চেয়ারে বসে নামায পড়া কি নাজায়েয?

চেয়ারে বসে নামায পড়া কি নাজায়েয?
---------------------------------------
আবদুস শহীদ নাসিম
০১/০৬/২০১৫
--------------------
প্রশ্ন: মুহতারাম, আসসালামু আলাইকুম। মসজিদে চেয়ারে বসে ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামাজ আদায়ের বৈধতা দেয়া যায়না বলে ফতোয়া দিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। মেহেরবানী করে সাধারনদের জ্ঞাতার্থে এ বিষয়ে শরিয়তের বিধান জানাবেন। - মাসুদ সাঈদী

জবাবঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।

গতকালের পাঠানো এই প্রশ্ন এবং আজকের পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ বিবরণে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক 'চেয়ার বসে নামায পড়ার' বিষয়ে প্রদত্ত ফতোয়াটি আমাদের নজরে এসেছে। ফতোয়া এবং মূল বিষয়টি সম্পর্কে আমাদের সংক্ষিপ্ত মতামত নিম্নে প্রদত্ত হলো:



০১. রসূলুল্লাহ সা. ও সাহাবায়ে কিরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকে চেয়ারে বসে নামায পড়ার দৃষ্টান্ত নেই- একথাটি সঠিক।

০২. ফলে এ বিষয়ে হাদিসে কোনো বক্তব্য আসেনি এবং পূর্বের ফকিহগণের লিখিত গ্রন্থাবলিতেও এ বিষয়ে কোনো আলোচনা আসেনি।

০৩. ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গবেষণা বিভাগ চিন্তা গবেষণা করে যে মতামত দিয়েছে, তা মূল্যবান এবং এজন্যে তারা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।

০৪. সবাইকে মনে রাখতে হবে, এটি একটি মত এবং একটি ফতোয়া। যেসব বিষয়ে অনেক মুজতাহিদ, ফকিহ ও মুফতি অধ্যয়ন ও গবেষণা করে মতামত ও ফতোয়া প্রদান করেন, সেসব মত ও ফতোয়ার ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে মতপার্থক্য হতে পারে। বিভিন্নজনের মত ও ফতোয়ায় ভিন্ন ভিন্ন মত প্রতিফলিত হতে পারে। এমনকি কারো ফতোয়া ভুল হলেও নিষ্ঠার সাথে কুরআন-সুন্নাহর ভিত্তিতে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করার জন্যে তিনি বা তাঁরা অবশ্যি নেকি লাভ করবেন।

০৫. মনে রাখতে হবে, মুজতাহিদ, ফকিহ ও মুফতিগণের গবেষণালব্ধ মতামত ও ফতোয়া কুরআন-সুন্নাহর বিধান নয়, বা রাষ্ট্রীয় আইনও নয়, কিংবা বিচারপতির রায় (decree)ও নয় যে, তা বাধ্যতামূলকভাবে আপনাকে মানতেই হবে।

০৬. গবেষণালব্ধ বিষয়ে মতপার্থক্য থাকলে একাধিক মতামত ও ফতোয়ার মধ্যে যে কোনোটি গ্রহণ করার অধিকার ইসলামের অনুসারীগণের রয়েছে, যদি তা কুরআন-সুন্নাহর সাথে সাংঘর্ষিক না হয়।

০৭. ওজর থাকা ব্যক্তি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ফতোয়াটি ভালোভাবে জেনে নিয়ে সেটিও মেনে চলতে পারেন। এতে নামাযের কোনো ক্ষতি হবেনা।

০৮. তবে যারা এই ফতোয়ার ব্যতিক্রম করবেন এবং চেয়ারে বসে নামায পড়বেন, আমাদের মতে তাদের নামাযেরও কোনো ক্ষতি হবেনা।

০৯. মহান আল্লাহ তো বান্দার জন্যে তাঁর দীনের বিধানকে সহজ করে দিতে চান। আল্লাহ পাক বলেন: "আল্লাহ তোমাদের জন্যে (দীনের বিধান) সহজ করতে চান, তোমাদের উপর কাঠিন্য চাপিয়ে দিতে চাননা।" (আল কুরআন ২:১৮৫)

১০. রসূলুল্লাহ বলেছেন: (১) 'নিশ্চয়ই এই দীন (ইসলাম) সহজ।' (২) 'তোমরা (দীনকে) সহজ করে পেশ করো, কঠিন করোনা।' (৩) 'যারা দীনের মধ্যে কাঠিন্য আরোপ করবে, তারা কাঠিন্যের কাছে পরাজিত হবে।'

১১. তাই আমাদের মতে সঠিক পন্থা হোল, ওজর থাকা মুসল্লিগণের জন্যে যদি চেয়ারে বসে নামায পড়া অধিকতর সহজ হয়, কিংবা ডাক্তার যদি তাদেরকে চেয়ারে বসে নামায পড়তে বলেন, সেক্ষেত্রে তাদের জন্যে এই সহজ ও সুবিধাজনক পদ্ধতিতে নামায পড়ার সুযোগ অবশ্যি থাকা উচিত, যেহেতু এক্ষেত্রে কোনো নিষেধাজ্ঞা শরিয়তে নেই।

১১. ইসলামিক ফাউন্ডেশন তাদের মতের পক্ষে যেসব যুক্তি প্রদর্শন করেছেন, সেগুলো যুক্তির এক দিক। কিন্তু ভ্রমণকারী ব্যক্তিকে তো উড়োজাহাজ, রেলগাড়ি, মটরগাড়ি ইত্যাদিতেও চেয়ার সিস্টেমে বসে নামায পড়তে হয়। এসব ক্ষেত্রে যদি দাঁড়াতে না পারার কারণে চেয়ারে বসে নামায পড়া জায়েয হয়, তাহলে রোগের কষ্টের কারণে মসজিদে চেয়ারে বসে নামায পড়া নাজায়েয হবার কোনোই কারণ থাকতে পারেনা।

১৩. যেখানে রসূলুল্লাহ সা. মা'জুর লোকদের জন্যে বসে এবং ইশারা করে নামায পড়া জায়েয করেছেন, সেক্ষেত্রে কিসে বসে নামায পড়া জায়েয আর কিসে বসে পড়া নাজায়েয- এমন বিতর্ক সৃষ্টি করাটা প্রজ্ঞাসম্মত বিবেচিত হতে পারেনা।

১৪. মসজিদে চেয়ার ব্যবহার করার বিষয়টিকে ইমাম এবং মসজিদ কর্তৃপক্ষ সহজ করতে পারেন। তারা মসজিদের এক পাশে সেইসব মা'জুর লোকদের জন্যে চেয়ারের ব্যবস্থা রাখতে পারেন, যাদের হাঁটু ব্যথা, বা অন্য কোনো রোগ, কিংবা ডাক্তারের পরামর্শে চেয়ারে বসে নামায পড়তে হয়। বিষয়টি সহজ করে দেখা উচিত, কঠিন করে নয়।

১৫. আসুন বৈধতার সীমার মধ্যে আমরা দীনকে সহজ করে উপস্থাপন করি এবং কাঠিন্যের পথ পরিহার করি।

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম