১৬. একদিন পৃথিবীর পথে + পৃথিবীর পথে আমি + মানুষের ব্যথা আমির

৪৬.
একদিন পৃথিবীর পথে

একদিন পৃথিবীর পথে আমি ফেলিয়াছি, আমার শরীর
নরম ঘাসেন পথে হাঁটিয়াছে; বসিয়াছে ঘাসে
দেখিয়াছে নক্ষত্রের জোনাকিপোকার মতো কৌতুকের অমেয় আকাশে
খেলা করে; নদীর জলের গন্ধে ভরে যায় ভিজে স্নিগ্ধ তীর
অন্ধকারে; পথে পথে শব্দ পাই কাহাদের নরম শাড়ির,
স্লান চুল দেখা যায়; সান্ত্বনার কথা নিয়ে কারা আসে –
ধূসর কড়ির মতো হাতগুলো — নগ্ন হাত সন্ধ্যার বাতাসে
দেখা যায়: হলুদ ঘাসের কাছে মরা হিম প্রজাপতিটির
সুন্দর করুণ পাখা পড়ে আছে — দেখি আমি; — চুপে থেমে থাকি;
আকাশে কমলা রঙ ফুটে ওঠে সন্ধ্যায় — কাকগুলো নীল মনে হয়;
অনেক লোকের ভিড়ে ডুবে যাই — কথা কই — হাতে হাত রাখি;
করুণ বিষন্ন চুলে কার যেন কোথাকার গভীর বিষ্ময়
লুকায়ে রয়েছে বুঝি… নক্ষত্রের নিচে আমি ঘুমাই একাকী;
পেঁচার ধূসর ডানা সারারাত জোনাকির সাথে কথা কয়।

৪৭.
পৃথিবীর পথে আমি

পৃথিবীর পথে আমি বহুদিন বাস করে হৃদয়ের নরম কাতর
অনেক নিভৃত কথা জানিয়াছি; পৃথিবীতে আমি বহুদিন
কাটায়েছি; বনে বনে ডালপালা উড়িতেছে — যেন পরী জিন্‌
কথা কয়; ধূসর সন্ধ্যায় আমি ইহাদের শরীরের পর
খইয়ের ধানের মতো দেখিয়াছি ঝরে ঝর্‌ ঝর
দু-ফোটা মেঘের বৃষ্টি, — শাদা ধুলো জলে ভিজে হয়েছে মলিন,
ম্লান গন্ধ মাঠে ক্ষেতে… গুবরে পোকার তুচ্ছ বুক থেকে ক্ষীণ
অস্ফুট করুণ শব্দ ডুবিতেছে অন্ধকারে নদীর ভিতর:
এই সব দেখিয়াছি; — দেখিয়াছি নদীটিরে — মজিতেছে ঢালু অন্ধকারে;
সাপমাসী উড়ে যায়; দাঁড়কাক অম্বনে’র নীড়ের ভিতর
পাখনার শব্দ করে অবিরাম; কুয়াশায় একাকী মাঠের ঐ ধারে
কে যেন দাঁড়ায়ে আছে: আরো দূরে দু একটা স — ব্দ খোড়ো ঘর
পড়ে আছে; — খাগড়ার বনে ব্যাং ডাকে কেন — থামিতে কি পারে;
‘তুমি কেন এইখানে’, ‘তুমি কেন এইখানে’ — শরের বনের থেকে দেয় সে উত্তর।
(আবার পাখনা নাড়ে — কাকের তরুন ডিম পিছলায়ে পড়ে যায় শ্যাওয়ার ঝাড়ে।)

৪৮.
মানুষের ব্যথা আমি

মানুষের ব্যথা আমি পেয়ে গেছি পৃথিবীর পথে এসে — হাসির আস্বাদ
পেয়ে গেছি; দেখেছি আকাশে দূরে কড়ির মতন শাদা মেঘের পাহাড়ে
সূর্যের রাঙা ঘোড়া; পক্ষিরাজের মতো কমলা রঙের পাখা ঝাড়ে
রাতের কুয়াশা ছিঁড়ে; দেখেছি শরের বনে শাদা রাজহাঁসদের সাধ
উঠেছে আনন্দে জেগে — নদীর স্রোতের দিকে বাতাসের মতন অবাধ
চলে গেছে কলরবে; — দেখেছি সবুজ ঘাস — যত দূর চোখ যেতে পারে;
ঘাসের প্রকাশ আমি দেখিয়াছি অবিরল, — পৃথিবীর ক্লান্ত বেদনারে
ঢেকে আছে; — দেখিয়াছি বাসমতী, কাশবন আকাঙ্খার রক্ত, অপরাধ
মুছায়ে দিতেছে যেন বার বার কোন এক রহস্যের কুয়াশার থেকে
যেখানে জন্মে না কেউ, যেখানে মরে না কেউ, সেই কুহকের থেকে এসে
রাঙা রোদ, শালিধান, ঘাস, কাশ, মরালেরা বার বার রাখিতেছে ঢেকে
আমাদের রুক্ষ প্রশ্ন, ক্লান্ত ক্ষুধা, স্ফুট মৃত্যু — আমাদের বিস্মিত নীরব
রেখে দেয় — পৃথিবীর পথে আমি কেটেছি আচঁড় ঢের, অশ্রু গেছি রেখে
তবু ঐ মরালীরা কাশ ধান রোদ ঘাস এসে এসে মুছে দেয় সব।

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম