উইকিলিকসের তথ্য : সেনা সমর্থনে কিংস পার্টি গঠনের চেষ্টা
২০০৭ সালে গঠিত সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শুরু থেকেই 'মাইনাস টু' তত্ত্বটি ছিল আলোচিত বিষয়। প্রধান দুই দলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে দুই নেত্রীকে হটিয়ে দেওয়ার জন্য ওই সময় সেনাবাহিনী বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল। এ জন্য বিকল্প রাজনৈতিক দল গঠনেরও উদ্যোগ নেয় তারা। 'কিংস পার্টি' গঠনের শুরুতেই বিএনপির নেতাদের টোপ ও চাপ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁদের মধ্য থেকে সারা দেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক নেতা না পাওয়ায় এবং জেনারেল মইন উ আহমেদের 'ধরি মাছ না ছুঁই পানি' ধরনের রাজনৈতিক অভিপ্রায়ের কারণে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে সেনা কর্মকর্তাদের সেই উদ্যোগ ব্যর্থ হয়ে যায়।
ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনে পাঠানো এক তারবার্তায় এমন কথা বলা হয়েছে। ২০০৭ সালের ৪ জুন এটি পাঠানো হয়। বিকল্প ধারার সংবাদমাধ্যম উইকিলিকস গত ৩০ আগস্ট বার্তাটি ফাঁস করে।
ওই তারবার্তায় বলা হয়, যদি প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলকে উচ্ছেদের অংশ হিসেবে 'কিংস পার্টি' গঠন করে সেনাবাহিনী ক্ষমতা ছাড়ত এবং এই দলটিকে দিয়ে পরবর্তী সরকার গঠনের পরিকল্পনা করত; তাহলেও বাংলাদেশের ইতিহাস ও রাজনৈতিক বাস্তবতার নিরিখে অনুমান করা যায়, নির্বাচনে জেতার জন্য (মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য) এই দলটির লাগত প্রচুর সময়। একই সঙ্গে প্রয়োজন হতো সেনাবাহিনীর সক্রিয় সমর্থন।
যেভাবে প্রচেষ্টার শুরু : এক-এগারোর পটভূমিকায় ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের এক সপ্তাহের মধ্যে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই। তবে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে তারা কোনো যোগাযোগ করেনি। বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও এলডিপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তারা কথা বলে জানতে পারেন, ডিজিএফআইয়ের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল চৌধুরী ফজলুর বারী (ফজলুল বারী) এবং একই সংস্থার সন্ত্রাস দমনবিষয়ক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ টি এম আমিন এসব নেতাকে সেনা সমর্থিত নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে প্রয়োজনীয় সমর্থন দিতে বলেন। তাঁদের লক্ষ্য ছিল, রাজনৈতিক দলগুলোর জ্যেষ্ঠ ও মধ্যম সারির নেতাদের বাগিয়ে আনা; একই সঙ্গে সুশীল সমাজের কিছু প্রথিতযশা ব্যক্তিকেও নতুন দলভুক্ত করা। এ জন্য অনেক নেতাকে ভয়ও দেখানো হয়েছিল। আওয়ামী লীগের একজন সংসদ সদস্য (নাম প্রকাশ করা হয়নি) দাবি করেন, তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, নতুন দলে যোগ না দিয়ে ঝামেলা করলে তাঁকে দুর্নীতির মামলায় ফাঁসানো হবে। তবে অন্য নেতারা ভয়ে থাকলেও সুনির্দিষ্ট হুমকি তাঁরা পাননি।
বিএনপির একজন সাবেক মন্ত্রী মার্কিন কর্মকর্তাদের জানান, দুর্নীতির মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার আশায় দলটির শতাধিক সংসদ সদস্য 'কিংস পার্টি'তে যোগ দেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। এই দল গঠনের প্রক্রিয়া এবং দলে নতুন নেতা সংগ্রহের কর্মসূচি ওই বছরের ৭ মে শেখ হাসিনার দেশে ফেরার সময়ও অব্যাহত ছিল। ওই বছরের শুরুর দিকে 'মাইনাস টু' ফর্মুলা নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সময় শেখ হাসিনা কানাডায় গিয়েছিলেন। সেনা সরকার হাসিনাকে আর দেশে ফিরতে দেওয়া হবে না বলে পরিকল্পনা করে, এমনকি তাঁকে বিমানবন্দরেই গ্রেপ্তার করার জোর গুজব রটানো হয়। কিন্তু, ৭ মে হাজার হাজার কর্মী-সমর্থক রাস্তায় নেমে তাঁর দেশে ফেরাকে স্বাগত জানায়। এ সময় শেখ হাসিনা দলের নেতৃত্ব না ছাড়ার ব্যাপারে তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করেন। ফলে কিংস পার্টি গঠনে গোয়েন্দা ও সেনা কর্মকর্তারা চাপ তৈরি করে বিএনপির ওপর। বিএনপিতে তখন সেনা সমর্থিত সংস্কারবাদী অংশ দলের গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন আনার ব্যাপারে দলীয় প্রধান খালেদা জিয়াকে চাপের মুখে রাখে। মে মাসের শেষ ১০ দিনের মধ্যে ডিজিএফআইয়ের পরিচালক ফজলুল বারী কমপক্ষে দুবার স্থানীয় রেস্তোরাঁয় বিএনপির পেছনের সারির অনেক নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় শেখ হাসিনাকে প্রকাশ্য রাজনীতিতে অংশগ্রহণে বিরত রাখার ব্যাপারটিকে উদাহরণ হিসেবে দেখিয়ে বাকিদের প্রকারান্তরে জানান দেওয়া হয়, কিংস পার্টিতে যোগ না দিলে তাঁদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারও ঝুঁকির মুখে পড়বে।
শুরুতেই হোঁচট : মে মাসের শেষ দিকেই সেনা সরকারকে সমর্থনকারী বিএনপির সংস্কারপন্থী নেতারা মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করেন, দুই নেত্রীকে সরানোর সুবর্ণ সুযোগ থাকলেও ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তা এবং সেনাপ্রধান জেনারেল মইনের দল গঠন ও রাজনীতিতে আসা নিয়ে বিভিন্ন রকম কথা-বার্তায় তাঁরা সংশয় ও দ্বিধার মধ্যে পড়ে গেছেন। একই মাসে শেখ হাসিনার দেশে ফিরে আসার ঘটনাও তাঁদের স্নায়বিক চাপে ফেলে। এ সময় খালেদা জিয়াকে দেশছাড়া করার উদ্যোগটিও ব্যর্থ হওয়ায় বিএনপিতে সংস্কার চালানো এবং নতুন নেতৃত্বের হাতে ক্ষমতা বদলের প্রক্রিয়াটিও হোঁচট খায়। ফল হিসেবে জাতীয় রাজনীতিতে সুসংহত দুটি প্রধান রাজনৈতিক দলের বিপক্ষে নতুন দল গঠনের প্রক্রিয়ায় পিছু হটতে হয়।
জেনারেল মইনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল ধোঁয়াশাচ্ছন্ন : প্রকাশ্য রাজনীতিতে আসার ব্যাপারে সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদ নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেননি। দলছুট হওয়ার প্রস্তাব পাওয়া রাজনৈতিক নেতাদের ডিজিএফআই পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফজলুল বারী জানিয়েছিলেন, নতুন রাজনৈতিক দলটিকে সম্পূর্ণ সেনা সমর্থন দেওয়া হবে। কিন্তু ডিজিএফআইয়ের অপর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ টি এম আমিন ও অন্য কর্মকর্তারা পরে ওই নেতাদের জানান, নতুন দল গঠনের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
সর্তকর্তামূলক পদক্ষেপ : বিএনপি নেতা হান্নান শাহ 'কিংস পার্টি' গঠনের প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপির মূল ধারার পক্ষে জনমত সৃষ্টির চেষ্টা করেন। এ জন্য তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। একইভাবে ২৮ মে আওয়ামী লীগের আরেক নেতাকেও গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় মইন উ আহমেদের উপদেষ্টা ড. কামাল হোসেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আতাউর রহমান প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন, প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো দলীয় কাঠামো ও গঠনতন্ত্রে প্রয়োজনীয় সংশোধন ও সংস্কার আনতে ব্যর্থ হয়েছে। এ জন্যই একটি নতুন 'পরিচ্ছন্ন' দল গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এ সময় ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম মন্তব্য করেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি হোঁচট খেয়ে খেয়ে এগোনোর পরও এখনো প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে এবং বাংলাদেশকে তারা এক-এগারো পূর্ববর্তী অবস্থার দিকেই ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে।
এ অবস্থায় একটি 'কিংস পার্টি'র আবির্ভাব ছিল নির্বাচনে জয়ের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। সংবিধানে বড় ধরনের সংশোধনের জন্য নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাও এই দল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ছিল; যাতে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থা এবং সেনা সমর্থিত জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা গঠন করা যায়।
কিংস পার্টি গঠনের উদ্দেশ্য : ওই তারবার্তায় বলা হয়, জেনারেল মইন ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফজলুল বারী তাঁদের জানিয়েছেন, কিংস পার্টি গঠন বা রাজনৈতিক কোনো অভিপ্রায় তাঁদের ছিল না। এতে মন্তব্য করা হয়, যদি তাঁদের এই কথাটি সঠিক বলে ধরে নেওয়া হয় এবং ডজন ডজন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগকেও মিথ্যা বলে ধরে নেওয়া হয়, যদি 'প্লান বি' খ্যাত কিংস পার্টি গঠনের নামে পরোক্ষভাবে সেনা শাসনের বিষয়টাও অমূলক হয়, তার পরও এটি ছিল সেনা কর্তাদের সামরিক উর্দি খুলে বেসামরিক নাগরিকের বেশ ধরে ক্ষমতায় আরোহনের পদক্ষেপ এবং পরবর্তী সরকার গঠনে বিএনপিকে ঠেকানোর জন্য পরিকল্পিত প্রত্যাঘাত। জিয়া এবং এরশাদের রাজনৈতিক দল গঠনের ইতিহাস পর্যালোচনা করে অনেক বাংলাদেশি ধারণা করেন, শত বাধা এলেও তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত হওয়ায় প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলকে মাটির সঙ্গে সম্পর্কহীন কিংস পার্টির পক্ষে কোনোভাবেই দুর্বল করা সম্ভব হবে না। যদি বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন অব্যাহত রাখা হয় এবং ব্যাপক জালভোটের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে নিজেদের পক্ষে টানা সম্ভব হয়; তাহলেই কেবল এ ধরনের দলের বিপক্ষে জয়লাভ সম্ভব হতে পারে।
প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভেতরে এ সময় স্পষ্টভাবে অনুগত ও সংস্কারবাদী দুই ধরনের নেতা ছিলেন; যাঁরা প্রত্যেকেই বিশ্বাস করতেন, সরকার 'কিংস পার্টি' গঠন না করা পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচি চালানোর অনুমতি দেবে না। দলগুলোর প্রতি অনুগতরা দাবি করতেন, এখনই প্রকাশ্য রাজনীতির অনুমতি দেওয়া হোক। কিন্তু কিংস পার্টির দিকে হেলে যাওয়া নেতারা_যেমন ড. কামাল হোসেন এ সময় মত পোষণ করেন, রাজনীতি এখনো নীতিবর্জিত লোকদের দ্বারা প্রভাবিত। তাই প্রকাশ্য রাজনীতির অনুমতি আরো কিছুটা দেরিতে দেওয়া হোক।
এর পরে কী? : বার্তায় বলা হয়, দুই নেত্রীকে দেশছাড়া করতে ব্যর্থ হওয়ার পর সরকারের হাতে পরবর্তী উপায় ছিল, শেখ হাসিনার সঙ্গে আপস করে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থরক্ষায় খালেদা জিয়া পরিবারকে দুর্নীতি মামলাসহ অন্যান্য মামলায় ফাঁসানো। এর আগে হাসিনাকেও বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানোর ব্যাপারে সরকার সুস্পষ্টভাবেই চেষ্টা করে। কানাডা সফররত হাসিনাকে দেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলেও ঠিক করা হয়। কিন্তু এ বিষয়ে সরাসরি কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে সাহস না থাকায় এবং হাসিনাকে কোনো বিষয়ে দোষী সাব্যস্ত করার মতো কিছু খুঁজে না পাওয়ায় কালক্ষেপণ করেন তাঁরা। এ ছাড়া সে বছরের জুন মাসে শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। সে সময়টাকেও তাঁরা হাসিনাকে দেশ থেকে বের করে দেওয়ার পরবর্তী সম্ভাবনা হিসেবে দেখছিলেন।
সে সময়ে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের অবস্থা ছিল বিপরীতধর্মী। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ব্যস্ত ছিলেন ছেলেদের রক্ষায়। দলে তাঁর নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন_এমন কোনো মানসিক ও নৈতিক গুণসম্পন্ন নেতাও ছিলেন না। অন্যপক্ষে, বেশ কিছু নেতা গ্রেপ্তার হওয়ার পরও আওয়ামী লীগ ছিল তুলনামূলক একাট্টা। জরুরি অবস্থার শুরুর দিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যানারে ও সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে দুর্নীতি দমনের নামে বিএনপিকে নির্মূল করার জন্য দলটির একটি অংশকে চেপে ধরা হয়। তবে পরে সেনা কর্তারা আওয়ামী লীগকে, বিশেষ করে শেখ হাসিনার অনুসারীদের টার্গেট করেন। সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা তখন আওয়ামী লীগের বিরোধী ছিলেন। তাই বিএনপিকে ধ্বংস করে আওয়ামী লীগের জন্য পথ উন্মুক্ত করাও অসম্ভব ছিল।
আরেকটা ব্যাপার ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জনপ্রিয়তা কমে যাওয়া। এই সরকারের রাজনৈতিক বৈধতার পথে এটিও ছিল বড় অন্তরায়। এশিয়া ফাউন্ডেশনের সাম্প্রতিক (সে সময়ের) জরিপ ও চারদিকের কানাঘুষা ও কেচ্ছা কাহিনী এবং চাক্ষুষ ঘটনা এটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে, মধুচন্দ্রিমার সময় শেষ। কারণ, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও সরকারের অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যর্থতায় গণ-অসন্তোষ ক্রমেই বাড়ছে।
ওই তারবার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা দূতাবাস ওয়াশিংটনকে আরো জানায়, জেনারেল মইন তাদের আশ্বস্ত করেছেন, সামরিক বাহিনী সরাসরি ক্ষমতা দখল করবে না এবং দেয়ালে পিঠ না ঠেকলে 'মার্শাল ল' বা সেনা শাসন জারিরও কোনো পরিকল্পনা তাঁর নেই। যদিও কিংস পার্টি গঠনের ব্যাপারটি নিয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশির সামনে বা পেছনে সামরিক শাসনের ভূত আবছাভাবে আবির্ভূত হয়েই ছিল। এ সময় ধারণা করা হয়, কিংস পার্টি ব্যর্থ হওয়ার পরিণাম হিসেবে জারি করা হবে সামরিক শাসন। অন্যদের মত ছিল, কিংস পার্টিকে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ করে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই জারি হবে সামরিক শাসন।
তারবার্তাটিতে মন্তব্য করা হয়, জাতীয় নির্বাচনের আগে সরকার ঘোষিত পৌরসভা নির্বাচনেই (যদিও সেই নির্বাচন তখন অনুষ্ঠিত হতে পারেনি) সেনা অভিপ্রায়গুলোর 'এসিড টেস্ট' বা চূড়ান্ত পরীক্ষা হয়ে যাবে। আপাতদৃষ্টিতে এগুলো অরাজনৈতিক নির্বাচন হলেও কিংস পার্টি মনোনীত ব্যক্তিরা যদি (মূল ক্ষমতা দখলের) মহড়া হিসেবে এই পদগুলোতে জিততে না পারেন, তাহলে জাতীয় নির্বাচনে এই দলের ভবিষ্যৎ কী হবে তা সহজেই অনুমেয়।
মন্তব্য : তারবার্তাটির মন্তব্য অংশে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রচারমাধ্যমগুলো তাদের প্রতিবেদনে একটা 'নতুন' রাজনৈতিক দল গঠনের ব্যাপারে খুব খোলাখুলিই প্রতিবেদন ছাপাচ্ছে। তবে তারা সামরিক বাহিনীর সম্পৃক্ত থাকার তথ্য এড়িয়ে যাচ্ছে।
এতে আরো বলা হয়, সামরিক বাহিনী যদি তাদের প্রস্থানের পথ হিসেবে 'কিংস পার্টি' গঠনের কথা ভাবে, তবুও ধরে নিতে হবে, নির্বাচনে জিততে ওই পার্টির প্রচুর সহযোগিতা প্রয়োজন হবে। যদি ব্যাপক প্রতারণা নাও করা হয়, তবু এ ধরনের রাজনৈতিক দলের গুছিয়ে উঠতে এবং এর প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে প্রচুর সময় দরকার। এ ছাড়া যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, কেবল শহরের অভিজাত ও শিক্ষিত শ্রেণীই নয়, তৃণমূল পর্যায়ে হাসিনা ও খালেদা জিয়ার বিপুল সংখ্যক অনুসারী রয়েছে। এই দুই নেত্রীকে সরিয়ে দিয়ে নির্বাচন দিলে এদের সমর্থকদের একটি বড় অংশ নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে না। তাই, 'কিংস পার্টি' যদি গঠন করা হয় এবং যদি নিশ্চিতভাবে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল ভেঙে এটি গড়ে ওঠে তাহলে তা নির্বাচনের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে।
0 comments: