সম্পাদকের দশা, সন্দেশ, বিষম ভোজ, বিষম কাণ্ড


সম্পাদকের দশা

সম্পাদকীয়-
একদা নিশীথে এক সম্পাদক গোবেচারা ।
পোঁটলা পুঁটলি বাঁধি হইলেন দেশছাড়া ।।
অনাহারী সম্পাদকী হাড়ভাঙা খাটুনি সে ।
জানে তাহা ভুক্তভোগী অপরে বুঝিবে কিসে ?
লেখক পাঠক আদি সকলেরে দিয়া ফাঁকি ।
বেচারী ভাবিল মনে- বিদেশে লুকায়ে থাকি ।।
এদিকে ত ক্রমে ক্রমে বৎসরেক হল শেষ ।
'নোটিশ' পড়িল কত 'সম্পাদক নিরুদ্দেশ' ।।
লেখক পাঠকদল রুষিয়া কহিল তবে ।
জ্যান্ত হোক মৃত হোক ব্যাটারে ধরিতে হবে ।।
বাহির হইল সবে শব্দ করি 'মার মার' ।
-দৈবের লিখন, হায়, খণ্ডাইতে সাধ্য কার ।।
একদা কেমনি জানি সম্পাদক মহাশয় ।
পড়িলেন ধরা- আহা দুরদৃষ্ট অতিশয় ।।
তারপরে কি ঘটিল কি করিল সম্পাদক ।
সে সকল বিবরণে নাহি তত আবশ্যক ।।
মোট কথা হতভাগ্য সম্পাদক অবশেষে ।
বসিলেন আপনার প্রাচীন গদিতে এসে ।।
(অর্থাৎ লেখকদল লাঠৌষধি শাসনেতে ।
বসায়েছে তারে পুনঃ সম্পাদকী আসনেতে ।।)
ঘুচে গেছে বেচারীর ক্ষণিক সে শান্তি সুখ ।
লেখকের তাড়া খেয়ে সদা তার শুষ্কমুখ ।।
দিস্তা দিস্তা পদ্য গদ্য দর্শন সাহিত্য প'ড়ে ।
পুনরায় বেচারির নিত্যি নিত্যি মাথা ধরে ।।
লোলচর্ম অস্থি সার জীর্ণ বেশ রুক্ষ্ণ কেশ ।
মুহূর্ত সোয়াস্তি নাই- লাঞ্ছনার নাহি শেষ ।। 


সন্দেশ

সন্দেশের গন্ধে বুঝি দৌড়ে এলে মাছি ?
কেন ভন্‌ ভন্‌ হাড় জ্বালাতন ছেড়ে দাওনা বাঁচি !
নাকের গোড়ায় সুড়্‌সুড়ি দাও শেষটা দিবে ফাঁকি ?
সুযোগ বুঝে সুড়ুৎ ক'রে হুল ফোটাবে নাকি ?

 

 

বিষম ভোজ

"অবাক কাণ্ড !" বললে পিসী, "এক চাঙাড়ি মেঠাই এল-
এই ছিল সব খাটের তলায়, এক নিমিষে কোথায় গেল ?"
"সত্যি বটে" বল্‌‌লে খুড়ী, "আনল দু'সের মেঠাই কিনে-
হঠাৎ কোথায় উপ্‌‌সে গেল ? ভেল্কিবাজি দুপুর দিনে ?"
"দাঁড়াও দেখি" বল্‌‌লে দাদা, "করছি আমি এর কিনারা-
কোথায় গেল পট্‌লা ট্যাঁপা- পাচ্ছিনে যে তাদের সাড়া ?"
পর্দাঘেরা আড়াল দেওয়া বারান্দাটার ঐ কোণেতে
চল্‌ছে কি সব ফিস্‌ ফিস্‌ ফিস্‌ শুনল দাদা কানটি পেতে ।
পট্‌লা ট্যাঁপা ব্যস্ত দুজন টপ্‌টপাটপ্‌ মিঠাই ভোজে,
হঠাৎ দেখে কার দুটো হাত এগিয়ে তাদের কানটি খোঁজে ।
কানের উপর প্যাঁচ্‌ ঘোরাতেই দুচোখ বেয়ে অশ্রু ছোটে,
গিল্‌‌বে কি ছাই মুখের মিঠাই, কান বুঝি যায় টানের চোটে ।
পটলবাবুর হোম্‌রা গলা মিল্‌ল ট্যাঁপার চিকন সুরে
জাগ্‌ল করুণ রাগরাগিণী বিকট তানে আকাশ জুড়ে ।


বিষম কাণ্ড

কর্তা চলেন, গিন্নী চলেন, খোকাও চলেন সাথে,
তড়্‌বড়িয়ে বুক ফুলিয়ে শুতে যাচ্ছেন রাতে ।
তেড়ে হন্‌হন্‌ চলে তিনজন যেন পল্টন চলে,
সিঁড়ি উঠ্‌‌তেই, একি কাণ্ড ! এ আবার কি বলে !
ল্যাজ লম্বা, কান গোল্‌ গোল্‌, তিড়িং বিড়িং ছোটে,
চোখ্‌ মিট্‌মিট্‌, কুটুস্‌ কাটুস্‌- এটি কোন্‌জন বটে !
হেই ! হুস্‌ ! হ্যাস্‌ ! ওরে বাস্‌‌রে মতলবখানা কিরে,
করলে তাড়া যায় না তবু, দেখ্‌‌ছে আবার ফিরে ।
ভাবছে বুড়ো, করবো গুঁড়ো ছাতার বাড়ি মেরে,
আবার ভাবে ফস্‌‌কে গেলে কাম্‌‌ড়ে দেবে তেড়ে ।
আরে বাপ্‌‌রে ! বস্‌ল দেখ দুই পায়ে ভর ক'রে,
বুক দুর দুর বুড়ো ভল্লুর, মোমবাতি যায় প'ড়ে ।
ভীষণ ভয়ে দাঁত কপাটি তিন মহাবীর কাঁপে,
গড়িয়ে নামে হুড়মুড়িয়ে সিঁড়ির ধাপে ধাপে ।

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম