উইকিলিকসের তথ্য : সরাকারী দলের বিশ্বাস জামায়াতকে শেষ করে দেবার এটাই উপযুক্ত সময়
বেশ কিছুদিন নিরব থাকার পর আবারও সরব হয়ে উঠেছে সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী মার্কিন গোপন দলিল ফাঁস করা ওয়েবসাইট উইকিলিকস। দীর্ঘ বিরতির পর ৩০ আগষ্ট নতুন করে প্রায় দেড় লাখ গোপন বার্তা প্রকাশ করেছে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের এই ওয়েবসাইটটি। প্রকাশিত বার্তাগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হচ্ছে ২০১০এর শুরুর দিকে জামায়াত নেতা ব্যারিস্টার রাজ্জাকের সাথে বৈঠক শেষে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টির রিপোর্ট।
২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর জামায়াতে ইসলামীর নেতা ব্যারিস্টার রাজ্জাকের সাথে সাক্ষাৎ করেন সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি। মরিয়ার্টি এসময় রাজ্জাককে স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়ে সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে এবং এটি তারা করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
উইকিলিকস প্রকাশিত ‘জামায়াত প্লিডস ইটস কেস বিফোর অ্যাম্বাসাডার’ শীর্ষক এই গোপন প্রতিবেদনের বেশিরভাগ জুড়েই ছিল ছাত্র সংঘর্ষ বিষয়ে মরিয়ার্টি এবং ব্যারিস্টার রাজ্জাকের কথোপকথন। প্রতিবেদনের শেষে আসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গ। এ বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে-
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার রাজ্জাক মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মরিয়ার্টি জানান, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সরকার এটি করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এবং এটি নিয়ে সামনে এগোতে চায়। কিন্তু শুরুটা কী করে করতে হবে সরকার সেটিই ধরতে পারছে না। ব্যারিস্টার রাজ্জাক এবং মার্কিন রাষ্ট্রদূত দু’জনই অবশ্য একমত হন যে ১৯৭৩ সালের ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট আন্তর্জাতিক মানের নয়। এ প্রসঙ্গে রাজ্জাক বলেন, এখন যে আইন রয়েছে তা সংশোধন করতে হবে অথবা এ ক্ষেত্রে নতুন আইন পাশ করতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার রাজ্জাকের মতামত হচ্ছে- এক্ষেত্রে তিনটি সমস্যা রয়েছে। ১. এটি মীমাংসিত একটি বিষয় যা পুনরায় সামনে নিয়ে আসাটা অপ্রয়োজনীয়; ২. এটি সবার সামনে নিয়ে আসা হয়েছে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে; এবং ৩. বর্তমানে প্রচলিত যে আইন তা আন্তর্জাতিক মানের চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে। তবে আইন সংশোধন হলে জামায়াত সরকারি পদক্ষেপে বাধা দেবে না।
আলোচনা শেষে যুক্তরাষ্ট্রকে রিপোর্ট করতে মরিয়ার্টি তার মন্তব্যে লেখেন, সরকার জামায়াতের বিরুদ্ধে যে চাপ সৃষ্টি করেছে তাতে মনে হয় না রাজ্জাকের দলের হার্ডলাইনাররা তাদের অবস্থানে স্থির থাকতে পারবেন। ১৯৭১ সালের পর জামায়াতের জন্য এটিই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। মরিয়ার্টি মন্তব্য করেন, সামান্য সংশয় থাকলেও সরকারি দলের মধ্যে হার্ডলাইনে যারা রয়েছেন তারা বিশ্বাস করেন যে, জামায়াত ও ইসলামী দলগুলোকে শেষ করে দেবার এটাই উপযুক্ত সময়।
উল্লেখ্য গত বছর বিভিন্ন দেশে দূতাবাসের সঙ্গে ওয়াশিংটনের বিনিময় করা আড়াই লাখেরও বেশি গোপন বার্তা প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে বিপাকে ফেলে দেয় উইকিলিকস।
0 comments: