সিংগাপুর এয়ারলাইন্সের এয়ারবাস যখন থাইল্যান্ডের সুবর্ণভূমি বিমান বন্দরের রানওয়ে স্পর্শ করল, তখন রাত প্রায় ন’টা। আমাদের প্যাকেজের মধ্যে ব্যাংকক প্যালেস হোটেলে বুকিং ছিল, সাথে ফ্রি এয়ারপোর্ট থেকে হোটেল ট্রান্সফার। এদিক ওদিক অনেক খুজেও যখন আমাদের নিতে আসা গাড়ীর টিকির দেখা পেলাম না, তখন বাসে করেই ব্যাংকক এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়েই বাস উঠে গেল ফ্লাই ওভার এ, আর সেটা গিয়ে শেষ হল একেবারে ব্যাংকক শহরে। বাস ব্যাংকক প্যালেসের কাছেই নামিয়ে দিল। হোটেলের মান বেশ ভালই।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে কমপ্লিমেন্টারি ব্রেক ফাস্ট দেখেতো আমরা যারপরনাই উচ্ছ্বসিত। এত আইটেমের আয়োজন, কোন কার্পণ্য ছাড়াই নাশতা এস্তেমাল করলাম।
একটু পর শুনি, ট্রাভেল এজেন্সি থেকে গাড়ী এসেছে। গতকাল রাতে যে আমাদের বিমান বন্দর থেকে হোটেলে আনতে যায়নি, তার বদলা হিসেবে অর্ধ দিবস সিটি ট্যুর করাবে। ভাবলাম, যাক কিছু তাহলে পাওয়া যাচ্ছে !
বাইরে প্রচন্ড রোদ। এর মধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মাইক্রো বাসে করে ঘুরতে বেরুলাম। রাস্তা ঘাটের পরিচ্ছন্নতা দেখে মুগ্ধ হলাম। ট্যাক্সি ক্যাবগুলো এমন চকচকে, দেখলে মনে হয় এই মাত্র শোরুম থেকে নিয়ে এসেছে। সিটি ট্যুরের প্রধান আকর্ষন হল এমেরাল্ড বৌদ্ধ মন্দির, বলা যায় রাজকীয় বৌদ্ধ মন্দির।
বিভিন্ন কারুকার্য খচিত খুবই সুন্দর এক মন্দির। সেথায় বিশাল এক বৌদ্ধ মূর্তি শায়িত অবস্থায় আছে, দেখে মনে হয় পুরোটাই স্বর্ণে মোড়া।
আমার সহকর্মী আবার বৌদ্ধ, তাই তার জন্য বেশ ভালই হল, ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গায় সে প্রার্থনাও করতে পারছে।
এদিক সেদিক ঘুরে আমরা চলে এলাম MBK মার্কেটে। সেখানেই দুপুরের খাওয়া সারলাম। খাবারে অবশ্যই চিংড়ি মাছ ছিল। থাই রান্না আমার কাছে বরাবরই ভাল লাগল। খাওয়া সেরে মার্কেটে টুকটাক ঘুরে BTS বা স্কাই ট্রেনে চড়ে হোটেলে চলে এলাম।
ব্যাংকক স্কাই ট্রেন (বিটিএস)
MBK মার্কেটের সামনে থেকে দেখা ব্যাংকক শহর
ব্যাংককে মজার ব্যাপার দেখলাম, অফিস বা বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে যেসব ফুটপাথ ফাকা, রাতে সেগুলো জমজমাট বাজার হয়ে যায়, চেনাই যায়না যে দিনে এলাকাটা এত ফাকা ছিল। এগুলো মূলতঃ নাইট বাজার।
পরদিন আমাদের গন্তব্য এক দিনের পাতায়া কোরাল দ্বীপ ট্যুর। গাড়ী করে যাবার সময় দেখলাম, প্রায় ১৫০ কিমি রাস্তা বরাবর ফ্লাই ওভার তৈরী হচ্ছে ! যাবার পথে ওরা বিশ্বের সবচেয়ে বড় অলংকারের শো রুমে থামাল।
এটা আসলে GEMS GALLERY PATTAYA এর শোরুম। ঢোকার মুখেই ঐতিহ্যবাহী পোষাক পরিহিতা থাই নারীদের অভ্যর্থনা আর গরমে দিল জুড়ানো ঠান্ডা শরবত দিয়ে আপ্যায়ন!
এরপর ট্রেনে চড়িয়ে একটি গাইডেড শো দেখায়, কিভাবে তারা এই দামী GEM গুলো তৈরী করে। এর এক পর্যায়ে এক জায়গায় কিছু হলোগ্রাফিক ভিডিও দেখায়, এতটাই বাস্তব, বিশ্বাসই হতে চায় না সেটা আলোর খেলা ছিল। আমার সহকর্মী তার হবু বউ এর জন্য কিছু অলংকার কিনল। অবিবাহিত ভাইয়েরা ব্যাপারটা মাথায় রাখতে পারেন।
পাতায়া পৌছে বীচ ধরে একটু হাটাহাটি করলাম। এখানে বেশী সময় থাকার উপায় নেই কারণ, আমাদের গন্তব্য একটি প্রবাল দ্বীপ। নৌকা ছাড়ল, সমুদ্রে কিছু দূর যাওয়ার পর একটা ইভেন্ট এর জন্য থামলাম, প্যারা সেইলিং ! প্যারাসুটের সাথে আপনাকে বেধে স্পিড বোট দিয়ে টেনে নেয়া হবে, আপনি উঠে যাবেন ওপরে ! ভাল লেগেছিল, কিন্তু মনে হচ্ছিল, আরেকটু ওপরে ওঠালে ভাল লাগত।
প্যারা সেইলিংরত আমি...
প্যারা সেইলিং শেষে আমাদের নৌকা সমুদ্রের বুক চিরে প্রবাল দ্বীপের দিকে আগাতে লাগল। প্রবাল দ্বীপ যখন নজরে এল, তখন মনে হল, ওটা বাস্তবে নয়, কোন ছবিতে দেখছি। অদ্ভুত সুন্দর সবুজাভ নীল পানি।
পৌছানোর কিছুক্ষণ পরেই দুপুরের খাবার দেয়া হল। রান্না বেশ ভাল ছিল, থাই ফুড আসলেই মজার।
দুপুরে খেয়ে দেয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে পানিতে ঝাপাঝাপি।
পাতায়া কোরাল দ্বীপের বিচ...
ফেরার পথে আকাশ মেঘে ঢেকে যাওয়ায় কিছুটা স্বস্তি, পানিতে মেঘ আর রৌদ্রের খেলা।
রাতে ব্যাংককে রাস্তায় বেরিয়ে দেখি সব ফুটপাতে জমজমাট বাজার। যেগুলো দিনে ছিল পুরো দস্তর অভিজাত অফিস পাড়া! এসব জায়গা থেকে কিছু কিনতে গেলে ভাল দরদাম করে কিনতে হয়, নয়ত ঠকে যাওয়ার বিপুল আশংকা। আর কারো কারো আচরণ বেশ খারাপ, সেক্ষেত্রে মাথা ঠান্ডা রাখাই উত্তম।
পরদিন আমাদের প্রোগ্রামে ছিল অর্ধ দিবস ভাসমান মার্কেট ট্যুর। ছাও ফ্রায়া নদী ধরে যাবে, পথে একটা সাপের খামারও দেখিয়েছে। এ প্রসংগে বলে রাখি, আমাদের ব্যাংককের এই ট্যুরটি খুব একটা ভাল ছিল না, কারণ আমরা কম সময়ে ব্যাংককের সাথে চিয়াং মাই ও গিয়েছি, যার কারণে ব্যাংককের আরো অনেক কিছুই দেখতে পারিনি। আপনার যখন যাবেন, তখন সাফারি পার্ক (বাঘের বাচ্চাকে কোলে নিয়ে দুধ খাওয়ানো যায়), হলিউডের শুটিং দেখায়, এই জাতীয় কিছু প্যাকেজ আছে, সেগুলোও ঘুরে আসবেন। আর ভাসমান মার্কেটের পুরো দিনের প্যাকেজ নিবেন, সেটাই আসল ভাসমান মার্কেটের ট্যুর প্যাকেজ।
কিছু ছবি শেয়ার করছি।
ছাও ফ্রায়া নদীর উপর সুন্দর একটি ব্রিজ...
নদীর ধারে সুন্দর বৌদ্ধ মন্দির...
ফ্লোটিং মার্কেটে এভাবেই কেনা বেচা হয়...
সেদিন রাতেই আমরা চিয়াং মাই এর ট্রেন ধরেছিলাম। বেশ ভাল ছিল চিয়াং মাই এর ট্যুরটা।
ব্লগার মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম এর ব্লগ থেকে লেখাটি কপি (লিংক) করা হয়েছে। লেখকের কোন রকম আপত্তি থাকলে এটি মুছে ফেলা হবে।
0 comments: