

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম