ইসলামী ছাত্রমজলিসের সাত শহীদ

১. শহীদ আরমানঃ

শাহাদাতের তারিখঃ ১৯৯৪ সালের ৩০ জুন

শাহাদাতের সংক্ষিপ্ত ঘটনা: কুখ্যাত লেখিতা ও চরম কুরআন বিদ্বেষী মুরতাদ তসলিমা নাসরিনের ফাঁসির দাবিতে ডাকা ধর্মঘটে কিশোরগঞ্জের রাজপথে তৎকালীন বি.এন.পি সরকারের পুলিশের গুলিতে শাহাদাত বরণ করেন ছাত্র মজলিস কর্মী শহীদ আরমান আহমদ। সে সময় আরমান কিশোরগঞ্জ জেলা স্কুলের ৮ম শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন।

২. শহীদ তাজুল ইসলাম

৩. শহীদ সাইফুল ইসলাম

শাহাদাতের তারিখ: ২০০১ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী



শাহাদাতের সংক্ষিপ্ত ঘটনা: সুপ্রীমকোর্টের চরম ইসলাম বিদ্বেষী বিচারপতি গোলাম রাব্বানী ও বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা গঠিত এক বেঞ্চ কর্তৃক সকল প্রকার ফতোয়া প্রদান করা অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।  এর প্রতিবাদে খেলাফত মজলিস ও ইসলামী ঐক্যজোটের ডাকে ২০০১ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী দেশব্যাপী হরতাল আহবান করা হয়। ঈমানী দায়িত্ব পালনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রাজপথে বিক্ষোভ মিছিলে শরীক হন তাজুল ও সাইফুল ভাই। মিছিলে তৎকালীন আওয়ামী সরকারের পেটোয়া বাহিনীর মুহূর্মূহু গুলিতে রাজপথে লুটিয়ে পড়েন শহীদ তাজুল, সাইফুলসহ ৯টি তাজা প্রাণ।

৪. শহীদ হাফেজ ইয়াহইয়া

শাহাদাতের তারিখ: ২০০২ সালের ১৫ আগষ্ট

শাহাদাতের সংক্ষিপ্ত ঘটনাঃ ঢাকার মালিবাগ বাজারের নিকটবর্তী টিএন্ডটি কলোনীর মসজিদের জায়গা নিজেদের দখলে নিয়ে নেয় টিএণ্ডটির উচ্চপদস্থ কিছু কর্মকর্তার সহযোগী সন্ত্রাসীরা। কিন্তু আল্লাহর ঘর মসজিদের জায়গা অন্যায়ভাবে দখল করে নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থে কেউ ব্যবহার করবে তা মেনে নিতে পারেনি স্থানীয় এলাকাবাসী ও তাওহীদি জনতা। এরই প্রতিবাদে ২০০২ সালের ১৫ আগষ্ট মসজিদ রক্ষার জন্য মসজিদের সম্মুখে শান্তিপূর্ণ অবস্থানের ঘোষণা দেয় তাওহীদি জনতা। তাতে একাত্মতা ঘোষণা করে ইসলামী ছাত্র মজলিসসহ অন্যান্য ইসলামী সংগঠন। কিন্তু শান্তিপূর্ণ এই অবস্থান সন্ত্রাসীদের কাছে অসহনীয় হয়ে উঠে। দুপুরের দিকে হঠাৎ করে মুহূর্মূহু গুলিবর্ষণ শুরু করে  এই অবস্থানের উপর। মুহূর্তেই লুটিয়ে পড়েন ইয়াহইয়া সহ আরো ৩ জন ভাই। হাফেজে কুরআন ইয়াহইয়া আল্লাহর মসজিদ রক্ষায় শাহাদাত বরণ করেন।

৫. শহীদ শাহ আলম

শাহাদাতের তারিখ: ২০১৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি

শাহাদাতের সংক্ষিপ্ত ঘটনা: আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় রাজধানীর শাহবাগ চত্বরে ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আল্লাহদ্রোহী একদল নাস্তিক-মুরতাদদের নগ্ন আস্ফালন শুরু হয়। ধর্মদ্রোহী এই গোষ্ঠী তথাকথিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবির আড়ালে ইন্টারনেট ব্লগিঙের মাধ্যমে সর্বশক্তিমান আল্লাহ ও প্রিয় নবী স. এর বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে অশ্লীল, কুরূচিপূর্ণ ও বিষোদগার শুরু করেছিল। এদের দৌরাত্ম্য এত বেড়ে গিয়েছিলো যে শাহবাগ চত্বরে এসে মাইক লাগিয়ে প্রকাশ্যে ইসলাম, ইসলামী রাজনীতি, তাহজীব-তামাদ্দুনের বিরুদ্ধে আক্রমনাত্মক ও হিংসাত্মক বক্তব্য দেয়া শুরু করেছিল। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের প্রায় সবকটি মিডিয়া নাস্তিকদের এই নগ্ন আস্ফালন জাতির সামনে প্রচার করে দেশের তরুণ প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করতে উঠেপড়ে লেগে যায়। কিন্তু আলেম ওলামা ও ইসলামপ্রিয় তাওহীদি জনতা সরকারের নাস্তিকদের এ আস্ফালন ও তাতে আওয়ামীলীগ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় চরমভাবে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। এর প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলামী বাংলাদেশের ব্যানারে প্রায় সবকটি ইসলামী দল ও সর্বস্তরের আলেম ওলামাগণ ২২ ফেব্রুয়ারি বাদ জুমা সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দেন। সেদিন কর্মসূচি পালনকালে বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট আওয়ামী বর্বর পুলিশ বাহিনীর বেপরোয়া গুলিবর্ষণে খেলাফত মজলিস ও ইসলামী ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরী নেতৃবৃন্দসহ শত শত তাওহীদি জনতা নির্দয়ভাবে গুলিবিদ্ধ হয়। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পুলিশী নগ্ন হামলার প্রতিবাদে ২৪ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে হরতাল কর্মসূচির ঘোষণা দেয় হেফাজতে ইসলাম। হরতাল কর্মসূচি পালনকালে মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর থানায় বিক্ষোভ মিছিল করতে গিয়ে বর্বর পুলিশী হামলা গুলিবিদ্ধ হয়ে শাহাদাতবরণ করেন ইসলামী ছাত্র মজলিসের কর্মী শাহ আলম, খেলাফত মজলিস কর্মী নাসির উদ্দিনসহ আরো ৫জন তাওহীদি জনতা। সেদিন মুক্তির মিছিলে শরীক হয়ে আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছে যান শাহ আলম ভাই এবং এ কাফেলাকে শহীদি রক্তে আবারো সিক্ত করলেন।

৬. শহীদ আনোয়ার হোসাইন

শাহাদাতের তারিখ: ২০১৩ সালের ৫ মে

শাহাদাতের সংক্ষিপ্ত ঘটনা: ২০১৩ সালের নাস্তিক-মুরতাদ বিরোধী আন্দোলন যখন তুমুল পর্যায়, সে ঐতিহাসিক ৫ মে’র ঢাকা অবরোধ পরবর্তি মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সেদিন বিক্ষোভ সমাবেশ চলছিল। ইসলামী সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে ১৩ দফা সম্বলিত আলেম ওলামাদের বিক্ষোভ কর্মসূচি ভণ্ডল করে দেয়ার যতরকম পাঁয়তারা করা দরকার তার সবটুকু চেষ্টাই করেছে আওয়ামীলীগ সরকার। সেদিন লক্ষ-লক্ষ তাওহীদি জনতার সমাবেশকে ঘিরে মতিঝিল, পল্টন, গুলিস্তান, ফকিরাপুল এলাকায় এমন কোন নাশকতা নেই যা আওয়ামী গুণ্ডা ও পুলিশ বাহিনী করে ক্ষান্ত হয় নাই। দিনভর পুলিশের বেপরোয়া গুলি, আওয়ামী গুণ্ডাদের দেশীয় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে সেদিন ঢাকার রাজপথ রক্তাক্ত হয়ে ওঠে। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচিতে গুলিবর্ষণ করে ৫ মে দিনভর শহীদ করা হয় কয়েক ডজন ও আহত করা হয় শত শত তাওহীদি জনতাকে। আর রাতে চালানো হয় ইতিহাসের নৃশংসতম ও কাপুরুষোচিত আধাসামরিক বাহিনীর জঘণ্য হামলা। যাতে শাহাদাত বরণ করেন আরো কয়েকশত তাওহীদি জনতা, আহত হন হাজার-হাজার আলেম, মাদ্রাসা ছাত্র ও সাধারণ মানুষ। সেদিন সেই শহীদি কাতারে শরীক হলেন ইসলামী ছাত্র মজলিস কর্মী আনোয়ার হোসাইন। শহীদি মিছিলে শরীক হয়ে এ কাফেলার অগ্রযাত্রাকে তিনিও শানিত করলেন।

৭. শহীদ সাইফুল ইসলাম(২)

শাহাদাতের তারিখ: ২০১৪ সালের ২৮ এপ্রিল

শাহাদাতের সংক্ষিপ্ত ঘটনা: ২০১৪ সালের ৪ তারিখ দিবাগত রাতে ধামরাইস্থ সংগঠনের ছাত্রাবাসে সরকারি পেটোয়া বাহিনী পুলিশ হামলা চালায়। গভীর রাতে ঘুমন্ত সাধারণ ছাত্ররা পুলিশের অতর্কিত এই হামলায় দিশেহারা হয়ে পড়ে। পুলিশ গ্রেফতার করে ঢাকা জেলা সভাপতি সাইফুল ইসলাম ভাইসহ আরো তিনজনকে। সকালে ধামরাই থানায় মিথ্যা মামলা দিয়ে সাইফুল ভাইকে আদালতে চালান দেয়া হয়ে। আদলত থেকে একদিনের রিমান্ডও মঞ্জুর করা হয়। এরই মধ্যে তাঁর জন্য জামিনের অনেক চেষ্টা করা সত্ত্বেও জালিম আওয়ামীলীগ সরকারের আজ্ঞাবহ আদালত সম্পুর্ণ নির্দেোষ এই ভাইকে কারান্তরীণ করে রাখা হয় মাসের পর মাস। সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে একাউন্টিংয়ে অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছেন। শুধুমাত্র ভাইভা বাকী ছিল বলে আদালত থেকে একদিনের জামিনের অনুমতি চাওয়া হয়। কিন্তু নিষ্ঠুর আদালত তাও দিল না। এভাবে একের পর এক মানসিক ও শারিরীক নির্যাতনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে যান আমাদের সাইফুল ভাই। এক পর্যায়ে বিগত ১৬ এপ্রিল সম্পূর্ণ অজ্ঞান অবস্থায় কারাপুলিশ তাঁকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করায়। সম্পূর্ণ হাতকড়া পরা অবস্থায় মুমূর্ষ ও অজ্ঞান সাইফুল ভাইকে উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেনি হাসপাতাল ও কারা কর্তৃপক্ষ। এই অবস্থায় মেডিকেল কাগজপত্র দেখিয়ে আদালত থেকে জামিন নিয়ে তাঁকে নিয়ে আসা হয় বারাকা কিডনী হাসপাতালে। সেখানে লাইফ সাপোর্টে রেখে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয় সাইফুল ভাইকে সুস্ষ করে আবার আমাদের মাঝে ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু সাইফুল ভাইতো এর আগেই চেয়েছিলেন জান্নাতে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করতে। অবশেষে ২৮ এপ্রিল রাত একটার দিকে আমাদের সবাইকে ছেড়ে মহান প্রভুর সান্নিধ্যে চলে গেলেন ইসলামী সমাজ বিপ্লবের আদর্শ লালনকারী কাফেলার ঢাকা জেলার সংগ্রামী সভাপতি সাইফুল ইসলাম। শহীদি মিছিলে শরীক হয়ে কাফেলার গতিবেগ ত্বরান্বিত করলেন।

মহান আল্লাহ সকলের শাহাদাত কবুল করুন।


0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম