নিরুপায় | ||
বসি বছরের পয়লা তারিখে মানের খাতায় রাখিলাম লিখে- "সহজ উদরে ধরিবে যেটুক্, সেইটুকু খাব হব না পেটুক ।" মাস দুই যেতে খাতা খুলে দেখি, এরি মাঝে মন লিখিয়াছে একি ! লিখিয়াছে, "যদি নেমন্তন্নে কেঁদে ওঠে প্রাণ লুচির জন্যে, উচিত কি হবে কাঁদান তাহারে ? কিম্বা যখন বিপুল আহারে, তেড়ে দেয় পাতে পোলাও কালিয়া পায়েস অথবা রাবড়ি ঢালিয়া- তখন কি করি, আমি নিরুপায় ! তাড়াতে না পারি, বলি আয় আয়, ঢুকে আয় মুখে দুয়ার ঠেলিয়া উদার রয়েছি উদর মেলিয়া !" |
হিতে-বিপরীত
সুড়সুড়িটা কেমন লাগে ?
কই গেল তোর জারিজুরি
লম্ফঝম্ফ বাহাদুরি ।
নিত্যি যে তুই আসতি তেড়ে
শিং নেড়ে আর দাড়ি নেড়ে,
ওরে ছাগল করবি রে কি ?
গুঁতোবি তো আয়না দেখি ।
এমন ধারা অভদ্রতা !
শান্ত যারা ইতরপ্রাণী,
তাদের পরে চোখরাঙানি !
ঠাণ্ডা মেজাজ কয় না কিছু,
লাগতে গেছ তারই পিছু ?
শিক্ষা তোদের এম্নিতর
ছি-ছি-ছি ! লজ্জা বড় ।
একটুখানি গুঁতিয়ে দেখি ।
গুঁতোর চোটে ধড়াধ্বড়
হুড়মুড়িয়ে ধুলোয় পড় ।
তবে রে পাজি লক্ষ্মীছাড়া
আমার 'পরেই বিদ্যেঝাড়া,
পাত্রাপাত্র নাই কিরে হুঁশ্
দে দমাদম ধুপুস্ ধাপুস্ ।
নন্দগুপি
চোরের মতন নন্দগোপাল চল্ছে গুড়ি গুড়ি ?
লুকিয়ে বুঝি মুখোশখানা রাখছে চুপি চুপি ?
আজকে রাতে অন্ধকারে টেরটা পাবেন গুপি !
আয়না হাতে দাঁড়িয়ে গুপি হাসছে কেন খালি ?
বিকট রকম পোশাক করে মাখ্ছে মুখে কালি !
এমনি করে লম্ফ দিয়ে ভেংচি যখন দেবে
নন্দ কেমন আঁৎকে যাবে- হাসছে সে তাই ভেবে ।
আঁধার রাতে পাতার ফাঁকে ভূতের মতন কেরে ?
ফন্দি এঁটে নন্দগোপাল মুখোশ মুখে ফেরে !
কোথায় গুপি, আসুক না সে ইদিক্ পানে ঘুরে-
নন্দদাদার হুঙ্কারে তার প্রাণটি যাবে উড়ে ।
চিমটে হাতে জংলা গুপি বেড়ায় ঝাড়ে ঝোপে !
নন্দ যখন বাড়ির পথে আসবে গাছের আড়ে,
"মার্ মার্ মার্ কাট্রে" বলে পড়বে তাহার ঘাড়ে ।
নন্দ চলেন এক পা দু পা আস্তে ধীরে গতি,
টিপটিপিয়ে চলেন গুপি সাবধানেতে অতি-
মোড়ের মুখে ঝোপের কাছে মার্তে গিয়ে উঁকি
দুই সেয়ানে এক্কেবারে হঠাৎ মুখোমুখি !
নন্দ তখন ফন্দি ফাঁদন কোথায় গেল ভুলি
কোথায় গেল গুপির মুখে মার্ মার্ মার্ বুলি ।
নন্দ পড়েন দাঁতকপাটি মুখোশ টুখোশ ছেড়ে
গুপির গায়ে জ্বরটি এল কম্প দিয়ে তেড়ে ।
গ্রামের লোকে দৌড়ে তখন বদ্যি আনে ডেকে,
কেউ বা নাচে কেউ বা কাঁদে রকম সকম দেখে ।
নন্দগুপির মন্দ কপাল এম্নি হল শেষে,
দেখ্লে তাদের লুটোপুটি সবাই মরে হেসে !
0 comments: