অধ্যায়-০৪ : প্রত্যেক পিতার উদ্দেশ্য

আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার ঘোষণা হলো :

“হে ঈমানদার লোকেরা, নিজেকে এবং স্বীয় পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয় কঠোর স্বভাব ফেরেশতাগণ। আল্লাহ্‌ তা’আলা যা আদেশ করেন, তা তারা অমান্য করে না এবং যা করতে আদেশ করা হয় তাই তারা করে।: (সূরা তাহ্‌রীম, ৬৬ : আয়াত ৬)
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আলী বিন আবি তালিব (রাঃ) বলেছেন, ‘তাদের আদব-কায়দা তথা ইসলামী শিষ্টাচার এবং দুনিয়ার সুষ্ঠ জীবন যাপনের (পরিচালনার) প্রয়োজনীয় জ্ঞান শিক্ষা দাও।’
কাতাদাহ (রা:) বলেছেন : ‘তোমরা তাদের (তোমাদের পরিবার-পরিজনকে) আল্লাহ্‌র আনুগত্যের নির্দেশ দাও এবং তাঁর নিষেধাবলী থেকে বেঁচে থাকার উপদেশ প্রদান করো।

ওহে পিতা,

ইঞ্জিনিয়ার যদি তোমাকে তোমার নির্মাণাধীন বাড়ি সম্পর্কে বলে : ‘তোমারে দালানে ভিত্তি মজবুত হয়নি সুতরাং এটাকে আরো বড় করার পূর্বেই ঠিক করে নেয়া উচিত। নতুবা এটা অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে।’ তখন তুমি কি করবে?
অবশ্যই তুমি তোমার সর্বশক্তি দিয়ে একে ভেঙ্গে ফেলে ভিত্তিটা মজবুত করে গড়ে তুলবে এবং এ ব্যাপারে সচেষ্ট থাকবে।
সত্য এমনটি নয় কি?

যদি তাই হয়। তাহলে তুমি তোমার আগামী উত্তরাধিকারী বা বংশধর নামক দালানের ভিত্তি অর্থাৎ তোমার কন্যার ব্যাপারে কি করবে ও করেছ? অথচ এই সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ্‌ তোমাকে নির্দেশ দিয়েছেন সর্বশক্তি দিয়ে তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করতে।

সুতরাং তুমি তোমার পক্ষ থেকে তার জন্যে কি পেশ করেছ?

ওহে পিতা,

ঐ সমস্ত নির্লজ্জ যুবতীরা, যারা আল্লাহ্‌র আদেশ-নিষেধের প্রতি কোনরূপ ভ্রক্ষেপ করে না বরং স্বীয় প্রবৃত্তির অনুসরনেই নিজেরা মত্ত তারা কি আসমান থেকে পতিত হয়েছে? না যমীনে নীচ থেকে অংকুরিত হয়ে ফুটে উঠেছে?
কোনটিই নয় বরং তারা বের হয়েছে তোমার ঘর থেকে এবং তোমার অন্য মুসলিম ভাইয়ের ঘর থেকে।

সুতরাং হে পিতা,

তুমি আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমার কন্যার ব্যাপারে দুনিয়া-দারীর চেয়েও বেশী গুরত্ব দাও। আর তুমি তাদের অন্তর্ভূক্ত হয়ো না, যাদের সম্পর্কে রাসূলুলস্নাহ্‌ (সা:) এরশাদ করেছেন :

‘দাইউস ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ সাহাবায়ে কেরাম (রা:) জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহ্‌র রাসূল! দাইউস কে? উত্তরে রাসুলূলস্নাহ (সা:) বললেন, ‘যে ব্যক্তি তার পরিবারে আল্লাহ্‌র আদেশ-নিষেধ বাস্তবায়নের ব্যাপারে কোন তৎপরতা অবলম্বন করে না বরং উপেক্ষা করে চলে।’

অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, ‘দাইউস হল সে, যে তার পরিবারে বেহায়পনার বাস্তবায়নে সন্তষ্ট ও পরিতুষ্ট।’ (আহমদ)

অভিবাদন ও সুসংবাদ

ঐ সকল মুসলিম বোনের প্রতি, যারা শত্রুদের অজস্র কৌশলের সামনেও নিজেকে পরাজিত হতে দেয়নি। বিক্রি করে দেয়নি আল্লাহ্‌ কর্তৃক তাকে প্রদত্ত অমূল্য সম্পদ, ইয্‌যত ও আবরু। বরং সে তার সর্বশক্তি দিয়ে মাড়ির দাঁতের ন্যায় আঁকড়ে ধরে রেখেছে নিজের ব্যক্তিত্ব, সতীত্ব ও সম্ভ্রমকে। আর জাহেলিয়াতের মহা প্লাবনের মুখেও সে পালন করেছে আল্লাহ্‌র নির্দেশাবলীকে এবং বিরত রয়েছে নিষেধাবলী থেকে।

এভাবেই সে স্বীয় অস্তিত্বের সাথে ধারণ করেছে আল্লাহ্‌র কিতাব ও রাসূলের (সা:) সুন্নাহএক এবং সমুন্নত রেখেছে ইসলামের পতাকাকে এই বলে যে : “আমার হাতে আছে চির সমুন্নত সংবিধান আল কোর’আন ও রাসূল (সা:) সুন্নাহ্‌ যা আমাকে রক্ষা করবে সকল বিপদ থেকে। আর আমার হিজাব হল আমার ইয্‌যত, এ দুয়ের বদৌলতেই আমি হব বিশ্ব সভায় শ্রেষ্ঠত্বের আসনে সমাসীন।

তার জন্যই তার নবীর পক্ষ থেকে সুসংবাদ। যে সম্পর্কে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেছেন সাহাবায়ে কিরামকে উদ্দেশ্য করে :

“নিশ্চয়ই তোমাদের পর এমন দিনকাল আসবে, যখন আল্লাহ্‌র দেয়া জীবন ব্যবস্হার সার্থক অনুসারীকে হতে হবে খুবই ধৈর্য্য ও সহনশীল। আর তাদের প্রতিদান হবে পঞ্চাশ জনের প্রতিদানের সমান ও অনুরূপ। তখন সাহাবায়ে কিরাম প্রশ্ন করলেন: হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সা:)! তাদের থেকেই নাকি? উত্তরে রাসূলুলস্নাহ্‌ (সাঃ) বললেন : না, বরং তোমাদের মধ্যে থেকে (পঞ্চাশ জনের সমান ও অনুরূপ)।” (তিরমিযী, আবু দাউদ)।

তাদের প্রতি আরো সুসংবাদ হল যে, রাসূলুলস্নাহ্‌ (সা:) এরশাদ করেছেন:

“ইসলামের যাত্রা শুরু হয়েছিল অপরিচিত অবস্হায়। অচিরেই সে তার যাত্রাকালের অবস্হায় ফিরে আসবে। তবে গুরাবাদের জন্যে চরম সুখ ও শুভ সংবাদ।” সাহাবায়ে কিরাম প্রশ্ন করলেন গুরাবা কারা? হে আলস্নাহ্‌র রাসূল (সা:)! উত্তরে রাসূলুলস্নাহ্‌ (সা:) বললেন : “তারা হল ওরাই, যারা অধিকাংশ মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে গেলেও নিজেরা সত্যকে সার্বিক জীবন ব্যবস্হায় আঁকড়ে ধরে রাখে, সৎ কর্ম পরায়ণতার সাথে।” (তিরমিযী)

উল্লেখ্য মুহাদ্দীসীনে কিরামের কেউ কেউ বলেছেন তুবা’ই হল জান্নাতের একটি গাছের নাম। মিথ্যা, অন্যায়, অনাচার ও বিভ্রান্তিকে উপেক্ষা করে শত বাঁধা বিপত্তির বেড়াজালকে ছিন্ন করে অতি ধৈর্য্যের সাথে যিনি আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের (সা:) আদেশ নিষেধাবলীকে যথাযথ ভাবে পালন করেছেন, তার জন্যে আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে অভিবাদন।

পবিত্র কোর’আনের ভাষায় :

“তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। যেহেতু তোমরা দুনিয়ায় ধৈর্য্য ধারণ করেছ। আর তোমাদের এই আখিরাতের নিবাস কতই না চমৎকার ও উত্তম।” (সূরা রা’দ, ১৩ : আয়াত ২৪)

0 comments:

Comment Please

মন্তব্য..

সবিস্তার সূচীপত্র
টেম্পলেট কাষ্টমাইজেশন - তরঙ্গ ইসলাম | তরঙ্গ ইসলাম