অধ্যায় ০৩ : ইসলামী সাহিত্য ও ইসলামী সংস্কৃতি

ইসলামী সাহিত্য

সাহিত্য মানব হৃদয়ের প্রাণধর্ম। মানব মনের ভাবাবেগ, অনুভূতিও আশা-আকাঙ্খা সার্বজনীন। তাই আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে, সাহিত্যকে ইসলামী সাহিত্য বললে সাহিত্যের অপমান করা হয়, আর ইসলামকে করা হয় হেয়। প্রকৃতপক্ষে এই মনোভাবের মধ্যে রয়েছে সাহিত্য ও ইসলাম, এ দুটোকেই বোঝার ভুল। সাহিত্য তো সবই এক, তবু রুশ সাহিত্য, ইংরাজী সাহিত্য, আইরিশ সাহিত্য, জার্মান সাহিত্য, খৃষ্টান সাহিত্য, ইহুদী সাহিত্য, হিন্দু সাহিত্য ইত্যাদি আছে। যদি কোন ব্যক্তি ইংরেজী সাহিত্যখে ঐ নামে অভিহিত করেন, তা কি সাহিত্যের অবমাননা করা, না সাহিত্য সম্পর্কে সত্য ভাষণ। ইসলাম মানুষের দৃষ্টি সংকীর্ণ করে শুধু ধর্মীয় কিতাব পাঠ করতে ভলেনি-দুনিয়ার সেরা সাহিত্য ও সাংস্কৃতি মন্থন করতেই বারবার প্রেরণা দিয়েছে। জ্ঞান মুসলিমের হারানিধি। যে দেশেরই বা জাতিরই হোক না কেন শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিকতদের উপেক্ষা করা চলবে না। আবার অন্য সাহিত্যকে তাড়িয়ে দেবারও কোন প্রশ্ন উঠে না। কারণ সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস পারস্পরিক নির্ভরতার ইতিহাস। তবু সাধারণভাবে, ইসলামী সাহিত্য বলে একটা জিনিস আছে ও এক এক দেশের ভাষার মাধ্যমে এর বৈচিত্র প্রকাশ ও বিকাশের সম্ভবনা রয়েছে। ইসলামী সাহিত্য বলতে বুঝতে হবে ইসলামী জীবনবোধের প্রকাশমূলক সাহিত্য। এই সাহিত্য আবার দুপর্যায়ের ক. ইসলামী জীবনদর্শন সম্পর্কীয় ধর্মীয় সাহিত্য; খ. ব্যাপক অর্থে প্রথমত বিভিন্ন প্রকার সাহিত্যের মারফত (উপন্যাস, নাটক, কবিতা ও প্রবন্ধ) এই জীবনদর্শনের বিচিত্র বিকাশ। দ্বিতীয়ত মুসলমানের জীবনের ছবি যে সাহিত্য রূপ পরিগ্রহ করে। এই জীবন অবশ্য কেবলমাত্র মুসলমানের জীবন নয়-মুসলমানের সঙ্গে অন্যান্য জাতি ও ধর্মের সম্পর্ক এর মধ্যে নিহিত রয়েছে। এই সম্পর্ক নিয়ে মুসলমানের জীবন যে সাহিত্যে প্রতিভাত হয়, তাকেও ইসলামী বলা যেতে পারে। এর মধ্যেও থাকবে নাটক, কবিতা, গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধের অযুত সম্ভার। তৃতীয়ত মুসলমানদের লেখা সাহিত্য। কিন্তু যেহেতু মুসলামানের লেখা হলেই তা ইসলামী জীবনবোধ ও মুসলিম জীবনধারার বিকাশ নাও হতে পারে, সেই কারণে প্রথমত ধর্মীয় সাহিত্য ও সাহিত্য ও ব্যাপক অর্থে ইসলামী জীবনবোধের প্রকাশ ও মুসলিম জীবনের ছবি যে সাহিত্য থাকবে, সেই সাহিত্যকে ইসলামী সাহিত্যের মানদন্ড হিসেবে ধরতে হবে। অবশ্য এই দিক দিয়ে বিচার করলে মুসলমান লিখলেই তা ইসলামী সাহিত্য হয় না। কোন ক্ষেত্রে হিন্দু বা খৃষ্টান লেখকের হাত দিয়ে ইসলামী সাহিত্য বের হতে পারে। আবার উর্দু ভাষায় লেখা হলেই তা ইসলামী সাহিত্য হয় না। সাধারণ সাহিত্যের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাতে ইসলামী সাহিত্যের বিকাশের বিস্তর অবকাশ রয়েছে।

ইসলামী সাহিত্যের ওপর জোর দেওয়া অর্থ অবশ্য এ নয় যে, যাঁরা এই সাহিত্যের স্বীকৃতি চাইছেন, তাঁরা বাইরের দুনিয়ার সাহিত্যের ও সংস্কৃতির সঙ্গে কোন সংযোগ রাখবেন না, প্রতিবেশীর খবর নেবেন না। বাইরের সংযোগেই ত হয় প্রাণশক্তির বিচিত্র উদ্ভোদন। ইসলামী জীবনদর্শনের দিক থেকে বিচার করলে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের ও ভাষার সাহিত্য মন্থর ও উপভোগ করা ও বিচিত্র সাহিত্য রচনা করাতে কোন বাধাই নেই। অন্য সাহিত্যের রস স্বাদ করা, মন দেয়া-নেয়ার ব্যায়াম ইসলামী সংস্কৃতি চেতনার এলাকার মধ্যেই পড়ে। তাছাড়া আমাদের সাহিত ও সংস্কৃতির আধ্যাত্মিক সম্ভবনা স্বকীয় বৈশিষ্ট্য অক্ষুন্ন রেখে আদান-প্রদানের ওপরই নির্ভর করে। তবে রসাস্বাদ করা আর কোন একটি সাহিত্যের অন্তনির্হিত নীতিবোধ জীবনদর্শন হিসেবে স্বীয় জীবনে গ্রহণ করা একেবারেই পৃথক ব্যাপার।

একথা বিস্মৃত হলে চলবে না যে, লদ্ধ জ্ঞানকে নিজস্ব জীবনবোধ থেকে বিছিন্ন করলে সার্থক সৃষ্টি হয় না। সেইজন্য ইসলামী সাহিত্য ও বাংলার পুঁথি সাহিত্যের সম্যক স্বীকৃতি নিছক অমূলক আত্মবদ্ধতা নয়। এর দ্বারা অবশ্য এ বোঝাতে চাই যে, পুঁথি সাহিত্যের হারাধন উদ্ধার করবেই জাতীয় রেনেসাঁর সূত্রপাত হবে। কারণ পুঁথি সাহিত্য বাংলায় মুসলিম সাহিত্যের এক দিক মাত্র। তবে সেক্সপীয়র যদি ইংরাজী ভাষা ও খৃষ্টান ঐতিহ্য বাদ দিয়ে চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে লিখতে শুরু করতেন, তা হতো নিতান্ত অস্বাভাবিক। তাই বাংলা সাহিত্যের বর্তমান অস্বাভাবিকতা, শূন্যতা, হীনমান্যতা সম্পর্কে সচেতন করে দেয়া হয় ও আমাদের স্বকীয় জীবনবোধের স্বাভাবিক স্পূরণের দিকে সৃষ্টি নিবন্ধ করা হয় মাত্র। সাহিত্যিক কেবলমাত্র লোকশিক্ষার জন্য বা নীতিবাক্য প্রচার করার জন্য সাহিত্য রচনা করেন না। সাহিত্য লোকশিক্ষার বিভিন্ন উপাদান থাকলেও তার মুখ্য উদ্দেশ্য হলো রস সৃষ্টি করা। তবে জীবনের সমগ্র বিষয় কেবলমাত্র শ্রেণী সংগ্রামের কথা সাহিত্যের বিষয়ভূত করা চলে না। যে সমস্ত বিষয় মানবমনের গভীরে লুকায়িত আছে, যা সমস্ত মানবতার মূল ও যার মৌলিক ও একক সার্থকতা আছে, তার মধ্যে দিয়ে মানবের স্বরূপ প্রকাশ করা সাহিত্যিকের লক্ষ্য।

তবে সাধারণভাবে সাহিত্যের মৌলিক সার্থকতা নির্ধারণের নিজস্ব জীবনবোধের ভূমিকা স্বীকার করতেই হবে। এ কথা স্বীকার করার অর্থ অবশ্য ভাষা ও সাহিত্যকে ধর্মীয় অনুশাসনের নিগড়ে আবদ্ধ করা নয়, ইসলামের বিপন্নবাদের দোহাই নয়, অথবা হিন্দু সাহিত্য ঐতিহ্যের দৃঢ় ভিত্তিতে সুপ্রতিষ্ঠিত। মানবের সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রেখেও ব্যক্তিগত ও গোষ্ঠিগত স্বাতন্ত্র প্রকাশ করা অসম্ভব ব্যাপার নয়। সাহিত্যকে তাই শুধু রম্য ও রসোত্তীর্ণ হলেই চলে না, তাকে মানবতাবোধোত্তীর্ণও হওয়া চাই। জীবনের সব ছবিই সাহিত্য পাংক্তেয় নয়। যে আলেখ্য রূপে, রসে, গুণে মধুর মানবজীবনে সত্য ও কল্যাণকর, কেবলমাত্র তা-ই সাহিত্য পদবাচ্য হতে পারে। দেশ, সমাজ,কাল এই সব আপেক্ষিকতাকে লঙ্ঘন করে সকল মানব সমাজের কতকগুলো নীতি আছে, যা রসোত্তীর্ণতার ছোঁয়ায় অপরূপতা লাভ করে। উঁচু দরের সাহিত্য অসুন্দর ও অকল্যাণকর হতে পারে না। দুর্নীতি প্রচার রসোত্তীর্ণ হলেও তা উচ্চ স্তরের সাহিত্য নয়। সাহিত্য জীবন থেকে উপাদান সংগ্রহ করে জীবনকে মহিমান্বিত করে। সাহিত্য যদি মানবতার অপমান, নৃশংসতার উদ্রেক বা হিংসার প্রশ্রয় থাকে, তবে তা রসোত্তীর্ণ হলেও বিকৃতমনা ব্যক্তি ছাড়া আর কারো ভাল লাগে না। আবার সাহিত্য যদি কেবলমাত্র আদেশ-উপদেশ-ভারাক্রান্ত ও তাকে রসবোধ না থাকে, তবে তা সাহিত্যের পর্যায়ের উঠবে না। ইকবালের ওঠ, দুনিয়ার গরীব-ভূখারে জাগিয়ে দাও, রবীন্দ্রনাথের হিংসায় উন্মত্ত পৃথিবী শুধু রসোত্তীর্ণ নয়, মানবতা মূর্ত প্রকাশ। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সব মানুষের গানগুলো ভালো লাগে। অবশ্য এক এক সংস্কৃতির আওতায় এই মানবতাবোধ ভিন্ন ভিন্নভাবে বিকশিত হয়। বর্তমান যুগে নৈতিক মূল্যবোধ সম্বন্ধে স্থির ধ্যান-ধারণার একান্ত অভাব পরিলক্ষিত হয়।

এজন্য সাহিত্যের সারাংশকে জীবনে গ্রহণ করতে হলে নিজ-নিজ জীবনবোধের মানদন্ডে বিচার করে স্বীয় জীবনে গ্রহণ করা শুধু স্বাভাবিক নয়, বিশেষ প্রয়োজনীয়। এ সম্পর্কে টি. এস. ইলিয়ন তাঁর Religion and Literature শীর্ষক প্রবন্ধে বলেন : We shall certainly continue to read the best of its Kind (literature) of what our time provides, but we must tirelessly criticize it according to our own principals. The greatness of literature can not be determined solely by literary standards through we must remember that whether it is literature or not can be determined only by literary standards.

সাহিত্যের সাধনায় ইসলামী সংস্কৃতির বিশ্বমূখীতা অব্যাহত রেখে একে নব নব বৈচিত্রে প্রকাশ করতে হবে। সাহিত্যের আকর্ষনী ক্ষমতা রসাস্বাদে ও সমাজকল্যাণে ব্যয়িত হবে। তাই ইসলামী সাহিত্য স্বীকৃতর স্পৃহা ইসলামের মারফত ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে মানবতা প্রকাশেরই বিনীত প্রচেষ্টা মাত্র। এদিক দিয়ে দেখলে সাহিত্য তিনটি স্তর আছে- ১. রসবান সাহিত্য, ২. রসবান ও মানবতা প্রকাশী সাহিত্য ও ৩. নিজস্ব জীবন বোধের মারফত মানবতা প্রকাশী রসবান সাহিত্য। স্বার্থক সাহিত্য সৃষ্টি করতে হলে এই তৃতীয় স্তরের মাপকাঠিতে গ্রহণ করতে হবে। ধর্মের তথাকথিত খোলস ও সাফাই বাদ দিয়ে ধর্মের সারাংশটুকু গ্রহণ করতে হবে। ধর্মীয় লেবেল দেখলে আমরা যেন তাকে গ্রহণ না করি ও প্রকৃত ধর্মীয় বলে মনে না করি বা আকস্মিক ভাব, ধর্ম বা জীবনাদর্শকে আমাদের বিবেচনা এলাকার বাইরে না রাখি। আনন্দদানের সঙ্গে সাহিত্যের শেষ উদ্দেশ্য যে মানবকল্যাণ, তা যেন আমরা বিস্তৃত না হই। আর অন্যান্য সাহিত্যের শিল্প সৌষ্ঠব ও ছন্দ-বৈচিত্র‌ গ্রহণ করতেও আমাদের যেন কোন আপত্তি না থাকে।

ইসলামী সংস্কৃতি

মুসলিম অসহযোগের অবসানে স্যার সৈয়দ আহমদ খাঁ আলীগড় আন্দোলনের মারফথ ইংরেজী শাসন ও শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি মুসলমানের সহযোগে ঘোষণা করলেন। কংগ্রেসে যোগদান করে স্বীয় সত্তা বজায় রেখে সৈয়দ আহমদ বৃটিশ শাসনের সঙ্গে সংযোগ রাখতে প্রয়াসী ছিলেন। পরাজয়ের যুগেও (১৭৫৭-১৯০৫) ভারতীয় মুসলমান তাদের স্বাতন্ত্র‌ হারায়নি। ১৮৩৩ সন থেকে ১৭৬৮ সন পর্যন্ত চললো মুসলিমের হতাশার যুগ। ১৮৬৭ খ্রীষ্টাব্দে বেনারসে হিন্দী ও দেবনাগরী সম্মেলন হয়। এতে হিন্দীকে যুক্ত প্রদেশের সরকারী ভাষা করার প্রচেষ্টা চলে। অতঃপর মুসলমানেরা রয়েল কমিশন অব এজুকেশন এর কাছে উর্দুর স্বপক্ষে এক স্মারকলিপি পেশ করেন (১৮৮২)। ১৮৯৮ সনে স্যার সৈয়দের মৃত্যুর পর এই কাজ কিছুটা পিছিয়ে পড়া। ১৯০০ সনের ১লা এপ্রিল তারিখে প্রাদেশিক গভর্নরের ঘোষণার দেবনাগরী সরকারী দফতরে গৃহীত হয়। এই সময়ে নওয়াব মুহসিন-উল-মূলক আলীগড়ে এক প্রতিবাদে সভা আহবান করেন। সরকারের নিকট এক স্মারকলিপিও পেশ করা হয়। নওয়াব ভিকার-উল-মূলককে সঙ্গে নিয়ে তিনি দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু করে দেন। লক্ষ্ণৌতে একটি উর্দু রক্ষা সমিতিও গঠিত হয় (১৯০০ সাল ১৮ই আগষ্ট)। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠার ছাড়া মুসলিম অধিকার রক্ষা করা সম্ভব নয় বিবেচনায় ১৯০১ সালে বিভিন্ন স্থানের মুসলমান মিলিত হয়ে মুসলিমের রাজনৈতিক, সামাজিক সমিতি গঠিত হয়। এইভাবে ১৯০৫ থেকে ১৯৩৭ পর্যন্ত মুসলিম রেনেসাঁর প্রথম যুগের সূত্রপাত হলো। অত:পর সিমলা ডেপুটেশনের মারফত মুসলমানের তরফ থেকে দাবী-দাওয়া পেশ করা হয় এর অনেক পূর্বে (১৮৯৩) গো-রক্ষা সমিতি ভারতীয় কংগ্রেসের সমর্থন লাভ করে। হিন্দু পূনর্জষ্মবাদ বা রিভাইভালিজম স্বতন্ত্র মুসলিম চেতনার জন্ম দেয়।

অন্যদিকে ইসলামের সংস্পর্শে অনেক আগে থেকেই হিন্দু মনে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। রাজপুতনা ও বিজয়নগরে ধর্মবাদ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ইসলামের প্রভাবে হিন্দু সমাজব্যবস্থা শক্তিশালী হতে থাকে। সুফীবাদের প্রভাবে হিন্দু সমাজব্যবস্থা শক্তিশালী হতে থাকে। সুফীবাদের প্রভাবে হিন্দু বৈষ্ণববাদের জন্ম হয়। নানক, কবীর, রামানন্দ, শ্রী চৈতন্য, জয়দেব, মীরবাঈ, নামদেব (মহারাষ্ট্র), জ্ঞানেশ্বর (গুজরাট) প্রমুখ সাধকের আবির্ভাব হয়। গীতার ভক্তিবাদ ইসলামের তৌহীদের স্পর্শে জনপ্রিয় হয় ও দেশজ ভাষাগুলো নবজীবন লাভ করে । শ্রী শংকরাচার্যের নৈর্ব্যক্তিক দর্শন পরিত্যক্ত হয় ও তার স্থানে ভক্তিবাদ হিন্দুর দার্শনিক চিন্তার প্রধান বস্তু হয়ে দাঁড়ায়। ইসলামের প্রভাবে বাঙালী হিন্দর দার্শনিক চিন্তার প্রধান বস্তু হয়ে দাঁড়ায়। ইসলামের প্রভাবে বাঙালী হিন্দুর আত্মিক উন্নতি হয়, চিন্তাধারা মানবতা দ্বারা সজীব ও সমৃদ্ধ হয় আর চিন্তারও গভীর এবং বিস্তৃত হয়ে পড়ে। এর ফলে সামাজিক দিকে হিন্দুরা যথেষ্ট লাভবান হন। সমাজে সাম্যবাদ ও গণতন্ত্র পাকাপাকিভাবে শিকড় গজিয়ে বসে। রাজা রামমোহনের ব্রাক্ষ্ণসমাজ ও বঙ্কিম-সাহিত্য হিন্দু ঐতিহ্যের গুণকীর্তণ হিন্দু সমাজ ইসলামের প্রভাব সামলে নিয়ে আত্মস্থ করতে যথেষ্ট সহায়তা করে। অপরদিকে অনাত্মীয় শিক্ষা ও সামাজিক রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থার চাপে ভারতীয় মুসলিম সংস্কৃতির সঙ্গে সঙ্গে বাঙালী মুসলিম সংস্কৃতিও পর্যুদস্ত হয়।

বিশ্ব সাহিত্য আজ অন্তর্দাহ ও বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। বাংলা ভাষার কিনারায় তার ঢেউ এসে লেগেছে। ফলে মূল্যবোধের দিক থেকে এক বিরাট শূন্যতা আমাদের সাহিত্যকে পেয়ে বসেছে। বাংলা বিভাগের ফলে বাংলাদেশের সাহিত্য এই শূন্যতা আরও মারাত্মক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। ইউরোপ এতদিন ধর্মকে যাজকতন্ত্র মনে করে বসেছিল। ক্রমে ক্রমে তার সে ভুল ভেঙ্গে যাচ্ছে। ইউরোপের শিক্ষার্থীরা ও সাহিত্যিকেরা লিখেছেন প্রচুর। কিন্তু সৃষ্টিশীল প্রতিভার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। যুবকদের প্রগতিমূখী গতিশীলতা থেমে গেছে, শ্লোগানকেই তারা জীবনের চরম বাণী ঠাউরেছে। লন্ডন ইয়ার বুক অব এজুকেশন থেকে আমরা এ কথার ইঙ্গিত পাই।

এই ইয়ার বুকের (Education and the social crisis in Europe) শীর্ষক এক পুস্তিকা থেকে আমরা জানতে পারি : Mere appeal to the intllect has already proved wanting. The beginning of a ture intellectual discipline and of genuine religious emotions and experience has become manifest. Even when the thread of tradition has been broken, the actual trend of education is in the opposite direction. The spirit of revolt is disappearing whose place is being taken by self discipline.

আমরা যদি আমাদের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ বাদ দিয়ে আমাদের সমাজ সংগঠনের করতে অগ্রসর হই, তবে সে আগে চলার ধাপ্পা আমাদেরকে পেছন দিকে টেনে নিয়ে যাবে; তা হবে প্রগতির নামে বিকৃতি ও পরের ধরে পোদ্দারি। আমাদের সাংস্কৃতিক ভিত্তির সহজ স্বীকৃতির মধ্যেই রয়েছে আমাদের সাহিত্যিক শূন্যতা, দাসত্ব ও হীনমন্যতার অবসান। সাংস্কৃতিক উন্নয়নে সহশীলতা, ধৈর্য ও আত্মনির্ভরতা আমাদেরকে বিকাশের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম