কেবল আরবেই নয়, তখনকার সমগ্র দুনিয়ার পরিবেশ সামনে রেখে চিন্তা করতে হবে। আলোচ্য ব্যক্তি যেসব লোকের মধ্যে জন্মগ্রহণ করলেন, যাদের মধ্যে বাল্য ও শৈশবকাল অতিবাহিত করলেন, যাদের সাথে লালিত-পালিত হয়ে যৌবনে পদার্পণ করলেন, যাদের সাথে তাঁর মেলামেশা ও চলাফেরা ছিলো, যাদের সাথে তাঁর দিন-রাতের লেনদেন, কাজ-কারবার সম্পন্ন হতো, জীবনের প্রথম হতেই অভ্যাসে, চরিত্রে সেসব লোক হতে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রভাবে গড়ে উঠলেন। তিনি কখনো মিথ্যা বলতেন না, তাঁর সততা-সত্যবাদিতার সাক্ষ্য দিতো তখনকার গোটা জাতিই। তার কোনো প্রাণের দুশমনও তার উপর মিথ্যা বলার কোনো অভিযোগ আরোপ করতে পারেনি। তিনি কারো সাথে অশ্লীল কথা বলতেন না, কেউ তার মুখে অশ্লীল কথা বা গালাগালি উচ্চারিত হতে শুনতে পাননি। তিনি লোকদের সাথে ভালো সম্পর্ক স্থাপন করে চলতেন, কিন্তু কখনো কারো সাথে রূঢ় ভাষা ব্যবহার বা ঝগড়া-ফাসাদ করেননি। তার কণ্ঠে কঠোর ভাষার পরিবর্তে মিষ্ট ভাষাই সবসময় উচ্চারিত হতো। ফলে যে কেউ তার সাথে সাক্ষাত করতো, তার দিকে নিবিড়ভাবে আকৃষ্ট হয়ে যেতো। কারো সাথে তিনি কোনো খারাপ মোয়ামেলা বা ব্যবহার করেননি। কারো ‘হক’ নষ্ট বা হরণ করেননি। বছরের পর বছর ধরে ব্যবসা বাণিজ্য করা সত্ত্বেও কারো এক পয়সা পরিমাণও অন্যায়ভাবে গ্রহণ করেননি। যাদের সাথে তার লেনদেন ও কাজ-কর্মের সম্পর্ক, তারা সকলেই তার বিশ্বস্ততা ও ঈমানদারীর উপর পূর্ণ মাত্রায় নির্ভর করে। গোটা জাতিই তাকে ‘আল আমীন’ উপাধী দান করে। শত্রু পক্ষের লোকেরা পর্যন্ত তার নিকট নিজেদের মূল্যবান সম্পদ গচ্ছিত রাখে এবং তিনি সেই সবের পূর্ণ হেফাযত করেন। চারিদিকে প্রায় সকল লোকই লজ্জাহীন, তার মধ্যে তিনি এমন একজন লজ্জাশীল ব্যক্তি যে, জ্ঞানের উন্মেষকাল হতে তাকে কেউ উলংগ দেখতে পায়নি। চরিত্রহীন পরিবেষ্টনীর মধ্যে তিনি একা এমন চরিত্রবান ও পূত প্রকৃতির লোক যে, তিনি কখনো কোনো অন্যায় ও অবৈধ কাজে লিপ্ত হননি। মদ পান বা জুয়া খেলায় যোগদান করেননি। নোংরা লোকদের মধ্যে তিনি এমন সুসভ্য ব্যক্তি যে, সকল প্রকার অসভ্যতা ও মলিনতাকে তিনি ঘৃণা করেন ও বর্জন করে চলেন। বরং তার প্রত্যেক কাজেই পরিচ্ছন্নতা ও শালীনতা পরিস্ফুট ছিলো। পাষাণ দিল লোকদের মধ্যে তিনি অত্যন্ত দয়ালু ব্যক্তি, সকলেরই দুঃখ-দরদে তিনি শরীকদার। ইয়াতীম ও বিধবাদের সাহায্য করেন। কাউকে তিনি কোনো প্রকার আঘাত দেন না। বরং তিনি অপর লোকদের জন্য সকল প্রকার দুঃখ অকাতরে স্বীকার করেন। পশু স্তরের লোকদের মধ্যে তিনি অবিচল শান্তি প্রিয় লোক, নিজ জাতির লোকদেরকে ঝগড়া-ফাসাদ ও রক্তারক্তিতে লিপ্ত দেখে কষ্টবোধ করেন। গোত্রীয় লড়াই-বিবাদ হতে তিনি অতিশয় দূরে সরে থাকেন। সন্ধি মিলন সৃষ্টির চেষ্টায় তিনি অগ্রসর। মূর্তি পূজারীদের মাঝে তিনি এক সুস্থ প্রকৃতি ও অনাবিল বুদ্ধির লোক, আকাশ ও পৃথিবীতে তিনি কোনো কিছুই পূজ্য বা পূজনীয় বলে মনে করেন না। কোনো সৃষ্টির সামনে তাঁর মাথা অবনমিত হয় না, মূর্তিদের সামনে প্রদত্ত অর্ঘ খেতেও তিনি কখনো প্রস্তুত হন না। তার দিল স্বতঃস্ফূর্তভাবেই শিরক ও সৃষ্টি পূজার মলিনতা হতে পবিত্র।......
- তাওহীদ রিসালাত ও আখিরাত
- অধ্যায় ০১ : বিবেকের ফায়সালা
- অধ্যায় ০২ : বিবেকের বিচারে মুহাম্মদ (স) -এর নবুয়াত
- অধ্যায় ০৩ : মৃত্যুর পরের জীবন
0 comments: