স্বামীর বাবা-মায়ের দেখাশুনা করা কি স্ত্রীর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে?

স্বামীর বাবা-মার খেদমত করা কি
স্ত্রীর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে?
--------------------------
আবদুস শহীদ নাসিম
----------------------
প্রশ্নঃ আসসালামু আলাইকুম। স্ত্রী হিসেবে স্বামীর বাবা-মার প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য বা খেদমতের ব্যাপারে ইসলাম কি বলে? আমাদের সমাজে যেটা দেখা যায়, ছেলেরা তাদের বাবা-মার প্রতি দায়িত্বটা স্ত্রীর মাধ্যমেই পূরণ করার চেষ্টা করে। কিন্তু এতে কি ছেলেরা মা-বাবার হক আদায় করছে? আবার স্ত্রীর উপরও কি বেশি দায়িত্ব চাপিয়ে দিচ্ছে না? কারণ জান্নাত তো নিজ মায়ের পদতলে, শাশুড়ির পদতলে নয়, আবার স্ত্রীকে দিয়ে খেদমত করিয়ে কি ছেলেরা জান্নাত হাসিল করতে পারবে? ইসলামের বিধানটা যদি জানাতেন কৃতজ্ঞ হতাম। প্রশ্ন করেছেন Najia Islam

জবাবঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।

মা নাজিয়া! তোমার এ প্রশ্নটি এমন একটি মানসিকতা প্রকাশ করে, যা ইসলামি পরিবার বা মুসলিম পরিবারের মেয়েদের ক্ষেত্রে মোটেও কাম্য নয়। স্ত্রীরা অনেক ব্যাপারেই আইনগত দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে কিনা-সে প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারে। যেমন-
 শশুর-শাশুড়ীর খেদমত করা পুত্র বধুর দায়িত্ব কিনা?
স্বামীর সন্তান লালন পালন করা স্ত্রীর দায়িত্ব কিনা?
স্বামীর জন্যে রান্না বান্না করা স্ত্রীর দায়িত্ব কিনা?
ঘর-দোর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা/রাখা স্ত্রীর দায়িত্ব কিনা?
বাচ্চাদের স্কুলে নেয়া আনা মায়ের দায়িত্ব কিনা?
চাকুরি বাকুরি করার জন্যে স্বামীর অনুমতি নিতে স্ত্রী বাধ্য কিনা?
দীনি কাজে বাইরে যেতে স্ত্রী স্বামীর অনুমতি নিতে বাধ্য কিনা?
বাপের বাড়ি যাওয়ার জন্যে স্ত্রী স্বামীর অনুমতি নিতে বাধ্য কিনা?

এ রকম অনেক প্রশ্নই আমাদের কাছে আসে।

মনে রাখবে, সব দায়িত্ব ও কর্তব্য আইনের ভিত্তিতে বর্তায়না। আইনী ছাড়াও নৈতিক দায়িত্ব, সামাজিক দায়িত্ব, পারিবারিক দায়িত্ব, দাম্পত্য জীবনের দায়িত্ব, স্ত্রীত্বের দায়িত্ব, স্বামীত্বের দায়িত্ব, মাতৃত্বের দায়িত্ব, পিতৃত্বের দায়িত্ব, ভ্রাতৃত্বের দায়িত্বসহ বহু ধরনের দায়িত্ব মানুষের উপর বর্তায়। এগুলোর কিছু দায়িত্ব মূলক, কিছু কর্তব্য মূলক এবং কিছু সেবা মূলক। ইসলাম এসব দায়িত্ব, কর্তব্য, সেবা ও উপকারকে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ ও কল্যানময় আখ্যায়িত করেছে।

ইসলামের দৃষ্টিতে এগুলো মানুষের দুনিয়ার জন্যে যেমন কল্যানকর, তেমনি আখিরাতের জন্যেও কল্যানবহ।

দীনির কাজের মধ্যে এগুলো অতীব গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং এগুলো নিয়ে প্রশ্ন সৃষ্টি করা কাম্য হতে পারেনা।

এগুলো বাদ দিলে মেয়েদের তো আর তেমন কোন দায়িত্বই থাকেনা।
---------------------
১৭/০৮/২০১৫ খ্রি.



সংযুক্তিঃ

ড: জাকির নায়েক কে এক বোন এরকম প্রশ্ন করেছিলেন, " আমার জন্য আমার শশুর শাশুড়ির সেবা করা ফরজ নয় তাই না? " উত্তরে তিনি বলেছিলেনন, ইসলাম যদিও এটা নারীদের উপর ফরজ করছেনা, তবে ইসলামে "মুহসিনা নারী " বলে একটা শব্দ রয়েছে। যার মানে হচ্ছে তিনি আল্লাহর আনুগত্য করার ব্যাপারে স্বামী কে ইহসান করবেন। আর স্বামী র জন্য আল্লাহ্‌ তা'লার হুকুম গুলোর মধ্যে মা বাবার সেবার চেয়ে বড় হুকুম আর কি রয়েছে। তাই তিনি আল্লাহর দ্রিষ্টিতে ভালো মুসলিম হতে পারবেননা যদিনা তিনি মু্হসিনা হন। তিনি তার স্বামী কে বুঝাবেন, যদি তিনি মা বাবার আচরনের কারনে তাদের ত্যাগ করতে চায়। এটাই মুহসিনা নারীর বইশিষ্ট"। সুতরাং একথা স্পষ্ট যে ইসলাম নারী দের জন্য ফরজ করেন নি শশুর শাশুড়ি র সেবা করা। এর কারন ফরজ করে দেয়া একটা কাজ কে ২৪ ঘন্টার দায়িত্ব দিয়ে দেয় যা তরক করলে জাহান্নামি হতে হবে। এটা নারীদের জন্য আল্লাহ্‌ তা'লার পক্ষ থেকে ইনসাফ। আর যেসব নারীরা শশুর বাড়িতে তিক্ততার স্বীকার হন তাদের অধিকার ও নিশ্চিত করে। এমনকি এ ধরনের খেত্রে ইসলাম তাকে তালাক চেয়ে নেবার অধিকার ও দেয়। ইসলাম প্রত্যেক বিধানের বেলায় মধ্যম পন্থা অবলম্বী হতে নির্দেশ দেয়। নারীদের জন্য শশুর শাশুড়ির সেবা বাধ্যতা মুলক না করে তাদের প্রতি অনাকাঙ্ক্ষিত আচরনের পথ যেমন বন্ধ করে দেয়, তেমনি তাদের মু্হসিনা হতে নির্দেশ দিয়ে সুযোগ সন্ধানী নারী হবার রাস্তা ও বন্ধ করে দেয় যেন স্বামী স্ত্রীর সম্পরকে ভারসাম্য থাকে। বন্ধুত্বসুলভ আচরন আর সহযোগিতা নিশ্চিত করে। আমরা ভুলে গেলে চলবেনা যে, ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা কে ও নবীর আদরের কন্যা হওয়া সত্বেও আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর ঘরে গিয়েই সংসার করতে হয়েছে। যব পিশে তার হাতে ফোসকা হয়ে গিয়েছিল। তার ঘরে শাশুড়ি থাকলে জানিনা তিনি কি করতেন। অবশ্যই শাশুড়ি সেবা ফরজ না বলে বাপের বাড়ি চলে যেতেন না। 

2 comments:

Runner বলেছেন...

Kub sundor prosno koresen kintu uttor ta buzlam na

নিঝুম বলেছেন...

এটা সুন্দর প্রশ্ন না। এধরনের প্রশ্ন মনে আসাটাই খুব সঙ্কীর্নমনস্কতার পরিচায়ক।

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম