আমাদের এই উপমহাদেশে ইসলামের ঝান্ডা নিয়ে বিজয়ীর বেশে আসলেন যুবক বীর সোনালী মোহাম্মদ বিন কাসেম। কিন্তু তারও আগে ইসলমের সমুহান আদর্শের পরিচয় পেয়েছিল এ দেশের মানুষ। ইসলামের আহবান নিয়ে এসেছিলেন ইসলাম ধর্ম প্রচারক দরবেশগণ। অল্প কিছু দিনের মধ্যে দিল্লীর শাসন ক্ষমতায় বসলো মুসলিম শাসকরা। আর ধীরে ধীরে এদেশে মুসলামানের সংখ্যা বাড়তে লাগল। ইতিহাস সাক্ষী এদেশের মুসলিম শসকরা অন্য ধর্মের লোকদেরকে ক্ষমতার জোরে মুসলমান বানাননি। বরং এ দেশের লোক মুসলমান হয়েছিল ইসলামের সুমহান আদর্শে মুদ্ধ হয়েই। মুসলিম শাসকরা সবাই যে ভাল ছিলেন তা নয়। ধীরে ধীরে তারা আরাম-আয়েশের দিকে আকৃষ্ট হয়ে পড়লেন। দেশের কল্যাণ, দশের কল্যাণের কথা ভুলে গেলেন। ফলে শাসন ক্ষমতা দিন দিন দুর্বল হয়ে যেতে লাগলো। মুসলমানদের পূর্বে উপমহাদেশের শাসন ক্ষমতা ছিল অন্য ধর্মাবলম্বীদের হাতে। তারা ছিল মুসলমানদের উপর চটা। ইংরেজ বেনীয়রা তাদের সহায়তায় এদেশের শাসন ক্ষমতায় এলো। এবার শুরু হলো এদেশের মুসলমানদের পরাধীন জিন্দেগী।
মুসলমানরা অবশ্য পরাধীনতা সহ্য করেননি। ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মুখর হয়ে হলের মহীশূরের হায়দার আলী ও টিপু সুলতান। ১৮৫৭ সালে জেগে ওঠলো স্বাধীন চেতা মুসলমানরা। ইংরেজদের বিরুদ্ধে শুরু হলো ভারতের সর্বত্র মুসলমানদের এক ব্যাপক সংগ্রাম। এ সংগ্রামে নেতৃত্ব দিলেন দিল্লীর সম্রাট বাহাদুর শাহের যোগ্য সেনাপতি জেনারেল বখত খান, বাংলার মুসলমানরা যখনই সুযোগ পেয়েছে তখনই ইংরেজদের বিরুদ্ধে জিহাদ করেছে। তাদের হারানো স্বাধীনতাকে ফিরে পাওয়ার জন্য করেছে আপ্রাণ চেষ্টা। এ দেশে ইংরেজদের প্রধান শত্রু ছিল তাই মুসলমানরা। মুসলমানদেরকে তারা সব রকমের অধিকার থেকে বঞ্চিত করলো। আর অন্যান্য ধর্মালম্বীরা যারা মুসলমানদের উপর ছিল হাড়ে চটা তারা এগিয়ে আসলো ইংরেজদের খয়ের খাঁ হয়ে। মুসলমানদের অবস্থা হলো আরো কাহিল। কিন্তু শিকল দিয়ে মানুষ কোন দিন অন্য মানুষকে শতাব্দীর পর শতাব্দী বেঁধে রাখতে পারে না। আর সেই শিকল ভাঙ্গার ইতিহাস সবারই জানা।
১৯৪৭ সালে সৃষ্টি হলো পাকিস্তান। এই দেশের মুসলমানরা চেয়েছিলো একটা ইসলামী সমাজ কায়েম করবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য উপমহাদেশের মুসলমানদের! পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতায় যারা এলো তারা মুসলমানদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে দিলো না। তারা মুখে মুখে শুধু ইসলামের কথা বললেও ইসলামকে প্রতিষ্ঠার কোন বাস্তব প্রচেষ্টাই চালালো না। ইসলামী আদর্শ ও ন্যায়নীতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার ফলে দেখা দিলো চরম বিপর্যয়। দেশের এক অংশের লোকের ওপর চললো জুলুম ও বেইনসাফী। বাঙালী মুসলমানরা যে আশায় পাকিস্তান চেয়েছিল তা তো তারা পেলোই না, বরং তারা হলো বহুমুখী জুলুমের শিকার। তাই বাঙালী মুসলমানা শুরু করলো স্বাধীনতার সংগ্রাম। ১৯৭১ সালে অনেক ত্যাগ তিতিক্ষা আর সংগ্রামের ফলে সৃষ্টি হলো স্বাধীন বাংলাদেশ। বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। সারা বিশ্বের মুসলমানদের আশা-আকাঙ্ক্ষার সাথে আজ বাংলাদেশের মানুষ জড়িত। আজ সারা দুনিয়ায় প্রায় ১২০ কোটি মুসলমান। অনেকগুলো দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা মুসলমানদের হাতে। তবুও দুনিয়অর দরবারে মুসলিম আজো চরমভাবে লাঞ্চিত।
সারা বিশ্বের নিপীড়িত মানবতার মুক্তি সনদ আল কুরআন যাদের ঘরে, সেই জাতিকে আজ বিশ্বের মানুষের দুয়ারে দুয়ারে হাত পেতে বেড়াতে হচ্ছে। বাংলাদেশের মুসলমান হিসেবে আমাদের উপর যে দায়িত্ব তা আমরা ভুলে যেতে পারি না। আজ সারা বিশ্বের অবহেলিত লাঞ্চিত মানবতার মুক্তি একমাত্র ইসলামের পথেই। তাই ইসলামের অনুসারী হয়ে আমরা বসে থাকতে পারি না। আজকের দুনিয়া দ্রুত পরিবর্তনের পথে। দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে ধ্বংসের পথে। মুসলিম হিসেবে তাই আমাদের দায়িত্ব পালনের পথে আমাদেকেও দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসতে হবে। যতই কঠিন হোক না কেন, এটা আমাদের দায়িত্ব। ধ্বংসের পথ থেকে মানবতাকে মুক্ত করার দায়িত্ব এ যুগের মুসলমানদের। সারা বিশ্বের মানুষের দিকে তাকিয়ে ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে এগিয়ে আসতে হবে মুসলমানদেরকে। কাজে লাগাতে হবে মুসলিম জাহানে আল্লাহ যে অসীম সম্পদ দিয়েছেন তা সব। এগিয়ে আসতে হবে মুসলিম যুবক, তরুণ, বৃদ্ধ সবাইকে।
একাজের জন্যে প্রথমেই মুসলিম মিল্লাতকে করতে হবে, পুনর্গঠিত, ঐক্যবদ্ধ। বহুদিনের জড়তার ঘোর কাটিয়ে এ জাতির মধ্যে আনতে হবে প্রাণ উদ্দীপনা। মানবতার মুক্তি সৈনিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে জাতিকে এক সুষ্ঠু পরিকল্পনার আলোকে মুসলিম যুবকদেরকে। যাতে তারা এ দায়িত্ব সহজেই বহন করতে পারে।
তৃতীয় অধ্যায় : উপমহাদেশে ইসলাম
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
রিসেন্ট ব্লগ পোষ্টস
বিষয়শ্রেণী
রাইটার
প্রিয়-ক্লিক
কিছু বই
- অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা
- অর্থনীতিতে রাসূল (সা) এর দশ দফা
- আদর্শ মানব মুহাম্মদ (সা)
- আসহাবে রাসূলের জীবনকথা
- ইসলাম ও জিহাদ
- ইসলাম পরিচিতি
- ইসলামী আন্দোলন : সাফল্যের শর্তাবলী
- ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক
- ইসলামী আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি
- ইসলামী দাওয়াত ও কর্মনীতি
- ইসলামী নেতৃত্বের গুণাবলী
- ইসলামী বিপ্লবের পথ
- ইসলামী রেনেসাঁ আন্দোলন
- ইসলামী সমাজে মজুরের অধিকার
- একটি আদর্শবাদী দলের পতনের কারণঃ তার থেকে বাঁচার উপায়
- চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান
- দায়ী’ ইলাল্লাহ - দা’ওয়াত ইলাল্লাহ
- নামাজ কেন আজ ব্যর্থ হচ্ছে
- নামায-রোজার হাকীকত
- মোরা বড় হতে চাই
- যাকাতের হাকীকত
- রাসূলুল্লাহর বিপ্লবী জীবন
- শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী ও তাঁর চিন্তাধারা
- সত্যের সাক্ষ্য
- হেদায়াত
0 comments: