কোরবানী : নিষ্ঠুরতা নাকি বৈজ্ঞানিক ও যৌক্তিক সিস্টেম

কোরবানী একটি নিষ্ঠুরতা এমন অভিযোগ অনেকেই করে। এটা প্রানী হত্যা ছাড়া কিছু নয় এমনটাই তারা বলে বেড়ায়।

এর বিজ্ঞান ও ধর্ম ভিত্তিক মুল্যায়নটি তাই তুলে ধরলাম।

১) জীব হত্যা মহা পাপ। এই যুক্তি যে ভেজেটেরিয়ানদের এবং একই যুক্তিতে যারা কোরবানীর বিপক্ষে তাদের কাছে প্রশ্ন,

- পশু হত্যা না করলে মানুষ খাবে কি? (সম্ভ্যাব্য উত্তরঃউদ্ভিদ)
জবাবঃ জগদীশ অনেক আগেই প্রমান করে গেছেন,উদ্ভিদের প্রান আছে!!  তবে সেটাকি জীব হত্যা হবে না?

২) এর পরের কমন যে জবাব - ভেজেটেরিয়ানরা দেয়, সেটা হলোঃ প্রানী তার অনুভুতি প্রকাশ করতে পারে। পশু হত্যা/কোরবানীর সময় তাদের চোখে আর্তনাদ দেখা যায়, যা নির্মমতা!! উদ্ভিদ তা করতে পারে না।

জবাবঃ উদ্ভিদ বিজ্ঞান এটাও প্রমান করেছে, প্রানীর ন্যায় উদ্ভিদেরো অনুভুতি প্রকট, কিন্তু তা সে প্রানীর মত বাহ্যিক ভাবে প্রকাশ করতে পারে না। এই যুক্তি যদি বাদ দেন তবে খেয়াল করুন,

ধরুন আপনার ২টি সন্তান, একটি সুস্থ অপরটি প্রতিবন্ধী- (মুক,বধির,অন্ধ)...
কার প্রতি আপনার মমতা বেশি হবে? কাকে আপনি সবচেয়ে বেশি অনুগ্রহ করবেন?
খুব স্বাভাবিক ভাবেই যে প্রতিবন্ধী- কারন সে তার অনুভুতি প্রকাশ করতে পারে না।

তবে যারা এত জীব হত্যা জীব হত্যা করে তাদের তো হয় উদ্ভিদ ছেড়ে পশু খাওয়া উচিত,অথবা না খেয়ে মরে যাওয়া উচিত!


৩) এবার দেখুন ধর্ম কি বলে, ইসলামে পশু জবেহ ও কোরাবানীর কিছু নিয়ম আছে (যদিও তার অনেক গুলি পালন করা হয় না)

a)সুস্থ পশু হতে হবে।
b)একটির সামনে আরেকটিকে জবেহ করা যাবে না। (*বাংলাদেশের ভারতদাস সরকার (এবছর-২০১৫) পশু কুরবানীর জায়গা নিদ্দৃষ্ট করে দিতে চায়, সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে, যার প্রধান উদ্দেশ্য কুরবানীকে ঝামেলাপূর্ণ করে নিরুৎসাহিত করা।)

c)ধারাল অস্ত্র দিয়ে জবেহ করতে হবে।
d)সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন হলো, সেটাকে বলি দেয়া যাবে না!!!

a,b,c এর পয়েন্ট গুলি দিয়ে সহজেই বুঝা যায় কেন তা করা হয়েছে।

d অনুসারে বলি না দিয়ে ইসলামিক ভাবে কেন জবেহ করাটা ভালো সেটা দেখুন,

যেকোন প্রানীর স্পাইনাল কর্ড কেটে ফেললে তার হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় সাথে সাথে, ফলে বলি করা হলে পশুর দেহ থেকে রক্ত সম্পুর্ন বের হতে পারে না।  রক্ত হচ্ছে ইন্টারনাল জীবানু পরিবহনের সবচেয়ে ভালো মিডিয়া। কিন্তু জবেহ করলে সেই ব্যাপারটি হয় না। এখানে হৃদক্রিয়া চালু থাকে দেহের সকল রক্ত বের হওয়া পর্যন্ত। অবশিষ্ট যা থাকে তা ধৌত করার মাধ্যমে পরিস্কার হয়।

৪)আরেকটি বিষয় যুক্ত করা দরকার

প্রানীর দেহে ৮টি অ্যামাইনো এসিড আছে এক সাথে, যা উদ্ভিদে নাই। আর এর সব কটাই মানুষের বৃদ্ধির জন্য দরকারি।

আর আমাদের দাঁতের দিকে তাকালে দেখা যায়, আমাদের ছেদন দাঁত ও পেষন দাঁত ২টাই আছে। যদি আমাদের শুধু উদ্ভিদ খাওয়ার জন্য তৈরি করা হতো তাহলে কেন ছেদন দাঁত হলো ? (মুরতাদদের কথা মত যুক্তির খাতিরে ধরে নিলাম, প্রকৃতিই এটা করেছে - স্রষ্টা নয়!!)

ছাগলের, গরুর কি আছে?

আবার বাঘ ,নেকড়ের দিকে তাকান...তাদের কেবন ছেদন দাঁত আছে!!! পেষন দাঁত  নেই কেন?


উত্তর গুলি খুব সহজ


প্রকৃত পক্ষে বেঁচে থাকতে খাবার লাগবে, আর তার জন্য কোন না কোন ভাবে জীব হত্যা আপনাকে করতেই হবে। আর ধর্মের দিক থেকে স্রষ্টা মানুষ কে সেরা জীব করে, আর বাকিদের তৈরী করেছেন আমাদের সেবায়....


*****************************
উপরে একটি পয়েন্ট কে ভুল ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিলঃ

সংশোধনঃ


যে সকল প্রানী উদ্ভিদ ভোজি তাদের কোন ছেদন দাঁত নেই, কেবল পেষন আছে। কারন তাদের মাংস ছেঁড়ার দরকার পরে না। কিন্তু মানুষের ছেদন দাঁত আছে, যেমনটা আছে মাংসাশি অন্য প্রানী যেমন সিংহ , নেকড়ে ইত্যাদির।


(ভুলটি ছিলঃআগে উল্লেখ করা হয়েছিল, মাংসাশি প্রানির পেষন দাত নেই)


Dental Anatomy of Rabbits

Dental Anatomy of Dogs

Dental Anatomy of Humans



কুরআনের আলো ওয়েব থেকে সংযোজন


Western World এ পশু জবাইয়ের প্রচলিত নিয়ম(CPB Method): 
Captive bolt pistol(CPB ) নামের এক ধরনের যন্ত্র দ্বারা পশুর কপালে প্রচন্ড আঘাত করা হয়। ধারনা করা হয় এতে পশু unconscious হয়ে পড়ে এবং জবাইয়ের পর ব্যথা অনুভব করে না।

গবেষণা :

 জার্মানির Hanover University এর প্রফেসর Wilhelm Schulze এবং তার সহযোগী Dr. Hazim এর নেতৃত্বে একটি গবেষণা পরিচালিত হয়। গবেষনার বিষয়বস্তু ছিল :

১. Western World এ প্রচলিত নিয়মে(CPB Method) এবং
.ইসলামিক নিয়মে পশু জবাইয়ে পশুর যন্ত্রণা এবং চেতনাকে চিহ্নিত করা।

Experimental Setup: 
Brain এর surface কে touch করে পশুর মাথার খুলির বিভিন্ন জায়গায় surgically কিছু electrode ঢুকিয়ে দেয়া হয়। পশুকে এরপর সুস্থ হওয়ার জন্য কিছু সময় দেয়া হয়। তারপর পশুগুলোকে জবাই করা হয়। কিছু পশুকে ইসলামিক নিয়মে আর কিছু পশুকে western world এর নিয়মে। জবাই করার সময় Electro Encephalo Graph (EEG) এবং Electro Cardiogram (ECG) করে পশুগুলোর brain এবং heart এর condition দেখা হয়।
Result: 

ইসলামিক পদ্ধতিতে জবাইয়ের ফলাফলঃ

. জবাইয়ের প্রথম ৩ সেকেন্ড EEG graph এ কোন change দেখা যায় না।  তারমানে পশু কোন উল্লেখযোগ্য ব্যথা অনুভব করে না।
. পরের ৩ সেকেন্ডের EEG record এ দেখা যায় , পশু গভীর ঘুম এ নিমগ্ন থাকার মত অচেতন অবস্থায় থাকে। হঠাৎ প্রচুর পরিমানে রক্ত শরীর থেকে বের হয়ে যাবার কারনে brain এর vital center গুলোতে রক্তসরবরাহ হয়না। ফলে এই অচেতন অবস্থার সৃষ্টি হয়।
. উপরিউল্লিখিত ৬ সেকেন্ড এর পর EEG graph এ zero level দেখায়। তারমানে পশু কোন ব্যথাই অনুভব করেনা ।
. যদিও brain থেকে কোন সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না , তবুও heart স্পন্দিত হচ্ছিল এবং তীব্র খিঁচুনি হচ্ছিল (spinal cord এর একটা reflex action) । এভাবে শরীর থেকে প্রচুর পরিমানে রক্ত বের হয়ে যাচ্ছিল এবং এর ফলে ভোক্তার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত মাংস নিশ্চিত হচ্ছিল ।

Western World এ প্রচলিত পদ্ধতিতে(CPB Method) জবাইয়ের ফলাফলঃ

. মাথায় প্রচন্ড আঘাত করার পরের মুহূর্তে পশুটিকে দৃশ্যত অচেতন মনে হচ্ছিল
. কিন্তু EEG এর দ্বারা বোঝা যাচ্ছিল পশুটি খুব কষ্ট পাচ্ছে ।
. ইসলামিক পদ্ধতিতে জবাই করা পশুর তুলনায় CBP দিয়ে আঘাত করা পশুটির heart স্পন্দন আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল । যার ফলে পশুটির শরীর থেকে সব রক্ত বের হতে পারে নি । এবং ফলশ্রুতিতে, পশুটির মাংস ভোক্তার জন্য অস্বাস্থ্যকর হয়ে যাচ্ছিল ।

Western World এর পদ্ধতি(CPB Method) এবং MAD COW রোগঃ

Texas A & M University এবং Canada এর Food Inspection Agency একটা পদ্ধতি(Pneumatic Stunning) আবিষ্কার করেছে যেটাতে একটা metal bolt পশুর brain এ fire করা হয় এবং এর ফলে brain এর টিস্যু পশুর সারা শরীরে ছড়িয়ে পরে । Brain tissue এবং spinal cord হল Mad Cow আক্রান্ত গরুর সবচেয়ে সংক্রামক অংশ।  এছাড়াও brain এবং heart এ electric shock এর মাধ্যমে পশুকে অচেতন করেও কিছু কিছু জায়গায় পশু জবাই করা হয় যেটা মাংসের quality এর উপর খুব খারাপ প্রভাব ফেলে ।

ভারতীয় পদ্ধতিঃ 

ভারতে পশুর মাথা এক কোপে আলাদা করে ফেলা হয় । এতে করে ঐচ্ছিক পেশীগুলো হঠাৎ করে সঙ্কুচিত হয়ে পরে যা অনেক পুষ্টি সমৃদ্ধ তরল বের করে দেয় এবং heart হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শরীর থেকে রক্ত বের হতে পারে না , যা বের হওয়া স্বাস্থ্যকর মাংসের জন্য দরকার ।

এছাড়া ইসলামে spinal cord না কেটে শ্বাসনালী , এবং jugular vein দুটো কাটার ব্যাপারে জোর দেয়া হয়েছে । এর ফলে রক্ত দ্রুত শরীর থেকে বের হয়ে যেতে পারে । Spinal cord কাটলে cardiac arrest এর সম্ভাবনা থাকে যার ফলে রক্ত শরীরে আটকে যাবে যা রোগজীবানু এর উৎস ।

এখানে রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর একটি হাদীস মনে করিয়ে দেয়ার প্রয়োজন অনুভব করছিঃ "আল্লাহ সবাইকে দয়া করার হুকুম দেন । তাই যখন জবাই কর তখন দয়া কর । জবাই করার পূর্বে ছুরিতে ধার দিয়ে নাও যাতে পশুর কষ্ট কম হয়" । তিনি পশুর সামনে ছুরিতে শান দিতে বা এক পশুর সামনে আরেক পশুকে জবাই করতেও নিষেধ করেছেন । এই জিনিস্টা কুরবানীর সময় আমারা ভুলে যাই ।




6 comments:

নামহীন বলেছেন...

আল্লাহর নাম নেয়া ও না নেয়ার পার্থক্য বিজ্ঞানের দৃস্টি থেকে বোঝাবেন?

নিঝুম বলেছেন...

এই প্রশ্নটা বা প্রসঙ্গটা ঠিক বৈজ্ঞানিক নয়, এটা দার্শনিক ব্যাপার। ইসলামী জীবনব্যবস্থা অনুযায়ী, পৃথিবীর সকল জীবের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ। পৃথিবীতে খাদ্য ও খাদকের যে চেইন সিস্টেম রয়েছে সে অনুযায়ী যেহেতু মানুষকে পশু হত্যা করে খেতে হয়, অতএব সেটা বিশৃংখল যাচ্ছেতাইভাবে না করে মানুষের মর্যাদা অনুযায়ী স্রস্টা প্রদত্ত নিদৃষ্ট নিয়ম মেনে করতে হয়। আল্লাহ প্রদত্ত এই সিস্টেম মেনে চলার কারনেই অন্যান্য পশুর ন্যায় পাশবিকভাবে অন্যকে হত্যা করার নিয়ম রাখা হয়নি মানুষের জন্য। যেহেতু মানুষের মর্যাদা সর্বাধিক। এই যে শৃঙ্খলা, রুটিন এবং আনুগত্য ও মানবিকতার চর্চা - এসবই তো বিজ্ঞানের ও নীতি। যেহেতু সকল জীবের স্রস্টা আল্লাহ, অতএব তার হুকুম অনুযায়ী পশুহত্যার সময় তার নাম নেয়াটা স্বাভাবিক বৈজ্ঞানিক নীতিমালার ই দাবী। ধরেন কোন একজন মানুষের দশটা কলম আছে। এখন কেউ একজন তার প্রয়োজনে ওই ব্যক্তির নিকট থেকে ২ টা কলম বলেও নিতে পারে, তাকে না বলেও নিতে পারে। এখন ভাবেন, কোনটা ভালো এবং কোনটা বৈজ্ঞানিক নীতিমালা অনুমোদন দেয়?

নামহীন বলেছেন...

very good for us.

RHK বলেছেন...

"নামহীন", আপনি মুসলিম কি না, জানি না, এনিওয়ে...আল্লাহ'র নাম নেয়া আর না নেয়ার মধ্যে পার্থক্য বিজ্ঞানের দৃষ্টি থেকে বোঝানোর কোন প্রয়োজন আছে কি? আপনি আপনার সৃষ্টিকর্তাকে যদি বিশ্বাস না করেন, তাহলে আর কিছুই বলার নাই। জ্ঞানী হওয়া ভালো, কিন্তু "জ্ঞানপাপী" হওয়া গর্হিত কাজ!

নামহীন বলেছেন...

জবাইয়ের প্রথম ৩ সেকেন্ড EEG graph এ কোন change দেখা যায় না। তারমানে পশু কোন উল্লেখযোগ্য ব্যথা অনুভব করে না।...koiche afnere...vua alaap baad deyin mia

Unknown বলেছেন...

নিজের মতের বিরুদ্ধে গেলে নাস্তিক তার বাপকেও অস্বীকার করে, সায়েন্স তো কোন দূর কি বাত! @কুমুদিনি

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম