নিঃস্বার্থ, বর্ষ গেল বর্ষ এল, মূর্খমাছি

নিঃস্বার্থ

গোপ্‌লাটা কি হিংসুটে মা ! খাবার দিলেম ভাগ করে,
বললে নাকো মুখেও কিছু, ফেল্লে ছুঁড়ে রাগ করে ।
জ্যাঠাইমা যে মেঠাই দিলেন, "দুই ভায়েতে খাও" ব'লে-
দশটি ছিল, একটি তাহার চাখতে নিলেম ফাও বলে ।
আর যে ন'টি, ভাগ করে তায়, তিন্‌টে দিলেম গোপ্‌লাকে-
তবুও কেবল হ্যাংলা ছেলে আমার ভাগেই চোখ রাখে ।
বুঝিয়ে বলি, "কাঁদিস কেন ? তুই যে নেহাত কনিষ্ঠ-
বয়স বুঝে সাম্‌লে খাবি, তা নইলে হয় অনিষ্ট ।
তিনটি বছর তফাৎ মোদের, জ্যায়দা হিসাব গুন্‌তি তাই,
মোদ্দা আমার ছয়খানি হয়, তিন বছরে তিন্‌টি পাই ।"
তাও মানে না, কেবল কাঁদে- স্বার্থপরের শয়তানী-
শেষটা আমায় মেঠাইগুলো খেতেই হল সবখানি ।

বর্ষ গেল বর্ষ এল 

 

 

বর্ষ গেল বর্ষ এল গ্রীষ্ম এলেন বাড়ি-
পৃথ্বী এলেন চক্র দিয়ে এক বছরের পাড়ি ।
সত্যিকারের এই পৃথিবীর বয়স কেবা জানে,
লক্ষ হাজার বছর ধরে চল্‌ছে একই টানে ।
আপন তালে আকাশ পথে আপনি চলে বেগে,
গ্রীষ্মকালের তপ্তরোদে বর্ষাকালের মেঘে,
শরৎকালের কান্নাহাসি হাল্কা বাদল হাওয়া,
কুয়াশা-ঘেরা পর্দা ফেলে হিমের আসা যাওয়া-
শীতের শেষে রিক্ত বেশে শূন্য করে ঝুলি,
তার প্রতিশোধ ফুলে ফলে বসন্তে লয় তুলি ।
না জানি কোন নেশার ঝোঁকে যুগযুগান্ত ধরে,
ছয়টি ঋতু দ্বারে দ্বারে পাগল হয়ে ঘোরে !
না জানি কোন ঘূর্ণীপাকে দিনের পর দিন,
এমন ক'রে ঘোরায় তারে নিদ্রাবিরামহীন !
কাঁটায় কাঁটায় নিয়ম রাখে লক্ষযুগের প্রথা,
না জানি তার চাল চলনের হিসাব রাখে কোথা !



মূর্খমাছি

মাকড়সা
সান্‌-বাঁধা মোর আঙিনাতে
জাল বুনেছি কালকে রাতে,
       ঝুল ঝেড়ে সব সাফ করেছি বাসা ।
আয় না মাছি আমার ঘরে,
আরাম পাবি বসলে পরে,
       ফরাশ পাতা দেখবি কেমন খাসা !
মাছি
থাক্‌ থাক্‌ থাক্‌ আর বলে না,
আন্‌কথাতে মন গলে না-
       ব্যবসা তোমার সবার আছে জানা ।
ঢুক্‌‌লে তোমার জালের ঘেরে
কেউ কোনদিন আর কি ফেরে ?
       বাপ্‌‌রে ! সেথায় ঢুক্‌‌তে মোদের মানা ।

মাকড়সা
হাওয়ায় দোলে জালের দোলা
চারদিকে তার জান্‌লা খোলা
       আপ্‌নি ঘুমে চোখ যে আসে জুড়ে !
আয় না হেথা হাত পা ধুয়ে
পাখ্‌না মুড়ে থাক্‌ না শুয়ে-
       ভন্‌ ভন্‌ ভন্‌ মরবি কেন উড়ে ?

মাছি
কাজ নেই মোর দোলায় দুলে,
কোথায় তোমার কথায় ভুলে
       প্রাণটা নিয়ে টান্‌ পড়ে ভাই শেষে ।
তোমার ঘরে ঘুম যদি পায়
সে ঘুম কভু ভাঙবে না হায়-
       সে ঘুম নাকি এমন সর্বনেশে !

মাকড়সা
মিথ্যে কেন ভাবিস্‌ মনে ?
দেখ্‌না এসে ঘরের কোণে
       ভাঁড়ার ভরা খাবার আছে কত !
দে-টাপাটপ ফেলবি মুখে
নাচ্‌‌বি গাবি থাক্‌‌বি সুখে
       ভাবনা ভুলে বাদ্‌শা-রাজার মতো ।


মাছি
লোভ দেখালেই ভুলবে ভবি,
ভাবছ আমায় তেমনি লোভী !
       মিথ্যে দাদা ভোলাও কেন খালি,
করব কি ছাই ভাড়ার দেখে ?
প্রণাম করি আড়াল থেকে-
       আজকে তোমার সেই গুড়ে ভাই বালি ।

মাকড়সা
নধর কালো বদন ভরে
রূপ যে কত উপচে পড়ে !
       অবাক দেখি মুকুটমালা শিরে !
হাজার চোখে মানিক জ্বলে !
ইন্দ্রধনু পাখার তলে !
       ছয় পা ফেলে আয় না দেখি ধীরে ।

মাছি
মন ফুর্‌ফুর্‌ ফুর্তি নাচে-
একটুখানি যাই না কাছে !
       যাই যাই যাই- বাপ্‌‌রে একি বাঁধা ।
ও দাদা ভাই রক্ষে কর !
ফাঁদ পাতা এ কেমন তরো ।
       পড়ে হাত পা হল বাঁধা ।


দুষ্টুলোকের মিষ্টি কথায়
দুষ্টুলোকের মিষ্টি কথায়
নাচলে লোকের স্বস্তি কোথায় ?
       এমনি দশাই তার কপালে লেখা ।
কথার পাকে মানুষ মেরে
মাকড়জীবী ঐ যে ফেরে,
       গড় করি তার অনেক তফাৎ থেকে ।

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম