একটা সমাজকে গঠন করতে হলে সে সমাজের সকলেই এগিয়ে আসতে হয়। এগিয়ে আসতে হয় কিশোরদেরকেও। আজকের কিশোররাই আগামী দিনের জাতির ভবিষ্যৎ। তাই আমরা দেখি হযরত মুহাম্মদ (সা) যখন মক্কার অন্ধকার সমাজে আলোর মশাল জ্বালাতে অগ্রসর হলেন তখন তার সাথে কচি কিশোর সাহাবীরও এগিয়ে এলেন। এ সময় হযরত আলী (রা) কিশোর বয়সের। হযরত সবেমাত্র নবুয়ত পেয়েছেন। তিনি তার সমাজের বড় বড় নেতাদেরকে ডাকলেন। সবাইকে বলেন তার সাথী হতে। সকলেই ভয় পেলো। কেননা সত্যের পথে চলতে যে হিম্মতের দরকার তাতো আর সকলের মধ্যে থাকে না। কিন্তু কিশোর বালক হযরত আলী (রা) তখন ঘোষণা করলেন-হতে পারি আমি বয়সে সকলের চেয়ে কনিষ্ঠ আমার গলার আওয়াজ, অনেক ক্ষীণ, আমার পা দুটো কচি, এই কঠিন সংগ্রামের পথে চলার যোগ্য নয়, তবুও আমি এই পথ গ্রহণ করলাম। আমি প্রস্তুত এ জন্য জিহাদ করতে। এমনি বহু সংগ্রামী কিশোর সাহাবী রাসূলের সাথে জিহাদে শরীক হয়েছিলেন।
ইসলামের বিজয় ইতিহাসেও অনেক বীর কিশোরের কথা আজো সোনার অক্ষরে লেখা আছে তাই যারা কিশোর সাহাবী রাসূলের সাথে জিহাদে শরীক হয়েছিলেন। ইসলামের বিজয় ইতিহাসেও অনেক বীর কিশোরের কথা আজো সোনার অক্ষরে লেখা আছে তাই যারা কিশোর তরুণ তাদের এই মহান সংগ্রামের পথে এগিয়ে আসা দরকার। দুঃস্থ মানবতার দুয়ারে সত্যের পয়গাম পৌঁছাতে মানুষকে ন্যায়ের পথে এগিয়ে নিতে, সারা বিশ্বকে ইসলামের আলোকে আলোকিত করতে, মুসলিম কিশোরদেরকেও আজ এগিয়ে আসতে হবে। বিংশ শতাব্দীর সব সমস্যার সুষ্ঠ এবং সুন্দর সমাধান ইসলামের পথে রয়েছে। সে ইসলামকে এই দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব মুসলমানদের। কিন্তু সেই মুসলমানদের বর্তমান অবস্থা কি তা একবার ভেবে দেখা দরকার। মুসলমানদের নিজেদের দুর্বলতার কারণে তাদের উপর নেমে এসেছিল পরাধীনতার অন্ধকার। বিজয়ী পাশ্চাত্য শক্তিগুলো মুসলমানদের ওপর শুধূ শাসন চালায়নি, তারা তাদের শিক্ষা-দীক্ষা, রীতি-নীতর মূলে আঘাত হেনেছিল।
এই আঘাতে মুসলমানদের অনেকের মধ্যে বিশেষ করে আধুনিক শিক্ষিতদের মধ্যে দেখা দিলো চিন্তাধারার পরিবর্তন। তারা প্রকৃত ইসলামী শিক্ষা পেলো না। ইসলাম বা ধর্ম সম্পর্কে যা কিছু শিখলো তা হলো পাশ্চাত্যের শাসকদের যুগে ইসলাম চলতে পারে না। ইসলাম এ যুগে সব সমস্যার সমাধান দিতে পারে না। আসলে ইসলাম সম্পর্কে ভ্রান্ত এবং অসম্পূর্ণ জ্ঞানই এ ধারণার জন্য দায়ী। তাই মুসলিম মিল্লাতকে পুনর্গঠিত করতে হলে দরকার ইসলামী শিক্ষার ব্যাপক প্রসার। অনেকে মনে ইসলামের সাথে আধুনিকতার কিংবা বিজ্ঞানের মিল নেই। আসলে ইসলামে আধুনিকতার কিংবা বিজ্ঞানের ন্যায় নব আবিষ্কারের বিরোধী নয়। ইসলামের বিরোধ পাশ্চাত্যের মতবাদের সাথে, চিন্তধারার সাথে। তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে দুনিয়ার মানুষের জন্যে চলার পথ দিতে চায়। আর ইসলাম আল্লাহর দেখানো পথে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা এবং তার প্রয়োগের মাধ্যমে মানবতার মুক্তি আনতে চায়। ন্যায়-নীতি বাদ দিয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষতায় কি লাভ? নিজের ক্ষমতাকে প্রতিষ্ঠার জন্যে, মানুষকে মারার জন্য বুদ্ধি খাটিয়ে আনবিক বোমার মত ধ্বংসাত্মক মরণাস্ত্র তৈরি কি আধুনিকতা? ইসলাম এই হিংসা, ঘৃণা ও স্বার্থপরতা মাখা আধুনিকতা চায় না। সেই সকল সেকেলেপনা এবং পুরাতন কুসংস্কারের পূজারীও নয়। বহুদিনের জড়তার ফলে ইসলামের নামে যে সমস্ত কুসংস্কার চলছে তার অবসান চাই। আর এসব কিছুর জন্যে প্রয়োজন প্রকৃত ইসলামী শিক্ষার ব্যাপক প্রসার।
মুসলিম কিশোরদেরকে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। যাতে করে একজন ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সাথে সাথে তারা মুসলিম ডাক্তার কিংবা মুসলিম ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। তবেই না সমাজ তাদের দ্বারা উপকৃত হবে। মুসলিম যুবকদের উপর আরও একটি বিরাট দায়িত্ব রয়েছে। পৃথিবীর মানুষ ইসলামকে চায়। তারা চায় ইসলামকে যুক্তি ও বুদ্ধি দিয়ে যাচাই করে নিতে। আর যেহেতু ইসলাম এখন পৃথিবীর কোথাও প্রতিষ্ঠিত নেই, তাই মানুষ ইসলামকে জানবে বুঝবে যেভাবে তা পেশ করা হবে সেই ভাবেই। বর্তমান যুগের যাবতীয় সমস্যার ইসলাম কি সমাধান দেয় তা তাদের কাছে পরিষ্কার করতে হবে। পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞান, সভ্যতার সাংস্কৃতির সুষ্ঠ পর্যালোচনা করে দেখিয়ে দিতে হবে এর দোষ ত্রুটি,সত্য, মিথ্যা, গ্রহণীয় ও বর্জনীয় কি আছে। আর এর জন্যে প্রয়োজন ইসলামী সাহিত্যের আধুনিক জ্ঞা-বিজ্ঞানের গভীর অধ্যয়ন এবং কুরআন, হাদীস ও ইসলামী সাহিত্যের ওপর ব্যাপক গবেষণা। এই বিরাট দায়িত্বের জন্যে এখন থেকে মুসলিম কিশোরদের তৈরি হতে হবে।
জাতির পুনর্ঘঠনের এ কাজ সহজ নয়। এ সমাজের মধ্যে এমন অনেকে আছেন যারা নিজেদেরকে গড়ে তুলতে এবং অন্যদেরকে গড়ার কাজে আগ্রহী। এই সব সত্যপ্রিয় কিশোরদেরকে একত্রে অগ্রসর হতে হবে।
এ কাজ তখন সম্ভব যখন ইসলামের আহবান বলিষ্ঠভাবে চারিদিকে প্রচারিত হবে। রাসূলে খোদা (সা) সামাজের লোকদের তিরষ্কার, অপবাদ, লাঞ্চনা উপেক্ষা করে ইসলামের আহ্বানকে তাদের সামনে তুলে ধরেছিলেন। ফলে তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছিলো সে যুগের সত্যপ্রিয় মানুষরা। তেমনি ভাবে ইসলামের বিপ্লবী আহ্বানকে যদি সত্যিকারভাবে সমাজে প্রচার করা হয় তবে এই বিংশ শতাব্দীর ঘুনে ধরা সমাজ থেকেও বেরিয়ে আসবে সত্যের মশাল নিয়ে হযরত আলী (রা) এর মত অনেক তাজা তরুণ প্রাণ হযরত আবু বকর (রা), হযরত ওসমান (রা) এর মতে অনেক দানশীল ব্যক্তি এবং হযরত ওমর (রা)এর মত সিংহদিল পুরুষ। খালেদ, মূসা তারিকের মত মুসলিম তরুণরাও জেগে উঠবে সত্যের মশাল নিয়ে।
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স) তাঁর সারা জিন্দেগীতে অশেষ কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করে নিজেদের জীবনে ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তাঁর চলা ফেরা, চাল-চলন, স্বভাব চরিত্র ছিল ইসলামের জীবন্ত প্রতীক। তাঁকে দেখেই মানুষ বুঝলো ইসলামের পথ কত মহান, ইসলাম কত সুন্দর। আসলে এটাই নিয়ম। সাধারণ মানুষ একটা আদর্শকে তখনই গ্রহণ করে যখন সে বাস্তবে দেখতে পায় সে আদর্শের মহত্ব। বিংশ শতাব্দীর মানুষ ইসলাম গ্রহণ করবে যখন মসুলমানেরা তাদের জীবনে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করে দিখিয়ে দিবে যে ইসলাম মানুষকে কত উদার করে কত মহৎ করে।
ধূসর মরুর কঠোর হৃদয়ের বেদুঈনরা যদি ইসলামের দিকে আকৃষ্ট হতে পারে তবে আজকের বিংশ শতাব্দীর জ্ঞান বিজ্ঞানের উৎকর্ষ মানুষ কেন ইসলামের দিকে আসবে না? আমরা যদি আমাদের নিজেদের জীবনে ইসলাম রীতি-নীতি মেনে চলি ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে তুলতে পারি এক সুন্দর সুখী সমাজ, তবে দলে মানুষের এই মহান মুক্তির পথে এগিয়ে আসবে। তাই মুসলিম তরুণদেকে আজ নিজেদের জীবনকে ইসলামের রঙে রাঙিয়ে তুলতে হবে। তাদেরকে ইসলামের উজ্জ্বল প্রতীক হতে হবে। তাদের দেখেই মানুষ ইসলামের দিকে আসবে-তাদের কথা শুনে নয়। আর এ জন্যে প্রয়োজন অনেক বেশী করে ইসলামী জ্ঞানের চর্চা, ইসলামী চরিত্র গঠন।
মুসলিম তরুণদের কাছে তাই উদাত্ত আহবান- এসো মানবতার মুক্তির পয়গাম চারিদিকে ছড়িয়ে দেই, এসো গড়ে তুলি সত্যের ঝান্ডাবাহী একদল সৈনিক- যারা মানুষের ওপর মানুষের প্রভুত্বকে খতম করে দিয়ে গড়ে তুলবে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে এক সুন্দর সমাজ। যেখানে মানবতা পাবে মুক্তি,বিরাজ করবে শাস্তি, ন্যায়নীতি, সততা ও ভ্রাতৃত্ব।
এই উদ্দেশ্য আমাদের চলতে হবে সুশৃংখল ও সুসংগঠিতভাবে তৈরি করতে হবে নিজেদের মধ্যে সীসাঢালা প্রাচীরের মত মজবুত সম্পর্ক। রাসূলের (সা) দেখানো পথ ধরে আমাদের অগ্রসরা হতে হবে। জেনে নিতে হবে সেই আলোকিত পথের ঠিকানা।
চতুর্থ অধ্যায় : কিশোরদের দায়িত্ব
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
রিসেন্ট ব্লগ পোষ্টস
বিষয়শ্রেণী
রাইটার
প্রিয়-ক্লিক
কিছু বই
- অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা
- অর্থনীতিতে রাসূল (সা) এর দশ দফা
- আদর্শ মানব মুহাম্মদ (সা)
- আসহাবে রাসূলের জীবনকথা
- ইসলাম ও জিহাদ
- ইসলাম পরিচিতি
- ইসলামী আন্দোলন : সাফল্যের শর্তাবলী
- ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক
- ইসলামী আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি
- ইসলামী দাওয়াত ও কর্মনীতি
- ইসলামী নেতৃত্বের গুণাবলী
- ইসলামী বিপ্লবের পথ
- ইসলামী রেনেসাঁ আন্দোলন
- ইসলামী সমাজে মজুরের অধিকার
- একটি আদর্শবাদী দলের পতনের কারণঃ তার থেকে বাঁচার উপায়
- চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান
- দায়ী’ ইলাল্লাহ - দা’ওয়াত ইলাল্লাহ
- নামাজ কেন আজ ব্যর্থ হচ্ছে
- নামায-রোজার হাকীকত
- মোরা বড় হতে চাই
- যাকাতের হাকীকত
- রাসূলুল্লাহর বিপ্লবী জীবন
- শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী ও তাঁর চিন্তাধারা
- সত্যের সাক্ষ্য
- হেদায়াত
0 comments: