উইকিলিকস ► ছেলেদের দেশের বাইরে পাঠাতে খালেদার শর্ত


উইকিলিকসের তথ্য : ছেলেদের দেশের বাইরে পাঠাতে খালেদার শর্ত

রাজনৈতিক সংস্কার এবং সংসদ নির্বাচনের জন্য আলোচনায় বসার পরিবেশ সৃষ্টির প্রয়োজনে প্রধান দুটি দলের দুই নেত্রীকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়ার কৌশল নিয়েছিল বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তারা সফলভাবে আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনাকে দেশত্যাগে সম্মত করতে পারলেও বেঁকে বসেন জেলবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি সংলাপে বসার ব্যাপারে উল্টো শর্ত জুড়ে দেন তাঁর দুই ছেলেকে আগে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে হবে এবং তাঁকে মুক্তি দিতে হবে। তবে তিনি দেশ ছেড়ে কোথাও যাবেন না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছেলেদের সঙ্গে নিয়ে দেশ ত্যাগ করার জন্য চাপ দিয়েছিল তাঁকে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ২০০৮ সালের ১৮ জুন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টির পাঠানো এক তারবার্তায় এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। গত ৩০ আগস্ট উইকিলিকসের ফাঁস করা আড়াই লাখের বেশি তারবার্তার মধ্যে এ বার্তাটি পাওয়া গেছে।
ঢাকা থেকে ওয়াশিংটনে পাঠানো ওই তারবার্তায় তিনি লেখেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার এক সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জেল থেকে মুক্তির বিষয় এখনো ঝুলে আছে। পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠার কারণ, খালেদা পীড়াপীড়ি করছেন জেলে আটক তাঁর দুই ছেলেকে নিঃশর্তে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে হবে এবং তিনি দেশেই থাকবেন। যদিও চারদিকে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, কয়েক দিনের মধ্যেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও খালেদা জিয়ার মধ্যে একটা চুক্তি হবে। কিন্তু খালেদার ভাগ্য কিংবা ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য সংসদ নির্বাচনে তাঁর দলের অংশগ্রহণের ব্যাপারে নেত্রী ও তাঁর অনুসারীদের কথাবার্তার মধ্যে নমনীয় হওয়ার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। এখনো খালেদার কাছে ছেলেদের স্বাস্থ্যই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের লক্ষ্য আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা হওয়ায় হয়তো একটা সমাধানে দুই পক্ষ পেঁৗছাতে পারবে বলেই মনে হচ্ছে।
ত্রিমুখী জটিলতা : তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গত বছর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হন। জেল থেকে শেখ হাসিনার মুক্তির ব্যাপারে আলোচনার শর্তগুলো ছিল তুলনামূলক সহজ। কারণ সরকারের উদ্দেশ্য ছিল তাঁকে দেশছাড়া করা। আর হাসিনা নিজেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হতে বিদেশে যেতে রাজি হয়েছিলেন। রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই এতে আপত্তি না করায় বিষয়টার সমাধান দ্রুতই হয়েছে। অন্যদিকে খালেদা জিয়া গোঁ ধরে বসে আছেন তাঁর অসুস্থ ছেলেদেরই আগে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে হবে। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। এর বড় কারণ তারেক রহমান। খালেদা জিয়ার বড় ছেলের নামে দুর্নীতির এত বেশি অভিযোগ উঠে এসেছে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ভয় পাচ্ছে দেশের বাইরে পাঠানোর পর তারেক যদি আবার রাজনীতিতে ফিরে আসেন, তাহলে বাংলাদেশের ভঙ্গুর গণতান্ত্রিক পরিবেশ আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, ছেলের সঙ্গে মাকেও বিদেশে যেতে হবে। এর আগে তারেক রহমানের শ্যালিকা দূতাবাসকে জানিয়েছেন, তারেককে সঙ্গে নিয়ে দেশের বাইরে চলে যাওয়ার ব্যাপারে সরকার খালেদা জিয়াকে প্রতিনিয়ত চাপ দিচ্ছে। দুই নেত্রীকে একইভাবে বিদেশে পাঠিয়ে সরকার রাজনৈতিক ভারসাম্য তৈরির চেষ্টা চালালেও গত ১৬ জুন আদালতের বাইরে উপস্থিত সাংবাদিকদের খালেদা জিয়া স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন, তিনি দেশত্যাগ করবেন না। ফলে পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠেছে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব নজরুল ইসলাম খান সম্প্রতি আমাদের দূতাবাস কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন, সেনা কর্মকর্তাদের কাছে খালেদা এখনো জনপ্রিয় নেত্রী হওয়ায় তাঁর বিশ্বাস তিনি ও তাঁর ছেলেদের সঙ্গে সরকারের একটা আপসরফা হবে। নজরুল ইসলাম আরো অনুমান করেন, জেল থেকে মুক্ত হওয়ার পর দলকে সংগঠিত করা ও দায়িত্ব বণ্টনের জন্য এক থেকে দেড় সপ্তাহ তিনি (খালেদা) দেশে থাকবেন, এরপর ছেলেদের নিয়ে দেশের বাইরে চলে যাবেন। নজরুল ইসলাম আরো বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে বিএনপির নির্বাচনী সংলাপে বসার ব্যাপারেও তিনি হয়তো আর অমত করবেন না। তিনি স্বীকার করেন, বর্তমানে মুখে যাই বলুন না কেন জেলের ভেতরে খালেদা জিয়া একাই সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিএনপি : নির্বাচন অভিমুখে দুই ধারা
খালেদা জিয়ার ভাগ্যে কী ঘটতে যাচ্ছে, সেটা এখনো জানা না গেলেও বিএনপির বিবদমান দুটি অংশের নির্বাচনের আগে একীভূত হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। খালেদা জিয়ার আইনজীবী মোহাম্মদ নওশাদ জমির এবং বিএনপির দপ্তর সম্পাদক রুহুল কবির রিজভী দূতাবাসের রাজনীতিবিষয়ক কর্মকর্তাকে জানান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহম্মদের নেতৃত্বাধীন বিএনপির সংস্কারপন্থী অংশটির সঙ্গে তাঁদের ঐক্য হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ ২০০৭ সালের অক্টোবরে তাঁদের দল গঠনের প্রক্রিয়াটিই ছিল 'অবৈধ'। রিজভী জানান, দলের দুটি ধারার মধ্যে ঐক্য করার ব্যাপারে এ মুহূর্তে তাঁরা কোনো আগ্রহ বোধ করছেন না। (তবে দলকে একীভূত করার ব্যাপারে রিজভীর আগ্রহ না থাকার প্রধান কারণ সংস্কারবাদী অংশের জ্যেষ্ঠ নেতারা মূল দলে ফিরে এলে তিনি তাঁর বর্তমান পদ হারাতে পারেন।)
নওশাদ আরো জানান, এ মাসে আদালতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলাপচারিতার সময় নেত্রী জানান, তিনি সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদকে বিশ্বাস করেন না। (বিএনপির অধিকাংশ নেতাই মনে করেন, জেনারেল মইন আওয়ামী লীগ ঘেঁষা।) নওশাদ আরো জানান, নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে জেনারেল মইনের পদত্যাগের শর্ত জুড়ে দিতে পারে বিএনপি। তাঁরা জানান, নির্বাচন কমিশনের তিন সদস্যের পদত্যাগের দাবিও তুলবে বিএনপি। তবে এ ব্যাপারে খালেদা জিয়া নিজে এখনো কোনো বক্তব্য দেননি।

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম