প্রশ্নোত্তরে ছাত্রশিবির

শিবির ও প্রচলিত তাবলীগের মধ্যে মিল বা গরমিল আছে কি?
১. মিলও আছে; গরমিলও আছে।
২. মিলের মধ্যে রয়েছে-
নামায
যিকর
তিলাওয়াত
ইসলামের দাওয়াত ইত্যাদি।
৩. গরমিলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো
কুরআন থেকে তালিমকে অগ্রাধিকার দেওয়া
হাদিসের নির্ধারিত বিষয়ে সীমাবদ্ধ না থাকা
অমুসলিমদের মাঝেও দাওয়াতী কাজ করা
রাষ্ট্র-অর্থনীতি ইত্যাদি সংক্রাস্ত আয়াত ও হাদীসের প্রচার
ইসলামকে বিজয়ী ও ফিৎনাকে দমন করার সংগ্রামে অংশগ্রহণ
সাধ্যমতো অন্যায়ে বাধাদান ইত্যাদি।
৪. কতিপয় নফল ও সুন্নাতে শিবিরের ভাইদের মধ্যে প্রচলিত তাবলীগের ভাইদের তুলনায় দুর্বলতা রয়েছে। যেমনঃ ঢিলা জামা, আতর-সুরমা ব্যবহার, টুপি-পাগড়ী পরা ইত্যাদি।
৫. কিছু বুনিয়াদী ফরয ও ওয়াজিবে প্রচলিত তাবলীগের ভাইদের মধ্যে শিবিরের তুলনায় দুর্বলতা রয়েছে। যেমনঃ অন্যায় ও অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে কথা বলা, জাহেলিয়াতের প্রতিরোধ করা, মানবরচিত মতের অনুসারী দলের লোকদের প্রশ্রয় না দেওয়া ইত্যাদি।



ইসলামী নিয়ম মেনে যদি শিবির না করি তাহলে কি হবে?
১. শিবির না করেও যদি আপনি পরিপূর্ণরূপে ইসলাম মেনে চলতে পারেন তাহলে কোন সমস্যাই নেই। কিন্তু যখনই পরিপূর্ণ ইসলাম মেনে চলার প্রসঙ্গ আসবে তখনই সংঘবদ্ধ হওয়া, আমীরের নির্দেশ মেনে চলা, ইসলামী দলে শামিল হওয়া ইত্যাদি প্রসঙ্গও চলে আসবে।
২. শরীআতের দৃষ্টিতে ইসলামী দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকাটা অপরিহার্য। সেই হিসেবে শিবির করলে এ দায়িত্ব পালন হয়ে যায়। শিবির না করেও যদি আপনি অন্য কোন ইসলামী দলে শামিল হন তাহলেও ঐক্যবদ্ধ থাকার হুকুম পালিত হয়ে যায়।
৩. মোটকথা, মানুষের তৈরি করা আইন প্রতিষ্ঠার দলে শামিল হওয়া হারাম আর ইসলামী দলে শামিল হওয়া ফরয। কাজেই ইসলামী দলে সমপৃক্ত না হলে ফরয অনাদায় থেকে যায়। ফলে সঠিকভাবে ইসলাম মানা হয় না।

আপনাদেরকে রাজাকার বা মুক্তিযুদ্ধের বিপরে শক্তি বলা হয় কেন?
১. আমাদের সবাই ১৯৭১ সালের অনেক পরে জন্মগ্রহণ করেছি। তাহলে আমাদেরকে যারা রাজাকার বলে তাদের মাথা কি ঠিক আছে? আসলে যারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যবসা করে, মুক্তিযুদ্ধই যাদের একমাত্র রাজনৈতিক হাতিয়ার তারাই মূলত আমাদেরকে রাজাকার বা স্বাধীনতার বিপরে শক্তি বলে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করে থাকে।
২. জামায়াতে ইসলামীর নেতারা পাকিস্তান আমলেও সরকারী অন্যায় ও অপশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে, জেলও খেটেছে।
৩. জামায়াত নেতৃবৃন্দ মনে করেছিলেন, শুধু অস্থানীয় শোষকদের তাড়ালেই হবে না। অস্থানীয় শোষকদের স্থান যদি স্থানীয় শোষকেরা দখল করে তাহলে স্বাধীনতার সুফল পাওয়া সম্ভব হবে না।
৪. একটি ইসলামী দল হিসেবে দীর্ঘদিনের ইসলাম বৈরী ভারতের নেতৃত্বে যুদ্ধে অংশ নেওয়া আদর্শগত কারণেই সম্ভব হয়নি।
৫. তিনদিকে ভারতবেষ্টিত বাংলাদেশ তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান থেকে মুক্ত হলে প্রকারান্তরে ভারতের খপ্পরেই পড়তে হবে- এ আশংকা করেছিলেন জামায়াতের নেতৃবৃন্দ। আজকের ভারতের আচরণই প্রমাণ করে সে আশংকা অমূলক ছিল না। জামায়াত নেতৃবৃন্দের মতে, ভারতের খপ্পরে পড়ার ঝুঁকি না নিয়ে স্বায়ত্তশাসন দাবি করাটাই ছিল বুদ্ধিমানের কাজ।
৬. জামায়াত দলগতভাবে ঘোষণা দিয়ে স্বাধীনতার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেনি কিন্তু জামায়াতের বহু লোক ব্যক্তিগতভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। এখনও বহু মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তান জামায়াত ও শিবিরের সাথে জড়িত আছেন।
৭. যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে জামায়াতের কোন লোক কোন মানুষকে অত্যাচার বা নির্যাতন করেনি। যারা বলেন জামায়াতের লোকজন এদেশের মানুষকে অত্যাচার নির্যাতনে সহায়তা করেছে তারা কোন প্রমাণ পেশ করতে পারেননি। শুধু জামায়াতের অগ্রগতি রোধে মিথ্যা প্রচারণা জোরদার করতে পেরেছেন। ফলে সরলপ্রাণ ও কোমলমতি এক শ্রেণীর মানুষকেও তারা বিভ্রান্ত করতে সম হয়েছেন। তবে মিথ্যা বেশিদিন টেকে না বিধায় এককালের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দলের সমর্থন কমে প্রায় ৯০% থেকে প্রায় ৪০% এ চলে এসেছে। পক্ষান্তরে ইসলামী শক্তিগুলোর জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৮. বর্তমান চার দলীয় সরকার আলাদা মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় করেছে।
৯. বাম-কমিউনিস্ট শক্তি স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখা সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে কথা বলা হয় না কেন?
১০. এককালের মুক্তিযুদ্ধের পরে শক্তি যদি পরবর্তীতে দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করেন তবে তাদেরকে কি স্বাধীনতার পরে শক্তি বলা উচিত?
১১. রিপোর্টে দেখা যায়, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মোট জনসংখ্যার ১২% দেশ বিভক্ত হওয়ার বিপৰে ছিল। আর তখন জামায়াতে ইসলামীর জনসমর্থন ছিল ১%-এর নিচে। যদি জামাতের সবাই রাজাকার হয়ে থাকে তবে বাকি ১১% রাজাকার কোন দলের?
১২. বর্তমান প্রোপটে বাংলাদেশে কোন দেশের প থেকে হামলা হলে তা ভারত থেকেই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কাজেই যারা ভারতবিরোধী তারাই মূলত স্বাধীনতার পরে শক্তি। আর যারা ভারতের ভক্ত তারা ভারতের আক্রমণের প্রতিবাদ করতে চাবে না বিধায় তারাই স্বাধীনতার বিপরে শক্তি।

বোমা হামলার সাথে শিবিরের কোন সম্পর্ক আছে কি?

১. শিবির আদর্শিকভাবে বোমা হামলা বা এ জাতীয় ঘৃণ্য কাজের বিরোধী। কাজেই একটি ইসলামী দল হিসেবে এ ধরনের ইসলামবিরোধী কর্মকান্ডের সাথে শিবিরের জড়িত থাকার প্রশ্নই আসে না।
২. জঙ্গি বোমা হামলার উৎপত্তি হয়েছে আওয়ামী লীগের আমলে (৯৬-২০০১)।
৩. বোমা হামলার সাথে জামায়াত ও শিবির জড়িত আছে- একথা প্রমাণ করার চেষ্টা অনেক দলই করছে। কিন্তু কেউই বোমা হামলার সাথে আমাদের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করতে পারেনি। শিবিরের প্রাক্তন কর্মীর মামাত ভাইয়ের খালাত দুলাভাই হলো বোমা হামলাকারীর চাচাত শালা- এভাবেও শিবিরকে জড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
৪. অপরাধীরা নিজেরাই স্বীকার করেছে তারা জেএমবির লোক। কেউ বলেনি তারা শিবির করে। তারপরও যারা শিবিরকে দায়ী করার অপচেষ্টা করেন তারা প্রকারান্তরে জেএমবিরই পক্ষ নেন বলে প্রতীয়মান হয়।
৫. জেএমবির জনশক্তিদের থেকে প্রাপ্ত তথ্যে এও জানা যায় যে তাদের পরবর্তী টার্গেট ছিল তাদের ভাষায়- 'ওলামায়ে ছু'। অর্থাৎ, দেশের খ্যাতনামা আলেম সমপ্রদায়। জামায়াতের সাঈদী সাহেবও নাকি তাদের টার্গেটে ছিল। এ থেকেও সহজেই অনুমিত হয় যে, জামায়াত-শিবির ও জেএমবির মধ্যে সম্পর্ক অনেকটা দা-কুমড়ার মতো।

জামায়াতে ইসলামী কি নারী নেতৃত্ব মেনে নেয়নি? তাহলে কেন চার দলে যোগ দিল?

১. ইসলামসম্মত তথা বিজ্ঞানসম্মত কারণে সার্বিক পরিসরে নারী নেতৃত্ব কাম্য নয়। সঙ্গত কারণেই জামায়াতে ইসলামীসহ কোন ইসলামী দলই সার্বিক পরিসরে নারী নেতৃত্ব পছন্দ করে না।
২. জামায়াতে ইসলামী নারীকে দেশের প্রধান করেনি। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক নারীকে নেত্রী নির্বাচিত করলে এ দায় জামায়াত নেবে কেন?
৩. ইসলামে পুরুষের উপর নারীদের নেতৃত্ব পছন্দনীয় নয়। আর বাংলাদেশ এখনও ইসলামী রাষ্ট্র হয়নি। এ কারণেই এখানে নারী নেতৃত্ব বিদ্যমান থাকা সম্ভব হয়েছে।
৪. পার্লামেন্টারী সিস্টেমে হয় পজিশন না হয় অপজিশন এ থাকতে হয়। কিন্তু উভয় ক্ষেত্রেই নারীর প্রাধান্য থাকায় জামায়াত এখানে উভয় সংকটে পড়েছে। কারণ বিএনপি ও আওয়ামী লীগ উভয় দলেরই বর্তমান প্রধান হচ্ছে নারী।
৫. জামায়াতে ইসলামী চার দলে যোগ না দিলে আওয়ামী লীগ মতায় আসার সম্ভাবনা ছিল। তখনও নারী নেতৃত্বই বজায় থাকত। কাজেই চার দল গঠন করলেও নারী নেতৃত্ব, না করলেও নারী নেতৃত্ব। দুটোই তো মন্দ। জামায়াত সেজন্যই দুটো মন্দের মধ্যে যেটিকে অপোকৃত কম মন্দ মনে করেছে সেটিকেই গ্রহণ করেছে (অনেকটা বাধ্য হয়েই)। কম মন্দটিকে গ্রহণ না করলে বেশি মন্দটিকে গ্রহণ করতে হতো।
৬. জামায়াত বিএনপিতে যোগ দেয়নি। বিএনপিও জামায়াতে যোগ দেয়নি। জামায়াত বিএনপির প্রধানকে নিজ দলের প্রধান স্বীকার করে না। বিএনপিও জামায়াতের আমীরকে নিজ দলের আমীর মনে করে না। কাজেই একথা বলা যায় না যে জামায়াত খালেদা জিয়াকে নেত্রী হিসেবে মেনে নিয়েছে।
৭. একসাথে চলা মানেই নেতৃত্ব মেনে নেওয়া নয়।
৮. শক্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত দেশীয় সিস্টেমের বাইরে চলা কঠিন, কখনও কখনও অসম্ভবও বটে।
৯. বিএনপিতে যোগ্য যোগ্য পুরুষ থাকার পরও তারা যদি কোন নারীকে দলীয় প্রধান নির্বাচন করে তবে সে দায়-দায়িত্ব বিএনপির; জামায়াতের নয়।
১০. জনগণ জামায়াতকে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে রায় দেওয়ার পরও যদি জামায়াত কোন মহিলাকে রাষ্ট্রপ্রধান বা আমীর বানাতো কেবল তখনই বলা যেত যে- জামায়াত নারী নেতৃত্বের পক্ষে।

শিবির কি কোন রাজনৈতিক সংগঠন?

১. শিবির একটি ইসলামী সংগঠন। আর ইসলামে সব সমস্যার সমাধান রয়েছে। রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানও ইসলামে আছে। ইসলামের রাজনৈতিক শিা পরিহার করে সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ মুসলমান হওয়া যায় না। তাই, সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ মুসলমান হওয়ার স্বার্থে শিবির রাজনৈতিকভাবে সচেতন।
২. ইসলামে রাষ্ট্রীয় শিা থাকার কারণে এবং শিবির ইসলামী সংগঠন হওয়ার কারণে ইসলাম মানার স্বার্থেই রাজনীতি করা লাগে।
৩. শিবির মূলত ইসলামী সংগঠন। একে রাজনৈতিক সংগঠনও বলা যায়। তবে এ সংগঠন শুধু ইসলামের রাজনৈতিক শিক্ষারই অনুসরণ করে না বরং অন্যান্য শিক্ষারও অনুসরণ করে থাকে।
শিবির নামটি শুনলেই সাধারণ মানুষ ভয় পায় কেন?
১. শিবিরের নাম শুনলে সাধারণ মানুষ ভয় পায় না। সাধারণ মানুষ শিবিরকে ভাল হিসেবেই জানে।
২. অনৈসলামিক দলগুলো চায়, সাধারণ মানুষ শিবির নাম শুনে ভয় পাক। সেজন্য তারা শিবিরের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার করে থাকে। আর সরল মনের কেউ কেউ সেসব প্রচারে অন্ধভাবে বিশ্বাস করে ফেলে।
৩. যারা শোনা কথায় কান না দিয়ে নিজের বিবেককে কাজে লাগায়, শিবিরকে কাছ থেকে পর্যবেণের চেষ্টা করে তারা শিবিরকে ভাল হিসেবেই জানে। সৎসাহসী হলে তারা প্রকাশ্যে শিবিরের পক্ষে কথা বলে আর ভীরু হলে তারা চুপ করে থাকে। কিন্তু চুপ করে থাকলেও তারা মন থেকে শিবিরকে ভালই জানে।

শিবিরকে রগ কাটা বলা হয় কেন? অন্যান্য দলকে তো রগকাটা বলে না। তাহলে শিবিরকে কেন রগকাটা বলা হয়?

১. ধরুন, আমি আপনার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ দিলাম কিন্তু অভিযোগ প্রমাণিত হলো না তাহলে কি আপনাকে অপরাধী বলা ঠিক হবে? তেমনি শিবিরকে রগ কাটা দল বলে অভিযোগ দেওয়া হলো কিন্তু তা প্রমাণ করা গেল না, তাহলে শিবিরকেও রগ কাটা পার্টি বলা উচিত হবে না।
২. পত্র-পত্রিকায় শিবিরের বিরুদ্ধে অনেক কথাই লেখা হয়। কিন্তু কোন প্রমাণ দেওয়া হয় না।
৩. মাওলানা নিজামী সাহেব ১৯৯৩ সালে পার্লামেন্টে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন, যদি শিবির রগ কাটে বলে কেউ প্রমাণ করতে পারেন তাহলে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেবেন। তার সেই চ্যালেঞ্জ কেউ গ্রহণ করেনি।
৪. বিবেকবান মানুষকে আমরা যুক্তিসহকারে বুঝিয়ে আমাদের দলে শামিল করতে সম হচ্ছি, আলহামদুলিল্লাহ। কাজেই রগ কাটার কোন প্রয়োজন আমাদের অতীতেও হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না। তাছাড়া রগ কেটে মানুষকে ভয় দেখানো যায় কিন্তু মানসিকভাবে নিজের দলে আনা যায় না।
৫. এক জনের রগ কাটতে গেলে দুইজন লোক লাগবে দুই হাত ধরতে, দুজন লাগবে দুই পা ধরার জন্য, আর একজন প্রয়োজন হবে মুখ ঠেসে ধরার জন্য। আর ষষ্ঠজনকে রগ কাটতে হবে। এভাবে রগ কাটাটা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া রগ কাটলে মানুষ মরে না বলে এতে সাক্ষীও থেকে যায়। পরে ধরা পড়ার আশংকা থাকে। কাজেই একজন অপরাধীও এমন বোকা নয় যে সে রগ কাটার মত এমন ঝুঁকিপূর্ণ পথ গ্রহণ করবে। রগ কাটার চেয়ে শব্দরোধকারী পিস্তল দিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে গুলি করা অনেক সহজ। কারণ এতে কষ্ট ও ঝুঁকি নেই। এতে কোন সাক্ষীও থাকে না। তাই ধরা পড়ার আশংকাও থাকে না। কাজেই একজন অপরাধী লোক কাউকে কষ্ট দিতে চাইলে রগ না কেটে এ পথই গ্রহণ করার কথা।
৬. অন্যান্য দলকে রগকাটা বলা না হলেই যে তারা ভাল এটা কোন যুক্তি হতে পারে না। অন্যান্য দলের এত বেশি প্রকাশ্য ও প্রমাণিত অপকর্ম আছে যে, তাদেরকে যদি শুধু রগ-কাটা বলা হয় তবে তাদের প্রশংসাই হয়ে যায়। যারা নির্বিচারে গলা কাটে ও মানুষ হত্যা করে তাদেরকে রগ-কাটা বলার প্রয়োজন থাকে কি?
৭. শিবিরকে রগ-কাটা বলাটি হলো শিবিরের বিরোধীদের একটি কৌশল। তারা এ অপবাদ দিয়ে জনমনে ভীতি সৃষ্টি করতে চায়।
৮. শিবির নামায পড়ে না, শিবির জোর-পূর্বক চাঁদা আদায় করে, শিবির মদ-গাজা খায় ইত্যাদি অপবাদ মানুষকে বিশ্বাস করানো একেবারেই কঠিন। কাজেই চারিত্রিকভাবে শিবিরের মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে রগ-কাটার মত একটি অদেখা বিষয়কে বারবার বিভিন্নভাবে বহু দলের দ্বারা দিনের পর দিন বলতে থাকার মাধ্যমে সরলপ্রাণ মানুষকে বোকা বানানোর এক সহজ কৌশল গ্রহণ করেছে শিবিরের বিরোধীরা।
৯. ইসলামের বিধান মতে, শিবির কাউকে আগে আক্রমণ করে না। শিবির হামলায় বিশ্বাসী নয়। বরং শিবির হামলার শিকার। শিবিরের শতাধিক শহীদই বলিষ্ঠ তার প্রমাণ।

ইসলামী ছাত্রশিবির কি দেশের বাইরেও আছে?
বিভিন্ন নামে প্রায় সব দেশেই ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের কাজ চালু আছে।

একজন লোক নিজে ইসলাম মানতে চেষ্টা করে কিন্তু তার পরিবারের লোক মানে না। সে অন্যদেরকে দাওয়াত দিতে গেলে তারা বলে- আগে পরিবার ঠিক করুন। এমতাবস্থায় ঐ দাওয়াতদাতার কি করা উচিত?
১. নিজে ইসলাম মানার সাথে সাথে পরিবারকেও ইসলাম মানার উৎসাহ দিতে হবে। ক্ষেত্রবিশেষে অধীনস্তকে শাসনও করতে হবে।
২. আগে পরিবারকে ঠিক করার চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু তার মানে এ নয় যে, অন্যদের ঠিক করার চেষ্টা করা যাবে না।
৩. আগে পরিবার ঠিক করুন- এমন কথার জবাবে বলতে হবে, ভাই, চেষ্টা করছি। দোয়া করবেন যেন পরিবারকে ঠিক করতে পারি। বহু নবীও পরিবারকে ঠিক করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু তাই বলে তাঁরা অন্যদেরকে ঠিক করার চেষ্টা পরিহার করেননি। সেজন্যই আমিও পরিবারের পাশাপাশি অন্যদেরকেও দ্বীনের দাওয়াত দিচ্ছি।
বাংলাদেশে ইসলামী দলগুলোর মধ্যে ঐক্য নেই কেন?
১. কুরআন থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়। আর মতপার্থক্যই ঐক্যের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
২. নেতৃত্বের লোভ, হিংসা, স্বার্থ, অনৈসলামিক শক্তি দ্বারা ব্যবহৃত হওয়া ইত্যাদি কারণেও ঐক্যবদ্ধ হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
৩. খুঁটিনাটি বিষয়ে মতপার্থক্যকে মাত্রাতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়ে মৌলিক বিষয়কে গুরুত্বহীন মনে করার কারণেও ঐক্য বাধাগ্রস্ত হয়।
৪. কোন আলেম বা ইসলামী গবেষকের প্রতি অন্ধভক্তি ও অন্ধ বিরোধিতার কারণেও ঐক্য সম্ভব হয়ে ওঠে না।
৫. জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বারবার ইসলামী দলগুলোর মধ্যে ঐক্য-প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। কিন্তু খুব একটা সুফল হয়নি। তবে আশার কথা যে, মতপার্থক্য অনেকটা হ্রাস পেয়েছে এবং দিন দিন এ মতানৈক্য কমে আসছে।
ইসলাম প্রচারে শিবিরের পরিকল্পনা কি?
১. শিবিরের প্রথম দফা কর্মসূচী হলো দাওয়াত। এ দফার তিনটি দিক রয়েছে:
ক.ইসলামের আহ্বান পৌছানো
খ.ইসলামী জ্ঞানার্জনে আগ্রহী করে তোলা এবং
গ.ইসলামী অনুশাসন মেনে চলার দায়িত্বানুভূতি জাগ্রত করা।
২. ইসলাম প্রচারের জন্য ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে ব্যক্তিগত সাক্ষৎকার ও সমপ্রীতি স্থাপন, সভা, সেমিনার, বিভিন্ন ধরণের প্রতিযোগিতা ইত্যাদির আয়োজন, ইসলামী সাহিত্য বিতরণ, গ্রুপ দাওয়াতী কাজ ইত্যাদি আঞ্জাম দেওয়া হয়।

ইসলাম প্রচারের জন্য কোন পার্টি বা দলের প্রয়োজন আছে কি?
১. Party বা organization বাংলা হলো দল, সংগঠন। আর এর আরবি হলো 'জামায়াত'।
২. ইসলাম প্রচারের কাজ একক ভাবেও করা যায় আবার দলগতভাবেও করা যায়। কিন্তু দলগতভাবে যে কাজ করা হয় তা এককভাবে করার চেয়ে বহুগুণে বেশি ফল দেয়।
৩. ইসলাম প্রচারের কাজ করা ফরয (সূরা আন নাহল ১২৫) আবার ঐক্যবদ্ধ থাকাও ফরয (সূরা আল ইমরান ১০৩)। কাজেই ঐক্যবদ্ধ বা দলবদ্ধভাবে দাওয়াতী কাজ করার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

অমুসলিমদের কেউ কি শিবির করতে পারে?
১. অমুসলিমগণ শিবিরের সহযোগী হতে পারে।
২. আমাদের দলে অমুসলিমরাও আছে। কারণ, আল্লাহ ও রাসূল শুধু মুসলমানদের জন্য নয়। ইসলাম ও আল কুরআন শুধু শিবিরের নয়, এটা সবার। ইসলাম ও ইসলামী দলের সৌন্দর্য অনেক অমুসলিমকেই ইসলাম গ্রহণে ও ইসলামী সংগঠনে যোগদানে উদ্বুদ্ধ করে থাকে। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেক অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করেছে ও শিবিরের কর্মী হয়েছে।
৩. যেহেতু আমাদের আদর্শ ইসলাম তাই এ আদর্শের যারা সক্রিয় বিরোধী তারা ইসলামে দলের সহযোগী হওয়ার সৌভাগ্য সাধারণত লাভ করতে পারে না। ফলে, ইসলাম গ্রহণের পূর্বে কেউ শিবিরের নেতৃত্ব পর্যায়ে আসতে পারে না।
৪. জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাস না করে কেউ যেমন জাতীয়তাবাদী দলের নেতা হতে পারে না, ধর্মনিরপেতাবাদী আদর্শে বিশ্বাস না করে কেউ যেমন ধর্মনিরপেতাবাদী দলের নেতা হতে পারে না, তেমনি, ইসলামী আদর্শে বিশ্বাস না করে কেউ ইসলামী দলের নেতা হতে পারে না।

বাংলাদেশে মৌলবাদ, কট্টর মুসলিম, তালেবান ও জঙ্গির আড্ডাখানা। এ সম্পর্কে আপনার মতামত কি?

১. বাংলাদেশে একসাথে রোজা ও পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোথাও কোন রকম সমস্যা না হওয়াই তো বাংলাদেশের মানুষের অসামপ্রদায়িক মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। এখানে মৌলবাদ বা ধর্মান্ধতা নেই। আছে উদারতা।
২. মার্কিনীরাও বাংলাদেশকে একটি মডারেট (ভদ্র, স্বচ্ছ, ন্যায়নীতিসম্পন্ন) মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ বলে আখ্যায়িত করছে। দেশের গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ীও বাংলাদেশের মূলধারার কোন ইসলামী দলই জঙ্গি তৎপরতার সাথে জড়িত নয়।
৩. তালেবান ইসু্যটি আফগানিস্তানের, বাংলাদেশের সাথে এর কোন সম্পর্ক আছে বলে জানা যায় না। তাছাড়া, তালেবানরা আমাদের আদর্শ নয়। আমাদের আদর্শ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)। তালেবানদের সাথে শিবিরের কোন সম্পর্ক নেই। তবে তারা মার্কিনীদের বিরোধী। আমরাও মার্কিনীদের অন্যায়-অত্যাচারের বিরোধী। আমরা হব তালেবান, বাংলা হবে আফগান এজাতীয় শ্লোগান শিবির কখনও দেয়নি।
৪. বাংলাদেশের জঙ্গিদের জনভিত্তি নেই। যারা ইসলামকে সন্ত্রাসী ধর্ম হিসেবে প্রমাণ করতে চায় সম্ভবত তারাই কিছু অর্ধশিতি, বিভ্রান্ত ও দাড়িটুপিসর্বস্ব লোকদের দ্বারা এ জাতীয় ঘটনা ঘটাচ্ছে। যেন, ইসলামপন্থীদের উপর সহজে নানা অপবাদ আরোপ করে তাদের অগ্রযাত্রা রোধ করা যায়।
৫. বাংলাদেশের মূল সমস্যা তালেবান বা জঙ্গি নয়, বরং ভাড়াটিয়া বুদ্ধিজীবীরাই দেশে জঙ্গি ঘটনা ঘটিয়ে বহিঃশক্তির আক্রমণের ত্রে প্রস্তুত করতে চায়। এসব ভাড়াটিয়া পরজীবীরাই দেশের জন্য বড় হুমকী ও ঘরের শত্রু বিভীষণ বলে আমি মনে করি।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসলামের বিরুদ্ধে এতো অপপ্রচার এর কারণ কি? (সন্ত্রাসবাদের অপপ্রচার)
১. কারণ, ইসলাম এখন Rising force সমাজতন্ত্রের পতনের পর পাশ্চাত্যের মূল প্রতিন্দ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে ইসলাম।
২. পাশ্চাত্য বুঝতে পেরেছে নৈতিকভাবে ইসলামের মোকাবেলা করা যাবে না। তাই তারা অপপ্রচারের আশ্রয় নিয়েছে। মিডিয়া তাদের দখলে। তারা ইচ্ছেমত তিলকে তাল বানাচ্ছে আর তালকে অদৃশ্য করে ফেলছে।
৩. কুরআন সন্ত্রাসী তৈরি করছে, পাশ্চাত্যে এ অপবাদ প্রচারের পর কুরআন কেমন সন্ত্রাস সৃষ্টি করে তা বুঝার জন্য কুরআন চর্চার হার বেড়ে গেছে। ফলে ইসলাম গ্রহণের হারও পূর্বের চেয়ে বেড়ে গেছে।
৪. একথা অনেকেই বুঝতে শুরু করেছে যে, প্রকৃত মুসলমান কখনও সন্ত্রাসী হতে পারে না।

তালেবানদের আপনারা কি দৃষ্টিতে দেখেন? তারা কি আপনাদের আদর্শ?
১. আমাদের আদর্শ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)। তালেবানরা আমাদের আদর্শ হবার প্রশ্নই উঠতে পারে না।
২. মার্কিনীরাই রাশিয়ার বিরোধিতার ক্ষেত্রে তালেবানদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। পরে তালেবানদের ইচ্ছেমত ব্যবহার করতে না পারার কারণে তারা এদের বিরোধিতা শুরু করে।
৩. তবে, বর্তমানে তালেবানরা প্রচন্ডভাবে মার্কিন বিরোধী। আমরাও মার্কিনীদের অপকর্মের বিরোধী।

ক্ষমতায় আসার জন্য কি কোন অসৎ শাসকের সাহায্য নিতে হয়? যদি না নিতে হয় তাহলে আপনার কেন নিচ্ছেন?

১. স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ক্ষমতায় আসার জন্য অসৎ শাসকের সহযোগিতা নেওয়া উচিত নয়।
২. আল্লাহর দেওয়া বুদ্ধি দিয়ে আমরা অনুমান করতে পারি যে, আমাদের দল এখনও এ পর্যায়ে আসেনি যে এককভাবেই সকল দলকে পরাজিত করতে পারবে।
৩. তাছাড়া, বর্তমান প্রোপটে এটা বুঝা খুব কঠিন নয় যে, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ এ দুটি শক্তির যে কোন একটিই মতায় আসবে। পক্ষান্তরে, ইসলামী দলগুলো এককভাবে ক্ষমতায় আসার পর্যায়ে আসেনি। প্রধান দুটি দলের কোন একটির সাথে জোট না করার অর্থই হলো অপর দলকে মেনে নেওয়া।
৪. ইসলামের নীতি হচ্ছে দুটি মন্দের যে কোন একটি গ্রহণে বাধ্য হলে অপেক্ষাকৃত কম মন্দটি গ্রহণ করা উচিত। আওয়ামী লীগ ইসলামী শক্তির বিরোধিতায় বিএনপির তুলনায় অগ্রবর্তী হওয়ার কারণে আওয়ামী লীগের সাথে জোট না করে বিএনপির সাথে জোট করা হয়েছে।
৫. বড় ইসলামবিরোধী শক্তিকে দমনের আশায় করতে কোন দুর্বল ইসলামী দল যদি আপাতত ছোট ইসলামবিরোধী শক্তির সাথে হাত মেলায় তাহলে তা কি অনুচিত হবে? কেউ কেউ হয়ত বলতে পারেন যে, কোন ইসলামবিরোধী শক্তির সাথেই হাত মেলানো যাবে না। কথাটি সুন্দর মনে হলেও এর ফলে বড় ইসলামবিরোধী শক্তিই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ পাবে। কাজেই আপাতত ছোট ইসলামবিরোধী শক্তির সাথে হাত মিলিয়ে বড় ইসলামবিরোধী শক্তিকে পরাস্থ করার পর ছোট ইসলামবিরোধী শক্তিকে দমনে ভূমিকা পালন করার দিকে মনোযোগ দেওয়াই কি বুদ্ধিমানের কাজ নয়?

বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজন আছে কি?
জ্বী, প্রয়োজন আছে।
১. তবে ছাত্র রাজনীতির নামে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মানুষ হত্যা, দখলদারিত্ব ইত্যাদি বন্ধ হওয়া উচিত।
২. মেধাভিত্তিক, সন্ত্রাসমুক্ত ও গঠনমূলক ছাত্র-রাজনীতি চালু থাকতে পারে।
৩. ইসলাম প্রতিষ্ঠার রাজনীতি নিঃসন্দেহে সন্ত্রাসমুক্ত ও কল্যাণকর। শিবির ইসলামী সংগঠন হওয়ায় এর রাজনীতিও কল্যাণকর।

শিবির কি ক্যাডারভিত্তিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে?
১. প্রচলিত অর্থে ক্যাডার বলতে বুঝানো হয় মাস্তান, চাঁদাবাজ, অস্ত্রধারী, খুনী ইত্যাদি। শিবির এসবে বিশ্বাস করে না।
২. শিবির যে ক্যাডারে বিশ্বাস করে তা প্রচলিত অর্থের ক্যাডার নয়।
৩. জ্ঞান, যোগ্যতা, চরিত্র ইত্যাদিকে ভিত্তি করে শিবির তার জনশক্তিকে সমর্থক, কর্মী, সাথী, সদস্য ইত্যাদি স্তরে বিভক্ত করে থাকে। এ স্তরভিত্তিক বিভক্তিকরণকে ক্যাডার সিস্টেম বলা হয়।
৪. শিবির অস্ত্রের রাজনীতিতেও বিশ্বাস করে না।
৫. কুরআন, হাদীস, চরিত্র এবং সর্বোপরি আল্লাহর রহমতই ইসলামী সংগঠনের সবচেয়ে বড় অস্ত্র।

সাহাবীদের যুগে কি ক্যাডার সিস্টেম চালু ছিল?
১. রাসূল (সাঃ) ও সাহাবায়ে কেরামের আমলেও সব লোককে সমান মানে হিসেব করা হয়নি। সবাইকে সমান দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। একজনকে এক এলাকার দায়িত্ব দিয়ে অন্যজনকে তার নেতৃত্বের অধীনে রাখা হয়েছে। ফলে আপনাতেই ক্যাডার সিস্টেম চালু হয়ে গিয়েছিল।
২. যোগ্য মুসলিম তৈরির বৈজ্ঞানিক কর্মপন্থা হলো ইসলামী সংগঠনের স্তরভিত্তিক প্রথা বা ক্যাডার সিস্টেম। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা বা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্রকে একই কাসে ভর্তি করলে শিক্ষার উদ্দেশ্য সফল হতে পারে না। তেমনি সংগঠনের সব লোককে একই মানে হিসেবে করলে চরিত্র গঠনের ল্য হাসিল হতে পারে না।

আমরা ছাত্রশিবির ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে কোনটি বেছে নেব এবং কেন?
১. বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির বা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী উভয়ই ইসলামী সংগঠন। তবে ছাত্রশিবিরের কর্মত্রে মূলত- ছাত্রসমাজ আর জামায়াতের কর্মত্রে সর্বস্তরের জনতা। কাজেই আপনি যদি ছাত্র হন তাহলে ছাত্রশিবিরে যোগ দিতে পারেন; অছাত্র হলে আপনি জামায়াতে যোগ দিতে পারেন।
২. মূলকথা হচ্ছে, আপনাকে মুসলিম হিসেবে ইসলামী সংগঠনে শামিল থাকতে হবে। সে সংগঠন ছাত্রাশিবিরই হোক, জামায়াতই হোক বা অন্য কোন ইসলামী সংগঠনই হোক। তবে কোনক্রমেই ইসলামহীন, আংশিক ইসলামিক বা অনৈসলামিক কোন দলে শামিল হওয়া যাবে না।

(হুমায়ুন আজাদ ও তসলিমা নাসরীন প্রসঙ্গে) শুধু সংগ্রামই যে সত্যি বলছে তার প্রমাণ কি? সংগ্রামের সব তথ্যই কি ঠিক? অন্য সব পত্রিকার তথ্য কি ভুল?
১. কোন পত্রিকাই এ দাবি করতে পারে না যে, তার ১০০% তথ্যই সঠিক।
২. তবে কোন কোন পত্রিকার সম্পাদক থেকে শুরু করে সাংবাদিকগণ পর্যন্ত অধিকাংশ লোকই দেশকে ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত করার বিরোধী আর কোন কোন পত্রিকার আচরণ ইসলামের পক্ষে।
৩. অনেক পত্রিকার সম্পাদকগণ আদর্শিকভাবে ইসলাম ও ইসলামী দলের শত্রু এবং নাস্তিক, আধা-নাস্তিক, ধর্মনিরপে ও সমাজতন্ত্রমনা দলগুলোর বন্ধু। কাজেই ইসলাম ও ইসলামী দলের ব্যাপারে তাদের পরিবেশিত তথ্য নিরপে না হওয়াই স্বাভাবিক। তাছাড়া দুশ্চরিত্র, ইসলামবিরোধী ও সমগোত্রীয় ব্যক্তিবর্গের অন্যায়কেও যদি তারা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কাজ বলে চিত্রিত করে তাহলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না।
৪. হুমায়ুন আজাদ ও তসলিমা নাসরীনের নিজস্ব উক্তিই তাদের ইসলামবিরোধী হওয়ার বলিষ্ঠ প্রমাণ। তারপরও যেসকল পত্রিকা এদের পক্ষে সাফাই গেয়ে বেড়ায় সেসকল পত্রিকার তথ্য নিঃসন্দেহে বিভ্রান্তিকর।
৫. সংগ্রামের তথ্য ঠিক না ভুল এ বিষয়ে আমাদের মন্তব্য করার প্রয়োজন নেই। কারণ, ইসলামপ্রিয় জনতা প্রকৃত ঘটনা কি তা বুঝার পাশাপাশি সংগ্রাম কি লিখেছে যা যাচাই করলেই বুঝতে পারবে তাদের লেখা ঠিক না ভুল। ঠিক হলে কতটুকু ঠিক, আবার ভুল হলে কতটুকু ভুল।

শিবিরের (চূড়ান্ত) লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কি?
১. শিবিরের সংবিধানের ভাষায় এ সংগঠনের ল্য ও উদ্দেশ্য হলো - ''আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল (সাঃ) প্রদর্শিত বিধান অনুযায়ী মানুষের সার্বিক জীবনের পুনর্বিন্যাস সাধন করে আল্লাহর সন্তোষ অর্জন।''
২. আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল (সাঃ) প্রদর্শিত বিধানই একমাত্র অভ্রান্ত ও সর্বশ্রেষ্ঠ বিধান।
মানুষের সার্বিক জীবনের পুনর্বিন্যাস বলতে বোঝায়- মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকসহ জীবনের সকল দিক ও বিভাগকেই ইসলামের চিরন্তন বিধান অনুযায়ী ঢেলে সাজানো।
৩. এ কাজের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারব বলে আশা করি। তাই, এ কাজের দ্বারা মহান আল্লাহর সন্তোষ অর্জনই আমাদের চূড়ান্ত ল্য ও উদ্দেশ্য।

সরকার গঠন করাই কি ছাত্রশিবিরের লক্ষ্য?
আল্লাহর সন্তোষ অর্জনের লক্ষ্য বাস্তবায়নে ইসলামী সরকার গঠন সহায়ক। শুধু সহায়কই নয়; অপরিহার্যও বটে। কাজেই শিবিরের চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে আল্লাহর সন্তোষ অর্জন। আর দুনিয়ার জীবনে লক্ষ্য হলো ইসলামকে বিজয়ী করা। দুনিয়ার জীবনে নবী প্রেরণের লক্ষ্য ও তাই ছিল। (প্রমাণস্বরূপ দেখুনঃ সূরা আস সফঃ ৯, সূরা আত তাওবাঃ৩৩, সূরা ফাতহঃ২৮)

আপনারা কি জামায়াতে ইসলামীকে সমর্থন করেন?
আমরা ইসলামকে সমর্থন করি। জামায়াতে ইসলামী একটি ইসলামী দল হওয়ার কারণে এদলকেও আমরা সমর্থন করি। শুধু জামায়াতে ইসলামী নয় বরং যারা যারা ইসলামের পক্ষে ও জাহেলিয়াতের বিপক্ষে কাজ করছেন তাদের সবাইকে আমরা আমাদের বন্ধু ও সহায়ক মনে করি।

শিবিরের মাধ্যমে কিভাবে সাফল্য বা উন্নয়ন সম্ভব?
১. শিবির একাধারে একজন ভাল মুসলিম ও একজন ভাল ছাত্র হবার পরামর্শ দেয়।
২. ভাল মুসলিম হওয়ার মাধ্যমে আখিরাতের চিরন্তন জীবনে সাফল্য লাভ করা যেতে পারে।
৩. শিবির দুনিয়ার জীবনেও সাফল্যের পথ দেখায়। ছাত্রদের সমস্যার প্রকৃত সমস্যার সমাধানে শিবিরের ভূমিকা কারও অজানা থাকার কথা নয়।
৪. শিবিরের কোচিং, গাইড, ব্যক্তিগত রিপোর্টে পাঠ্য পুস্তক অধ্যয়নের হিসেব রাখা ইত্যাদি একজন ছাত্রকে লেখাপড়ায় ভাল করতে সহায়ক।
৫. দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতার জন্য শিবির আপনার নৈতিক চরিত্র গঠনে সহায়ক হবে।
৬. শিবিরের ছাত্ররা মদ-গাঁজা তো দূরের কথা, ধুমপানকেও ঘৃণা করে।
শিবির কি জামায়াতের অঙ্গ সংগঠন?
১. না, শিবির জামায়াতের অঙ্গ-সংগঠন নয়।
২. জামায়াত শিবিরকে নির্দেশ দিতে পারে না। অনুরোধ করতে বা পরামর্শ দিতে পারে মাত্র।
৩. শিবিরের নেতৃত্ব নির্বাচনে জামায়াতের ভূমিকা নেই। কিন্তু অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের অধিকাংশই মূল সংগঠনের লেজুড়বৃত্তি করে থাকে। শিবির ঐ সকল সংগঠনের মত কোন লেজুরবৃত্তিক ছাত্র সংগঠন নয়।
৪. প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে জামায়াত ও শিবিরের মধ্যে এতো মিল কেন? জবাব হলো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির উভয়েই ইসলামী দল এবং উভয়েরই লক্ষ্য এক। কাজেই এদের মধ্যে অত্যন্ত সুসম্পর্ক ও মিল বিদ্যমান থাকাই স্বাভাবিক।

আপনারা কবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রমতা দখল করবেন?
১. এ বিষয়ে আমাদের কোন তাড়া নেই। আমরা নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা কবে রাষ্ট্রমতা পাবো বা আদৌ পাবো কিনা তা আল্লাহ ভাল জানেন।
২. মুসলমানদের দায়িত্ব চেষ্টা করা। আমরা চেষ্টা করছি। ফলাফল দেওয়ার দায়িত্ব আল্লাহর।
৩. ইসলাম কায়েমের চেষ্টা করার উপরই পরকালের সাফল্য নির্ভরশীল। কারণ, শত চেষ্টা করেও কেউ যদি ইসলাম কায়েমে ব্যর্থ হয়- তাহলে সে পরকালে চেষ্টার জন্য সুফল লাভ করবে। পক্ষান্তরে, কোন ব্যক্তি চেষ্টা না করা সত্ত্বেও যদি ইসলাম কায়েম হয় তাহলে ঐ ব্যক্তি পরকালে চেষ্টা না করার কুফল ভোগ করবে।

আপনারা কি আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে চান?
১. আমরা সবাইকে বন্ধু ভাবতে চাই। আমরা সকলের শান্তি, সুস্বাস্থ্য ও চিরন্তন সফলতা কামনা করি।
২. মানুষের তৈরি আইন শান্তি আনতে পারে না এবং এ আইন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করে চিরন্তন জান্নাত লাভ করার আশা করা বোকামী। কাজেই আমরা আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য মানবরচিত মতের অনুসারী দলের লোকদের জন্য দোয়া করি আল্লাহ যেন তাদেরকে ইসলাম বুঝার, মেনে চলার ও প্রতিষ্ঠিত করার তাওফীক দান করেন।
৩. আমরা ইসলাম বিরোধী দলগুলোকে নিশ্চিহ্ন করতে চাই না। আমরা চাই ইসলামবিরোধী দলগুলো ইসলাম প্রতিষ্ঠার পক্ষে চলে আসুক। নচেৎ তাদের প্রভাব, দাপট, ক্ষমতা ইত্যাদি কমে যাক।
আপনারা কি চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় দখল করে রেখেছেন?
১. চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বহু স্থানে শিবিরের মজবুত অবস্থান রয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় আমরা দখল করেছি, ভিন্ন মতাবলম্বীদের উৎখাত করেছি এমন কথা একেবারেই সত্য নয়।
২. আমরা বিভিন্ন স্থানকে অপশক্তির হাত থেকে মুক্ত করতে সহায়তা করেছি।
৩. আমরা দখলের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই।
৪. প্রকৃত সত্য হচ্ছে, বিভিন্ন জায়গায় আমাদের বৈধ অধিকারটুকুও দেয়া হয় না; আমাদেরকে উৎখাত করা হয়।

ছাত্রশিবিরের সংগঠনে এতো গোপনীয়তা কেন?
আমাদের সংগঠনের কার্যক্রম দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। আমাদের কোন গোপন কর্মসূচী নেই।

কেউ শিবির থেকে বের হয়ে গেলে আপনারা নাকি তাকে হত্যা করেন। একথার সত্যতা কতটুকু?
১. শিবির কাউকে জোর করে সংগঠনে প্রবেশ করায় না। মানুষ ইসলাম ও ইসলামী সংগঠনের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে নিজ প্রেরণা থেকেই এ সংগঠনে যোগ দেয়।
২. শিবিরের সৌন্দর্য দেখে যারা এতে যোগ দেয়, তারা সাধারণত এ দল ত্যাগ করে না।
৩. কারোর মান অবনতি ঘটলে শিবিরই তাকে পদচু্যত করে, প্রয়োজনে তাকে সংগঠন থেকে বের করে দেওয়া হয়।
৪. শিবির ত্যাগ করার কারণে কাউকে হত্যা করা হয় একথার নূ্নতম সত্যতাও নেই। এটা শিবিরের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারেরই একটা অংশ বলে আমাদের বিশ্বাস।

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম