উইকিলিকসের তথ্য : শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত পরিবারের সদস্য আত্মীয় ও উপদেষ্টা যারা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুটিকয়েক বিশ্বস্ত স্বজন, পারিবারিক বন্ধু এবং দীর্ঘ পরীক্ষিত অনুরক্ত উপদেষ্টাদের ওপর নির্ভর করেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দ্বিতীয় আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের মাস দুয়েকের মাথায় ২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনে পাঠানো রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টির তারবার্তায় এ কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সাড়াজাগানো ওয়েবসাইট উইকিলিকসে ফাঁস করা মার্কিন গোপন তারবার্তায় এ তথ্য পাওয়া গেছে।
ওই তারবার্তায় বলা হয়েছে, বিদেশে বসবাসরত বোন শেখ রেহানা ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সবচেয়ে বিশ্বস্ত লোকদের মধ্যে অন্যতম। বিশ্বস্ত আত্মীয়ের মধ্যে শেখ রেহানার স্বামীর ভাই প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমদ সিদ্দিকীর নাম এসেছে। হাসিনার বিশ্বস্ত পরামর্শকদের মধ্যে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এবং রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, সৈয়দ আশরাফ, এইচটি ইমাম ও গওহর রিজভীর নাম স্থান পেয়েছে। আর পছন্দের তরুণ নেতা হিসেবে দু’জন ডা. দীপু মনি ও সোহেল তাজের নাম এসেছে। যদিও এটা ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারির মূল্যায়ন। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এখন পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটেছে। এ তালিকার অন্তত তিনজন মতিয়া চৌধুরী, সৈয়দ আশরাফ ও সোহেল তাজ আগের অবস্থানে নেই। উইকিলিকসে ফাঁস হওয়া মার্কিন গোপন তারবার্তায় বলা হয়েছে, হাসিনা তার রাজনৈতিক পরিবর্তনের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি এবং দলে একটি নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব গড়ে তুলতেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজকে বাছাই করেছেন। তবে যা-ই হোক না কেন, চূড়ান্তভাবে হাসিনা তার সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিষয়ে ঘনিষ্ঠ পারিবারিক সম্পর্কের লোকদের ওপর আস্থা রাখেন।
ওই মার্কিন তারবার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারকেন্দ্রিক রাজনীতি, সিদ্ধান্ত গ্রহণে পারিবারিক সদস্য ও গুটিকয়েক বিশ্বস্ত উপদেষ্টা-নেতাদের প্রাধান্য এবং অবিশ্বস্ত নেতাদের রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করে রাখার বিষয়টিও উঠে এসেছে।
তারবার্তার সার্বিক বিষয় নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত তার মন্তব্যে বলেছেন, হাসিনার উপদেষ্টা ও পরামর্শক নির্বাচনে প্রতীয়মান হয়, অভিজ্ঞতার চেয়ে ব্যক্তিগত আনুগত্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নতুন গঠিত সরকার যেহেতু এর প্রাথমিক বাধা মোকাবিলা করছে, তাই হাসিনার লক্ষ্য অনুধাবনে এই কর্মকর্তাদের জন্য তার প্রতি আনুগত্যই যথেষ্ট হবে না। নতুন মন্ত্রী এবং উপদেষ্টারা যেহেতু শিখছেন, তাই কাঠামো নির্মাণে সরকারের দরকার যথার্থ সিদ্ধান্ত। হাসিনা বিপুল ভোটে জয়ী হলেও পাঁচ বছর পরের নির্বাচনে আবারও তাঁর জয়ী হওয়ার বিষয়টি নির্ভর করবে সরকারের কাজের ওপর।
বিশ্বস্ত পরিবার ও আত্মীয় : মার্কিন তারবার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে, লন্ডনে বসবাসরত ছোট বোন শেখ রেহানা এবং ওয়াশিংটন ডিসিতে বসবাসরত ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ওপর হাসিনা নির্ভর ও বিশ্বাস করেন। আওয়ামী লীগের এক জ্যেষ্ঠ নেতার মতে, হাসিনা সম্ভবত বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ-সম্পর্কিত বিষয়ে রেহানার ওপরই বেশি নির্ভর করেন। কারণ তার ছেলে যুক্তরাষ্ট্রে বাস করতে করতে ‘বাংলাদেশের চেয়ে আমেরিকাকেই ভালো বোঝেন।’
অতীতে রাজনৈতিক মনোনয়নে হাসিনা তার বোন রেহানার পরামর্শ চেয়েছেন এবং তা গুরুত্বসহকারে নিয়েছেন। হাসিনার রাজনৈতিক বিষয়ে পরামর্শ দেন রেহানা ও জয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে হাসিনার কারাবাসের সময় তার মতামত সরকারের কাছে তুলে ধরার ক্ষেত্রে তারাই ছিলেন বিশ্বস্ত মধ্যস্থতাকারী।
রেহানা অনেক উচ্চপর্যায়ের দলীয় সভায় অংশ নিয়েছেন এবং হাসিনার প্রচারে সহায়তা করতে তিনি বাংলাদেশ ভ্রমণ করেছেন। জয় এখনও রাজনৈতিক জীবন শুরু করেননি, তা সত্ত্বেও তিনি বেসরকারি খাতে আওয়ামী লীগের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে কাজ করছেন।
আনুগত্য, পারিবারিক সম্পর্ক ও সামরিক দক্ষতার কারণে হাসিনা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকীকে বিশ্বাস করেন এবং তার ওপর আস্থা রাখেন। সিদ্দিকীর ভাই শেখ রেহানার স্বামী। তার (তারিক) সঙ্গে হাসিনা পরিবারের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে। সিদ্দিকী মন্ত্রীপর্যায়ের উপদেষ্টা। তিনি সামরিক ও নিরাপত্তার বিষয়গুলো প্রভাবিত করেন। সিদ্দিকী হাসিনার সাবেক নিরাপত্তাপ্রধান হিসেবে কাজ করেছেন। হাসিনা সম্প্রতি তাকে একটি জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল প্রতিষ্ঠায় গবেষণার দায়িত্ব দিয়েছেন।
বিশ্বস্ত পরামর্শক
সৈয়দ আশরাফ : মার্কিন তারবার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে, হাসিনা মনে করেন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আওয়ামী লীগের একজন বিশ্বস্ত সদস্য। তিনি তাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শেখ হাসিনার কারাবাসের সময় আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বিভক্ত আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ রাখার পুরস্কার হিসেবে তাকে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সৈয়দ আশরাফ ছিলেন সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইর সঙ্গে প্রধান মধ্যস্থতাকারী। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার সমঝোতার ক্ষেত্রে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিহত চার নেতার মধ্যে অন্যতম ছিলেন সৈয়দ আশরাফের বাবা। সৈয়দ আশরাফ অনেক বছর যুক্তরাজ্যে কাটিয়েছেন। সেখানে তিনি শেখ রেহানার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। আশরাফ আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে একজন; যাকে হাসিনার মন্ত্রিসভায় বাছাই করা হয়েছে এবং যিনি তার সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের সভায় অহরহ অংশ নেন। আশরাফ দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের সদস্য। তিনি দলের মুখপাত্র হিসেবেও কাজ করেছেন এবং ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
মতিয়া চৌধুরী : বিশ্বস্ততা, স্বচ্ছতা ও শক্ত হাতে দায়িত্ব পালনের জন্য মতিয়া চৌধুরীকে কৃষিমন্ত্রী নির্বাচন করেছেন হাসিনা। বাংলাদেশের কৃষি খাত সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা রয়েছে। অতীতে আওয়ামী লীগ সরকারের কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং কৃষিবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনিই একমাত্র আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, যাকে মন্ত্রিত্ব দেয়া হয়েছে। বিশ্বস্ত পরামর্শক হিসেবেই এটা তিনি পেয়েছেন। মুসলিম দেশের একজন নারী হিসেবে মতিয়া চৌধুরী অহরহ হাসিনার কাছে যেতে পারেন, যেটা তার পুরুষ সহকর্মীদের পক্ষে সম্ভব নয়। বিডিআর বিদ্রোহের সময় পরিবারগুলোকে নিরাপদে বের করে আনার জন্য বিদ্রোহীদের সঙ্গে সমঝোতা করতে মতিয়া চৌধুরীর ওপর বিশ্বাস রেখেছিলেন হাসিনা। কৃষি মন্ত্রণালয় ও নারী বিষয়ে পরামর্শের জন্য হাসিনা সম্ভবত মতিয়ার ওপর নির্ভর করেন।
এইচটি ইমাম : হাসিনা তার বিশ্বস্ত উপদেষ্টা এইচটি ইমামকে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী স্টিয়ারিং কমিটির সহসভাপতির দায়িত্ব দিলে তিনি আলোচনায় আসেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলের প্রস্তুতিতে তার গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতামূলক অবদানের পুরস্কার হিসেবে সম্প্রতি তাকে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। হাসিনার বিশ্বস্ততা অর্জনের মূলে রয়েছে আওয়ামী লীগের প্রতি ইমামের পারিবারিক আনুগত্য। জরুরি অবস্থার সময় সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন ইমামের ছেলের বন্ধু ও ডিজিএফআইর সাবেক মহাপরিচালক গোলাম মোহাম্মদ। ইমামের ভাগ্নে ইউএসএআইডির কর্মকর্তা। হাসিনা সম্প্রতি ইমামকে বাংলাদেশের জ্বালানি সমস্যা নিরসনে একটি বিশেষ সেলের প্রধান এবং উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দিয়েছেন। একজন মার্কিন সেনা কর্মকর্তার মতে, সাবেক জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা ইমাম সরকারি পদে মনোনয়নের বিষয়ে হাসিনাকে পরামর্শ দেন। ইমামের দুর্নীতির কালিমা রয়েছে।
জিল্লুর রহমান : দলের প্রতি জিল্লুর রহমানের দীর্ঘদিনের অবদান এবং শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে তাকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেন হাসিনা। তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন। ২০০৭ সালের জুলাই মাসে হাসিনা গ্রেফতার হওয়ার পর জিল্লুর রহমান বিশ্বস্ততার সঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তার স্ত্রী আইভী রহমান ছিলেন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী এবং আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা। ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের সমাবেশে হাসিনাকে লক্ষ্য করে চালানো গ্রেনেড হামলায় তিনি নিহত হন। জিল্লুর রহমানের সঙ্গে হাসিনার ঘনিষ্ঠ পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে এবং তার স্ত্রীর আত্মীয় (নেফিউ) রেহানাকে বিয়ে করেছেন।
গওহর রিজভী : হাসিনা ও রেহানার দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত লোক গওহর রিজভী। তিনি জয়েরও পরামর্শক। রিজভী হার্ভার্ডের কেনেডি স্কুল অব গভর্নমেন্টের (কেএসজি) আশ ইনস্টিটিউটের প্রধান ছিলেন। জয়কে এ প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করানোর ক্ষেত্রে তিনি প্রধান ভূমিকা পালন করেন। ২০০৭ সালের শীতে তত্কালীন সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদকে হার্ভার্ডের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তৃতা দেয়ার আয়োজন করেন গওহর। ওই সফরের সময় হাসিনার মুক্তির বিষয়ে জয়ের সঙ্গে সাক্ষাতে আলোচনা করেন মইন। সমঝোতা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছলে ২০০৮ সালের গ্রীষ্মে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা গোলাম কাদের ও হোসেন জিল্লুর রহমান ওয়াশিংটনে হাসিনা ও রেহানার সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন। সেখানেও রিজভী উপস্থিত ছিলেন। তিনি হাসিনাকে নিরাপত্তা এবং বিশেষ করে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন। ভারতে ফোর্ড ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি হিসেবে রিজভী অতীতে কাজ করেছেন এবং ভারতের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে।
আওয়ামী লীগের উদীয়মান তারকা
দীপু মনি : আওয়ামী লীগের উদীয়মান নেতা দীপু মনি প্রথমবারের মতো মন্ত্রী এবং প্রথম নারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আনুগত্য, যোগ্যতা ও তারুণ্যের কারণে তাকে ওই পদে পছন্দ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগকে সংস্কারের জন্য হাসিনার যে প্রতিশ্রুতি, তাকে নির্বাচন তারই প্রমাণ। দীপু মনি আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন এক সদস্যের মেয়ে বলে তার পরিচিতি আছে। দীপু মনি সম্পর্কে মার্কিন রাষ্ট্রদূত তার মন্তব্যে উল্লেখ করেছেন, ‘পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকায় হাসিনা তার ওপর নির্ভর করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার এ দায়িত্ব নতুন হলেও কাজের ক্ষেত্রে এর কোনো প্রভাব পড়বে না।’
সোহেল তাজ : ৩৯ বছর বয়সী স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ। তিনি হাসিনার ‘দিনবদলের’ প্রচারণার প্রতিনিধিত্ব করেন। তা সত্ত্বেও হাসিনার পরিবারের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। তাজ হাসিনার ছেলে জয়েরও ঘনিষ্ঠ। তাজের প্রয়াত বাবা তাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৭৫ সালে কারাগারে নিহত আওয়ামী লীগের চার নেতার অন্যতম ছিলেন তিনি। তাজের মা জোহরা তাজউদ্দীন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। কিছুসংখ্যক সরকারি কর্মকর্তা উপস্থিত থাকেন, হাসিনার এমন অনেক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকেও তাজ উপস্থিত থাকেন। যদিও সরকারি কাজে তাজের অভিজ্ঞতা কম। তা সত্ত্বেও দলের নেতা হওয়ার জন্য তার মেধা আছে। এসব বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দৈনন্দিন বিষয় দেখভালে হাসিনা তার ওপর নির্ভর করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে খুব একটা জ্ঞাত নন, তাই মন্ত্রণালয়ে তার উপস্থিতি ব্যাপক হবে।
অবজ্ঞাপূর্ণ ও অবিশ্বস্ত : হাসিনার সাম্প্রতিক কারাবাসের সময় দলের যেসব নেতা ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য তার প্রতি অবিশ্বস্ত ছিলেন, তাদের তিনি দূরে সরিয়ে দিয়েছেন। হাসিনা যখন কারাগারে ছিলেন, জ্যেষ্ঠ আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু, আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত দলের নিয়ন্ত্রণ নিতে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন এবং দলের নেতা হিসেবে হাসিনাকে সরিয়ে দিতে জোর চেষ্টা চালিয়েছিলেন। তারা দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে থাকলেও হাসিনার জন্য রাজনৈতিক হুমকি নন।
হাসিনা তার সাবেক রাজনৈতিক সচিব সাবের হোসেন চৌধুরী এবং আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আসাদুজ্জামান নূরকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছেন। এই উভয় জ্যেষ্ঠ নেতা একসময় হাসিনার খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। কিন্তু জরুরি অবস্থার সময় তারা সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এতে মনে হয়, তারা হাসিনার থেকে বিচ্ছিন্ন এবং পার্লামেন্টে তাদের আসন দেয়া হয়েছে বিরোধী দলের সদস্যদের পাশে।
প্রধানমন্ত্রীর সচিব দুর্নীতিগ্রস্ত : বাংলা নিউজ জানায়, ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনে পাঠানো গোপন কূটনৈতিক তারবার্তায় মন্তব্য করা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সঠিক তথ্য বা সত্য কথা বলার লোকজন তার চারপাশে খুবই কম। ২০০৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস থেকে তারবার্তাটি পাঠানো হয়। এতে বর্তমান মহাজোট সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যাপারে মূল্যায়ন করা হয়েছে। বার্তাটি পাঠিয়েছেন তত্কালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি।
বার্তায় আমলাতন্ত্রকে সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাধা হিসেবে উল্লেখ করা হয় এবং তাদের মধ্যে দুর্নীতি ঢুকে পড়েছে বলে মন্তব্য করা হয়। বার্তায় মরিয়ার্টি আমলাদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সচিব মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামানের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। বোয়িংয়ের সঙ্গে বিমানের চুক্তির বিষয়ে সমস্যা সৃষ্টিতে তিনি জড়িত ছিলেন। ওয়াহিদুজ্জামান মার্কিন সরকারের সঙ্গে প্রতারণা করতে চেয়েছিলেন। ২০০৮ সালের একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচির তহবিল নিয়ে তিনি জালিয়াতি করার চেষ্টা করেছিলেন। পরে অবশ্য মার্কিন সরকারকে ৯ হাজার ডলার ফেরত দিতে বাধ্য হন তিনি। এই দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা ঠিক হচ্ছে কি না সে ব্যাপারে প্রশ্ন তোলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি।
বার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মার্কিন রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একটি বৈঠক করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক উপ-সহকারী সচিব মাইকেল এস ওয়েন, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, মুখ্যসচিব এমএ করিম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান ও রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিন।
বৈঠকে ওয়েন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের চিহ্নিত সুযোগের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। আরও বিস্তৃত আকারে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে ভবিষ্যতে ধারাবাহিক উচ্চতর বৈঠকের কথা উল্লেখ করেন তারা। এ সময় তিনি বাংলাদেশ সরকারের সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমের প্রশংসা করেন এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক শক্তিশালী করার বিষয়ে উত্সাহিত করেন। সেই সঙ্গে দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের ছাড় দিলে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হওয়ার বিপদের ব্যাপারেও সতর্ক করে দেন।
রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টি সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে গ্যাস অনুসন্ধানে কনোকোফিলিপস ও শেভরনকে গ্যাস কম্প্রেসার প্রকল্পের কাজ দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগের প্রশংসা করেন। বোয়িংয়ের সঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিমান ক্রয়সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল ঢুকে পড়েছে এবং তারা বাধার সৃষ্টি করছে বলে সতর্ক করেন মরিয়ার্টি। এ ব্যাপারে স্বচ্ছতা বজায় রাখার বিষয়ে জোর দেন তিনি। রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলামেলাভাবে বলেন, ‘আমলাদের মধ্যে অনেকে বাধা সৃষ্টি করায় বাংলাদেশে মার্কিন কোম্পানিগুলো নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।’
0 comments: