মানবজীবনে পর্দা একটি বাস্তব প্রয়োজন, বিশেষ করে নারী চরিত্রের জন্য অত্যাবশ্যকীয় ভূষণ।
আল্লাহ তায়ালা যেমন মেয়েদের প্রতি আবশ্যক করেছেন পর্দাকে তেমনি করেছেন পুরুষদের প্রতিও।
কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয়, নারীদের পর্দাই আজকে সবচেয়ে বেশী পরিত্যক্ত, উপেক্ষিত। আবার কোথাও কোথাও ঘৃণিত এবং সেকেলে হিসেবে কথিত।
অথচ পর্দা হলো সকল সামাজিক বিধি-বিধানের একত্রিভূত এমন একটি ঠিকানা বা সূত্র যা দিয়ে মহিলা ও পুরুষ সবাই ইসলামী সমাজ ও জীবন ব্যবস্হার শৃঙ্খলা এবং বিধানের আওতাভূক্ত হতে আর সেই অনুযায়ী বাস্তব জীবন চালাতে বিশেষভাবে সক্ষম হয়। মূলত, সমাজ ও জীবনকে নিস্কলুষ ঝামেলামুক্ত ও শৃঙ্খলাবদ্ধ রাখার জন্যেই আল্লাহ তায়ালা এই পর্দা ব্যবস্হাকে অবধারিত করে দিয়েছেন। আশা করি এই ক্ষুদ্র প্রয়াসটুকু প্রকৃত অবস্হা অনুধাবন করতে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে। তবেই সার্থক হবে আমাদের শ্রম। আল্লাহ আমাদের পর্দা করার তওফিক দিন। আমিন!!!
শাহ ওয়ালিউল্লাহ
নিখিল বিশ্বের একমাত্র সৃজন, রক্ষণ, পালন এবং বিবর্ধন কর্তা মহান আল্লাহ তা’আলার প্রশংসা জ্ঞাপন করছি, সাথে সাথে দরূদ ও সালাম পেশ করছি সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল আম্বিয়াকূল শিরোমণি মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ এর প্রতি , তাঁর পরিবার-পরিজন, সাহাবী ও অনুসারীগণের প্রতি।
মুসলিম বোন! কে তোমাকে পর্দার আদেশ দিয়েছেন?
অবাক হয়ো না---
* জনৈক ছাত্রী তার এক সহপাঠিনীকে পর্দাবিহীন (হিজাববিহীন) অবস্হায় মাষ্টার্সের মৌখিক পরীক্ষায় তার সাথে যেতে আহবান জানায়, যে পরীক্ষাটি ছিল শুধু পুরষ শিক্ষকদের সাথে। বান্ধবীর অনাগ্রহের আভাষ পেয়ে আহবানকারিনী বলে উঠল : “ওহে --- তুই কি জানিস না, আমরা তো বিংশ শতাব্দীর মানুষ!”
* জনৈক মহিলা ডাক্তার হাসপাতালে যখন ডাক্তারদের বিশেষ পোষাক পরিধান অবস্হায় ছিল, তখন মনে হচ্ছিল লজ্জা-শরম যেন অনেক আগেই তার থেকে পালিয়ে গেছে। সে তার কেশ সহ অবয়বকে খুলে দিয়েছিল এবং ক্রমেই নিজের পরিধেয় বস্ত্র গুটিয়ে নিচ্ছিল। সে যেন বুঝাতে চাচ্ছিল এটাও ডাক্তারী বিদ্যার জন্যে অপরিহার্য, যে ব্যক্তি তার দ্বীন থেকে দূরে সরে যাবে এবং মহিলারা তার লজ্জা নিবারণ ও ইযযত আবরু রক্ষার পর্দাকে দূরে নিক্ষেপ করবে।
* একবার কয়েকজন আত্মীয় আমাদের বাড়ীতে বেড়াতে এসেছিলেন। যারা স্বভাবতই ছিলেন বিনয়ী এবং পর্দার ব্যাপারে উৎসাহী। কিন্তু হঠাৎ লক্ষ্য করে দেখলাম, তাদের ড্রাইভার তাদের মধ্য এসে ঢুকলো এবং তাদের পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে বসে পড়লো। কিন্তু এ ব্যাপারে তারা কোনই ভ্রক্ষেপ করলেন না। অবস্হা দেখে মনে হল, তারা ভাবেন এর সাথে পর্দার করার কোন প্রয়োজন নেই।
বোন হে,
তুমি কি ধারণা করতে পারো ঐ সমস্ত মহিলারা কি জানে, কেন তারা পর্দা করবে? উপরোল্লেখিত ঘটনাবলী এবং অনুরূপ ঘটমান অসংখ্য অবস্হা এটাই প্রমাণ করে যে, তাদের কেউ পর্দাকে বিশেষ সামাজিক কালচার বলে দেখেন, যা সামাজিক ভদ্রতার উত্তরাধিকার সূত্রেপ্রাপ্ত।
আবার কেউবা এটাকে তার পিতার কিংবা স্বামীর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনার্থে ব্যবহার করেন যারা তাদের পর্দার নির্দেশ দেন। আবার কেউবা মনে করেন, যে এটা হলো একটি বিশেষ ঐতিহ্য এবং যুগ যুগ ধরে প্রতিপালিত হয়ে আসা একটি কাজ যার সংরক্ষন ও পালন জরুরী।
কিন্তু (বোন হে) ঐ সকল মহিলারা কি কখনও নিজেরদের প্রশ্ন করেছে যে, তারা কেন পর্দা করবে? পর্দা করাটা কার আনুগত্য?
তাহলে শুনে নাও, এটা হল সেই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আনুগত্য যিনি তাঁর প্রিয় নবী মুহাম্মদকে (সাঃ) সূরা আহযাবের ৫৯ আয়াতে এরশাদ করেছেন :
অর্থাৎ “হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও মু’মিন মহিলাগণকে বলে দিন, তারা যেন উপর দিক থেকে (নিজেদের মুখমন্ডল ও বক্ষদেশের উপর) নিজেরদের চাদরের আঁচল ঝুলিয়ে দেয়, এতে তাদের চেনা সহজতর হবে। ফলে তাদের উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।” (সূরা আহ্যাব, ৩৩ : আয়াত ৫৯)
উল্লেখ্য “তারা যেন নিজেদের উপর নিজেদের চাদরের আঁচল ঝুলিয়ে দেয়” এর অর্থ হলো- চাদর দিয়ে যেন উপর থেকে ঢেকে নেয়। অন্যকথায় মুখমন্ডল ও বক্ষদেশ অনাবৃত রেখে যেন বের না হয়। অনুরূপ “এতে তাদের চেনা সহজতর হবে” এর অর্থ হলো- তাদেরকে এই সরল ও শালীন পোষাক পরিহিতা দেখে প্রত্যেকে এ কথা সহজেই বুঝে নেবে যে, তারা সম্ভ্রমশীলা মহিলা, তারা উচ্ছৃঙ্খল ও খেলাড়ি স্ত্রীলোক নয়। তাই যে কোন দূরাচার নিজের অন্তরের বাসনা তাদের দ্বারা পূর্ণ করার আশা করবে না।”
তদ্রূপ “তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না” এ মর্মার্থ হলো-তারা সম্ভ্রান্ত ও বিশেষ মূল্যবোধের অধিকারীনী বলে পরিচিত হওয়ায় অশালীন আমন্ত্রণের লক্ষ্য হবেনা।
বোন হে,
তারা কি জানে যে, এটা হলো তাদের সৃষ্টিকর্তা ও রিযক্বদাতার আদেশের বাস্তবায়ন। যিনি আকাশ ও যমীনের একমাত্র স্রষ্টা এবং নিয়ন্ত্রা। যিনি সর্বাধিক অবহিত কিসে তার সৃষ্টির কল্যাণ ও সংশোধন নিহিত আর কিসে নয়।
আল কোর’আনের ঘোষণা হলো :
“আকাশ ও যমীনে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর।” (সূরা বাক্বারা, ২: আয়াত ২৮৪)
বোন হে,
তিনি হলেন তাদের, তোমার এবং আমাদের, তথা সকলের স্রষ্টা, যে সম্পর্কে আল-কোর’আনের ঘোষণা :
“তিনিই তো আল্লাহ! তোমাদের সৃজন-রক্ষণ ও পালন ও বিবির্ধন কর্তা। তিনি ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য কোন সত্তা (মা’বুদ) নেই। তিনিই সবকিছুর স্রষ্টা। সুতরাং তোমরা তারই ইবাদত (গোলামী) কর। আর তিনিই সব জিনিসের উপর দায়িত্বশীল (তত্ত্বাবধায়ক)।” (সূরা আল আন’আম, ৬ : আয়াত ১০২)
তিনি তোমার, তাদের তথা সকলের প্রতি নি’আমত দানকারী অনুগ্রহশীল।
আল কোর’আনের ভাষায় :
“তোমরা যে সকল অনগ্রহ ভোগ করা তা আল্লাহর নিকট হতেই এসেছে।”(সুরা নাহ্ল, ১৬ : আয়াত ৫৩)
তিনি সেই সত্তা যিনি তোমাকে তাদেরকে তথা সকলকে মৃত্যু দানকারী।
আল কোর’আনের ভাষায়-
“মৃত্যু যন্ত্রণা নিশ্চিতই আসবে। আর এ তাই, যা থেকে তোমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছিলে।” (সূরা ক্বাফ, ৫০ : আয়াত ১৯)
তিনি সেই পরাক্রমশালী সত্তা যিনি নিজেই আল কোর’আনে ঘোষণা করেছেন :
“সেই দিন দয়াময়ের কাছে পরহেজগার তথা মুত্তাকিদের অতিথিরূপে সমবেত করবো। আর অপরাধীদের তৃষ্ণাতুর অবস্হায় জাহান্নামের দিকে হাকিয়ে নিয়ে যাব।” (সূরা মারইয়াম, ১৯ : আয়াত ৮৫-৮৬)
তিনি হলেন সেই ভয়াবহ পরিণাম দিবসের একমাত্র অধিকর্তা ও বিচারক। আল কোর’আনের ভাষায় সেই দিনের চিত্র হল :
“সেদিন তোমরা দেখতে পাবে যে, প্রত্যেক স্তন্যধাত্রী (দুধ দানকারীনী) নিজের দুগ্ধপোষ্য সসন্তানকে ভুলে যাবে এবং প্রত্যেক গর্ভবতী নারীর গর্ভ খসে পড়বে আর লোকদের দেখতে পাবে নেশাবিহীন অবস্হায়ই মাতাল সদৃশ উদভ্রান্ত। (এটাই হল কিয়ামতের সংক্ষিপ্ত চিত্র)। তবে জেনে রেখ, বস্তুত আল্লাহর শাস্তি খুবই কঠিন।” (সূরা হাজ্জ, ২২ : আয়াত২)
তিনি সেই পুত পবিত্র সুমহান সত্তা, যিনি; ঘোষণা করেছেন :
“সে দিন আমি জাহান্নামকে জিজ্ঞেস করবো, তুমি কি পূর্ণ হয়ে গেছ? সে বলবে আরও আছে কি? অপরদিকে জান্নাতকে মুত্তাকীদের অতি নিকটে উপস্হিত করা হবে। কোন দূরত্ব ছাড়াই। ” (সূরা ক্বাফ, ৫০ : আয়াত ৩০ ও ৩১)
মুসলিম ভগ্নি হে,
তুমি কি কখনও আল্লাহর সেই ঘোষণা শুনেছ বা পাঠ করেছ? আল কোর’আনের ভাষায়-
“হে মুহাম্মদ (সা:)! মু’মিন স্ত্রী লোকদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং নিজেদের যৌনাঙ্গের হিফাযত করে ও নিজেরা সাজসজ্জা প্রদর্শন না করে কেবল সেই সব জিনিস ছাড়া যা আপনা হতেই প্রকাশিত হয়ে পড়ে। আর অবশ্যই তারা তাদের গ্রীবা ও বৰদেশের উপর নিজেদের ওড়না (মাথার কাপড়) ফেলে রাখবে এবং অবশ্যই তারা তাদের স্বামী, পিতা শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, তাদের সতী সচ্চরিত্রবান বান্ধবীগণ এবং তাদের আপন দাসীগণ, যৌন কামনামুক্ত পুরষ এবং নারীদের যৌনাঙ্গ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক ব্যতীত কারও কাছে স্বীয় সৌন্দর্য প্রদর্শনের লক্ষে নিজ আবরণ প্রকাশ না করে এবং তারা যেন তাদের গোপন অঙ্গ আর সাজসজ্জা প্রকাশার্থে জোরে জোরে না হাঁটে। হে মু’মিনগণ! তোমরা সকলে মিলে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর। যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।” (সূরা নূর, ২৪: আয়াত ৩১)
ইমাম বুখারী (রহ:) আয়িশা (রা:) থেকে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ্ তা’আলা প্রথমেই মুহাজিরা মহিলাদের প্রতি রহম করবেন, কেননা তারা যখনই আল্লাহ্র এই ঘোষণা, “আর অবশ্যই তারা তাদের গ্রীবা ও বৰদেশের উপর নিজেদের ওড়না (মাথার কাপড়) ফেলে রাখবে”, শুনতে পেয়েছে তখন থেকেই নির্দ্বিধায় এর উপর ‘আমল শুরু করে দিয়েছে এবং সে জন্যে নিজেদের ওড়নাকে করছে অনেক লম্বা ও প্রশস্ত।
বোন হে,
তুমি বলবে কি, আমরা তাদের থেকে কত দূরে আছি?
যদি সুদৃঢ় প্রতিজ্ঞা ও সংকল্পের সাথে বাসৱব কাজে আমরাও অবতীর্ণ হই, তাহলে আমাদের সমাজও পরিণত হবে তাদের সমাজের মত ফিৎনা ও ফাসাদহীন সুখী সুন্দর সমাজে। এর এটা আশ্চর্যের কোন বিষয় নয় বরং কবি এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে বলেছেন :
অর্থাৎ-ভাল লোকের মত না হতে পারলেও হতাশ হয়ো না বরং তাদের সদৃশ হওয়ার চেষ্টা কর। কেননা ভাল হওয়ার চেষ্টাটাই কল্যাণের দরজা খুলে দেয়।
বোন হে,
রাসূলুল্লাহ (সা:) এর স্ত্রীগণ তথা উম্মাহাতুল মু’মিনীনগণের ব্যাপারে আল্লাহ্র সেই ঘোষণা কি তুমি শুনেছো? যা বিশ্বের সকলের জন্যে শিৰা স্বরূপ এবং অবশ্য পালনীয়। আল্লাহ্ তা আলা বলেন :
“তোমরা নবীর সহধর্মীনীগণের নিকট কোন কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্যে এবং তাদের অনৱরের জন্যে অধিকতর পবিত্রতার কারণ।” (সূরা আহ্যাব, ৩৩: আয়াত ৫৩)
বোন হে,
অধিকতর পবিত্রতার কারণ কাদের অন্তরের জন্যে?
পবিত্রতার কারণ, অতি পুত-পবিত্র আত্মা তথা নবী কারীমের (সা:) স্ত্রীগণের জন্যে। যারা হলেন-সকল মু’মিন-মু’মিনাদের মাতৃতুল্য বা উম্মাতুল মু’মিনীন। যারা ছিলেন আল্লাহ্র রাসূল মুহাম্মদ (সা:) এর অতি পুত-পবিত্র সচ্চরিত্রশীল সাহাবীগণের অন্তর্ভূক্ত। এই উম্মাতের মদ্যে আমাদের নবীর পরেই যারা সম্মান, মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারিনী।
এবার চিন্তা কর। বর্তমান যুগে আমাদের অন্তরাত্মার অবস্হান কোথায়? আমরা ও আমাদের সমাজ কোথায় আছে?
যিনি নিজে স্রষ্টা। তার চাইতে কি সৃষ্টির পবিত্রকরণের পন্থা সম্পর্কে অন্য কেউ অধিক অবহিত হতে পারে?
ওহে মু’মিন বোনটি,
আল্লাহ্ তা’আলা পবিত্র কোর’আনে তার প্রিয় নবী মুহাম্মদকে (সা:) উদ্দেশ্যে বলেন : “হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও মু’মিনদের মহিলাগণকে বলে দিন-তারা যেন (উপর দিক থেকে) নিজেদের (মুখমন্ডল ও বক্ষদেশের) উপর নিজেদের চাদরের আঁচল ঝুলিয়ে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজতর হবে। ফলে, তাদের উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ্ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।” (সূরা আহ্যাব, ৩৩ : আয়াত ৫৯)
রাইসুল মাফাচ্ছেরীন আবদুল্লাহ্ বিন আব্বাস (রা:) বলেছেন: (উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা) ঈমানদার মহিলাদের নির্দেশ দিচ্ছেন যে, যখনই তারা বিশেষ কোন প্রয়োজনে বাইরে বের হবে, তখন যেন তারা নিজেদের চাদর দিয়ে উপর থেকে নিজেদের মুখমন্ডলকে ঢেকে দেয়, এমন ভাবে যাবে করে বক্ষদেশও আবৃত হয়।
আল আল্লাহ্ সুবহানানু ওয়া তা’আলা ঈমানদার মহিলাকে এমন নির্দেশ এ জন্যই দিয়েছেন যাতে করে তাদের পোশাক-হিযাব বা বোরকাই তাদের সাধ্বী ভদ্র ঐতিহ্যময়ী মহিলা বলে পরিচয় করে দেয় এবং খারাপ ও দুষ্ট লোকদের মনে এটে দেয় হতাশার ছায়ায় আবৃত নিরাশা যাতে করে তারা ইচ্ছায় অনিচ্ছায় বাধ্য হয় তাদের সম্মান ও মর্যাদা করতে।
এবার আল্লাহ্র কালাম ও দুনিয়ার বাস্তবতার দিকে লক্ষ করে দেখুন। যারা রাস্তায় মসকারী, ঠাট্টা-বিদ্রূপ, ছিনতাই ও ব্যাভিচারের সম্মুখীন হয়, তারা একমাত্র রূপ-সৌন্দর্যের প্রদর্শনকারীণীরাই। তাদের বেহায়পনা ও উচ্ছৃংখলাতাই এ জন্য দায়ী।
নিম্নোদ্ধৃত আল্লাহ্র ঘোষণার উপর একটু চিন্তা কর। আল্লাহ্ তা’আলা আল কোর’আনে এরশাদ করেছেন: “বৃদ্ধা নারী, যারা বিবাহের আশা রাখে না তারা যদি নিজেদের চাদর খুলে রাখে, তাহলে তাদের কোন (অপরাধ) গুণাহ্ হবে না। তবে শর্ত হলো, তারা স্বীয় রূপ-সৌন্দর্যের প্রদর্শনকারিণী হিসেবে তা খুলতে পারবে না। তবে এ থেকে বিরত থাকাই তাদের জন্য উত্তম। আর আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” (সূরা নূর, ২৪ আয়াত ৬০)
সুমহান, পূত-পবিত্র সত্তা, আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন উল্লেখিত আয়াতে আমাদের সামনে এই ঘোষণা দিচ্ছেন যে, যে সকল মহিলা যৌবনকাল অতিবাহিত করে বার্ধক্যে উপনীত হয়েছে এবং বার্ধক্যের কারণেই বিবাহের আর কোন আশাও করে না। অর্থাৎ, পুরষদের আকৃষ্ট করার মত কোন কিছুই আর তাদের কাছে অবশিষ্ট নেই, তারা কখনও স্বীয় রূপ-সৌন্দর্য প্রকাশার্থে গায়ের মুহরেমের (যাদের সাথে বিবাহ জায়েজ) সামনে স্বীয় চাদর খুলে রাখবে না। যদিও সাধারণভাবে চাদর খুলে রাখার অনুমতি এবার বলত, আমাদের অবস্হাটা কি?
হে বোন,
তুমি তোমার মা, উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা (রা:) এর কথার দিকে একটি মনোযোগ দাও এবং শুন, যখন তিনি রাসূলুল্লাহ্কে (সা:) প্রশ্ন করেছিলেন, ‘মেয়েরা নিজেদের কাপড়কে (পোষাক বা বোরকা) কতটুকা নিচের দিকে ঝুলিয়ে দিবে?’
তখন তার উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছিলেন, ‘তারা স্বীয় পদতালুর সামনে অর্থাৎ, গোড়ালীর নিচে রেখে কাপড় পরবে। ‘ উম্মুল মু’মিনীন পুন: প্রশ্ন করলেন যে, যখন তারা লম্বা কদমে হাঁটবে? (তখন কাপড় তো উঠে যাবে, সে সময় কি করবে?) উত্তরে রাসূল (সা:) বললেন, ‘তারা কখনও এক হাতের বেশী লম্বা কদমে হাঁটবে না।’ (বুখারী ও মুসলিম) (সুবহানাল্লাহ্!!)।
উম্মুল মু’মিনীনগণ সর্বদাই নিজেকে আবরম্ন রাখার জন্যে স্বীয় কাপড় লম্বা করে পরার প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতেন। কিন্তু আমাদের মহিলারা শুধু খাট করে পরাতেই ব্যস্ত, আর এ ব্যাপারে কোন ভ্রক্ষেপই নেই।
প্রকাশ থাকে যে, হিজাব অর্থ হলো ছতরের ঢাকানা, বোরকা বা শরীরের আচ্ছাদন।
কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে হিজাব হলো, সকল সামাজিক বিধি-বিধানাবলীর একত্রিভূত এমন একটি ঠিকানা বা সূত্র যা মহিলা ও পুরষ সবাইকে ইসলামী সমাজ ও জীবন ব্যবস্হার শৃঙ্খলা এবং বিধানের আওতাভূক্ত হতে এবং থাকতে সবচেয়ে বেশী সাহায্য করে। সমাজ ও জীবন ব্যবস্হাকে নিষ্কলুষ ঝামেলামুক্ত ও শৃঙ্খলাবদ্ধ রাখার জন্যেই আল্লাহ্ তা’আলা এই পর্দা ব্যবস্হাকে অবধারিত করে দিয়েছেন।
কেননা, এরই মাধ্যমে মহিলারা থাকতে পারে সকল প্রকার সামাজিক ফিৎনা-ফাসাদ ও বিশৃংখলার উর্ধ্বে এবং তাদের থেকে উপযুক্ত শিক্ষা নিয়ে বের হতে পারে আমূল উৎকৃষ্ট একটি জাতি। তাই কবি আল্লামা আবদুর রহমান আল-কাশগরী (রা:) বলেছেনঃ
সন্তানের চরিত্রের ভাল মন্দ যাচাই হয়
তার জন্ম দানকারিনী মাতার চরিত্রের ভিত্তিতে।
সম্রাট নেপোলিয়ন বলেছেন : Give me a good mother,I shall give you a good nation. ‘আমাকে একটি ভাল মা দাও, আমি তোমাকে একটি ভাল জাতি উপহার দেব।’
উল্লেখ্য, এমন আমূল উত্তম জাতি দিয়ে সারা বিশ্বে বিজয়ী হতে পারে ইসলাম ও মুসলিম জাতি আর বিশ্ব পরিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে সুখ, শান্তি, পারষ্পরিক নিরাপত্তা ও স্হিতিশীলতায়। ফলে কায়েম হবে পারষ্পরিক ভালোবাসা ও সম্প্রীতি। আর এভাবেই হয়ে উঠতে পারে এই মর্তের পৃথিবীটা একটি জান্নাত হিসাবে।
কবি তাই বলেছেন :
“প্রীতি ও প্রেমের পূন্য বাঁধনে সবে মিলি পরষ্পরে,
স্বর্গ আসিয়া দাঁড়ায় তখন আমাদেরই কুড়ে ঘরে।”
0 comments: