কুরআন বুঝা সহজ - ১ (গোটা কুরআনের পটভূমি)

১. কুরআন ও অন্যান্য কিতাবের মধ্যে পার্থক্য

ক. কুরআন প্রচলিত বই এর মত এক সাথে লিখিত আকারে পাঠানো হয়নি । ২৩ বছরে ইসলামী আন্দোলনের বিভিন্ন অবস্থাকে সামনে রেখে কিছু কিছু করে বক্তৃতার আকারে নাযিল হয়েছে ।
খ. গোটা কুরআনের বিষয় ভিত্তিক কোন নাম নেই । এর সব কয়টি নামই গুণবাচক । যেমনঃ কুরআন (যা পাঠ করা হয় ,যা পড়া কর্তব্য )। ফুরকান (যা হক ও বাতিলের পার্তক্য দেখিয়ে দেয় )। নূর (যা সঠিক জ্ঞান অর্জনের যোগ্য আলো দান করে )। যিকর (যা নির্ভুল উপদেশ দান করে ,যা ভুলে যাওয়া শিক্ষা মনে করিয়ে দেয় )। আল - কিতাব (একমাত্র কিতাব যা ‘লাওহি মাহফুযে ’হিফাযত করা আছে)।
গ. ১১৪টি সূরার মধ্যে ৯টি সূরা ছাড়া ১০৫টি সূরার বিষয় ভিত্তিক নাম নেই । শুধু পরিচয়ের জন্য বিভিন্ন নাম দেয়া হয়েছে । সূরার কোন একটি শব্দ বা অক্ষর থেকেই নামকরণ করা হয়েছে ।
ঘ. নিম্নের নয়টি সূরার নাম ও আলোচ্য বিষয় একঃ
১. ৫৫নং সুরা -আর রাহমান
২. ৬৩নং সূরা -আল মুনাফেকুন
৩. ৬৫নং সূরা -আত তালাক
৪. ৭১নং সূরা -নূহ
৫. ৭২নং সূরা -জ্বিন
৬. ৭৫নং সূরা -আল কিয়ামাহ্
৭. ৯৭নং সূরা -আল কাদর
৮. ১০১নং সূরা -আল কারিয়াহ
৯. ১১২নং সূরা -আল ইখলাস
শেষ সূরাটির নাম সূরার মধ্যে নেই । এ নামটি গুণবাচক। অন্যন্য সূরার নাম যে শব্দে রাখা হয়েছে তা সূরা থেকেই নেয়া হয়েছে।
ঙ. কুরআনের ভাষা সাধারণত টেলিগ্রামের মত সংক্ষিপ্ত। যিনি পাঠিয়েছেন তিনিই এর সঠিক অর্থ জানেন। যার কাছে পাঠানো হয়েছে তাঁকেই সঠিক অর্থ বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই তাঁর শেখান অর্থই একমাত্র নির্ভরযোগ্য।

২. কুরআন যার উপর নাযিল হয়েছে তাঁকে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলঃ
ক. মানব জাতিকে আল্লাহর রচিত বিধান অনুযায়ী জীবন যাপনের বাস্তব শিক্ষা দান করাই তাঁর দায়িত্ব ছিল।
খ. সে দায়িত্ব পালনে সাহায্য করা ও তাঁকে ঠিকমত পরিচালনা করার প্রয়োজনে যখন যেটুকু দরকার সে পরিমাণ আয়াতই নাযিল হয়েছে ।
গ . সে দায়িত্বের দরুন স্বাভাবিকভাবেই তিনি একজন বিপ্লবী নেতার ভূমিকায় অবর্তীণ হন ।
ঘ. প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থা উৎখাত করে নতুনভাবে সমাজকে গড়ে তুলবার উদ্দেশ্য তাঁকে সমাজ বিপ্লবের উপযোগী আন্দোলন পরিচালনা করতে হয় ।
ঙ. এ ধরনের আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত সমাজ ব্যবস্তার সাথে অনিবার্য রূপেই সংঘর্ষের জন্ম দেয়।

৩. এ আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন করে কুরআন বুঝা কিছুতেই সম্ভব নয়ঃ
ক. ২৩ বছরের দীর্ঘ আন্দোলনের বিভিন্ন অবস্থা, পরিস্থিতি , কায়েমী স্বার্থের বিরোধিতা, সংঘর্ষের বিভিন্ন রূপ এবং এর মোকাবেলা ইত্যাদি উপলক্ষে নাযিলকৃত আয়াত ও সূরাকে বুঝতে হলে ঐ সময়কার পরিবেশকে সামনে রাখতে হবে ।
খ. সুতরাং ঐ আন্দোলনের ইতিহাস ও তার বিপ্লবী মহান নেতার জীবনই কুরআনের বাস্তব রূপ ও আসল কুরআন । কিতাবী কুরআনকে ঐ জীবন্ত কুরআন থেকেই বুঝতে হবে - শুধু কিতাব থেকে বুঝা অসম্ভব ।
গ. অতএব মুহাম্মাদ (সা) - ই কুরআনের একমাত্র সরকারী ও নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যাদাতা । কুরআনের অর্থ ও ব্যাখ্যা দানের দায়িত্ব একমাত্র তাঁরই উপর ন্যস্ত ছিল।
ঘ. যুগে যুগে কুরআনের নতুন নতুন ব্যাখ্যা হতে পারে এবং হওয়া উচিত-কিন্তু রাসূলের ব্যাখ্যার বিপরীতে কোন ব্যাখ্যা গ্রহনযোগ্য হতে পারে না ।
ঙ. কুরআনের অর্থ ও ব্যাখ্যার হেফাযতের প্রয়োজনেই রাসূল (সা) - এর জীবনেতিহাস হাদীসের মাধ্যমে সংরক্ষিত হয়েছে । নইলে কুরআনের ভাষার হেফাযত ও অর্থহীন হয়ে পড়তো ।

৪. কুরআনের আন্দোলনমুখী তাফসীর
ছাত্র জীবন থেকেই বাংলা ও ইংরেজী ভাষায় প্রকাশিত তাফসীর থেকে কুরআন বুঝবার চেষ্টা করেছিলাম । আলেম না হলে কুরআন বুঝা সম্ভব নয় মনে করেই এ চেষ্টায় ক্ষান্ত দিলাম । ১৯৫৪ সালে মরহুম আবদুল খালেক সাহেবের দারসে কুরআন কিছুদিন শুনে সহজ মনে হল । জানতে পারলাম যে মাওলানা মওদূদী (রঃ) - এর লিখিত তাফহীমুল কুরআন থেকেই তিনি দারস দেন । তখন নতুন উৎসাহ নিয়ে এ তাফসীর অধ্যয়নে মনোযোগ দিলাম।
ক. তাফহীমুল কুরআনের বৈশিষ্ট্য
তাফহীমুল কুরআন যে বৈশিষ্ট্যের দরুন বিশেষ মর্যাদার অধিকারী তা এ তাফসীরখানা না পড়া পর্যন্ত বুঝে আসতে পারে না । মধু কেমন তা খেয়েই বুঝতে হয় । অন্যের কথায় মধুর স্বাদ ও মিষ্ঠতা সঠিকভাবে জানা সম্ভব নয়। নবুয়াতের ২৩ বছর রাসূল (সা) কালেমা তাইয়্যেবার দাওয়াত থেকে শুরু করে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সব ক্ষেত্রেই ইকামাতে দ্বীনের যে মহান দায়িত্ব পালন করেছেন সে কাজটি করবার জন্য কুরআন পাক নাযিল হয়েছে । রাসূল (সা) -এর নেতৃত্বে পরিচালিত ইসলামী আন্দোলনের বিভিন্ন অবস্থায় ও পরিবেশে আল্লাহ পাক প্রয়োজন মতো যখন যে হেদায়াত পাঠিয়েছেন তা-ই গোটা কুরআনে ছড়িয়ে আছে । তাই কুরআনকে আসল রূপে দেখতে হলে রাসূল (সা)-এর ২৩ বছরের সংগ্রামী জীবনের সাথে মিলিয়ে বুঝবার চেষ্টা করতে হবে । তাফহীমুল কুরআন এ কাজটিই করেছে । এখানেই এর বৈশিষ্ট্য।
খ. কুরআন বুঝবার আসল মজা
তাফহীমুল কুরআন একথাই বুঝাবার চেষ্টা করেছে যে , রাসূল (সাঃ) -এর ঐ আন্দোলনকে পরিচালনা করার জন্যই কুরআন এসেছে। তাই কোন সূরাটি ঐ আন্দোলনের কোন যুগে এবং কি পরিবেশে নাযিল হয়েছে তা উল্লেখ করে বুঝানো হয়েছে যে ঐ পরিস্থিতিতে নাযিলকৃত সূরায় কী হেদায়াত দেয়া হয়েছে । এভাবে আলোচনার ফলে পাঠক রাসূল (সাঃ) এর আন্দোলনকে এবং সে আন্দোলনে কুরআনের ভুমিকাকে এমন সহজ ও সুন্দরভাবে বুঝতে পারে যার ফলে কুরআন বুঝবার আসল মজা মনে -প্রাণে উপলব্দি করতে পারে।
তাফহীমুল কুরআন ঈমানদার পাঠককে রাসূল (সা) - এর আন্দোলনের সংগ্রামী ময়দানে নিয়ে হাযির করে । দূর থেকে হক ও বাতিলের সংঘর্ষ না দেখে যাতে পাঠক নিজেকে হকের পক্ষে বাতিলের বিরুদ্ধে সক্রিয় দেখতে পায় সে ব্যবস্থাই এখানে করা হয়েছে । ইসলামী আন্দোলনের ও ইকামাতে দ্বীনের সংগ্রামে রাসূল (সা) ও সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) - কে যে ভূমিকা পালন করতে হয়েছে তা এ তাফসীরে এমন জীবন্ত হয়ে উঠেছে যে পাঠকের পক্ষে নিরপেক্ষ থাকার উপায় নেই । এ তাফসীর পাঠককে ঘরে বসে শুধু পড়ার মজা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে দেয়না । তাকে ইসলামী আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করে । যে সমাজে সে বাস করে সেখানে রাসূলের সেই সংগ্রামী আন্দোলন না চালালে কুরআন বুঝা অর্থহীন বলে তার মনে হয় । তাফহীমুল কুরআন কোন নিষ্ক্রিয় মুফাসসিরের রচনা নয় । ইকামাতে দ্বীনের আন্দোলনের সংগ্রামী নেতার লেখা এ তাফসীর পাঠককেও সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার তাকিদ দেয় । এটাই এ তাফসীরের বাহাদুরী।
গ. সব তাফসীর এ রকম নয় কেন ?
কারো মনে এ প্রশ্ন জাগতে পারে যে তাফহীমুল কুরআনে আন্দোলনমুখী যে তাফসীর পাওয়া যায় তা অতীতের বিখ্যাত তাফসীরগুলোতে নেই কেন ? তারা কি কুনআন ঠিকমতো বুঝেননি? এ প্রশ্নের জওয়াব সুস্পষ্ট হওয়া দরকার ।
চৌদ্দশ বছর আগে আল্লাহর রাসূল (সা) কুরআনের ভিত্তিতে সমাজ ও রাষ্ট্র এমনভাবে গড়ে তুলেছিলেন যে প্রায় বারশ বছর বিশ্বে মুসলমানদেরই নেতৃত্ব ছিল। খোলাফায়ে রাশেদার ত্রিশ বছর ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা শতকরা একশ ভাগই চালু ছিল । এরপর খেলাফতের স্থলে রাজতন্ত্র চালু হলেও শিক্ষাব্যবস্থা ,আইনব্যবস্থা ,অর্থব্যবস্থা ইসলাম অনুযায়ী চলতে থাকে । ইসলামী শাসনব্যবস্থায় ক্রমে ক্রমে ত্রুটি দেখা দেবার ফলে বারশ বছর পর শাসনক্ষমতা অমুসলিমদের হাতে চলে যায় ।
যে বারশ বছর মুসলিম শাসন ছিল তখন যেসব তাফসীর লেখা হয়েছে , মুসলিম সমাজে কুরআনের শিক্ষা ব্যাপক করাই উদ্দেশ্য ছিল । ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম থাকার কারণে কুরআনকে আন্দোলনের কিতাব হিসাবে ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন তখন ছিল না ।
যখন ইংরেজ শাসন এ উপমহাদেশে ইসলামকে জীবনের সকল ক্ষেত্র থেকে উৎখাত করে কুরআনের বিপরীত শিক্ষা ,সভ্যতা ও সংস্কৃতি চালু করল তখন নতুন করে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের আন্দোলন জরুরী হয়ে পড়ল । শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলবী (রঃ) থেকেই এ চিন্তার সূচনা হয় । এ চিন্তাধারার ধারকগনই মুজাহিদ আন্দোলন গড়ে তোলেন এবং উত্তর পশ্চিম সীমান্তে একটি ইসলামী রাষ্ট্রও কায়েম করেন । ১৮৩১সালে বালাকোটের যুদ্ধে নেতৃবৃন্দ শহীদ হলেও ইসলামকে বিজয়ী করার চিন্তাধারা বিলুপ্ত হয়নি।
মাওলানা মওদূদী (রঃ) ঐ চিন্তাধারার স্বার্থক ধারক হওয়ার সাথে সাথে নিজেই ইসলামী আন্দোলনের নেতৃত্বের দায়িত্ব পালন করার ফলে আন্দোলনের দৃষ্টিতে কুরআনকে বুঝাবার গুরুত্ব উপলব্ধি করেছেন । তাই তাঁর তাফসীর স্বাভাবিকভাবেই আন্দোলনমুখী হয়েছে।

৫. গোটা কুরআনের পটভূমিঃ বিশ্ব ও মানবজাতি সম্পর্কে এর রচয়িতার চিন্তাধারাঃ কুরআনের প্রতি কেউ ঈমান আনুক বা না-ই আনুক , কুরআনের বক্তব্যকে বুঝতে হলে ঐ চিন্তাধারা জানা অপরিহার্য
ক. বিশ্ব - স্রষ্টা মানুষকে জ্ঞান ও চিন্তার ক্ষমতা এবং ভালো -মন্দ বাছাইয়ের প্রতিভাসহ নিজের খলীফার দায়িত্ব দিয়েছেন।
খ. মানুষকে তিনি অজ্ঞানতার অন্ধকারে ছেড়ে দেননি। ইন্দ্রিয় ,বুদ্ধি ,ইলহাম ও অহীর মাধ্যমে জ্ঞান দানের ব্যবস্থা করেছেন । তাই প্রথম মানুষকেই রাসূল হিসেব পাঠিয়েছেন । তাঁকে যে জীবন বিধান দিয়েছেন তারই নাম ইসলাম ।
গ. প্রথম মানুষ থেকেই জানান হয়েছে যে ,সমস্ত সৃষ্টির উপর আল্লাহরই কর্তৃত্ব রয়েছে । সবার বিধানদাতা একমাত্র তিনিই । কেউ স্বাধীন নয় ,আনুগত্য পাওয়ার অধিকার একমাত্র তাঁরই । মানব দেহ সহ সবার জন্যই তিনি আইন রচনা করেন এবং তা নিজেই জারী করেন ।
ঘ. সমগ্র সৃষ্টিজগতে ব্যবহার করার অধিকার একমাত্র মানুষকেই দেয়া হয়েছে এবং বস্তুজগতকে ব্যবহারের যোগ্য একটি দেহতন্ত্র এজন্যই তাকে দান করা হয়েছে।
ঙ. বিশ্বজগত ও মানব দেহকে ব্যবহার করার ব্যাপারে মানুষকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হয়নি ,স্বায়ত্বশাসন দেয়া হয়েছে মাত্র।
চ. এ স্বায়ত্বশাসনটুকুও কর্মসম্পাদনের ব্যাপারে দেননি , কর্মের ইচ্ছা ও চেষ্টার ক্ষেত্রে মাত্র দিয়েছেন।
ছ. নবীর মাধ্যমে প্রেরিত বিধানকে মানুষের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়নি। ইচ্ছাশক্তি ও চেষ্টা সাধনাকেস্রষ্টার বিধান অনুযায়ী ব্যবহার করলে দুনিয়াতে শান্তি ও আখিরাতে মুক্তি, আর অন্যথা হলে দুনিয়ায় অশান্তি ও আখিরাতে শাস্তি হবে বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
জ. মানুষের পার্থিব জীবন আখিরাতের তুলনায় ক্ষণিকমাত্র এবং পার্থিব জীবনের ফলাফলই আখিরাতে দেয়া হবে। তাই দুনিয়ার জীবনটা পরীক্ষা মাত্র। প্রতি মুহূর্তেই এ পরীক্ষা চলছে।
ঝ. এ পরীক্ষায় মানুষ কি কারণে ফেল করে ? বস্তুজগতের প্রতি বস্তুজ্ঞান সর্বস্ব ও নীতিজ্ঞান বর্জিত দেহের তীব্র আকর্ষণ রয়েছে। নাফস বা দেহের (বস্তুগত অস্তিত্ব) দাবী ও রুহের (নৈতিক অস্তিত্ব ) স্বাভাবিক সংঘর্ষে মানুষের পরাজয় হলেই সে পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়।
ঞ. দুনিয়ায় মানুষের কর্মের শুধু বস্তুগত ফলই প্রকাশ পায়, নৈতিক ফল সামান্যই দেখা যায়। তাই নৈতিক জীব হিসাবে মানুষকে পরকালেই কর্মের নৈতিক ফল দেয়া হবে ।
ট. রুহ বা নৈতিক সত্তা বা প্রকৃত মানুষ যদি জগৎ ও জীবন এবং দুনিয়া ও আখিরাত সম্পর্কে জ্ঞান পেতে চায় তাহলে বস্তুগত জ্ঞান মোটেই যথেষ্ট নয় । অহীর মাধ্যমে তাকে এমন কতক মৌলিক জ্ঞান পেতে হবে যা ঈমানের (অদৃশ্যে বিশ্বাস ) মাধ্যমেই পাওয়া সম্ভব ।
ঠ. জীবন সমস্যার মোকাবেলা করে জীবনকে সঠিক পথে চালাবার বাস্তব শিক্ষা দেবার জন্য যুগে যুগে নবী ও রাসুল পাঠানো হয়েছে।
ড. সব নবীর দ্বীনই (আনুগত্যের নীতি-- আল্লাহর আনুগত্য ) এক ছিল অবশ্য সমাজ বিবর্তনের প্রয়োজনে তাঁদের সবার শরীয়াত এক ছিল না ।
ঢ. মানব সমাজের পূর্ণ বিকাশের যুগে সর্বশেষ রাসূল পাঠানো হলো। মূল দ্বীনের চিরন্তন শিক্ষা ও পূর্নাঙ্গ শরীয়াত ,কুরআন ও সুন্নাহর মধ্যেই রয়েছে ।
ণ. পূর্ববর্তী সব কিতাব বিকৃত হয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক ছিল । সর্বশেষ কিতাব চিরস্থায়ী থাকবে ।
ত. এক স্রষ্টা তাঁর প্রিয় মানব জাতির জন্য ভিন্ন ভিন্ন বিধান বা ধর্ম পাঠাননি। একই মূল বিধান (স্রষ্টার আনুগত্য -ইসলাম ) প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করে পূর্ণাঙ্গরূপে মুহাম্মদ (সা) -এর নিকট প্রেরিত হয়েছে।
থ. নবীগণ তাঁদের দায়িত্ব যথাযথই পালন করেছেন। কিন্তু যখনই দুটো শর্ত পূর্ণ হয়েছে তখনই ইসলামী বিধান বিজয়ী হয়েছে--- একদল যোগ্য লোক তৈরী হওয়া ও জনগণ এর সক্রিয় বিরোধী না হওয়া --- এ দুটো শর্ত একত্র না হলে বিজয় অসম্ভব ।
দ. মুহাম্মদ (সাঃ)- কে সর্ব যুগের জন্য মানব জাতির উৎকৃষ্টতম আদর্শ হিসাবেই পাঠানো হয়েছে এবং একমাত্র তাঁর অনুসরণের মাধ্যমেই আল্লাহর সন্তুষ্টি ,পার্থিব সাফল্য ও পরকালীন পুরস্কার পাওযা সম্ভব ।
ধ. সকল নবী ও রাসূলকে অনুসরণ করার একমাত্র উপায় হলো মুহাম্মদ (সাঃ)- এর অনুসরণ।
ন. আল্লাহ পাক তাঁর দ্বীন ও শরীয়াতকে মুহাম্মদ (সাঃ)- এর মাধ্যমে পূর্ণ করায় আর কোন রাসূল বা পাঠাবার প্রয়োজন রইল না।


৬. সমাজ বিপ্লবের উপযোগী আন্দোলনের পরিচয়

ক. সমাজ বিপ্লবের উদ্দেশ্যে পরিচালিত আন্দোলনের সাথে প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থা ও কায়েমী স্বার্থের সংঘর্ষ অনিবার্য ।
খ. এ ধরনের আন্দোলন সমাজের মানুষকে প্রধানতঃ দুভাগে বিভক্ত করেঃ
১. বিপ্লবের অনুসারী -প্র্রধানতঃ যারা প্রচলিত সমাজের সুবিদাভোগী নয়।
২. বিপ্লব বিরোধী-- প্রচলিত সমাজের কায়েমী স্বার্থ বা সুবিধাভোগী ।
গ. উভয় পক্ষে সাহসী ও মযবুত লোকের সংখ্যা কম হলেও অনেক লোক উভয় পক্ষের সমর্থক হয় --- যদিও তারা বেশীর ভাগই নিষ্ক্রীয় থাকে ।
ঘ. সর্ব সাধারণ অধিকাংশ লোক নিরপেক্ষ থাকে বা পরিস্থিতি বিবেচনা করতে থাকে-- যে দিকে জয় হয় সে দিকেই সায় দেয়।
ঙ. বিপ্লবী আদর্শের মুমিন (অনুসারী) ও কাফির (বিরোধী) ছাড়া আন্দোলনের বিভিন্ন সময় ৫ রকম মুনাফিকের আবির্ভাব হয়ঃ
১. দুর্বল মুমিন সংগ্রাম যুগে ।
২. দুর্বল কাফির সংগ্রাম যুগে অল্প এবং বিজয় যুগে বেশী।
৩. সন্দেহ পরায়ণ (‘মযাবযাবীন’ ) উভয় যুগে ।
৪. মুমিন বেশে কাফির বিজয় যুগে ।
৫. বাধ্য হয়ে মুমিন চূড়ান্ত বিজয়ের পর ।

চ. আন্দোলনের বিভিন্ন স্তরে বিরোধীতার রুপ মোকাবেলার ধরন সংঘর্ষের ফলাফল।
১. বিদ্রুপ ধৈর্যের সাথে দাওয়াত দেয়া সংখ্যা বৃদ্ধি।
২. মিথ্যা প্রচার যুক্তিদ্বারা খন্ডন সংখ্যা বৃদ্ধি।
৩. নির্যাতন আদর্শের মজবুতীকরণ সাহসী লোক বাছাই। দুর্বল লোক ছাঁটাই ।

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম