অধ্যায়-০২ : পথ নির্দেশাবলী

বোন হে,

যারা পর্দার তথা হিজাবের ব্যাপারে আল্লাহ্‌র সিদ্ধান্তের পর নিজস্ব পান্ডিত্ব প্রকাশ করতে চান, তাদের ব্যাপারে আল্লাহর ঘোষণা হল আল কোর’আনের ভাষায় : “আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ের নির্দেশে কিংবা ফায়সালা করে দিলে কোন ঈমানদার পুরষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোন অধিকার নেই। আর যে, কেউ আল্লাহ্‌ ও তার রাসূলের আদেশ অমান্য (নাফারমানী) করবে সে প্রকাশ্যে পথভ্রাষ্টতায় পতিত হবে।” (সূরা আহ্‌যাব, ৩৩ : আয়াতা৩৬)
অনুরূপ যারা নিজেদের বিচার বুদ্ধি, স্বকীয়তা এবং আল্লাহর ও তাঁর রাসূলের (সা:) আনুগত্যের প্রতি কোনরূপ গুরত্ব না দিয়ে ঢালাওভাবে অন্যের অনুসরণ করে সত্য পত বিচ্যুতবস্হায় জীবন পরিচালনা করতো এবং করে তাদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ্‌র রাসূল (সা:) এরশাদ করেছেনঃ

“তোমাদের কেউ যেন এরকম সেবাদাস না হয় যে, সে বলবে আমি চলছি মানুষদের সাথে। সুতরাং মানুষ যদি ভাল কাজ করে, তাহলে আমি ভাল কাজ করব আর মানুষ যদি খারাপ কাজ করে তাহলে আমিও খারপ কাজ করব। বরং তোমরা নিজেরা নিজেদের এমনবাবে প্রস্তুত করে নাও যে, তোমরাই মানুষদের নিয়ে ভাল কাজ করবে। আর যদি কেউ খারাপ কাজ করতে চায় তখন নিজেরা খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকবে।”

এবার তার উদ্দেশ্যে বলতে চাই। “যিনি বলেন যে, যদি আমি এই আধুনিক সমাজে হিজাব পরি, তাহলে লোকেরা আমার দিকে তাকাবে ঠাট্টা-বিদ্রপ ও হাসি-তামাসার দৃষ্টিতে। কিন্তু যদি না পরি, তাহলে আমিও হয়ে গেলাম আধুনিক! আর তখনই মানুষ আমাকে এমনটা করবে না, কেননা আমি তো তাদের মতই”।

হে জ্ঞানী গুণী ও বিদূষী মহিলা! জেনে রেখ, নিশ্চয়ই আধুনিক সমাজে ইসলামী বৈশিষ্ট্যে নিজেকে গুছাতে গিয়ে প্রচলিত সমাজ ব্যবস্হা থেকে ব্যতিক্রম হওয়াটাই হল ঈমান এবং ঈমানের দাবি। যে দিকে তোমাকে আহবান করছেন, তোমার পুত-পবিত্র রব তথা সৃজন-রক্ষণ-পালন ও বিবর্ধন কর্তা। আল্লাহ নিজে পর্দার তথা হিজাবের ব্যাপারে হুকুম করার পরে এ বিষয়ে ব্যক্তিগত কোন অভিমত খাটানো কোন মুসলিমের পক্ষে জায়েয নয়।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলী

বোন হে,

যারা আধুনিকতা তথা পশ্চিমা ইয়াহুদি-নাছারাদের আচার-আচরণের সামনে নিজেদের পরাজিত বলে মেনে নিয়েছে। তাদের বলো যে, তারা পশ্চিমা আধুনিকতাকে তথা ইয়াহুদী উদ্দেশ্য করে বলুক, হে আমাদের মুনিবেরা! আমরা তোমাদের থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করেছি, তোমাদের থেকেই আমরা হয়েছি ডাক্তার, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আর তোমাদের থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করতে গিয়ে আমরা সর্বাগ্রে উপেক্ষা করে চলেছি ইসলামী বিধি নিষেধ, এমনকি চাল-চলনে আমরা এতদূর এগিয়েছি যে, আমাদের মধ্যে কে পুরষ ও কে মহিলা তার ভেদাভেদও উঠে গেছে। তবুও কি তোমরা আমাদের প্রতি সন্তষ্ট?
কোর’আনে কারীমে এই প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে :

“ইয়াহুদী ও খৃষ্টানগণ কখনো তোমার প্রতি সন্তষ্ট হবে না, যতক্ষণ না তুমি তাদের ধর্মাদর্শ অনুসরণ কর।” (সূরা বাকারা, ২ : আয়াত ১২০)

অর্থাৎ তারা উত্তরে বলবে, আমরা তোমাদের প্রতি একারণেই সবচেয়ে কম সন্তষ্ট যে, তোমরা ধর্মাদর্শে এ পর্যন্ত মুসলিম। পক্ষন্তরে জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্প, সংস্কৃতি, চাল-চলন, পোশাক-পরিচ্ছদ, চিন্তা-চেতনা এমনকি দুনিয়ার সামগ্রিক বিষয়ে তোমরা আমাদের অনুসরণ অনুকরণ করতে পার। তবে তোমাদের প্রতি আমাদের পরিপূর্ণ সন্তষ্টির একটি শর্ত, তোমরা আমাদের ধর্মাদর্শ গ্রহণ করা।

বলা যায়, কারো শিল্প, সংস্কৃতি, চাল-চলন, পোষাক-পরিচ্ছদ, চিন্তা-চেতনা এমনকি দুনিয়ার সামগ্রিক বিষয়াবলীতে অনুসরণ ও অনুকরণ করলে অনতিবিলম্বে তার ধর্মাদর্শের অনুসরণ ও অনুকরণ হয়ে যায়। এটি হলো স্বতঃসিদ্ধ কথা।
আল্লাহর রাসূল (সা:) বলেছেন :

তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিদের ধর্মাদর্শকে এমনভাবে আস্তে আস্তে অল্প অল্প করে, এক হাত এক হাত করে অনুসরণ অনুকরণ করবে শেষ পর্যন্ত তারা যদি হিংস্র জন্তুর গুহায়ও প্রবেশ করে তাহলে তোমরাও তাতে প্রবেশ করবে। সাহাবায়ে কিরাম বললেন: হে আল্লাহর রাসূল ! পূর্ববর্তী জাতি বলতে কি ইয়াহুদী নাছারা? রাসূলুল্লাহ‌ (সা:) উত্তরে বললেন: এরা ছাড়া আর কারা? (মুসলিম)

বোন হে,
তোমার জন্যে একান্ত কর্তব্য যে, তুমি কোর’আন ও হাদীস থেকে জীবন পরিচালনার সামগ্রিক বিষয়ে সঠিক জ্ঞান আহরণ করবে এবং বাস্তবে এই জ্ঞানের স্বাদ আস্বাদন করবে। আর অতি গুরত্ব দিবে তোমার পোষাক-পরিচ্ছদের দিকে যাতে করে তোমার জীবনের কোন স্তরে বা কোন পর্যায়ে আল্লাহ্‌র আইন ও আদেশ লংঘিত না হয়। তাহলেই তুমি হয়ে উঠবে একটি উসওয়া বা আদর্শ নমুনা। কবি এই বিষয়ের উৎসাহ দিতে গিয়ে খুব সুন্দর ভাষায় বলেছেন?

“হে দেহের চাকর কত কষ্ট করবে তুমি দেহের লাগিয়া।
যেখানে সার্বিক ক্ষতি, সেখানে কি করবে তুমি লাভ জানিয়া।
রুহের দিকে এগিয়ে আস পূর্ণ কর তার সফলতা
রুহ‌ দিয়েই তুমি মানুষ হও, শুধু দেহ দিয়ে মানুষ নও।”

বোনটি আমার,

তুমি আল্লাহ্‌র দ্বীনের জন্যে নিজের জ্ঞান এবং মাল অকাতরে বিলিয়ে দেয়ার ব্যাপারে খাদিজাতুল কুবরা (রা:) এর অনুসরণ করবে। আর দ্বীনের জ্ঞান আহরণ, অন্বেষণ ও বিলিয়ে দেয়ার ব্যাপারে আয়েশা সিদিদকাহ্‌ (রা:) এর অনুসরণ করবে। আর আল্লাহ্‌র দ্বীনের উপর অটল থাকার শক্তি, সাহসিকতার ব্যাপারে অনুসরণ করবে আলে ইয়াসিরকে। (আম্মার বিন ইয়াসির তথা সুমাইয়্যা (রা:) এর পরিবার যিনি ইসলামে প্রথম মহিলা শহীদ)

তাহলেই জীবনের সর্বশ্রেষ্ট সোপানে পৌঁছতে সক্ষম ও সার্থক হবে। হে আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের মাতা! কবির কথার উপর একটু চিন্তা কর : “মা হল একটি শিক্ষা নিকেতন। যখন তুমি তাকে তেমন করে গঠন করবে। তাহলে গঠন করলে এমন একটি জাতি যারা মূলতই উৎকৃষ্ট বা উৎকৃষ্ট ধমনী দিয়ে গঠিত।

মা হল একটি কানন যদি তাকে সুশিক্ষা লজ্জা ও শালীনতা রসে সিঞ্চিত ও সংরৰণ করো তাহলে সে সত্যিই (সন্তান-সন্ততি নিয়ে) পত্র পল্লবে আচ্ছাদিত ও সুশোভিত বাগানের ন্যায় ফুটে উঠবে। মা হল সকল শিক্ষকের প্রথম শিক্ষক। যার গুণপনা ও কৃর্তিকলাপই যুগ-যুগান্তর ধরে জগতে সুখ্যাতি অবশিষ্ট রেখেছে।”

মুসলিম বোনটি,

যদি তোমার এমন একটি ছবি থাকে যেটা তোমার মূল আকৃতি ও গঠনের সাথে বিপরীত অর্থাৎ কুৎসিত অথবা তুমি হয়ে পড় বয়স্কা ও বৃদ্ধা। তাহলে কি তোমার সেই ছবিটি বা এই অবস্হার একটি ছবি দিয়ে আধুনিকতার ধ্বজাধারীরা পত্রিকার প্রচ্ছদ দিতে রাজি হবে এই বলে যে, তুমি একজন সংস্কৃতি-মনা মহিলা?

অনুরূপ তুমি যদি হও হিজাব পরিহিতা একজন সম্ভ্রান্ত মহিলা, তাহলে কোন দিন কি তোমাকে কেউ বিমান বালার চাকুরী দিবে?

অনুরূপ ভাবে তুমি যদি হও চেহারার দিক থেকে একটু কুৎসিৎ তাহলে কি কেউ তোমাকে একটু মডেলিং এর জন্যে আহ্বান জানাবে?

কখনো নয় বরং মোদ্দা কথা হল, বর্তমান বিশ্বের আধুনিকতার ধ্বজাধারীরা আধুনিকতার নামে চায় তোমার সুন্দর চেহারা, পেতে চায় একটু পরিতৃপ্তি, চায় তোমার সুন্দর ও মধুর কন্ঠ।

তবে শুনে রাখ, যখন থেকে তোমার চেহারা ও মধুর কণ্ঠ তাদের পরিতৃপ্তি ও আত্মতৃপ্তি দানে ব্যর্থ হয়ে পড়বে, তখন হয়ে পড়বে তুমি নিঃস্ব অসহায় ও নিঃসম্বল।

সুতরাং আগে থেকেই নিজকে সংরক্ষণ কর এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সূর্যকে নিজের জীবনে আলো দানের সুযোগ করে দাও, তবেই হবে সফলকাম।

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম