নূতন বৎসর, মনের মতন, মেঘ, শিশুর দেহ

নূতন বৎসর

'নূতন বছর ! নূতন বছর !' সবাই হাঁকে সকাল সাঁঝে
আজকে আমার সূর্যি মামার মুখটি জাগে মনের মাঝে ।
মুস্কিলাসান করলে মামা, উস্কিয়ে তার আগুনখানি,
ইস্কুলেতে লাগ্‌ল তালা, থাম্‌ল সাধের পড়ার ঘানি ।
এক্‌জামিনের বিষম ঠেলা চুক্‌ল রে ভাই ঘুচ্ল জ্বালা,
নূতন সালের নূতন তালে হোক্‌ তবে আস 'হকির' পালা ।
কোন্‌খানে কোন্‌ মেজের কোণে, কলম কানে, চশমা নাকে,
বিরামহারা কোন্‌ বেচারা দেখেন কাগজ, ভয় কি তাঁকে ?
অঙ্কে দিবেন হকির গোলা, শঙ্কা ত নাই তাহার তরে,
তঙ্কা হাজার মিলুক তাঁহার, ডঙ্কা মেরে চলুন ঘরে ।
দিনেক যদি জোটেন খেলায় সাঁঝের বেলায় মাঠের মাঝে,
'গোল্লা' পেয়ে ঝোল্লা ভরে আবার না হয় যাবেন কাজে !
আয় তবে আয়, নবীন বরষ ! মলয় বায়ের দোলায় দুলে,
আয় সঘনে গগন বেয়ে, পাগলা ঝড়ের পালটি তুলে ।
আয় বাংলার বিপুল মাঠে শ্যামল ধানের ঢেউ খেলিয়ে,
আয়রে সুখের ছুটির দিনে আম-কাঁটালের খবর নিয়ে !
আয় দুলিয়ে তালের পাখা, আয় বিছিয়ে শীতল ছায়া,
পাখির নীড়ে চাঁদের হাটে আয় জাগিয়ে মায়ের মায়া ।
তাতুক না মাঠ, ফাটুক না কাঠ, ছুটুক না ঘাম নদীর মত,
জয় হে তোমার, নূতন বছর ! তোমার যে গুণ, গাইব কত ?
পুরান বছর মলিন মুখে যায় সকলের বালাই নিয়ে,
ঘুচ্‌ল কি ভাই মনের কালি সেই বুড়োকে বিদায় দিয়ে ?
নূতন সালে নূতন বলে, নূতন আশায়, নুতন সাজে,
আয় দয়ালের নাম লয়ে ভাই, যাই সকলে যে যার কাজে ! 



মনের মতন

কান্না হাসির পোঁটলা বেঁধে, বর্ষভরা পুঁজি,
বৃদ্ধ বছর উধাও হ'ল ভূতের মুলুক খুঁজি ।
নূতন বছর এগিয়ে এসে হাত পাতে ঐ দ্বারে,
বল্‌ দেখি মন মনের মতন কি দিবি তুই তারে ?
আর কি দিব ?- মুখের হাসি, ভরসাভরা প্রাণ,
সুখের মাঝে দুখের মাঝে আনন্দময় গান । 



মেঘ

সাগর যেথা লুটিয়ে পড়ে নতুন মেঘের দেশে-
আকাশ-ধোয়া নীল যেখানে সাগর জলে মেশে ।
মেঘের শিশু ঘুমায় সেথা আকাশ-দোলায় শুয়ে-
ভোরের রবি জাগায় তারে সোনার কাঠি ছুঁয়ে ।
সন্ধ্যা সকাল মেঘের মেলা- কুলকিনারা ছাড়ি
রং বেরঙের পাল তুলে দেয় দেশবিদেশে পাড়ি ।
মাথায় জটা, মেঘের ঘটা আকাশ বেয়ে ওঠে,
জোছনা রাতে চাঁদের সাথে পাল্লা দিয়ে ছোটে ।
কোন্‌ অকুলের সন্ধানেতে কোন্‌ পথে যায় ভেসে-
পথহারা কোন্‌ গ্রামের পরে নাম-জানা-নেই-দেশে ।
ঘূর্ণীপথের ঘোরের নেশা দিক্‌বিদিকে লাগে,
আগল ভাঙা পাগল হাওয়া বাদল রাতে জাগে ;
ঝড়ের মুখে স্বপন ছুটে আঁধার আসে ঘিরে !
মেঘের প্রাণে চমক হানে আকাশ চিরে চিরে !
বুকের মাঝে শঙ্খ বাজে- দুন্দুভি দেয় সাড়া !
মেঘের মরণ ঘনিয়ে নামে মত্ত বাদল ধারা । 



শিশুর দেহ

চশমা-আঁটা পণ্ডিতে কয় শিশুর দেহ দেখে-
"হাড়ের পরে মাংস দিয়ে, চামড়া দিয়ে ঢেকে,
শিরার মাঝে রক্ত দিয়ে, ফুসফুসেতে বায়ু,
বাঁধল দেহ সুঠাম করে পেশী এবং স্নায়ু ।"
কবি বলেন, "শিশুর মুখে হেরি তরুণ রবি,
উৎসারিত আনন্দে তার জাগে জগৎ ছবি ।
হাসিতে তার চাঁদের আলো, পাখির কলকল,
অশ্রুকণা ফুলের দলে শিশির ঢলঢল ।"
মা বলেন, "এই দুরুদুরু মোর বুকেরই বাণী,
তারি গভীর ছন্দে গড়া শিশুর দেহখানি ।
শিশুর প্রাণে চঞ্চলতা আমার অশ্রুহাসি,
আমার মাঝে লুকিয়েছিল এই আনন্দরাশি ।
গোপনে কোন্‌ স্বপ্নে ছিল অজানা কোন আশা,
শিশুর দেহে মূর্তি নিল আমার ভালবাসা ।"


0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম