২০১০ সালের ১৩ই জুলাই মুহাম্মাদ কামারুজ্জামানকে আটক করা হয়। একই বছর ২২ শে জুলাই তাকে পুলিশি তৎপরতায় বাধা দানের নামে একটি মামলায় শাহবাগ থানায় গ্রেফতার দেখানো হয়। দুই বছর বিনা চার্জে কারাবরনের পরে কামারুজ্জামান সাতটি চার্জে অভিযুক্ত হন। এই চার্জ গুলো মানবতাবিরোধী অপরাধের উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। ২রা জুলাই ২০১২ সালে কেস গুলোর বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
চার্জ গুলোর সারসংক্ষেপ হচ্ছে-
কেস ১. (নির্যাতন)
অভিযোগঃ পাকিস্তানের বিপক্ষে অবস্থানের জন্য শেরপুর কলেজের প্রফেসর সাঈদ আব্দুল হান্নানকে নির্যাতনের অভিযোগ। উলঙ্গ করে, মাথা কামিয়ে তাকে আল বদরের সদস্য হিসেবে শেরপুর শহরে হাঁটতে বাধ্য করা হয়। এবং অভিযুক্ত সহ অন্যান্যরা তাকে চাবুক পেটা করেন।
মামলার অবস্থাঃ প্রসিকিউশন প্রফেসর আব্দুল হান্নান বেচে থাকা সত্ত্বেও তাকে মামলার সাক্ষ্য হিসেবে উপস্থিত করাতে পারেননি। তিনি এখন মারাত্মক অসুস্থ। প্রসিকিউশন তাকে জোর করে মামলার সাক্ষ্য বানায়। কিন্তু তিনি মিথ্যা না বলতে অস্বীকৃতি জানায়। পরবর্তীতে প্রসিকিউশন তাকে সাক্ষ্য হিসেবে হাজির করেননি। বাকি দুজন সাক্ষী যারা ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে চেয়েছেন তারা কেউই ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না । শুধু তাই নয় তাদের বিবৃতিকে অসংগতি পাওয়া গেছে।
কেস ২. (অপহরণ, নির্যাতন, খুন)
অভিযোগঃ কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে আল বদরের কিছু সদস্য শেরপুরের ঝিনাইগাতির রমনাপুর গ্রামের বাদিউজ্জামানকে অপহরণ করার অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগে আরও বলা হয় , সাড়া রাত তাকে আহাম্মেদ নগর আর্মি ক্যাম্পে নির্যাতন করা হয়েছে এবং পরবর্তী দিন তাকে গুলি করে হত্যা করা হয় এবং তার মরদেহ নদীতে ফেলে দেয়া হয়।
মামলার অবস্থানঃ প্রসিকিউশন বাদিউজ্জামানের ভাই হাসানুজ্জামান কে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহন করেন। অনেক অসঙ্গতিপুর্ন বর্ণনা ছাড়াও তিনি বলেন, তিনি এবং তার পরিবার কয়েকজন কৃষকের কাছে শুনেছেন, কামারুজ্জামান এবং তার দল তার ভাইকে হত্যা করে। এইরকম শোনা কথা কখনই সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। এছাড়াও হাসানুজ্জামান দাবি করেন ১৯৭২ সালে তার পরিবার কামারুজ্জামান এবং আর দশজনের বিরুদ্ধে তার ভাইকে হত্যার অভিযোগে মামলা করেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য প্রসিকিউশন তার এই দাবির সপক্ষে কিছুই প্রমান উপস্থিত করতে পারেনি। তদন্তে পাওয়া যায়, এব্যাপারে প্রসিকিউশনের এফআইআর একটা সম্পূর্ণ ভিন্ন মামলা যাতে অভিযুক্তের নাম নেই।
কিন্তু এই আজব কোর্ট বিবাদি পক্ষের আইনজীবীদের এফআইআর এর কপি গ্রহণ করছে না কারন এটা প্রত্যয়ন করা নয়। কোন আমলাই এখন এই স্পর্শকাতর ডকুমেন্ট প্রত্যয়ন করছে না। তাই এটি জমা দেয়া যায়নি। অপরদিকে প্রসিকিউশন তাদের অভিযোগের সমর্থনে কোন ডকুমেন্ট উপস্থাপন করেনি।
কেস ৩. (গণহত্যা )
অভিযোগঃ বিধবা পল্লি সোহাগপুরে আরমিদের হামলায় কামারুজ্জামানের ভুমিকার অভিযোগ করা হয়েছে। ২৫শে জুলাই ১৯৭১ সালে পাকিস্তান আর্মি এবং তাদের স্থানীয় দোসররা সোহাগপুর গ্রামে ঝটিকা আক্রমন চালায়, অনেক মহিলাকে ধর্ষণ করে এবং অন্তত ১২০ জনকে হত্যা করে।
মামলার অবস্থাঃ প্রসিকিউশন তিন জন বিধবাকে মামলার সাক্ষী হিসেবে গ্রহণ করে যারা ক্যামেরা ট্রায়ালে তাদের প্রামানিক সাক্ষ্য প্রদান করে। হোসেনা বেয়া যার স্বামী পাকিস্তানি আর্মির আক্রমণে নিহত হন। তিনি দাবি করেন, স্থানীয় বড়দের কাছে তিনি শুনেছেন কামারুজ্জামান পাক আর্মিদের গ্রামে নিয়ে আসে, এবং হামলার সময় উপস্থিত ছিলেন।
হাফিজা বেয়া, একই রকম আরেকজন বিধবা ঘটনার সময় কামারুজ্জামানে ঘটনার সময় উপস্থিত থাকার দাবি করেন । কিন্তু তিনি তদন্ত কর্মকর্তার সাথে সামনা সামনি সাক্ষ্য দানের সময় এমনটি দাবি করেননি।
করফুলি বেয়া, আরেকজন বিধবা গ্রামের বড়দের কাছে কামারুজ্জামানের জড়িত থাকার ব্যাপারে শুনেছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে কেউই তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেয়া সাক্ষাতকারে কামারুজ্জামানের জড়িত থাকা কথা বলেননি। যা একটি বড় অসংগতি।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, সোহাগপুরের বিধবা কন্যারা নামে একটি বইয়ে সোহাগপুরের গণহত্যার বর্ননা দেয়া হয়েছে। সেখানে করফুলি বেয়া সহ অনেক বিধবারই সাক্ষাতকার প্রকাশ করা হয় যেখানে কামারুজ্জামানের কথা একবারও বলা হয়নি।
কিন্তু এর বিপরীতে ডিফেন্স টিম অনেক শক্ত এবং গ্রহণযোগ্য সাক্ষ্য হাজির করেছে। সাক্ষী একটা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য যিনি পাকিস্তানি আর্মির হামলায় তার পরিবার সহ সব হারিয়েছিলেন। সে দাবি করেন, কামারুজ্জামান এই রকম কোন ঘটনার সাথে বিগত ৪০ বছর জড়িত ছিল না, এমনকি সোহাগপুর ২০০৭ সালে বিধবাপল্লি হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পরেও না।তিনি আরো উল্লেখ করেন, গ্রামবাসী ভাল করেই অবগত আছে যে সরকার মিথ্যা সাক্ষিদের টাকা দিয়ে অভিযুক্তের বিরদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করছে।
কেস ৪. (অপহরণ, আটক, খুন)
অভিযোগঃ ১৯৭১ সালে ২৩শে আগস্ট গোলাম মোস্তফা তালুকদার কে আটক করে হত্যা করার অভিযোগ করা হয়। কামারুজ্জামানের আদেশে তালুকদারকে আটক করে সুরেন্দ্র সাহার পরিত্যাক্ত বাড়িতে আল বদরের আস্তানায় আটক করা হয়। পরে অভিযুক্ত এবং আর কয়েকজন মিলে তালুকদারকে মেরে নদীতে ফেলে দেয়ারও অভিযোগ করা হয়।
মামলার অবস্থাঃ প্রসিকিউশন ভিকটিমের ভাই মোশাররফ তালুকদারকে মামলার সাক্ষী হিসেবে গ্রহণ করে। তিনি বলেন , পরবর্তীতে তার পরিবার আবুল কাসেম (যাকেও তালুকদারের সাথে হত্যা করার জন্য ধরে নেয়া হয়েছিল এবং তিনি পালিয়ে আসেন ) এর কাছে শুনেন কামারুজ্জামান ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন। মোশাররফ তালুকদারের বয়স ছিল তখন মাত্র ১১। তার এই প্রামানিক সাক্ষ্য গ্ররুত্ব সহকারে নেয়ার কিছু নেই।
এছাড়াও তিনি স্থানীয় ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিতে ছিলনে। আদালতের কাছে তার উদ্দ্যেশ্য স্পষ্ট। আর একজনকে এই মামলার সাক্ষী হিসেবে নেয়া হয় । কিন্তু তাদের দুজনের কেউই সরাসরি ঘটনাস্থলে কামারুজ্জামানকে দেখেননি। এবং তাদের দু জনের সাক্ষ্যের মধ্যে সময়, ঘটনার স্থান, এবং অনুক্রমে অমিল রয়েছে।
কেস ৫. (অপহরণ, আটক, নির্যাতন)
অভিযোগঃ লিয়াকত আলি এবং মজিবুর রহমান পানুকে আটক করে রাঙ্ঘুনাথ বাজারে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে আসার অভিযোগ করা হয়। তাদেরকে সেখানে নির্যাতন করে পরে একটি পুলিশ স্টেশন এ নিয়ে যাওয়া হয়। চার দিন পরে কামারুজ্জামানের নির্দেশে তাদের ঝিনাইগাতি রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদেরকে আর ১১ জনের সাথে লাইনে দাড় করান হয়, কিন্তু পরে লিয়াকত, পানু এবং অন্য একজনকে ছেড়ে দেয়া হয়। বাকিদের হ্ত্যা কয়া হয়। ঘটনাস্থলে অভিযুক্তের উপস্থিত থাকার কথা বলা হয়।
মামলার অবস্থাঃ প্রসিকিউশন লিয়াকত এবং পানু উভয়কেই সাক্ষী হিসেবে হাজির করতে সক্ষম হয়। লিয়াকত আলি আটক, অপহরণ, নির্যাতনের কোন সময়ই কামারুজ্জামানের অনুপস্থিতির সত্যতা যাচাই করেন। পানু বলেন, সে নিজে কামারুজ্জামানকে দেখেননি কিন্তু অন্য একজনের কাছে শুনেছেন যে কামারুজ্জামান ক্যাম্পে সকাল এসে চলে যায়।
কেস ৬. (আটক ও হত্যা)
অভিযোগঃ ১৯৭১ সালের নভেম্বরে কামারুজ্জামানের নির্দেশে আল বদদের কতিপয় সদস্য তুনু এবং গল্কি বাড়ির জাহাঙ্গিরকে আটক করা হয়। এবং তাদের ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের ডাক বাংলোয় নেয়া হয়। তুনুকে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়, জাহাঙ্গীরকে আটক রেখে পরে ছেড়ে দেয়া হয়।
মামলার অবস্থাঃ প্রসিকিউশন কোন সাক্ষিকে উপস্থিত করাতে পারেননি।
কেস ৭. (আটক ও হত্যা)
অভিযোগঃ রমযানের ২৭ তারিখে কামারুজ্জামান টেপু মিয়া ও তার বড় ছেলে জহুরুল ইসলামকে আটক করেন। ময়মনসিংহের গোলাপজান রোড থেকে তাদের সাথে আল বদরের সশস্ত্র ১৫-২০ জন সদস্য ছিলেন। তাদেরকে জেলা প্রসাশকের ডাক বাংলোয় আল বদর ক্যাম্পে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়। পরেরদিন সকালে পিতা-ছেলের সাথে আরও ৫ জনকে ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে লাইনে দাড় করান হয়। টেপা মিয়াকে বেয়নেট দিয়ে আঘাত করার সময় সে নদীতে ঝাপিয়ে পরেন। আল বদরের সদস্যরা তাকে গুলি করলে তার পায়ে জখম নিয়ে পালিয়ে আসেন, কিন্তু বাকিদের সেখানে হত্যা করা হয়।
মামলার অবস্থাঃ প্রসিকিউশন কোন সাক্ষী হাজির করতে পারেননি।
উপসংহারঃ কেস ১, এ প্রসিকিউশন আসল সাক্ষি জীবিত থাকা সত্ত্বেও হাজির করতে ব্যার্থ হয় । শোনা সাক্ষিদের অসংগতি পুর্ন সাক্ষ্য কামারুজ্জামানের অপরাধ প্রমান করে না।
কেস ২ এ , ১৯৭২ সালে বাদির পরিবার কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলা করার দাবি করেন, কিন্তু তারা এর পক্ষে কোন ডকুমেন্ট প্রদান করতে পারনি। কিন্তু এফআইআর দারা প্রমানিত হয় যে কামারুজ্জামান সে মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন না।
কেস ৩, প্রসিকিউশন ক্যামেরা ট্রায়াল এ সাক্ষ্য নেয়। যেখানে যা ইচ্ছা তাই লেখে দেয়া হয়। তাছাড়াও অন্যের কাছে শোনা কথা সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।
কেস ৪, তখণকার ১১ বছরের ছেলে যে কিনা সরকারের সংগঠনের সাথে জড়িত , তার শোনা কথা কখনই সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।
কেস ৫, প্রসিকিউশনের সাক্ষী কামারুজ্জামানের পক্ষে সাক্ষ্য দেয় যা কামারুজ্জামানের নিরপরাধ হওয়ার প্রমান।
কেস ৬ এবং কেস ৭, এ প্রসিকিউশন কোন সাক্ষ্য হাজির করতে পারেননি।
এ থেকে প্রমান হয় যে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে করা কোন অভিযোগ সত্য নয়। কোন অভিযোগ ই প্রমানিত হয়নি। তাই তাকে নিঃশর্ত ভাবে মুক্ত করার রায় দেয়া উচিত।
কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে দেওয়া সাক্ষীদের জবানবন্দিতে অসংলগ্নতা ও গরমিল রয়েছে বলে বুধবার আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান আদালতকে বলেন।
আসামিপক্ষ যুক্তিতে বলেন, যে পাঁচটি অভিযোগে কামারুজ্জামানকে সাজা দেওয়া হয়েছে সেখানে দাখিল করা সকল নথিপত্র এবং তার ওপর ভিত্তি করে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায় ও পর্যবেক্ষণ নীতিভ্রষ্ট।
কামারুজ্জামানের আইনজীবীরা বলেন, সাক্ষীরা জবানবন্দিতে যা বলেননি ট্রাইব্যুনাল তার পর্যবেক্ষণে তা বলেছেন।
অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান আদালতে বলেন, কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনিত এক নম্বর অভিযোগে বদিউজ্জামানকে হত্যার কথা বলা হয়েছে। অভিযোগের ওপর জবানবন্দিতে চতুর্থ সাক্ষী বলেছেন, তিনি সাইদুর রহমানের কাছ থেকে ঘটনা শুনেছেন এবং সাইদুর রহমান তাকে বলেছে তিনি নিজে দেখেন নাই। তিনি শুনেছেন মকবুলের নিকট থেকে।
অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষের ষষ্ঠ সাক্ষী হাসানুজ্জামান বলেছেন, তিনি ঘটনাটি সাইদুর রহমানের কাছ থেকে শুনেছেন এবং এ ঘটনার সময় সাইদুর রহমান ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া মকবুল বেঁচে থাকা সত্ত্বেও তাকে সাক্ষী হিসেবে আনা হয়নি এবং দুই সাক্ষীর জবানবন্দিতে মিল নেই।
দুই নম্বর অভিযোগ প্রিন্সিপাল আঃ হান্নানকে নির্যাতন করার ঘটনার বিষয়ে আইনজীবী বলেন, হান্নান জীবিত, প্রসিকিউশন তাকে সাক্ষী হিসেবে গ্রহণের জন্য ট্রাইব্যুনালের কাছে আবেদন করার পরও তাকে আদালতে হাজির করা হয়নি।
এছাড়া অভিযোগে বলা হয়েছে ঘটনাটি ঘটেছে মে মাসে। অথচ তৃতীয় সাক্ষী জহুরুল হক মুন্সী তার জবানবন্দিতে বলেছেন ঘটনাটি অক্টোবর মাসে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়া দ্বিতীয় সাক্ষী মহন মুন্সী ঘটনার বিষয়ে তিনটি তারিখ উল্লেখ করেছে। সুতরাং ঘটনা ঘটেছে কিনা তা নিয়েই সন্দেহ রয়েছে।
কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে তৃতীয় অভিযোগ সোহাগপুর হত্যার বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপনকালে এস এম শাহজাহান আদালতকে বলেন, ঘটনার ওপর জবানবন্দি দেওয়া প্রথম হামিদুল হক ও দ্বিতীয় সাক্ষী মহন মুন্সী অন্যের নিকট থেকে শুনে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
এছাড়া রাষ্ট্রপক্ষের ১০ম সাক্ষী জালাল, ১১তম হাসেন বানু, ১২তম হাফিজা বেওয়া এবং ১৩তম সাক্ষী করফুলী বেওয়া বলেছেন তারা ঘটনার সময় কামারুজ্জামানকে দেখেছেন। কিন্তু জেরায় তারা স্বীকার করেছেন, স্বাধীনতার তিন চার মাস পর থেকে তারা কামারুজ্জামানকে চিনেন।
এছাড়া দ্বিতীয় সাক্ষী বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় সোহাগপুরে মানুষ মেরে ট্রাকে করে শেরপুরে মানুষ নিয়ে আসা হয়। সোহাগপুর থেকে শেরপুরের দূরত্ব ২৫-৩০ কিলোমিটার। কিন্তু সাক্ষ্য প্রমাণে এসেছে সেসময় সোহাগপুর-শেরপুরে আসার জন্য ট্রাক বা বাসের কোন রাস্তা ছিল না।
গোলাম মোস্তফাকে হত্যার বিষয়ে চতুর্থ অভিযোগের ওপর পেশকৃত যুক্তিতে আইনজীবী বলেন, অভিযোগে বলা হয়েছে ঘটনাটি ঘটেছে ২৩ আগস্ট। অথচ ১৪তম সাক্ষী মুজিবুর রহমান পানু বলেছেন, ঘটনাটি মে মাসে ঘটেছে।
২য় সাক্ষী মহন মুন্সী বলেছেন আমি দেখেছি মেজর রিয়াজের উপস্থিতিতে ঘটনাটি ঘটেছে। সেখানে সব কথা হয়েছে উর্দুতে। অথচ তিনি উর্দু বোঝেননা বলে জেরায় স্বীকার করেছেন।
অপরদিকে ৫ম সাক্ষী মোশাররফ হোসেন বলেছেন মেজর রিয়াজ আগস্টের প্রথম সপ্তাহে পাকিস্তানে চলে গেছে। তাহলে ঘটনাটি ২৩ আগস্ট ঘটলো কিভাবে প্রশ্ন আইনজীবীর।
সপ্তম অভিযোগ টেপা মিয়া ও তার ছেলে দারাকে অপহরণের বিষয়ে শাহজাহান বলেন, জবানবন্দিতে কোনো সাক্ষী বলে নাই যে তাদেরকে কামারুজ্জামান অপহরণ করেছে। রাষ্ট্রপক্ষের প্রথম সাক্ষী হামিদুল হক বলেছেন, আমি নিজে ক্যাম্পে বন্দি ছিলাম। তখন টেপা ও তার ছেলেকে ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়েছে।
তবে তাদেরকে কে এনেছে তা সাক্ষী জানতেন না। এছাড়া নবম সাক্ষী অ্যাডভোকেট আবুল কাশেমও তার সাথে ছিল বলে জবানবন্দিতে জানান প্রথম সাক্ষী।
এদিকে নবম সাক্ষী বলেছেন প্রথম সাক্ষী তার সাথে ক্যাম্পে ছিলেন না। এছাড়া ১৫তম সাক্ষী বলেছেন “আমিও দেখেছি টেপা ও তার ছেলে ক্যাম্পে বন্দি”, তিনি বলেছেন ঘটনাটি ঘটেছে জু্লাই মাসে। অথচ মূল অভিযোগে বলা হয়েছে ঘটনাটি ঘটেছে ২০ নভেম্বর।
উভয়পক্ষের চূড়ান্ত যুক্তি উপস্থাপন শেষে আজ কামারুজ্জামানের মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষামান রাখেন, আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ বুধবার শুনানি গ্রহন করেন।
বেঞ্চের অপর তিন বিচারপতি হলেন বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
0 comments: